সাঈদীর আমৃত্যু কারাদন্ড, লক্ষ প্রাণের জোয়ার...।
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুয রহমান ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৪:৪৩:১১ রাত
মাওলানা মুহম্মদ দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক মামলার রায় হয়েছে গতকাল। তাকে আমৃত্যু কারাগারে অন্তরীন করে রাখার নির্দেশ এসেছে বিচারপতিদের এজলাশ থেকে। শাহবাগ থেকে গণজাগরণমঞ্চের ইমরান'রা যখন চিৎকার করে বলে এটি ভূয়া রায়, এটা বিচারপতিদের এজলাশ থেকে আসা রায় নয়; এটা জামায়াতে ইসলামীর সাথে আঁতাত করা মুজিব কন্যা শেখ হাসিনার রায়। কথাটা তখন জনগনের মনে প্রবলভাবে বিশ্বাসযোগ্যতা পায়, যখন সরকার বা সরকার দলের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করা হয় না।
শাহবাগী ইমরানদের কথাটা কেন জানি আমারও বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হচ্ছে এই কারণে, মাওলানা মুহম্মদ দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবের প্রধান অপরাধ ছিল পিরোজপুরের ইব্রাহিম কুট্টি ও বিসাবালী হত্যা। অথচ ইব্রাহিম কুট্টির ছোট ভাই নিজেই স্বীকারোত্তিমূলক জবান বন্দিতে বলেছেন মাওলানা মুহম্মদ দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেব কোন ভাবেই ইব্রাহিম কুট্টি হত্যার সাথে সম্পৃক্ত নয়। ইব্রাহিম কুট্টি হত্যা বিষয়ক ১৯৭২ সালে বেগম ইব্রাহিম কুট্টি কতৃক দায়ের করা এফআইআর'এ আসামী হিসেবে মাওলানা মুহম্মদ দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবের নাম ছিল না। আর বিসাবালী হত্যা বিষয়ক রাষ্ট্র পক্ষের সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী’তো আশ্চর্যজনকভাবে মাওলানা মুহম্মদ দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন। অবশ্য এই জন্য তাকে কম ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। ঢাকা থেকে গায়েব হয়ে যাওয়া সুখরঞ্জন বালীকে আমার মত কোন এক বেরসিক সাংবাদিক আবিস্কার করেছেন ভারতের এক জেলে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে বন্দী অবস্থায়...!!! উল্লেখ্য ভারতে অবৈধভাবে বাস করা বাংলাদেশী মুসলমানরা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী এবং হিন্দুরা শরণার্থী হিসেবে পরিচিত।
বিসাবালী ও ইব্রাহিম কুট্টি হত্যায় মাওলানা মুহম্মদ দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেব জড়িত না থাকার বিষয়টি আরোও প্রকট ভাবে প্রতিয়মান হয় মামলার শুনানির সময় ইব্রাহিম কুট্টি পরিবারের সদস্যদের সাক্ষ্য না দেওয়া, সুখরঞ্জন বালীকে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতে বন্দী থাকা এবং আসামী পক্ষের উকিলদের যুক্তি আগ্রাহ্য করা।
এই রায়ের ফলে সরকারী দলের কাছে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতে ইসলামী কি হাত গুটিয়ে বসে থাকবে? মনে হয় না। ইতোমধ্যে তারা ৪৮ ঘন্টার হরতালের ডাক দিয়েছে, যার সময়সীমা আরোও বৃদ্ধি পেতে পারে। এই হরতালে হয়ত লাশের মিছিলে যোগ হবে আরোও নতুন মুখ, খালী হবে অনেক মায়ের কোল, অনেক বোন হারাবে ভাই, সন্তান হারাবে পিতা, স্ত্রী হারাবে স্বামী। মানবাধিকারের ভাষায় যার কোনটাই স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। এত অস্বাভাবিক মৃত্যুর দ্বায়ভার কে নেবে? সরকার কি নিতে পারবে? এই প্রশ্ন থেকেই গেল...।
মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য হয়েও আমার নিকট এখন মনে হচ্ছে এই আদালত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে প্রতিষ্ঠিত হয়নি, হয়েছে কোন দলকে নেতৃত্বহীন করে দিতে। কারণ বিচারপতি মোজাম্মেল হক জনাব মাওলানা মুহম্মদ দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবকে আমৃত্যু কারাগারে অন্তরীন করে রাখার নির্দেশ দিলেও অন্য এক বিচারপতি বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা সাঈদীকে সব মামলা থেকে বেকসুর খালাসের পক্ষে রায় দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক মানের দাবিদার এমন আদালত থেকে এই ধরনের রায় জনগণকে নিঃসন্দেহে বিভ্রান্ত করবে। আর এই জাতীয় রায় দিয়ে কোন দলকে নেতৃত্বহীন করে দেওয়া কি সম্ভব হবে...???
"সবাই অবাক তাকিয়ে রয়
জ্বলে পড়ে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়"
মাওলানা মুহম্মদ দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবরা এদেশের তরুণদের হৃদয়ে যে চেতনার আগুন প্রজ্জলিত করে দিয়েছেন তা কি এই ফুঁৎকারে নিভে যাবে? উত্তর সবারই জানা, না এই চেতনার আগুন নিভবে না; বরং ধাউ ধাউ করে জ্বলবে লক্ষ কোটি হৃদয়ে। হয়তো বা এই আগুনের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে না এই মসনদকে...।
যা কিছু হোক না কেন? স্বাভাবিক মৃত্যু এবং একটি সুন্দর প্রভাতের কামনায়...।
লেখকঃ
মাহফুয রহমান
গবেষক ও শিক্ষানবীশ সাংবাদিক
বিষয়: রাজনীতি
১৫১০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই সত্যকে অবিশ্বাস করার কোন উপায় নাই।
আপনার সাথে একমত। এই পৃথিবীতে নিরপেক্ষ কোন লোকই নাই।
সুন্দর সত্য কথার জন্য আরোও ধন্যবাদ...।
মন্তব্য করতে লগইন করুন