আজ অমর একুশে

লিখেছেন লিখেছেন মাহফুয রহমান ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৪:০১:১৬ বিকাল



চেতনার পথে দ্বিধাহীন অভিযাত্রী বেশে বাংলাদেশীকে সর্বদা চলার প্রেরণা জোগায় একুশ। আজ সেই অমর একুশে। শোক বিহ্বলতা, বেদনা আর আত্মত্যাগের অহংকারে উদ্বেলিত হওয়ার দিন আজ। সাহস, প্রত্যয় আর উদ্দীপনায় সব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে আজ সামনে এগিয়ে যাওয়ার দিন। একইসঙ্গে আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসও। আজকের দিনটি প্রতিটি বাংলাদেশীদের পাশাপাশি পৃথিবীর তাবৎ মাতৃভাষাপ্রেমীর রক্ত টগবগে চেতনায় শানিত হওয়ার দিন। আজ বাংলাদেশের পাশাপাশি ইউনেস্কোর ১৯৫টি সদস্য এবং ৯টি সহযোগী সদস্য রাষ্ট্র পালন করবে আমাদের এই একুশকে। পৃথিবীর ৬ হাজার ৯০৯টি ভাষার মানুষ পালন করবে দিবসটি।

এই একুশের পথ ধরেই আমরা লাভ করেছি স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, লাল-সবুজের পতাকা আর আত্মপরিচয়ের অধিকার। তাই একইসঙ্গে গৌরবোজ্জ্বল, প্রেরণায় মহিমান্বিত আর চেতনা শানিত করারও এই অমর ফেব্রুয়ারী। প্রত্যেক বছর যখন বসন্ত আসে, কৃষ্ণচূড়া শাখে বসা কোকিল গান ধরে, পলাশ-শিমুল রক্তরাগে প্রকৃতিকে রাঙিয়ে ঝিরিঝিরি দখিনা বাতাস বইয়ে দেয়, ছুড়ে ফেলে দেয় নির্জীবতাকে, তখনই চেতনা হয়ঃ এসেছে ফেব্রুয়ারী। চেতনায় আল্পনা আঁকে অমর একুশে। সদ্য ফোটা ফুলের পাশে বসে কোকিলের কুহুতান যেন একুশেরই আহ্বান। এই একুশে জাতির জীবনে অবিনশ্বর এক মহা-উদযাপনে পরিণত। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-দল-মত নির্বিশেষে উদযাপন করার মতো এমন কালজয়ী দিন দ্বিতীয়টি নেই।

আমাদের বাংলা বর্ণমালা বড়ই দুঃখিনী। কত কণ্টকাকীর্ণ পথ পেরিয়ে বাংলা বর্ণমালা আজ বিশ্ব দরবারে সমাদৃত, স্বীকৃত। যদিও এক সময়ে বাংলা ছিল অস্পৃশ্য। সংস্কৃত কিংবা উর্দু-ফার্সি সবার কাছে বাংলা ছিল তুচ্ছ ও তাচ্ছিল্যের। ব্রিটিশ বিতাড়নের পর এল পাকিস্তান। কিন্তু শোষিত বাংলাদেশীদের বঞ্চনার ইতিহাস আরও দীর্ঘ হল। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পাবে না! উর্দুই হবে রাষ্ট্রভাষা। এভাবে দিনের পর দিন অপমানিত, লাঞ্ছিত হতে হতে ১৯৫২তে জেগে উঠল বাংলাদেশীরা। মায়ের ভাষার অপমান নয়। জ্বলে-পুড়ে মরবে, তবু মাথা নোয়াবে না চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তের কাছে। সেই ফালগুনে পিচঢালা পথে এগিয়ে চললো প্রতিবাদের মিছিল। স্লোগানে প্রকম্পিত আকাশ-বাতাস। চললো গুলি। লুটিয়ে পড়লো মিছিলের অগ্রগামী তরুণের দল। জীবন দিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরসহ নাম না জানা আরও অনেকে। রক্তস্নাত রাজপথ। সেই রক্ত স্রোতধারায় সিক্ত মাটিতে নির্মিত হল শহীদ মিনার। সেই শহীদ মিনারে আজ যাবে কোটি বাংলাদেশী। যাবে পৃথিবীর কোটি মানুষ। বিনম্র শ্রদ্ধায় তারা স্মরণ করবে মহান বীর ভাষা সৈনিক ও শহীদদের।

একুশ আমাদের বাঁচতে শেখায়, লড়াই করে অধিকার আদায় করতে শেখায়। একুশ বাংলাদেশী জাতির গর্ব ও অহংকার। ভাষা সংগ্রামের রক্তস্নাত সেই বিস্ফোরণ শুধু বাংলাদেশীদের মায়ের ভাষাকেই শৃংখলমুক্ত করেনি, বাংলাদেশীর স্বাধিকার, স্বাধীনতা, সব ধরনের বৈষম্য দূর করার সংগ্রাম ও অনুপ্রেরণার উৎস। বাংলাদেশীর ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি তথা যা কিছু মহান, সবকিছুতেই একুশের ছায়াপাত। বাংলাদেশী জাতিসত্তা বিকাশের যে সংগ্রামের সূচনা সেদিন ঘটেছিল, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় পথ বেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে তা চূড়ান্ত রূপ নেয়। তাই একুশে ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশীদের কাছে চির প্রেরণার প্রতীক। একুশের প্রথম প্রহর থেকেই জাতি কৃতজ্ঞ চিত্তে ভাষা শহীদদের স্মরণ করছে। সবার কণ্ঠে বাজছে “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি...।“

একুশ মানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দ্রোহ, প্রতিবাদ আর যাবতীয় গোঁড়ামি ও সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে শুভবোধের অঙ্গীকার। যে কারণে ১৯৫২ সালে সেই পলাশ রাঙা প্রভাতের সূর্য অমিত সম্ভাবনার যেই স্বপ্ন-প্রত্যয় জাতির হৃদয়ে বপন হয়েছিল, সেই তেজোদীপ্ত বিদ্রোহের সুর আজো প্রতিটি ক্রান্তিকালে ধ্বনিত হয় বাংলাদেশীর হৃদয়ে।

একুশের এই দিনে আমরা চাই বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের মাতৃভাষা বাংলার সর্বত্র সঠিক ব্যাবহার।

লেখকঃ

গবেষক ও শিক্ষানবীশ সাংবাদিক

বিষয়: বিবিধ

২০৯১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

180267
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২০
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০১:১৮
133346
মাহফুয রহমান লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ
180306
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৮
অজানা পথিক লিখেছেন : গান-কবিতায় বাংলা ভাষা কান্দে
প্রজন্ম আজ হিন্দি গানের ফান্দে।
উর্দূ কিসের বাংলাই আমার সেরা
হিন্দীতে আর থাকবো কেন ঘেরা
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০১:১৯
133347
মাহফুয রহমান লিখেছেন : বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকলে এক সময় বাংলাদেশ হবে আরেক সিকিম এবং হিন্দি’ই হবে রাষ্ট্র ভাষা।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File