সংগীত হয়েছে জেল জুলুম, নির্যাতনের হাতিয়ার
লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ৩১ অক্টোবর, ২০১৩, ০১:৩০:৩৭ রাত
আমেরিকা- তার সেনাবাহিনী বা ছিঃ আই এ ইরাক ও আফগানিস্তান সহ অনেক দেশেই সক্রিয় ভাবে ইসলামের অনুসারীদের বিরুদ্ধে ক্রুসেড চালিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। যদিও তাদের প্রশাসন মুখে অস্বীকার করে আসছে, তারা বলেছে তারা ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে না-তাদের অ্যাকশান শুধু ‘খারাপ (Bad Guy) মুসলিমদের বিরুদ্ধে, গুড মুসলিমদের বিরুদ্ধে নয়! কিন্তু তাদের আর্মির ট্রেনিং ম্যানুয়াল, ঈদের দিনে ইরাকে "ঈদ গিফট" লেখা বোমা ফেলা, যে মুসলিম দেশে ইসলামিক দল গনতান্ত্রিক ভাবে ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা- সেখানে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করানো – আর্মি হস্তক্ষেপ ঘটিয়ে দেয়া- এমনকি খোদ আমেরিকার মাটিতেই মুসলিমদের উপর দমন নীতি, বিনা বিচারে আটক – লঘু পাপে গুরুদণ্ড – ব্লাক লিস্ট - মসজিদ ও মুসলিমদের উপর তাদের গণ-স্পাইং- সহ বহু কর্ম দিয়েই প্রমানিত হয়েছে- তাদের যুদ্ধ প্রকৃত ইসলামের বিরুদ্ধেই। মুখে না না করলেও- কাজ দেখে তো কারো সন্দেহ থাকে না!
যদিও নিন্দুকেরা বলছে- আমেরিকানদের কাছে ‘গুড মুসলিম’ হচ্ছে ‘ডেড মুসলিম। ঐ ধরণের মুসলিম- সেই যে বাংলাভাষার এক ছড়ার - “ যে ‘মুসলিম’ করে নাকো ফুঁস ফাঁস -মারে নাকো--, সেই নিরীহ- পর্যদূস্থ- গোবেচারা, আপন স্বত্বা হারানো- সত্যিকার অর্থে মুসলিম নামের অযোগ্য- যারা আমেরিকা বা তাদের সহচরদের চরম জুলুমের মুখেও কোন আহা উহু করবে না ( প্রতিরোধ দূরে থাক, প্রতিবাদের ভাষাও যারা হারিয়ে ফেলেছে, প্রতিবাদী মুসলিমের উপর তাদের জুলুম দেখে বরং হাততালি দেবে আর বলবে – বেশ করেছে! - সাহস কত- আমেরিকার সাথে লাগতে আসে- এই জাতের মুসলিম হল আমেরিকানদের কাছে ‘গুড মুসলিম!! প্রয়োজনে এই সব নামধারী মুসলিম, পৃথিবীর নির্যাতিত - নিপীড়িত মুসলিমদের আহাজারীতে কেউ যদি প্রতিবাদী হয়-এবং তারা যদি জানতে পারে – তবে তাদের নাম পৌঁছে দিবে জায়গা মত- এরাই হচ্ছে – আমেরিকানদের ভাষায় ‘গুড মুসলিম। যাক সে কথা!
আমেরিকানরা খুব ভাল করে জানে- সংগীত সম্বন্ধে ‘পিউরিতানিক মুসলিমদের শুচিবাই রয়েছে, নোংরা গান বাজনা শুনে তারা ‘বমি করে দেবে- এমন ধারনাও অমূলক নয়! তাই ইরাক আফগানিস্থান –ও বর্তমান কালের গুলাগ, – (ভোটের আগে প্রতিজ্ঞা করেও ওবামা যেটা ‘বন্ধ’ করতে অক্ষম হয়েছে)- সেই গুনাতানামো কারাগারে, কিছু নোংরা সংগীত কে বেছে নিয়েছে বন্দী নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে। বিরতিহীন ভাবে তাদের ‘সেল এ ঐ সংগীত বাজান হয়, তাদেরকে মানসিকভাবে নির্যাতনের অংশ হিসেবে। নিম্নে এর কয়েকটা উল্লেখ করা হলঃ
১। ক্রিস্টিনা অ্যাগূইলেরা’র ‘ডার্টি
মোহাম্মদ আল খাতানি – যাকে আমেরিকানরা ভাবে ২০ তম হাইজ্যাকার -( যে টুইন টাওয়ার বম্বিং এ অংশ নেয় নাই, তবে দলের সদস্য হিসেবে সাজা ভোগ করছে) তার উপরে, অন্যান্য নির্যাতন যেমন – অনবরত মাথার উপর পানির ফোটা ফেলতে থাকা, ন্যাংটো করে রাখা ( আরেকটা বর্বর অসভ্য নির্যাতন- একজন প্রকৃত মুসলিম জ্ঞান থাকা পর্যন্ত নগ্ন থাকতে চাইবে না- এটা তারা জানে বিধায় – ইসরাইল প্রথম এই নোংরা টেকনিক প্রয়োগ করে প্যালেস্টিনিয়ান প্রতিরোধ যোদ্ধাদের উপর, তাদের মনোবল ভেঙ্গে ফেলার উদ্দেশ্যে; এই ঘৃণিত পদ্ধতি সফল ভাবে অ্যামেরিকা প্রয়োগ করেছে ইরাকে এবং অন্যত্র প্রয়োগ করছে শুধু ‘মুসলিম বন্দীদের উপর); নগ্ন -অর্ধ নগ্ন মহিলার গায়ের সাথে বন্দীকে জড়াজড়ি করে ঠেকিয়ে রাখা ( প্রকৃত মুসলিম এ হারাম বিষয় এড়িয়ে যেতে চাইবে বিধায় এটাই তার জন্য নির্যাতন- এক পর্যায়ে – আমেরিকান মহিলা সৈনিকের ঋতুস্রাবের রক্তও মাখিয়ে দেয়া হয়েছে বন্দীর গায়ে, মুখে) এ ধরণের নির্যাতন প্রয়োগ করার পাশাপাশি এই ‘নোংরা সংগীত চালিয়ে রাখা হচ্ছে বিরতিহীন ভাবে।
আত্মহত্যা হারাম এটা ঐ মুসলিম বন্দীরা খুব ভাল করেই জানে, তবে কি পরিমাণ মানসিক নির্যাতন করা হলে তারা আত্মহত্যার চেষ্টা করছে তা অনূমান করা আমাদের পক্ষে শান্তিময় স্বাধীন জীবনে যাপনে অভ্যস্ত মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
২। ন্যান্সি সিনাত্রা’র ‘ দিজ বুটস অয়্যার মেড ফর ওয়াকিং
১৯৯৩ সালে কাল্ট লিডার ডেভিড কোরেস এর সাথে এব বি আই এর যুদ্ধে মূলতঃ সংগীত যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল। ডেভিড কোরেস- কানের পর্দা ফাটানো ভলিউমে তার শিস্যদের কে উজ্জীবিত করতে নিজের –রচিত ব্যর্থ পপ সংগীত শুনিয়ে যেতে থাকে, অপর দিকে এফ বি আই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে-দিয়ে ন্যান্সি সিনাত্রা’র শোক গাঁথা সহ আরও কিছু এক ঘেয়ে মিউজিক এক টানা এক সপ্তাহ ধরে চালিয়ে রাখে তাদের শাস্তি দেয়ার জন্য।
৩। এ সি /ডিসি’র ‘স্যুট টু থ্রিল এবং হেলস বেল
হেভি মেটাল সংগীত অনেক দিন ধরেই মিলিটারি ইন্টারোগেটর দের পছন্দের তালিকায়। এর উচ্চমাত্রার শব্দ, একঘেয়ে পুনরাবৃত্তি কানে ও ব্রেনে অস্বস্তি আর –মাথা ধরানো যন্ত্রণা সৃষ্টি করে। আমেরিকান সৈন্যবাহিনী মাইকের মাধ্যমে হাই ভলিউমে, অসি- মেটাল সংগীত ইরাকের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে জুলুম হিসবে গোটা অঞ্চল জুড়ে এটা ব্যবহার করেছে। এল আর এ ডি নামে- আমেরিকান কোম্পানি সোমালিয়ার জলদস্যুদের বিরুদ্ধে এই ধরণের সংগীত ব্যবহার করেছে ।
৪। ব্যারি ম্যানিলো’র ‘এনিথিং !
এ ধরণের সংগীত, তরুণদের কান মাথায় ‘বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। নিউজিল্যান্ড এর ক্রাইস্ট চার্চে - গ্রাফিতি আর্টিস্টদের ছত্র ভঙ্গ করার জন্য পুলিশ এ ধরণের মিউজিক ব্যবহার করেছে।
৫। বার্নী দ্য ডাইনোসর এর ‘আই লাভ ইউ !
ইংল্যান্ডের গার্জিয়ান পত্রিকা ভীতি সঞ্চারকারী এই সংগীতকে আমেরিকান ইন্টারোগেটরদের পছন্দের তালিকায় অতি ব্যবহৃত এক সংগীত বলে উল্লেখ করেছে বিশেষ করে গুয়ানাতানামো বে’ তে এর ব্যবহার বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য। এক প্রতিক্রিয়ায়, জর্জ বুশের ইংল্যান্ড ভিজিটের সময় প্রতিবাদকারীরা উচ্চ ভলিউমে বুশের দিকে এই সংগীত তার দিকে ছুঁড়ে দেয়- বুশের জন্য উপযুক্ত আপ্যায়নী বলতে হয়।
৬। ব্রুস স্প্রিংসটিন এর ‘ বর্ণ ইন দ্য ইউ এস এ !
গুয়ানাতানামো বে’ তে আমেরিকান দেশ প্রেমের সংগীত গুলোকে বন্দীদের উপর অত্যাচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হবে এত আর অবাক হওয়ার কি আছে? একজন স্প্যানিশ বন্দী তার দুই বছরের বন্দীদশায় এই সংগীত তাকে নির্যাতনের কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে।
কানের কাছে ২৪ ঘণ্টা একই জিনিষ হাই ভলিউমে চালিয়ে রাখা হলে- পছন্দের জিনিষ ও এক সময় শুনতে ভাল লাগবে না-মন বিষিয়ে উঠবে, মস্তিস্ক আর শরীর বিদ্রোহ করবে। আর নোংরা হলে তো কথাই নেই! বন্দীকে মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে ‘পাগল করে ফেলাই এর উদ্দেশ্য। গুয়ানাতানামো বে’র বন্দীশালায় মানসিক নির্যাতনের ফলে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছে বহু বন্দী মুসলিম- দৈহিক ও মানসিক নির্যাতনের ফলশ্রুতিতে – অনেকে মারাও গেছে!
বিষয়: বিবিধ
১৮৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন