Harmful 10 elements
লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ১০ অক্টোবর, ২০১৩, ০৪:১৮:০৩ রাত
ক্ষতিকর দশ পদ
-তিমির মুস্তাফা
১। প্রক্রিয়াজাত মাংসঃ বাজার থেকে মাংস কেন রে, পরিষ্কার কররে, তারপর ধুয়ে রান্না কররে,পরিবেশন কররে এরপর খাওয়া! ওইসব দিন গেছে, এখন বাজারে যাও, রকমারি ঝকঝকে রঙ্গীন ছবি ওয়ালা প্যাকেটে তৈরী হয়ে আছে হরেক রকম মাংসের ভিন্ন স্বাদের বিদেশী ‘আইটেম কাটলেট, চিকেন ফিংগার, বীফ বার্গার, হট ডগ, কোল্ড কাট, রেডিমেড’, বাসায় এনে ‘মাত্র দুই মিনিট মাইক্রো ওয়েভ – রান্না শেষ ! নিদেন পক্ষে ঐ খাবারের ‘হিমায়িত ‘ভার্সন কিনতে পারেন, বাসায় এনে তেলে ভেজে নিলে তৈরী হয়ে যাবে মুখরোচক পদ! এর স্বাদ গন্ধ আর সহজ লভ্যতা বা সহজিয়া প্রস্তুতি যেটা আড়াল করছে তা হল এর গুণ- দ্বিধারী করাত, শাঁখের নয়, ঝকঝকে ইস্পাতের ! এতে থাকছে উঁচু মাত্রায় নাইট্রেট আর এগুলো প্রস্তুত হচ্ছে সে সব পশুর মাংস থেকে, যে গুলোকে প্রচুর হরমোন খাইয়ে আর এন্টিবায়োটিক দিয়ে- অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বড় করা হয়েছে। এই নাইট্রেট শরীরে প্রবেশ করে পরিণত হয় ‘নাইট্রাইট এ, আর তা কোলোরেক্টাল ক্যান্সার এর সাথে সম্পর্কিত । বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এ ‘নাইট্রাইট আরও বিপদজনক – কারণ তা রক্তে অক্সিজেন সরবরাহে তা বাধার সৃষ্টি করে।
২। মারগারিনঃ
একসময়ে চর্বি সমৃদ্ধ ‘বাটার এর অত্যন্ত উপযোগী বিকল্প ভাবা হতো এই বস্তুকে, ডায়টিসিয়ান আর স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ তা লুফে নিয়েছিল । কিন্তু জিনিসটা ততটা স্বাস্থ্য উপযোগী হয় নি। সব্জিজাত- তরল তেল কে যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মারগারিন বা চর্বিতে পরিণত করা হয়, তার নাম হাইড্রোজিনেশন (‘hidrogenation)’। এর ফল হলঃ ট্রান্স ফ্যাট, যা আজ পর্যন্ত যত রকমের ফ্যাট আবিষ্কৃত হয়েছে তার মধ্যে ‘নোংরা জাতের। এ বস্তু আমাদের শরীর হজম করে না, রক্তশিরার দেয়ালে আটকে গিয়ে শিরার অভ্যন্তরস্থ নালাপথকে সংকুচিত করে ফেলে, উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগের কারণ হিসেবে এ ধরণের শরীরবৃত্তিক ব্যখ্যাই- মেডিকেল জার্নালে লেখা হয়। ঐ ট্রান্স ফ্যাট এর সাথে রয়েছে বহুবিধ প্রিজারভেটিভ (preservarive) আর সংযোজিত বস্তু ( additives) যা ঐ জিনিষকে দীর্ঘ দিন দোকানের সেলফে অবিকৃত রাখতে সাহায্য করে। ক্ষতিকর? হার্ভার্ড এর এক গবেষণার খতিয়ানঃ পৃথক ভাবে, সম পরিমান ‘বাটার আর মারগারিন খাওয়ানো হলে, একজন মহিলার হৃদরোগের সম্ভাবনা– মারগারিন এর ক্ষেত্রে ৫৩ % বেশী! এটা আবিষ্কৃত হয়েছিল দ্রুত ‘টার্কি মোটা তাজাকরনের এক প্রজেক্ট এ, ( বাংলাদেশে গরু মোটা তাজাকরনের এক প্রজেক্ট মনে করিয়ে দিচ্ছে !) কিন্তু এ জিনিষ খেয়ে টার্কি যখন মরে যেতে লাগল, লগ্নীকারীরা পিছিয়ে যেতে লাগল, তখন বিকল্প হিসেবে ‘মানব শরীর এর সেবায় লাগানো হলো সেটা! গুজবে প্রকাশ – এর উপর ছাতা পড়ে না বা ফাঙ্গাস জন্মায় না! এ জিনিষ মানব খাদ্য তালিকায় কি ভাবে স্থান পেল- সেটাই রহস্য। এর পর ও ওটা এখনও নিয়মিত অনেকের খাবার টেবিলে আসছে- বিজ্ঞাপন আর প্রচারনার জোরে । নয় কি?
৩। আলুর চিপস আর ফ্রাইঃ উত্তর আমেরিকায় বিক্রীর দিক থেকে বা চাহিদার তালিকায় সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে আলু, আর এর মধ্যে এই দুই পদ রয়েছে তার উপরের সারিতে। মুখরোচক, শুরু করলে আর থামা যায় না, কক্ষনো অতৃপ্তি আসে না এতে! এই রকম মন্তব্যই শুনা যায় চিপস প্রেমিক আর ফ্রাই প্রেমিক দের কাছ থেকে। ডাক্তারগন অনেকদিন ধরেই ‘নিয়মিত ও জিনিষ ভক্ষনের ব্যপারে মানুষকে সতর্ক করে আসছেন, ডায়টিসিয়ান আর স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ এথেকে দূরে থাকছেন । কারণ, এর অতিরিক্ত লবণ আর সম্পৃক্ত চর্বি (saturated fat)র কারনে, আর তার সাথে রয়েছে এক্রিলামাইড (acrylamide), এক বানিজ্যিক রাসায়নিক পদার্থ-সাধারণত পাওয়া যায়, প্লাস্টিক, পানি শোধনাগার, কসমেটিকস ও সিগারেট এর ধুঁয়ায়। আর এই বস্তু রয়েছে ফেঞ্চ ফ্রাই এর মধ্যে। এটা একটা জ্ঞাত ক্যান্সার উৎপাদক ( Carcinogen). উচ্চ তাপে (২৪৮ ডিগ্রী বা তার বেশী ) আলু বা ওই জাতীয় স্টার্চ কে ফ্রাই করা হলে এর উৎপত্তি হয়। এই উচ্চ তাপে যে সুগন্ধি বা ফ্লেভার বেরিয়ে আসে, তা আমাদের খুব পছন্দ, ক্ষুধা উদ্রেক কারী - এরই কারনে মানুষ ঘুরে ফিরে আবার ফ্রাই খেতে আসে। এক্রিলামাইড এর উচ্চ মাত্রার ডোজ জন্তুর শরীরে ক্যান্সার তৈরী করে, জন্তু ও মানব শরীরের স্নায়ু তন্ত্রের (nervous system) জন্য এটা ক্ষতিকর। এটাকে ‘ক্যান্সার কাঠী’ বলে ডাকা উচিত – মন্তব্য একজন ভুক্তভোগীর।
৪। মাইক্রো ওয়েভ পপকর্ণঃ পৃথিবীতে যত ইলেক্ট্রনিক্স আজ পর্যন্ত বিক্রী হয়েছে, মাইক্রো ওয়েভ অভেন তার শীর্ষে । সহজ ব্যবহার পদ্ধতি, ঝামেলা মুক্ত, নেই বাড়ানো জঞ্জাল ( চুলায় ভাত তরকারী গরম করে দেখুন, কতগুলো থালা বাসন মাজতে হয়, কত টা সময় ও শ্রম ব্যায় হয়, সেই তুলনায় বোতাম চাপলেই – কেল্লা ফতে!) অতিরিক্ত কাজ; নিজের প্লেটে ভাত তরকারী বা খাবার নিয়ে- একবারে গরম করে নিলেই হল! আর এরসাথে ম্যাচ করে উদ্ভাবন হচ্ছে ‘রেডিমেড খাবারের, প্যাকেট হয়েই আসছে, সময় মেপে মাইক্রো ওয়েভ ওভেনে চাপালেই- গরমাগরম খাবার তৈরী। এরই এক মুখরোচক সংস্করণ বাজারে এসেছে, মাইক্রো ওয়েভ পপকর্ণ! মন মাতানো ‘মাখন- ফ্লেভার সমৃদ্ধ প্যাকেট – মাইক্রো ওয়েভে তিন মিনিট – গন্ধে ‘ম’ম করবে আশেপাশে -। সেই যে ‘আমসত্ত্ব দুধে ফেলি, তাহাতে কদলী দলি,--- পিঁপড়া কাদিয়া যায় পাতে’র মত, এই গন্ধে মহা-ক্ষুধামান্দ্য রোগীর ও খেতে ইচ্ছে করবে। কিন্তু সমস্যা হল- এর দায় অন্য দিকে! প্রথমেই- যে প্যাকেটে এ বস্তু বন্দী হয়ে আসে, তার গায়ে একটা রাসায়নিক প্রলেপ দেয়া হয় ‘পারফ্লুরো অকটানয়িক এসিড বা PFOA, দিয়ে, যাতে করে প্যাকেটের ভেতরের আঠালো বস্তু গুলো প্যাকেটের বাইরে না আসতে পারে; এগুলো পপ কর্ণের গায়ে শোষিত হয় ও আমরা যখন তা খাই, শেষ পর্যন্ত আমাদের রক্তে এসে মেশে। ডঃ মারকোলা বলেন, এই ‘পারফ্লুরো অকটানয়িক এসিড বা PFOA, আমাদের অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির প্রবাহ পরিবর্তন করতে পারে, সেক্স হরমোন পরিবর্তন করতে পারে। এর সাথে অন্যান্য রোগ প্রতিরোধী সমস্যা, ক্যান্সার, থাইরয়েড সমস্যা এবং খারাপ কলেস্স্টেরল ( LDL ) এর পরিমান বাড়ানোর সম্ভাবনা তো আছেই । আর কৃত্তিম মাখন ফ্লেভার এর জন্য ফ্যাক্টরিতে ব্যবহার করা হয় ডাই এসিটাইল ( diacetyl ), এ বস্তুর গন্ধে দীর্ঘদিন ফ্যাক্টরিতে কাজ করে, কর্মচারীরা পর্যন্ত ফুসফুসের রোগে ভুগছে, যার মান দেয়া হয়েছে ‘পপ কর্ণ ফুসফুস’ (bronchiolitis obliterans । ওয়াটসন নামে ডেনভার,কলোরাডো - অ্যামেরিকার এক ব্যাক্তি দীর্ঘদিন ওই ফ্লেভারের পপ কর্ণ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে, এখন তার ফুসফুসের কর্মক্ষমতা মাত্র ৫৩ ভাগ । পপ কর্ণ প্রস্তুত কারী কম্পানীর বিরুদ্ধে মামলা করে ২.৭ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপুরন পেয়েছে। অধুনা ঐ ফ্লেভার এর আলঝেইমার রোগের সাথে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে প্রমান পাওয়া গেছে। কাজেই, খুব সুবিধা- খুব চটপট তৈরি খাবার থেকে সাবধান। প্রসঙ্গতঃ মাইক্রো ওয়েভ এর ভিটামিন বা খাদ্য-প্রাণ ধ্বংসী ক্ষমতা তো সবার জানা।
৫। তৈল বা চর্বি মুক্ত সালাদ ড্রেসিং
আজকের স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ কাঁচা শাক সবজি তথা সালাদ খাওয়ার ব্যাপারে উদাসীন নয়, বরং বাচ্চাদেরকেও উৎসাহিত করছে তাজা শাক সবজি খেতে। এতে খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন - রান্নার প্রক্রিয়ায় নষ্ট হওয়ার সুযোগ পায় না- তাই তুলনামূলক ভাবে স্বাস্থ্যকর ( যেহেতু কাঁচা খাওয়া হচ্ছে, এজন্য গুলো রোগমুক্ত ও টাটকা হওয়া জরুরী) ।
কিন্তু সমস্যা হল, কাঁচা সব্জীর আলাদা কোন বিশিষ্ট স্বাদ নেই, অনেকগুলোর গন্ধ ও ‘মোহনীয় নয় মোটেই । তাই আবার কিছু উপাদান যোগ করা দরকার হয়। সরিষা বা জলপাই তেল আর একটু লবণ হলেই বেশ ছিল, কিন্তু খাদ্য প্রস্তুত কোম্পানি গুলো তাদের প্রতিভা নিয়ে হাজির হল, ভিন্ন স্বাদ ও গন্ধের প্রচুর সালাদ ড্রেসিং এর ভীরে – পছন্দেরটি খুজে পাওয়া সহজ নয়। এতে আবার ফ্যাট বা চর্বি যোগ করা হয়েছিল স্বাদ বাড়াতে, এখনকার স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ আবার বাগড়া দেয়ায় ঐ কম্পানী গুলো আবার বাজারে নিয়ে এলো - ফ্যাট ফ্রি বা তেল/ চর্বি মুক্ত সালাদ ড্রেসিং! ‘চর্বি মুক্ত এই শব্দটি হল আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দু, কিন্তু সে দিন বাসী হয়েছে, আমরা এখন জানি কৃত্তিম ভাবে খাদ্য বস্তুকে ফ্যাট ফ্রি করতে চাওয়ার অর্থ হল অন্যান্য ‘অপখাদ্য ত্তথা কৃত্তিম ফ্লেভার ও গন্ধ বর্ধক রাসায়নিক উপাদান সংযোজন । সালাদে ঢুকান হয় উচ্চ ফ্রুক্টোজ কর্ণ সিরাপ, চিনি, ও আরও অনেক কৃত্তিম রাসায়নিক উপাদান। ফ্যাট সরিয়ে নিলেই সব সমস্যার সমাধান হয় না, ফ্যাট অন্যান্য পুষ্টি উপাদানআকে শরীরে শোষিত হতে সাহায্য করে। একদিকে যেমন অপ্রয়োজনীয় রাসায়নিক বস্তু শরীরে ঢুকছে – অন্য দিকে ফ্যাট ফ্রি ড্রেসিং খেয়ে স্বাভাবিক শারীর বৃত্তিক প্রক্রিয়াও আমরা ব্যাহত করছি।
৬। ক্যানজাত টমেটো বা প্রক্রিয়াজাত সবজি, ফলঃ ক্যান এর লাইনিং (ক্যানের ভেতরের দিকের গায়ের আবরনী বিশেষ – কোটিং ও বলা যায়) একটা রাসায়নিক মাখান হয়, কারণ ধাতুর সাথে যেন ফল মূল বা সব্জির সংস্পর্শ এড়ানো যায়। এই লাইনিং এ থাকে বি পি এ ( Bis-phenol A) - যা শরীরের এক হরমোন ‘ইষ্ট্রোজেন এর অনুকরণ (mimicking) করে। আর এই ঘটনা প্রজনন সমস্যা, বাচ্চাদের আচরনগত পরিবর্তন, শারীরবৃত্তিক পরিবর্তন -এ রকম অনেক সমস্যার সৃষ্টি করছে । ক্যানড টমেটো বিশেষ করে আরও বড় কালপ্রিট এজন্য যে, এদের অম্ল মাত্রা উচ্চ ( highly acidic), যা খাদ্য বস্তুতে বি পি এ কে অনুপ্রবিষ্ট করতে উদ্দিপীত করে।
৭। দুধঃ আপত্তিকর তালিকায় দুধের নাম আছে শূনে চমকে উঠবে সবাই, কারণ এই পুষ্টিকর খাদ্য –শিশু, আবাল বৃদ্ধ বণিতা সবার খাদ্য তালিকাতেই স্থান পায়। এখানেও বানিজ্য! গাইয়ের দুধের পরিমান বাড়াতে - ফার্ম মালিক ব্যবহার করে রিকম্বিন্যান্ট বভাইন গ্রোথ হরমোন (Recombinant Bovine growth Hormone) । এ বস্তু দুধের মধ্যে ইনসুলিন এর ন্যায় গ্রোথ ফ্যাক্টর এর পরিমান বাড়িয়ে দেয়, যা মানুষের দেহে বেশ কয়েক ধরণের ক্যান্সারের জন্ম দিতে পারে । এছাড়া গ্রোথ হরমোনের আর ও কিছু সাইড এফেক্ট চোখে পড়ার মত, অল্প বয়সে ছেলেদের দাড়ি গোঁফ গজাচ্ছে - নয় দশ বছরের মেয়েদের রজঃস্রাব শুরু হচ্ছে, স্বাভাবিক সময়ের অনেক আগেই।
৮। কর্ণ খাওয়াণো পশুর মাংসঃ ফার্মের গরু- যা মাংস হিসেবে বিক্রির জন্য বড় করা হয়, এদেরকে অনেক ক্ষেত্রে ঘাসের পরিবর্তে কর্ণ বা ভুট্টা আর সয়াবিন খাওয়ানো হয়। এতে করে গরু তুলনামূলক ভাবে দ্রুত মোটা হয়- কম খরচে ( এ দেশে ভুট্টায় সরকারী ভর্তুকি থাকায় ভুট্টা বা ভুট্টা জাত বস্তু তুলনামূলক ভাবে সস্তা) । কিন্তু এ ভাবে মোটা করা গরুর মাংসে, বেটা – ক্যারোটিন, ভিটামিন -ই আর ওমেগা – ৩ এর পরিমান কম থাকে।
৯। ফার্মের স্যামন মাছঃ ফার্মের সালমন এর খাবার হিসেবে সাধারণত সয়া, হাস মুরগীর খামার এর বর্জ্য আর ‘মুরগীর পালক’ খাওয়ানো হয়, এর ফলে ঐ মাছে ভিটামিন ডি হ্রাস পায় আর হাস মুরগীর বর্জ্য আর পালকের কারনে- ক্ষতিকর রাসায়নিক – কীটনাশক আর ক্যান্সার উৎপাদক বস্তু জমা হতে থাকে। মাছ যত বড় হবে – বয়স যত বাড়বে- ক্ষতিকর রাসায়নিক বস্তুর পরিমান ও তত বেশী জমা হতে থাকবে।
১০। হাই ফ্রুক্টোজ কর্ণ সিরাপঃ ভূট্টা বা কর্ণ থেকে নয়, ভুট্টা বা কর্ণ গাছের কাণ্ড থেকে প্রাপ্ত রস থেকে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় প্রস্তুত তরল মিষ্টিদ্রব্য ( liquid sweetener) কর্ণ সিরাপ হিসেবে পরিচিত; আজকাল এর ব্যবহার হয়না এমন কোন ক্যান জাত খাবার বা কুকি, বিস্কিট -কেক নেই বললেই চলে। এ জিনিষ - আখের চিনি বা সুগারএর মতই যে কোন খাদ্য বস্তুর মিষ্টতা বাড়ায় । যে কোন সফট ড্রিংকস, ক্যানজাত ফলমূল, কেক বা ডেসার্ট এর প্রায় সব আইটেমে কর্ণ সিরাপ থাকবেই। জ্যাম জেলি ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল, হোয়াইট ব্রেড- ফ্রোজেন ডিনার –সবক্ষেত্রেই এর প্রয়োগ সার্বজনীন ! কারণ এটা সুগার বা চিনির চেয়ে সস্তা ( ভর্তুকির কারনে!) কাজেই ব্যবসার জন্য লাভজনক আর ফ্যাক্টরিতে পরিবহন ও মিশ্রণের বিষয়েও সুবিধাজনক । স্রেফ বানিজ্য ! প্যাকেট বা ক্যানের লেবেলে হাই ফ্রুক্টোজ কর্ণ সিরাপ সংক্ষিপ্ত আকারে HFCS হিসেবে লেখা থাকে।
দুভাবে এটা ক্ষতি করছে। এক, মানুষ এখন সুগার বিষয়ে সচেতন হয়ে গেছে, অনেকেই হাই ফ্রুক্টোজ কর্ণ সিরাপ বা HFCS নিয়ে অতটা মাথা ঘামায় না। কাজেই লেবেল পড়ে সুগার নেই এটা জানলে এক ধরনের মানসিক প্রশান্তির সাথেই তা গলাধঃকরন করছে। নর্থ আমেরিকার ‘ওবেসিটি বা মোটা হওয়ার মূল কারনের একটা হল এই HFCS । কোক বা সফট ড্রিংক কে এর কারণ বলা হলেও, অন্যান্য ফ্যাক্টর থাকলেও - মূল দায়ী হচ্ছে এই সফট ড্রিংকের মূল মিষ্টিকারক উপাদান HFCS; এ দেশের খাবার ও পানীয়ে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহৃত মিষ্টিদ্রব্য বা সুইটেনার গুলোর মধ্যে HFCS এর ব্যবহার ৪০% এর উপর। ১৯৭০ থেকে ১৯৯০ – এই সময় কালের মধ্যে এই দ্রব্যের ব্যবহার বেড়েছে এক হাজার পেরসেন্ট ( ১০০০%)! এর সাথে পাল্লা দিয়েই যেন বেড়েছে ওবেসিটি। ( Bray, Nielsen and popkin Am J Clin Nutr. 2004 Apr;79(4):537-43./ Errutum in; oct;80(4): 1090) । সব মিলিয়ে, এক বছরে একজন আমেরিকাণ গড়ে প্রায় ৬০ পাঊণ্ড HFCS গলাধঃকরণ করে থাকে।
২য় কারণ হল, দেহে এর শোষিত হওয়ার পদ্ধতি – এটা সুক্রোজ ( সাধারন চিনি) বা গ্লুকোজের মত করে হজম হয় না। ফ্রুক্টোজ এর হেপাটিক মেটাবোলিজম নূতন করে লিপোজেনেসিস কে উৎসাহিত করে। তদুপরি – গ্লুকোজের ন্যায়, ফ্রুক্টোজ ইনসুলিন ক্ষরণকে উদ্দীপিত করে না বা লেপটিন প্রস্তুতি ত্বরান্বিত করে না। এই ইনসুলিন আর লেপটিন শরীরে খাদ্য গ্রহণ বা শোষিত হওয়া ও ওজন নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে একটা কার্যকর সিগন্যাল হিসেবে কাজ করে। যেহেতু ফ্রুক্টোজ এ ধরণের সিগন্যাল বহণ করে না, তাই শরীরের সয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা একটা নির্দিষ্ট পরিমান ক্যালরী গ্রহণ করে না থেমে, ভুল করে আরও খাদ্য গ্রহণে সাড়া দেয়। সোজা বাংলায়, ফ্রুক্টোজ, নিয়মিত হজমের প্রক্রিয়া কে বাইপাস করে, সরাসরি লিভারে শোষিত হয় আর লিপোজেনেসিস কে ত্বরান্বিত করে অর্থাৎ ট্রাইগ্লিসারাইড ও কলেস্টেরল এর মত লিপিড তৈরী করতে উদ্বুদ্ধ করে । হাই ফ্রুক্টোজ কর্ণ সিরাপ এই ভাবে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ ও ওজন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে- এ বিষয় থেকে এটাই ইঙ্গিত পাওয়া যায়। শধু তাই নয়, HFCS যোগে মিষ্টি করা সফট ড্রিঙ্ক এর ক্যালরি ভ্যালু বেড়ে যায় বিধায়, এই অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত HFCS পাণ করার মাধ্যমে ওবেসিটি বা ওজন বৃদ্ধির মহামারীতে এই ADDITIVE নিশ্চিত ভূমিকা রাখছে বলেই বিজ্ঞানীরা ভাবছেন।
রক্তে অতিরিক্ত লিপিডের পরিমান শরীরের স্বাভাবিক বিপাকের উপর চাপ ফেলে, অতিরিক্ত ইনসুলিন ব্যায় হতে থাকে –(এই ইনসুলিন আমাদের শরীরের অতি প্রয়োজনীয় হরমোন) শরীরের স্বাভাবিক বিপাক প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিপাক জনিত সমস্যার কারনেই- ডায়াবেটিস – ওজন বৃদ্ধি, হৃদ রগ- ক্যান্সার – নিদ্রাহীনতা – দ্রুত বার্ধক্য এবং এই ধরণের হাজারো সমস্যা বা জটিলতা তৈরী হতে থাকে।
অন্ত্রের পর্দা বা লাইনিং এ ক্ষয় বা আক্ষরিক অর্থে ফুটো করে ফেলার কৃতিত্ব রয়েছে এই সুপার মলিকুলের –তার ফলে পেটের ব্যাকটেরিয়ার বিষাক্ত বর্জ্য ও অন্যান্য আংশিক হজম হওয়া প্রোটিন সরাসরি রক্তে মেশার পরিবেশ তৈরী করে – আর এই পরিস্থিতি উপরোক্ত রোগ সমূহের সূচনা করতে পারে।
প্রাকৃতিক ভাবে ফল মূলে পাওয়া ফ্রুক্টোজ – যা পুষ্টি ও আঁশের এক জটিল সমন্বয়- তা আমাদের শরীরে কর্ণ সুগার এর মত একই জৈব- রাসায়নিক প্রক্রিয়া প্রদর্শন করে না।
উপসংহারঃ এই লেখার উদ্দেশ্য মানুষকে ক্ষতিকর খাদ্য বিষয়ে সতর্ক করা। এই খাদ্য গুলো হঠাৎ একদিন খেলেই যে কারো ক্যান্সার হয়ে যাবে তা নয়। তবে নিয়মিত খেতে থাকলে ক্ষতি যে হবেই তা নিশ্চিত। আমাদের আশেপাশে অনেক প্রমান দেখা যাচ্ছে। আল্লাহ্ পাক বড়ই সহনশীল করে তৈরি করেছেন- বিষাক্ত ফরমালিন দেয়া মাছ খেয়ে ও দিব্যি বেঁচে আছে! এমন প্রশ্নের উত্তর আমরা দিতে পারব না। তবে আল্লাহ্ পাক নিজেও যেটা আমাদের জন্য ক্ষতিকর – তা হারাম ঘোষণা দিয়েছেন, শুকরের মাংস হারাম তো আর বিনা কারনে হয়নি। কোন দ্রব্যের – বেশি পরিমাণ ভক্ষন যদি ক্ষতিকর হয় তবে – সে বস্তুর অল্প পরিমান ( মতান্তরে এক ফোঁটাও ) ও বর্জনীয় ( হারাম!)। আমরা কোন মুফতি নই – ফতোয়া দেয়া আমাদের জন্য জায়েজ নয়, কাম্য ও নয় । আমরা যেটা করতে পারি – তা হচ্ছে ক্ষতিকর বলে যখন জানতে পারলাম, সে বিষয় বা বস্তু এড়িয়ে চলা ।
বিষয়: বিবিধ
২৪২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন