‘যে খবর শোনার পর হাসিনা তারানকোর সঙ্গে বৈঠক করতে রাজি হননি'ঃ শফিক রেহমান

লিখেছেন লিখেছেন মাহফুয রহমান ২০ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০১:৩৭:১১ রাত

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট নিয়ে জাতিসংঘের রাজনীতি বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো সম্প্রতি ঢাকা সফর করে গেছেন। তারানকোর সফরের সফলতা বা ব্যর্থতা,দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তারানকো ফিরে যাওয়ার সময় প্রেস ব্রিফিং-এর বক্তব্য- এসব বিষয়ে আমরা কথা বলেছি বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক শফিক রেহমানের সঙ্গে। তার পূর্ণ সাক্ষাতকারটি

প্রশ্ন:: জাতিসংঘের রাজনীতি বিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো ৬ দিন সফর শেষে ঢাকা ছেড়ে গেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াসহ নাগরিক সমাজ, নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবং প্রধান রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করেছেন। ফিরে যাওয়ার আগে তিনি সংবাদ সম্মেলনে সংকট সমাধানে সমঝোতার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, তবে সমাধানের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলেননি। আসলে তার এ সফরের সময় সমাধানের কোনো পথ পাওয়া গেছে কি-না নাকি সফর ব্যর্থ হয়েছে?

শফিক রেহমান: দেখুন, এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে, জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিবের ঢাকা সফর ব্যর্থ হয়েছে। তারানকোর সফর কেন ব্যর্থ হয়েছে সে বিষয়ে আমি অসমর্থিত সুত্র থেকে কিছু জানি যা দেশবাসীর অনেকেই জানেন না। তারানকো ঢাকা ছাড়ার আগে শেষ মুহুর্তে আওয়ামী লীগের চারজন এবং বিএনপির চারজন নেতাকে নিয়ে যে মিটিং করেন সে মিটিং নিয়ে কিছু কথা বলব।

মিটিংটি নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই ঘন্টা পরে শুরু হয়। কারণ, ওই মিটিংয়ে যোগ দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর নাম ছিল না। পরবর্তীতে তোফায়েল আহমেদের ইনসিসটেন্সে আমু সেখানে ইনক্লুড হন এবং মিটিং-এ যোগ দেন। আওয়ামী লীগে একজন যোগ হওয়ায় বিএনপিতেও ড. মইনকে খানকে নিয়ে তাদেরও চারজন করা হয়। ফলে দু’পক্ষের চারজন করে মোট আটজনকে নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন তারানকো। তারানকো ঢাকা ত্যাগের কিছুক্ষণ আগে অর্থাত তার প্রেস কনফারেন্সের কিছুক্ষণ আগের এই বৈঠকটিতে দেখা যায়, জানা যায় এবং শোনা যায়, তোফায়েল ও আমুর বক্তব্য বা রায় বিএনপির চারজনের বক্তব্যের কাছাকাছি ছিল। অর্থাত সেখানে ৪ যোগ ৪ থাকলেও ভোটাভুটি যদি নেয়া হতো তাহলে দেখা যেত ৬ জনের মত এক এবং ২ জনের মত ভিন্ন। আর ওই ভিন্নমতের দুজন হচ্ছেন- গওহর রিজভী ও সৈয়দ আশরাফ। এই তথ্য আমি অসমর্থিত সূত্র থেকে পেয়েছি।

তো এই ঘটনার পর ভিন্নমতের দু’জনের যেকোনো একজন ফোন করেন শেখ হাসিনাকে। ফোনে বৈঠকের পরিস্থিতির কথা জানিয়ে বলেন- সামগ্রিক পরিস্থিতি কিন্তু আপনার বিপক্ষে চলে যাচ্ছে। এই খবর শোনার পর শেখ হাসিনা তারানকোর সঙ্গে বৈঠক করতে রাজি হননি। আর এটাই হচ্ছে তারানকোর সঙ্গে শেখ হাসিনার দেখা না করার মূল কারণ। তারানকোর মিশন যে ব্যর্থ হয়েছে সেটার প্রমাণ কিন্তু এ থেকে পাওয়া যায়। তবে এ ঘটনার ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকে কেউ কিছু বলেননি বা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও স্বীকার করা হয়নি।

তবে এ তথ্য ছাড়াও আমরা বাইরে থেকে যা দেখতে পাচ্ছি শেষ মুহূর্তেও তারানকো সংকট সমাধানের ব্যাপারে তেমন কিছু বলতে পারেননি। তিনি বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। তো এ পরিস্থিতির আলোকে আপাতদৃষ্টিতে বলতেই হবে যে তারানকো সফল হননি। আর তারানকো নিজেই বলেছেন- তার সফরে সীমিত সাফল্য এসেছে। তার সাফল্য হচ্ছে- দুপক্ষকে আলোচনার টেবিলে বসাতে পেরেছেন। তবে আমি বলব আলোচনার টেবিল থেকে যদি কোনো সমাধান বেরিয়ে না আসে তাহলে সে আলোচনা ব্যর্থ।

তারানকো সম্পর্কে আমি আরেকটা কথা বলতে চাই। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের আরো নিরপেক্ষ হতে বলেছেন। আজকে বাংলাদেশের অধিকাংশ মিডিয়া বর্তমান সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। আর এসব মিডিয়া যে খবর প্রচার করছে সেটা আপনারা হয়তো প্রবাস থেকে সব দেখতে পাচ্ছেন না। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, ঢাকা শহর গোটা দেশ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। সামগ্রিক পরিস্থিতি এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না আসলে কি হচ্ছে। মিডিয়াগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সরকারকে অথবা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার জন্য যেভাবে নিউজ প্রচার করছে তা এই অল্প ক'দিনের মধ্যে তারানকো বুঝতে পেরেছেন। আর সে কারণেই তিনি সাংবাদিকদের নিরপেক্ষ হওয়ার উপদেশ দেন। আমি আশা করি দেশের মিডিয়াগুলো বিশেষ করে রেডিও, টেলিভিশন এবং প্রিন্ট মিডিয়াগুলো তারানকোর এ কথাটা গুরুত্বের সঙ্গে নেবেন।

প্রশ্ন: তারানকো বেশ কয়েকটি কথা বলেছেন- সংলাপ এগিয়ে নিতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে। সহিংসতা বন্ধ ও বিরোধীদলের নেতাদের জরুরিভাবে মুক্তির কথাও বলেছেন তিনি। একইসঙ্গে তিনি নির্বাচনী তফসিল পেছানোর কথা বলেছেন। এগুলোর সবই এখন সরকারের হাতে বলে মনে করার কারণ রয়েছে। সরকার কি এগুলো করবে?

শফিক রেহমান: তারানকো ফিরে যাওয়ার সময় যে কথাগুলো বলেছেন যা আপনি প্রশ্নের মধ্যে এনেছেন- এগুলো সরকার করবে বলে আমার মনে হয় না। কারণ হচ্ছে- বর্তমান সরকার একটি মৌলবাদী দল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আমি এখানে সুস্পষ্টভাবে আওয়ামী লীগের কথা বলছি। আওয়ামী লীগ ৪২ বছর আগেকার ধ্যান-ধারণার মধ্যে রয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের পোশাক থেকে শুরু করে ধ্যান-ধারণা পুরোটাই মৌলবাদী। তারা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারেনি। আমরা শুনতে পারছি- বাংলাদেশ একদলীয় শাসনের দিকে যাচ্ছে। দেশে যখন এই অবস্থা বিরাজ করছে, তখন আমি মনে করি না সরকার নমনীয় হবে।

প্রশ্ন: প্রসঙ্গক্রমে জানতে চাইবো, তারানকোর সফর ব্যর্থ হলে দেশের পরিস্থিতি আরো অনিশ্চিত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে। বিরোধী জোটের অবরোধ আন্দোলন চলছে। আপাতত মীমাংসার কিছু দেখা যাচ্ছে না। তাহলে দেশ কি সেই দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বা যাবে? এখানে বলে রাখি- সেনা শাসন বা জরুরি অবস্থা নিয়েও কিন্তু একটা গুঞ্জন রয়েছে।

শফিক রেহমান: দেখুন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের সময় জুন মাস পর্যন্ত আমি দেশে ছিলাম। তারপর যখন আমি বিবিসিতে ছিলাম তখন লক্ষ্য করেছি, বাংলাদেশে আজকে যা হচ্ছে বা ঘটছে তখন সেরকমটি ঘটেনি। আজকে সারা বাংলাদেশ জুড়ে লড়াই চলছে। জনসাধারণের মধ্যে ফাইট-ব্যাক বা লড়াই করার যে অবস্থা সেটাই দেখতে পাচ্ছি দেশজুড়ে। তবে রাজধানী ঢাকা শহরের চিত্র কিন্তু ভিন্ন। ঢাকা শহরের চিত্র দেখে গোটা দেশের পরিস্থিতি বোঝা সম্ভব না।

মুক্তিযুদ্ধের সময় যখন আমি প্রথমে ঢাকাতে ছিলাম তখন বুঝিনি আসলে সারাদেশে কি হচ্ছে। আমি ১৯৭১ এর মে মাসে ঢাকার বাইরে গিয়ে বুঝতে পারলাম দেশের মুড ভিন্ন রকমের। আর তখনই আমি বিশ্বাস করেছিলাম দেশ স্বাধীন হবে। তারপর ঢাকায় ফিরে মুক্তিযুদ্ধে যাবার সিদ্ধান্ত নেই। আর এখন আমি ঠিক সেই একই জিনিস দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশে। ঢাকার নাগরিক সমাজ এবং শাসক বুঝতে পারছে না দেশে কি হচ্ছে?

এখানে একটি কথা মনে রাখা দরকার। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকার ড. মালেককে দিয়ে এক ধরণের সরকার এখানে প্রতিষ্ঠা করেছিল। ঠিক সেই একইভাবে বর্তমান আওয়ামী লীগ এক ধরনের সরকার প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তা দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।

আওয়ামী লীগকে মাঝে মাঝে বলতে শোনা যায়, সারাদেশে আগুন জ্বলবে, বিক্ষোভ হবে, শ্লোগান হবে। এ ধরনের কথা তারা বলে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে কখনই সারাদেশে আগুন জ্বলেনি। এই প্রথম আমি দেখতে পাচ্ছি প্রতিটি জেলা, প্রতিটি উপজেলা এমনকি গ্রামে-গঞ্জেও মানুষের মধ্যে প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে। এটাকে মানুষ এখন অস্তিত্বের সংগ্রাম হিসেবে দেখছে। এর পেছনে দুটো কারণ রয়েছে। প্রথম কারণটি হচ্ছে- মানুষ মনে করছে তাদের ধর্মের ওপর আঘাত করা হচ্ছে। আর দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে- রাজনৈতিক অস্তিত্ব অর্থাত দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা নিয়ে দেশের মানুষ শঙ্কিত। কারণ বাংলাদেশের মানুষ দেখতে পাচ্ছে, প্রতিবেশী দেশের পররাষ্ট্রসচিব এখানে এসে সরাসরি আমাদের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছেন।

আর ভারতীয় কিছু মিডিয়া যেমন 'Times of India' এসব হস্তক্ষেপের পক্ষে লিখছে। আবার 'The Hindu' এ বিষয়ে অন্যরকম লিখেছে। Hindu পত্রিকার নামটি যদিও হিন্দু কিন্তু তাদের রিপোর্টিং-এর ধরন দেখে আমার কাছে মনে হয়েছে, অত্যন্ত প্রগতিশীল একটি পত্রিকা। তারা ভালো কথাই লিখছে। আর এই পরিস্থিতিতে দেশের মানুষ তাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হচ্ছে বলে মনে করছে। ফলে দেশে বর্তমানে দুটো লড়াই চলছে। একটি হচ্ছে ধর্মরক্ষার লড়াই। আর দ্বিতীয় লড়াইটি হচ্ছে ভারতের বিরুদ্ধে অর্থাত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য। আর তৃতীয় আরেকটি লড়াইও চলছে। সেটি হচ্ছে- দেশের মানুষ যে দলটিকে পছন্দ করে তাকে রক্ষার জন্য অথবা যাকে অপছন্দ করে তাকে বিদায় দেয়ার জন্য লড়াই করছে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশ এ মুহূর্তে জাতিসংঘের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য; এ কথা তারানকোও বলেছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে সর্বোচ্চ সংখ্যক সেনা রয়েছে বাংলাদেশের। এগুলো বাংলাদেশের অনেক বড় অর্জন। এখন যদি জাতিসংঘের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়ে যায় তাহলে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী মিশনে কোনো প্রভাব পড়তে পারে কি-না?

শফিক রেহমান: জ্বি, জাতিসংঘের উদ্যোগ ব্যর্থ হলে শান্তিরক্ষী মিশনে তার প্রভাব পড়তে পারে; আবার নাও পড়তে পারে। দুরকম বিষয় হতে পারে। তবে এটি নির্ভর করবে জাতিসংঘের ওপরে যে বড় শক্তি রয়েছে তার ওপরে। অর্থাত আমি বলতে চাচ্ছি আমেরিকার ওপরে এটি নির্ভর করবে। এখানে একটি কথা আমি নিয়ে আসব। ২০০৭ সালে ১/১১ যেটাকে বলা হয়; সে সময় এরকম একটি খবর বেরিয়েছিল যে, শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী নেবে না জাতিসংঘ। আর এরকম ধারনা সৃষ্টি হওয়ার ফলে মঈন উ আহমদের নেতৃত্বে সেনা সমর্থিত একটা ক্যু হয়েছিল ১/১১-এ।

তবে বর্তমান পরিস্থিতি কিন্তু অন্যরকম। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে গেছে। তবে আমি ক্যু'র কথা বা অন্যকিছু বলছি না। তবে যদি জাতিসংঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোনো কর্মকর্তা যান সেক্ষেত্রে তিনি কমপক্ষে ৬০ থেকে ৬৫ লক্ষ টাকা আয় করেন। আর সাধারণ একজন সৈন্য গেলে কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা আয় করেন। আর তারা দেশে ফিরে আসলে এই টাকাটা তাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দেয়। আর এ কারণে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা বা সাধারণ সেনারা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করেন। এখন বাংলাদেশে যদি অশান্তি লেগে যায় সেক্ষেত্রে জাতিসংঘ চাইলেও কি করে আমাদের সেনাবাহিনীকে বাইরে নিয়ে যাবে! কারণ তখন বাইরের লোক তো এ প্রশ্ন করবে- যে দেশে অশান্তি আছে সেই দেশ থেকে সেনাবাহিনী কিভাবে নেবে? তারা তাদের নিজেদের দেশেই তো শান্তি রক্ষা করতে পারছে না। সেক্ষেত্রে বিদেশে এসে তারা কি করে শান্তি রক্ষা করবে। ফলে জাতিসংঘ তখন একটা সংকটের মধ্যে পড়ে যাবে এবং তারা এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না। ফলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর যাওয়ার ব্যাপারটি বেশ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে বলে আমার ধারণা।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচন সম্পর্কে তারানকো বলেছেন, নির্বাচন প্রশ্নে জাতিসংঘের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। নির্বাচন হতে হবে সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু, সহিংসতামুক্ত ও গ্রহণযোগ্য। আসলে কি হতে যাচ্ছে নির্বাচনের ভাগ্যে? সরকার জাতিসংঘের অবস্থানের কাছে আপোষরফায় যাবে নাকি এই সহিংস অবস্থার মধ্যদিয়ে অনেকটা একতরফা নির্বাচন হবে?

শফিক রেহমান: দেখুন বাংলাদেশে এমন কোনো প্রধানমন্ত্রী নেই যিনি জাতিসংঘের কাছে দায়বদ্ধতা বোধ করেন। বাংলাদেশে বর্তমানে যিনি প্রধানমন্ত্রী আছেন তাকে আমি মেয়াদউত্তীর্ন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আখ্যায়িত করি। এই 'Date expired' প্রধানমন্ত্রী দায়বদ্ধতাবোধ করেন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কাছে। আর প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং বাংলাদেশ সফরে এসে নির্বাচনের ব্যাপারে সর্বদলীয় সরকারের কথা না বলে সরাসরি বলেছেন, সর্বোচ্চ দলীয় সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন হলে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে। আর বর্তমান প্রেক্ষাপট হচ্ছে, একটি দল নির্বাচন করবে আর সেটি ইন্ডিয়ার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। আর এভাবে যদি সবকিছু হয় তাহলে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী ঠিকই থাকবেন এবং ইন্ডিয়ার সঙ্গে তার সুসম্পর্ক বজায় থাকবে। সুতরাং সেরকম একটা নির্বাচন হতেই পারে!

প্রশ্ন: আপনার কাছে জানতে চাই- জাতিসংঘ দূত যে কাজগুলো করেছেন এবং বিদায়কালে যে কথাগুলো বলেছেন, এই কথা এবং এই কাজগুলো করতে এবং বলতে চেয়েছেন দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। কিন্তু তা কাজে আসেনি। অথচ এখন জাতিসংঘের দূতিয়ালিতে তার অনেক কিছুই হচ্ছে। এ বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন? এটি কি দেশের জনগণের প্রতি রাজনীতিবিদদের অনাস্থা নয়?

শফিক রেহমান: আমি ঠিক রাজনীতিবিদদের প্রতি অনাস্থা- একথা বলব না। কেননা যদি কোনো একটি দেশে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় তো সেখানে জাতিসংঘ এসে একটা সমাধানের চেষ্টা করবে। জাতিসংঘ তো সৃষ্টি হয়েছে সে কারণেই। জাতিসংঘ কিন্তু পৃথিবীর বহু দেশে শান্তি এনেও দিয়েছে। আর বাংলাদেশের সেনাবাহিনী জাতিসংঘের সেই শান্তি প্রক্রিয়ায় সাহায্য করেছে। ফলে জাতিসংঘের দূতিয়ালির বিষয়টিকে আমি খারাপ বলব না। তবে এখানে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে দুই প্রধান দলের মধ্যে নমনীয়তা থাকতে হবে। দুটি দলকে বুঝতে হবে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি কী এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা কতখানি জড়িত!

আমি এ ব্যাপারে দু’একটি বিষয় তুলে ধরতে চাই। বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ তার নয় বছরের শাসনামলের শেষ দিকে ১৯৯০ সালে যখন দেখলেন তিনি যদি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা না ছাড়েন তাহলে অনেক বেশি রক্তপাত হবে। তার বিরুদ্ধে উত্তাল দেশ। তিনি তখন ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হলেন। তখন কিন্তু জাতিসংঘের আসার প্রয়োজন হয়নি। তারা ছাড়াই সমাধান হয়েছিল।

এরপর ১৯৯৬ সালের একটি ঘটনা তুলে ধরব। বেগম খালেদা জিয়া সে সময় দেখলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে বিরোধীদলের দাবি যদি মেনে না নেয়া হয় তাহলে অনেক রক্তপাত হতে পারে। তখন বেগম খালেদা জিয়া বিরোধীদলের দাবি মেনে নিয়ে নির্বাচন করে এবং ভবিষ্যত নির্বাচনের সুন্দর ব্যবস্থা করে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিলেন। পরবর্তীতে তিনি সেই নির্বাচন ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচনও করলেন। তিনিও একটি উদাহরণ সৃষ্টি করলেন। সেখানেও কিন্তু জাতিসংঘকে আসতে হয়নি। অথচ খালেদা জিয়ার সৃষ্ট সেই উদাহরণটি কিন্তু আজ অনুসৃত হচ্ছে না। বর্তমান 'Date expired' প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিন্তু সেই বিষয়টি অনুসরণ করছেন না। তবে তিনি কেন করছেন না সেটা তিনি খুব ভালো করেই জানেন। আমরাও সে বিষয়টি অনুমান করতে পারি কিন্তু সেটা আমরা বলছি না।

সূত্র:রেডিও তেহরান

বিষয়: রাজনীতি

১৬১৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File