সংখ্যালঘু নির্যাতন...??? শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হকের কার্যক্রম যুগান্তকারী কার্যক্রম।
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুয রহমান ২৮ জানুয়ারি, ২০১৪, ১২:৩৪:১৩ রাত
দেশের চারদিকে আজ একই বোল শোনা যাচ্ছে। সেটি হল সংখ্যালঘু নির্যাতন। সমস্যার সুরাহা না করেই বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো এই বিষয় নিয়ে কাঁদা ছুঁড়ছে একে অপরের দিকে। অথচ আমাদের এই মাতৃভূমি ব্রিটিশ পরবর্তী সময় থেকেই অসাম্প্রদায়িক, কিন্তু কিভাবে হল এই দেশ অসাম্প্রদায়িক? কার ভূমিকা ছিল এর পিছনে? দেশ অসাম্প্রদায়িক হবার পিছনের ঘটনা নিয়েই আজকের সম্পাদকীয়।
প্রথম ঘটনাটি ১৯২৭ সালের ২ মার্চ বরিশালে। বরিশালের কুলকাঠিতে ধর্মান্ধ একদল হিন্দু ইচ্ছে করে নামাযের সময় একটি মসজিদের সম্মুখ দিয়ে বাজনা বাজিয়ে যেতে জিদ ধরে। এলাকার মুসলিমরা নামাযের সময় মসজিদের সামনে বাজনা না বাজাতে অনুরোধ করেন। হিন্দুরা মুসলিমদের অনুরোধের প্রতি কর্ণপাত না করে নামাযের সময় মসজিদের সম্মুখ দিয়ে বাজনা বাজিয়ে সদলবলে যাত্রা শুরু করেন। মুসলিমরা বাধ্য হয়ে বাধার সৃষ্টি করেন। খবর পেয়ে বৃটিশ সরকারও হিন্দুদের সমর্থনে একদল পুলিশ পাঠিয়ে দেন ঘটনাস্থলে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ই.এন. ব্লান্ডির নির্দেশে পুলিশরা মুসলিমদের উপর গুলী ছোঁড়ে। পুলিশের সমর্থন পেয়ে হিন্দুরা দা-ঝাটা-বর্শা দিয়ে মুসলিমদের উপর আক্রমণ চালায়।
পুলিশের গুলীতে ও উগ্র হিন্দুদের আক্রমণে ১৮ জন মুসলিম ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আহত প্রায় ১৫৫ জন। এ ঘটনার খবর পেয়ে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক কলকাতা থেকে দ্রুত চলে আসেন বরিশালে। বরিশাল এসে হক সাহেব প্রতিবাদ সভার ব্যবস্থা করেন। বক্তৃতার মঞ্চে দাঁড়িয়ে ম্যাজিস্ট্রেট ব্লান্ডির নির্দেশ ও পুলিশের গুলীর প্রতিবাদ জানান। দুঃখে- ক্ষোভে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক বলেন, “ব্লান্ডির নামটি লেট্রিনের বেড়ায় লিখে এ নামটির উপর সকাল-বিকাল দু'বার ঝাড় মারলেও তার অপরাধের উপযুক্ত শাস্তি হবে না। ব্লান্ডি চায় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বাঁধিয়ে ভারতে বৃটিশ শাসন অক্ষুণ্ণ রাখতে।“ এ রক্তঝরা ঘটনার জন্যে শেরেবাংলা বক্তৃতা করতে করতে এক সময় জিহাদী স্পিরিটে টেবিলের উপর সজোরে কিল মারেন। কিলের চোটে টেবিল ফেটে চৌচির হয়ে যায়।
পরিশেষে এ কে ফজলুল হক ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশ ও পুলিশী আক্রমণের বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা দায়ের করেন এবং দীর্ঘদিন নিজে মামলা পরিচালনা করে মুসলিমদের বিজয়ী করেন। অতঃপর এ কে ফজলুল হক বরিশালের হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে একটি সম্প্রীতি চুক্তি স্থাপন করে দেন। হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে এ সন্ধি চুক্তিটি বরিশাল চুক্তি নামে খ্যাত। বরিশাল চুক্তির শর্ত ছিল, “বরিশালের হিন্দু-মুসলিম সম্মিলিতভাবে দেশের স্বাধীনতার জন্যে সংগ্রাম করবেন। ধর্ম পালনে কেউ কাউকে বাধা দিতে পারবেন না। উভয় পক্ষ একে অপরের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন।“ শেরে বাংলা এ কে ফজলুল প্রতিষ্ঠিত বরিশাল চুক্তির ফলে এ ঘটনার পর থেকে অর্থাৎ ১৯২৭ সাল থেকে ৪৭-এর দেশ বিভাগ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আর কোনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়নি বরিশালে।
শেরে বাংলা এ কে ফজলুল মুসলিমদের জান-মাল ধর্ম অধিকার রক্ষার সংগ্রাম করতেন নিজের দায়িত্ব মনে করে। তখন ভারতব্যাপী বৃটিশবিরোধী আন্দোলন চলছে। হিন্দুরা হিন্দুর নেতৃত্বে ভারতের স্বাধীনতা চাচ্ছেন। মুসলিমরা চাচ্ছেন মুসলিমদের ন্যায্য অধিকার। বিভিন্নমুখী আন্দোলনের মুখে ইংরেজরা ভারতবাসীকে সীমিত রাজনৈতিক অধিকার দিতে মনস্থ করেন। বৃটিশ সরকারের এ নমনীয় মানসিকতার ফলে ১৯৩৭ সালে ভারতবর্ষে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। “১৯৩৭ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বাংলায় এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে মুসলিম লীগ ও কৃষক প্রজা পার্টি কোয়ালিশন সরকার গঠন করে। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক মনোনীত হন বাংলার প্রধানমন্ত্রী।“ ১৯৩৭ এর নির্বাচনে পাঞ্জাবে মুসলিম লীগ নেতা স্যার সেকান্দার হায়াত খান পাঞ্জাবের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। একমাত্র বাংলা ও পাঞ্জাব ব্যতীত ভারতের বাকি সব ক'টি প্রদেশে কংগ্রেস বিজয়ী হয়। পাঞ্জাব ও বাংলা ছাড়া অপর প্রদেশগুলোয় তাই কংগ্রেসী সরকার গঠিত হয়। বিজয়ী হয়েই কংগ্রেসী হিন্দুরা কংগ্রেস শাসিত প্রদেশগুলোয় শুরু করে মুসলিম উৎপীড়ন। কংগ্রেসী হিন্দুরা আযান ও গরু কোরবানী নিষিদ্ধ করার দাবি জানায়। ইচ্ছে করে নামাযের সময় মসজিদের সম্মুখ দিয়ে বাজনা বাজিয়ে যেতে শুরু করে। তদুপরি মুসলিম বিদ্বেষী হিন্দুরা দল বেঁধে অনেক জায়গায় মুসলিমদের উপর আক্রমণ চালায়। তারা মুসলিমদের ধন-সম্পদ লুট করে নিতে থাকে। দখল করে নিতে থাকে মুসলিমদের ভিটামাটি। এ প্রেক্ষাপটে ১৯৩৭ সালের ১৫ অক্টোবর লখনৌতে মুসলিম লীগের একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলোর মুসলিম নির্যাতনের খবর উপস্থাপিত হয়। বাংলার প্রধানমন্ত্রী মজলুম মুসলিমদের বন্ধু দুঃসাহসী এ কে ফজলুল হক কংগ্রেস শাসিত প্রদেশগুলোয় হিন্দু কর্তৃক মুসলিম নির্যাতনের বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরে কংগ্রেসী শাসকদের কাছে তার প্রতিকার দাবি করেন। বক্তৃতা করতে করতে একসময় এ কে ফজলুল হক বাঘের মতো হুংকার দিয়ে ঘোষণা করেন, “কংগ্রেস শাসিত প্রদেশগুলোয় অতিসত্বর মুসলিম নির্যাতন বন্ধ না হলে আমরা বাংলার বুকে তার প্রতিশোধ নেব।“ বাংলার প্রধানমন্ত্রী জননেতা ফজলুল হকের এ ঘোষণা শুনে উপস্থিত মুসলিম জনতা সোচ্চার কণ্ঠে শ্লোগান তুলেন, “শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক-জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ।“
১৭৯৩ সালে বড়লাট কর্নওয়ালিশ ভারতবর্ষে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ভিত্তিক জমিদারী প্রথা চালু করেন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা চালু করে বৃটিশ সরকার ভারতবাসীকে দু'ভাগে ভাগ করে দেন। এক ভাগ হয় জমিদার তথা বৃটিশ সরকারের আজ্ঞাবহ খয়ের খাঁ। অপর ভাগ হয় ভূমিদাস তথা জমিদারদের আজ্ঞাবহ প্রজা। জমিদারদের সরকারের দেয়া ‘সূর্যাস্ত আইন' মানতে হত। প্রজাদের মানতে হতো ‘জমিদারদের দেয়া আইন-আদেশ। সূর্যাস্ত আইন হলো বছরের একটি নির্দিষ্ট দিন সূর্যাস্তের পূর্বে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ খাজনা সরকারকে জমিদারদের অবশ্যই দিতে হবে। এ চিরস্থায়ী জমিদারী প্রথা প্রবর্তন করে বৃটিশ সরকার দোর্দন্ড প্রতাপে শোষণ ও শাসন চালায় ভারতবাসীর উপর।
প্রজারা নিজেদের ফলানো ফসলের একটি ভাগ জমিদারকে দিতে বাধ্য থাকতেন। তদুপরি জমিদাররা সরকারকে বছরে যে খাজনা দিতেন তা প্রজাদের কাছ থেকে আদায় করেই দিতেন। এছাড়াও জমিদাররা নিজেদের স্বার্থে প্রজাদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রকার কর আদায় করতেন। জমিদাররা প্রজাদের কাছ থেকে যে সকল কর আদায় করতেন তার মধ্যে ছিল, করদারী, নজরানা, তহুরী, পার্বণীয়, সেলামী, পুলিশ খরচা ইত্যাদি। এছাড়াও জমিদার হিন্দু হলে এবং প্রজা মুসলিম হলে, মুসলিম প্রজাকে দাড়ি রাখতে হলে তার জন্যও জমিদারকে একটি কর দিতে হত। মুসিলম প্রজাদের মুসলমানী নাম রাখতে হলেও হিন্দু জমিদারকে একটি কর দিতে হত। মুসলিম প্রজাদের পুত্র সন্তানদের খৎনা করাতে হলেও হিন্দু জমিদাকে একটি কর দিতে হত।
জমিদারদের এইসব কর আদায় করতে বিলম্ব হলেই জমিদার প্রজাদের উপর চালাতো অত্যাচার। জমিদার তার চামচা বাহিনী পাঠিয়ে প্রজাদের ঘরের মালামাল কেড়ে আনত। কাউকে কাউকে জমি থেকে উচ্ছেদ করত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রজার সুন্দরী যুবতী মেয়েকে জমিদারদের ‘খেদমতে' পাঠাতে বাধ্য করত।
শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের দুঃসাহসী ভূমিকার একটি উদাহরণ। ১৯২১ সালের কথা। ভারতে বসবাসকারী একজন পাদ্রী ‘এপিকেলি' পত্রিকায় রাসূল (সা) বিরূপ সমালোচনা করে একটি প্রবন্ধ লেখেন। পাদ্রীর রাসূল (সা) বিরোধী লেখায় মুসলিমরা মনে বড় ধরনের আঘাত পান। মর্মাহত আলেম সমাজ তাই শান্তিপূর্ণভাবে সভা করে উক্ত আপত্তিকর লেখার প্রতিবাদ করেন। কিন্তু বৃটিশ সরকার আলেমদের এ নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদের কোনো গুরুত্বই দেননি। প্রতিবাদ করেও কোন ফল হচ্ছে না দেখে বাধ্য হয়ে মুসলিমরা মিছিল সমাবেশের পথ বেছে নেন। সমাবেশের জন্যে স্থান, তারিখ নির্দিষ্ট করা হয়। সমাবেশের স্থান নির্ধারিত হয় কলকাতার জাকারিয়া স্ট্রিটের “বড় মসজিদ”। সিদ্ধান্ত হয়, সবাই মিছিল সহকারে এসে বড় মসজিদে সমবেত হবেন। পরে বড় মসজিদ থেকে মুসলিম নেতৃবৃন্দ লাট ভবনে গিয়ে প্রতিবাদ জানাবেন লাট সাহেবের কাছে। সমাবেশের দিন সমাবেশে যোগদানের জন্যে মুসলিমরা জিহাদী মনোভাব নিয়ে রাস্তায় নামেন। বিভিন্ন স্থান থেকে মুসলিম জনতা দলে দলে মিছিল সহকারে ছুটে আসতে থাকেন বড় মসজিদের দিকে। মিছিল থেকে স্লোগান ওঠে ‘নারায়ে তকবীর-আল্লাহু আকবর'। মিছিলে স্লোগানে কলকাতার আকাশ-মাটি প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। বাংলার লাট সাহেব তখন লর্ড কারমাইকেল। লাট সাহেবের লাট ভবনও বড় মসজিদ থেকে অনতিদূরে জাকারিয়া স্ট্রিটে। অবস্থা বেসামাল দেখে লাট সাহেব আপোসের জন্য শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হককে লাট ভবনে ডাকেন। অপরদিকে আন্দোলন দমনে রাস্তায় আর্মি মোতায়েন করেন। কামান ফিট করেন লাট ভবনের সম্মুখে। কামানের মুখ রাখা হলো বড় মসজিদের দিকে। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল লাট ভবনে পৌঁছে জানতে পারেন লাট সাহেব গুলী করে মিছিল ছত্রভঙ্গ করার আদেশ দিয়েছেন। গুলীও ছোঁড়া হচ্ছে মিছিলের উপর। গুলীর আদেশ হয়ে গেছে শুনে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক আর এক মুহূর্তও লাট ভবনে বসে থাকেননি। ক্ষিপ্রগতিতে বেরিয়ে আসেন লাট ভবন থেকে। চলে আসার পথে লাট সাহেবের মুখের ওপর বলে আসেন, “গুলীর আদেশ যখন হয়ে গেছে, তখন আর আপোস কিসের...???” কামানের সম্মুখে এসে বুক পেতে দাঁড়িয়ে সোচ্চার কণ্ঠে বলেন, “আমার বক্ষ ভেদ না করে একজন মুসলমানের গায়ে গুলী লাগতে দেবো না। এই বুক পেতে দিলাম। যদি সাহস থাকে এ কে ফজলুল হকের বুকের উপর গুলী ছুঁড়। বৃটিশ রাজত্ব আজ এখানেই খতম হয়ে যাক।“
লাট সাহেব বিপদ সম্মুখে দেখে সাথে সাথে পূর্বের আদেশ সংশোধন করে দেন। নতুন করে আদেশ জারি করেন। সংশোধিত আদেশে বলা হয়, (১) সরকার আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতি পূরণ করবে। (২) এপিকেলির সকল আপত্তিকর সংখ্যা বাজেয়াপ্ত করা হলো। (৩) এখন থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে প্রবন্ধ লেখক পাদ্রীকে বিলাত পাঠানো হবে।
আদেশের মর্ম অনুসারে কিছুক্ষণের মধ্যেই কামান সরিয়ে নেয়া হলো। মিলিটারী রাস্তা থেকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া হলো। হক সাহেবের কাছে আদেশটির অনুলিপিও পৌঁছিয়ে দেয়া হলো। বৃটিশ সরকার নতি স্বীকার করলেন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের দুঃসাহসের কাছে।
১৯৭৪ সালের আগে এই নির্যাতনের মাত্রা কতটা ভয়াবহ ছিল তার একটা জ্বলন্ত নজির হলো আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার। সে সময় চুরুলিয়া কাজী পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন কাজী আলী হোসেন। গ্রামের নির্যাতিত কৃষক মজুরদের মহাজনী ও জোতদারী ঋণের বোঝা থেকে বাঁচানোর জন্য তিনি ঋণ সালিশি বোর্ড নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সাম্প্রদায়িক ভেদ-বুদ্ধিচালিত কংগ্রেস রাজনীতি এই বিষয়টাকে ভালোভাবে নেয়নি। তারা তাঁকে ১৯৫১ সালের ৭ জানুয়ারি নিজের বাড়ির সামনেই নির্মমভাবে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার আজও পাওয়া যায়নি।
সবচেয়ে যে জিনিসটা ভয়ঙ্কর তা হলো নজরুল পরিবারকে ভারতের তত্কালীন কংগ্রেস সরকার চিহ্নিত করে পাকিস্তানের গুপ্তচর হিসাবে। ১৯৬৩ সালে এল সরাসরি আঘাত রাজনৈতিক দিক থেকে। পাকিস্তানের দালাল আখ্যা দিয়ে জেলে পাঠানো হয় নজরুলের ভ্রাতুষ্পুত্র কাজী মজহার হোসেনকে। দেশদ্রোহিতার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় নজরুলের আরেক ভ্রাতুষ্পুত্র কাজী আলী রেজাকে। সরকারি অভিযোগে বলা হয়েছিল, “চুরুলিয়া গ্রামে অভিযুক্তরা গভীর রাতে পাকিস্তানি হেলিকপ্টার এনে দেশের সব গোপন দলিল পাকিস্তানকে দিয়ে দিয়েছিল।“ এই উদ্ভট ও হাস্যকর অভিযোগের জবাবে কবির ভ্রাতৃবধূ শহীদ আলী হোসেনের ক্ষুব্ধ জননী পশ্চিমবঙ্গের সেই সময়কার প্রধান কংগ্রেস নেতা অতুল্যঘোষকে বলেছিলেন, “আমার ছেলেরা যদি দেশদ্রোহী হয়, তাহলে প্রকাশ্য রাজপথে তাদের গুলি করে মারুন। না হলে সসম্মানে ছেড়ে দিন। আমার ছেলে যদি দেশদ্রোহী হয় তাহলে ভারতীয় সেনাবাহিনীও তাই।“ তারপর অশেষ অত্যাচার নির্যাতন আর রিমান্ডের অনবরত জিজ্ঞাসাবাদের যন্ত্রণা সয়ে এরা মুক্তি পান।
কাজী নজরুল ইসলামকে ভারতীয়রা পাকিস্তানি চেতনার কবি বানিয়ে ফেলেছিল সে সময়। পরিস্থিতির এতটাই অবনতি হয়েছিল যে, ভারতীয় শাসকরা রেডিও-টেলিভিশনে নিষিদ্ধ করে দেয় নজরুল সঙ্গীতের প্রচার ও পরিবেশন। ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত এই হতবাক করা নিষেধাজ্ঞাটি বলবত ছিল। ১৯৭০ সালেও আঘাত আসে কাজী নজরুল ইসলাম পরিবারের ওপর। প্রিভেনটিভ পাওয়ার অ্যাক্টে আবারও গ্রেফতার করা হয় কাজী নজরুল ইসলামের পরিবারের সদস্যদের। ১৯৭২ সালে সিআরপির (সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ) হামলায় ভণ্ডুল হয়ে যায় নজরুল জয়ন্তীর উৎসব। ১৯৭৪ সালে আবার গ্রেফতার করা হয় কবি পরিবারের সদস্যদের।
ভারতীয় দালালদের নির্মূল করতে হবে অবশ্যই রাজনৈতিকভাবে। সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে বয়কট করতে হবে এইসব দালালদের, একই সাথে দেশপ্রেম জাগাতে হবে সকল শ্রেণীর জনসাধারনের কাছে, আর রক্ষা করতে হবে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের প্রিয় এই মাতৃভূমিকে। আসুন আজ থেকেই শুরু করি এই নতুন অভিযান...।
আরোও দেখুনঃ http://onlinekhobor.com/article/news/8323
মাহফুয রহমান
গবেষক এবং সাংবাদিক
বিষয়: রাজনীতি
২৩৫৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন