যুদ্বাপরাধ বিচার এবং পর্ব ১...-মাহবুব সুয়েদ
লিখেছেন লিখেছেন সুয়েদ ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৬:৩৯:০৭ সকাল
যেই তোড়জোড়ে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে বর্তমান সরকার ৭১ সালে দুই পাকিস্থানের বিচ্ছিন্নতার যে যুদ্ব তার বিচার শুরু করেছে এবং এর জন্য কয়েকজন ব্যক্তিকে বিশেষ করে জামায়াত নামক দলকে যেভাবে দমন-পিড়ন চালাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে ৭১ সালের এই যুধ্বে একদিকে ছিল সমস্থ বাংলার জনগন অপরদিকে পাক আর্মি ছিলনা জামায়াত ছিল মুল প্রতিপক্ষ।অথচ ইতিহাস বাংলার মানুষের এই স্বাধিকারের লড়াইকে পাক-ভারত যুদ্ব হিসেবে চিহ্নিত করে থাকে কারো সন্দেহ থাকলে পাক-ভারতের যুদ্বের ইতিহাস দেখুন।পাকিদের অগনতান্ত্রিক বেহায়া দুশ্বাসন এবং বাংলার মানুষকে বঞ্চিত রাখার যে প্রবনতা তাতে নিসঃন্দেহে সংক্ষুব্দ বাংলার মানুষ যখন ৭১ সালে পশ্চিম পাকিদের বিরুদ্বে অসহ্য হয়ে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল।আঞ্চলিক রাজনীতির স্বার্থে ভারত তখন দুই পাকিস্থানের এই ভাংগনকে স্বাগত জানায় এবং পুর্ব পাকিস্থানের মজলুম জনতার পক্ষে তার সর্বশক্তি নিয়োগ করে।প্রথমে ছিল শেখ মুজিব তথা পুর্ব পাকের জনতা বনাম ভুট্রো-এহিয়ার ক্ষমতার লড়াই যা অল্পদিন পরে বিচ্ছিন্নতার লড়াইয়ে রুপ নেয় এবং যে যুদ্বের দামামা বেজে ঊঠে তা হয়ে উঠে পাক-ভারত যুদ্ব।ইতিহাস অনেক লম্বা একেকজন একেকভাবে ই তা নির্ধারন করে গেছেন এবং এক্ষেত্রেও ইতিহাসকে সঠিকভাবে খুব কমজনি তুলে ধরেছেন।আমাদের দলকানা এ জাতীর মাঝে যেভাবে সমাজের প্রতিটি স্থরে দলীয়করন করা হয় তাতে ঐতিহাসিকেরাও আর সঠিক ইতিহাস লেখেননা বললেই চলে।আমরা এখানে ৭১ সালের দুই পাকিস্থানের বিচ্ছিন্নতার যুদ্ব অর্থ্যাত আমাদের মহান স্বাধিনতার যুদ্বের সময় তৎকালীন পুর্ব পাকিস্থানে সচল দলসমুহ তথা মুক্তিযুদ্বের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামীলিগ এবং অন্যান্য দলসমুহ ও এর শীর্ষ নেতাদের কার্যকলাপ নিয়ে কিছু আলোকপাত করার চেষ্টা করব।
এক-পুর্ব পাকিস্থানে চলমান দলসমুহঃআওয়ামীলিগ ছাড়াও তৎকালীন সময়ে পুর্ব পাকিস্থানে চলমান দলসমুহের উল্লেখযোগ্য হল ১,পিডিপি (জনাব নুরুল আমিনের)২,নেজামে ইসলাম পার্টি(মৌলভি আওতহার আলীর)৩,মুসলিম লীগ(সরকারী দল)৪,মুসলিম লীগ(ফকা চৌঃর)৫,জমিয়তে উলেমা ৬,জামায়াতে ইসলামী ৭,ন্যাপ(মাওলানা ভাসানি) ৮,ন্যাপ(মুজাফফার) প্রমুখ।
দুইঃদল সমুহের ভুমিকা-১৯৪৭ সালে বৃটিশরা যখন ভারতকে স্বাধিনতা দেয় তখন মুসলমানদের বৃহত্তর কল্যানের! লক্ষ্যে পাকিস্থান ও ভারত নামক আলাদা দুই রাষ্ট্র প্রতিষ্টা হোয় এবং বঙ্গের মুসলমানদের ভুমিকা কোন অংশেই কম ছিলনা এই সাদের পাকিস্থান সৃষ্টিতে।ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্টার যে সপ্ন নিয়ে পাকিস্থান তৈরি করা হুয় তার আদৌ বাস্তবায়ন তো দুরের কথা যখন পাকিস্থানে উপর্যোপরি সেনা শাসনে বঙ্গের মুসলমানরা নিজস্ব আবাদভুমি তথা স্বাধিন রাষ্ট্রের সিদ্বান্ত নেয় বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় তখন স্বাভাবিকভাবে অনেক রাজনৈতিক দল এবং ব্যক্তি তার বিরুধীতা শুরু করে মাত্র ২০ বছর আগের যে কওমি চেতনা ছিল তার স্মরনে।একমাত্র মাওলানা ভাসানি (রঃ)র দল ন্যাপ,প্রফেসর মুজাফফার আহমদের নেতৃত্বাধিন ন্যাপ এবং আওয়ামীলিগ ছাড়া আর সব দলি এই স্বাধিনতা যুদ্বের তুমুল বিরুধিতা করে।পাকিস্থানকে ইউনাইটেড রাখতে তারা শান্তি কমিটি,আল বদর বাহীনি,আল শামস ,রাজাকার বাহীনি ইত্যাদি গঠনে মুখ্য ভুমিকা পালন করেন।এক্ষেত্রে জনাব নুরুল আমিনের ভুমিকা ছিল সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য।উপরেল্লোখিত আটটি দলসমুহের মাঝে তিনটি ছাড়া বাকি প্রায় সবাই বঙ্গের মানুষের এই স্বাধিকারের লড়াইয়ের বিরুদ্বে ছিন যা খুবি দুখঃজনক।
তিনঃব্যক্তিদের ভুমিকা-তৎকালীন পুর্বপাকিস্থানে উল্লেখযোগ্য যারা এ ভুখন্ডে থেকে রাজনীতি করতেন তাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য কয়েকজনের ভুমিকা উল্লেখ করছি।
১।জনাব নুরুল আমিন-পুর্ব পাকিস্থানের প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক প্রধানম্নত্রি।পাকিস্থান ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা ।তিনি অভিবক্ত পাকিস্থানের সমর্থক ছিলেন এবং তার নেতৃত্বেই মুক্তিযোদ্বের বিরূধীতা কারি সব দলসমুহ ঐক্যব্দ্ব ছিল।তিনি শুধুমাত্র যুদ্বের বিরুধীতা করেই ক্ষান্ত হননি বরং তিনি ৭১ সালের পরে পাকিস্থানে চলে যান এবং সেখানকার প্রথমে প্রধানমন্ত্রি ও পরে ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।দেশপ্রেমিক পাকিস্থানি হিসেবে পাকিস্থানিরা এখনও তাকে খুব সম্মান করে এবং তাকে তারা কায়েদে আজমের কবরের পাশে দাফন করেছে।
২।রাজা ত্রিদিব রয়-আমাদের গত তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাজা দেবাশিষ রয়ের বাবা হলেন এই ত্রিদিব রয়।৭১ সালে তিনি পাকিস্থানে চলে যান এবং গত বছর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সেখানে ফেডারেল মন্ত্রির মর্যাদা লাভ করেন তার দেশ প্রেমের নজির হিসেবে।
৩।ফজলুল কাদের চৌঃ-সালাউদ্দিন কাদেরের পিতা ওপাকিস্থানের সাবেক স্পিকার জনাব ফকা চৌঃ।তিনি স্বাধিনতা যুদ্বের ঘোর বিরুধীতা করেন এবং দেশ স্বাধিনের পরে জেলে বন্দি অবস্থায় মারা যান।
৪।মৌলভি ফজলুর রহমান-বর্তমান প্রধানমন্ত্রির শিল্প উপদেষ্টা জনাব সালমান এফ রহমানের পিতা যিনি এককালে পাকিস্থানের মন্ত্রি ছিলেন তিনি বাংলাদেশের অস্তিত্বকে স্বীকারতো করেনইনি বরং তার ইচ্ছানুযায়ী তাকে পাকিস্থানে দাফন করা হয়েছিল।
৫।সিলেটের মাহমুদ আলি- সিলেটের বিখ্যাত বাম নেতা জনাব মাহমুদ আলি মুক্তিযুদ্বের ঘোর বিরোধীতা করেন এবং দেশ স্বাধিন হলে পাকিস্থানে চলে যান ও সেখানে আমৃত্যু মন্ত্রীর মররাদায় থাকেন সাচ্চা পাকিস্থানী হিসেবে।
৬।খান এম এ সবুর খান-তিনিও ঘোর বিরুধী ছিলেন এবং দেশ স্বাধিন হলে কারাগারে বন্দি হন কিন্তু মহান নেতা শেখ মুজিব তাকে ক্ষমা করে নিজে জেলগেটে গিয়ে মুক্ত করে নিয়ে আসেন খান সাহেবের এক চিঠির প্রেক্ষিতে।
৭।প্রফেসর গোলাম আজম-জনাব অধ্যাপক আজম সাহেব তখন পুর্ব পাকিস্থান জামায়াতের আমির ছিলেন এবং দুই পাকিস্থানের এই বিচ্ছিন্নতার ঘোরতর বিরুধীদের অন্যতম ছিলেন।ছোট্র একটি ইসলামপন্থি দলের প্রাদেশিক শাখা প্রধান হিসেবে তিনি স্বাধিনতার বিরুদ্বে রাজনৈতিক ভাবে ভুমিকা রাখেন কিন্তু উপরুন্ত ব্যক্তিদের মত একেবারে পাকিস্থানে চলে যাননি তিনি। তার দলিয় ভুমিকা এবং তার অবস্থান ও তৎকালীন প্রেক্ষিতে জামায়াতের সাংগঠনিক ভিত্তি ,জনসমাজে এর দলীয় প্রভাব ইত্যাদি নিয়ে আমরা বিশদ আলোচনা করব আগামি পর্বে ইনশাল্লাহ। (চলবে)
বিষয়: বিবিধ
৯৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন