গোপন নিঃশ্বাস...!
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুয রহমান ০৬ অক্টোবর, ২০১৩, ০১:৩৭:১৬ রাত
শহুরে এক বন্ধুর গ্রাম্য বন্ধু তিনদিনের সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় আগমন করিল। সফরের হেতু...!!! অনেক অনুসন্ধান করিয়া জানা গেল, তাহার অগ্রজ ভ্রাতা’র সদ্য ভূমিষ্ঠ শ্যালক’কে আনুষ্ঠানিকভাবে একনজর দেখা (যদিও সফরের কারন বলিতেই বেচারা লজ্জিত হইয়া পড়িল)। সঙ্গে নবজাত শিশুর ব্যাবহার্য এবং প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি। বেয়াই কিংবা তালতো ভাই বলিয়া কথা!!!
যাই হোক, দেখাদেখির পর্ব শেষ হইবার পর তাহার মনে হইল আধুনিক যোগাযোগ ব্যাবস্থা ইন্টারনেট ব্যাবহার সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে অবহিত হইতে হইবে, কারন তাহার কাছে সহজে বহনযোগ্য অতি আধুনিক মাত্রার গণনাযন্ত্র (ল্যাপটপ কম্পিউটার) রইয়াছে। আর তাই তার ইন্টারনেট সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করিবার জন্য হাতি সড়ক (এলিফ্যান্ট রোড) এবং আইডিবি ভবনে ঢু-মারা। আর তাহার সঙ্গে পথ প্রদর্শক শহুরে বন্ধু। শহুরে বন্ধুর আবাস হইতে উক্ত স্থান দুইটিতে যাইবার একমাত্র উপায় যন্ত্রযান মানে গনপরিবহন। রাজধানীতে বসবাসকারী কারোরই ইহা আর অজানা নয় যে, গনপরিবহনে সামনের দিককার ৯টি আসন নারী, শিশু এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত। কিন্তু গ্রামের বন্ধু...?? সে তো আর এই রেওয়াজ জানেনা। রেওয়াজের কথা বলিবা মাত্রই রেগেমেগে একেবারে আগুন! সভ্য দেশ তার উপর নারী-পুরুষ সমঅধিকার হইলে এইখানে ব্যাতিক্রম হইবে কেন? মোক্ষম সময়ে কঠিন প্রশ্ন (যদিও অসম্ভব রকমের নারীবিদ্বেষী হইয়া গেল)। শেষ পর্যন্ত গনপরিবহনে উঠার পর দৃশ্যমান হইল, গ্রামের বন্ধু’র সর্বাধিক প্রিয় আসন হইল সামনের ৯টি আসন। গনপরিবহনে উঠা মাত্রই বন্ধু সামনের সারিতে নারী, শিশু এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত ৯টি আসনের যেকোন একটি আসনে নিজেকে অধিষ্ঠান করিয়া ফেলে। তাকে কোন প্রকারেই বিরত রাখা যাইতেছেনা আর শহুরে বন্ধু যায়পরনাই ক্ষিপ্ত। এই কারণে দুই বন্ধুর মাঝে সাময়িক মনমালিন্যও দেখা দিয়াছে। গ্রাম্য বন্ধুর এই ধরনের আসন প্রিয়তার কারণে শহুরে বন্ধু বেজায় চিন্তিত। চিন্তার কারন?? বন্ধুর ...... অবস্থা!!! যাই হোক, যখন কোন প্রকারেই বন্ধুকে নারী, শিশু এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত আসন হইতে অন্য আসনে স্থানান্তর করা যাইতেছিলনা আর প্রত্যেক গনপরিবহনে একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি শহুরে বন্ধুর ভয়ানক চিন্তার কারন হইয়া পড়িল।
মান-সম্মান বিসর্জন দিয়ে নারীকূলের মুচকি হাঁসিকে পাশ কাটিয়ে বন্ধুকে জোর পূর্বক আসন পরিবর্তন করানো শহুরে বন্ধুর চলমান দায়িত্ব হইয়া পড়িল। অবশেষে বিজয়ীর একখানা হাঁসি মারিয়া, ইন্টারনেট সম্পর্কে ব্যাপক রকমের জ্ঞান অর্জন এবং ইন্টারনেট পরিচালন সামগ্রী ক্রয় করনপূর্বক সংক্ষিপ্ত ঢাকা সফর শেষ করিয়া রাত্রির প্রথম প্রহরে কোন প্রকার অঘঠন ছাড়াই বন্ধুদ্বয়ের নিরাপদে স্বীয় আবাসে ফিরিয়া আসা। আর কোন প্রকার অঘটন না ঘটায় শহুরে বন্ধুর পরম করুণাময়ের নিকট ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা এবং গোপনে বুকভরিয়া নিঃশ্বাস নেয়া...। যাক বাবা এই যাত্রায় বাঁচা গেল...।
বিষয়: বিবিধ
১০৯২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন