আলোকিত বাংলাদেশ

লিখেছেন লিখেছেন মাহফুয রহমান ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০১:২৯:০৭ রাত

ঘটনা-১:

বঙ্গভবনে নিজের অফিসকক্ষে বসে আছেন বাংলাদেশের হবু রাষ্ট্রপতি। কিছুক্ষণ পর তার শপথ নেবার কথা। খুব আজব একটা সময় কাটছে তার, মাত্র গতকাল তার সহোদর ভাই মারা গিয়েছে। ভাইয়ের শোক কাটতে না কাটতেই সাভারে ভবনধ্বস। নতুন রাষ্ট্রপতির কাছে সবকিছু দুঃস্বপ্নের মত মনে হচ্ছে।

হঠাৎ লাল টেলিফোনটা বেজে উঠলো। এই মোবাইলের যুগেও ঐ ফোনটার গুরুত্ব অসম্ভব রকমের বেশি। সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাষ্ট্রীয় যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ফোনটা ব্যবহৃত হয়। হামিদ সাহেব ফোনটা রিসিভ করলেন। অপর প্রান্ত থেকে কিছু কথা ভেসে এলো, হামিদ সাহেব চুপচাপ শুনলেন। তিনি রাষ্ট্রপতি হতে যাচ্ছেন, সাবেক এক রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতির কাজ শুধু মাজার জেয়ারত করা। হামিদ সাহেব সেই অভ্যাস শুরু করেছেন। চুপচাপ থেকে সবার কথা শুনতে পারাটা বিরাট পরিশ্রমের কাজ। এককালের ছাত্রনেতা ও ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ এমপি হওয়া হামিদ সাহেবকে এসব অভ্যাস আয়ত্ত করতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে।

হামিদ সাহেব ফোন রেখে অফিসরুম থেকে লিভিংরুমে চলে এলেন। নির্দেশনা এসেছে, ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ফিটফাট হয়ে অনুষ্ঠানে যোগদান করতে হবে। রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেয়ার সময় হয়ে এসেছে, হামিদ সাহেবের বিশাল রাজনৈতিক জীবনের শেষ ও সর্বোচ্চ প্রাপ্তি।

কি মনে করে যেন হামিদ সাহেব টেলিভিশনটা চালু করলেন। হিন্দি ভালো বোঝেন না বলে স্ত্রীর সাথে সিরিয়াল দেখা হয় না তার, ঘুরেফিরে সবগুলো বাংলা চ্যানেলে আজ একই দৃশ্য দেখাচ্ছে। হামিদ সাহেব চুপচাপ দেখলেন, কিছু বললেন না। পাশে দাঁড়িয়ে তার পিএ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল, স্যার এভাবে টিভি দেখে সময় নষ্ট করলে অনুষ্ঠানের কি হবে?

একপর্যায়ে হামিদ সাহেব উঠে দাঁড়ালেন, টেবিলে ফিরে লাল টেলিফোনটা তুলে কিছু নির্দেশ দিলেন। ফোনটা রেখে পিএকে বললেন, ‘আজকের সব প্রোগ্রাম ক্যান্সেল।’

পিএ চোখ আকাশে তুলে বলল,’তাহলে স্যার শপথ গ্রহন বন্ধ থাকবে?’

‘হ্যাঁ’

‘তাহলে আপনি প্রেসিডেন্ট হবেন না?’

হামিদ সাহেব হাসলেন। তারপর ধীরকণ্ঠে উত্তর দিলেন,’এখন পর্যন্ত আমি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আছি, আমি যা করতে চাচ্ছি তার জন্য শপথ গ্রহন জরুরি না। আনুষ্ঠানিক শপথ পরে নিলে মহাভারত অশুদ্ধ হবে না, একদিনের জন্য নাহয় অস্থায়ী পদেই থাকলাম। আমার সামরিক উপদেষ্টাকে পাঠাও, সবাইকে জানাও আমি অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বলেছি, আর আগামী আধঘণ্টা এই রুমে কাউকে ঢুকতে দেবে না। অ্যাম আই ক্লিয়ার?’

পিএ মাথা নাড়ল। হামিদ সাহেবের এই কথার ধরনের সাথে সে পরিচিত, এখন হামিদ সাহেবকে প্রশ্ন করা যাবে না, শুধু আদেশ অনুযায়ী কাজ করতে হবে।

ঘটনা-২;

মন্ত্রীপরিষদ সচিব চিন্তিত। রাষ্ট্রপতি এইমাত্র শপথ গ্রহন অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন। তারচেয়েও চিন্তার কথা, তিনি ক্যাবিনেটের সবাইকে মিডিয়ায় কোন বক্তব্য রাখতে নিষেধ করেছেন। সামরিক বাহিনীর প্রধানদের সাথে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির বৈঠক চলছে। এসব লক্ষন সুবিধার না, একথা তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জানানো হয়েছে। সচিবকে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির কোন কাজে যেন ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে। সচিব বুঝতে পারছেন না, এটা কি রাষ্ট্রপতিকে হাতে রাখার কৌশল, নাকি সরকার রাষ্ট্রপতিকে স্বাধীনতা দিচ্ছে?

ঘটনা-৩:

এইমাত্র আইএসপিআর(সেনাবাহিনীর সমন্বিত যোগাযোগমাধ্যম) একটি অদ্ভুত বার্তা পেয়েছে। বার্তায় লেখা আছে-

‘সাভারে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সেখানে জরুরি ভিত্তিতে সেনা, আধাসামরিক ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীকে মোতায়ন করা হল। সম্ভাব্য জনবল ও যন্ত্রপাতি সরবরাহে রাষ্ট্রের সকল শক্তিকে নির্দেশ দেয়া হল। দ্রুততম সময়ে আটকদের মুক্ত করে চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য আর্মি মেডিকেল কোর এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের একটি টাস্কফোর্স কাজ করবে। সিএমএইচে রোগী স্থানান্তরের জন্য পাঁচটি হেলিকপ্টার অকুস্থলে কাজ করবে।’

ঘটনা-৪:

দৈনিক দ্বিতীয় আলো এবং একটি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকের মধ্যে কথোপকথনঃ

-কি অবস্থা ভাইজান? ভেতরে ঢুকতে পেরেছেন?

-(পিচ করে থুতু ফেলে) নাহ, ঢুকতে দিল না।

-তাহলে নিউজ কাভার করবেন না?

-বাইরে দাঁড়াইয়া যতটুকু পারি করব। আপনি ঢুকেন নাই?

-এক ফাঁক দিয়ে ঢুকেছিলাম। এক আহত মহিলাকে তার অবস্থা জিজ্ঞেস করলাম, সাথে সাথে এক আর্মি এসে এমন এক থাপ্পড় মারল, আমি তো দুই মিনিট চোখে ঘোলা দেখতেছিলাম…

-হঠাৎ এরকম শুরু হইল ক্যান? সাংবাদিকদের কোন গুরুত্ব নাই নাকি?

-শুধু এইখানে না, কাল আমাদের দ্বিতীয় আলো কুড়িল-তারকা পুরষ্কার অনুষ্ঠান নাকি সরকার বন্ধ কইরা দিছে? দেশে শুরু হইল কি? এইসব কি গজবের আলামত?

-হেফাজতের অবশ্য সেরকমই ধারনা। আমিও কিছু বুঝতেছি না… চলেন এখান থেকে সরে যাই, কখন আবার আর্মির লোক এসে ধাওয়া দেয়…

আমার ধারনা বাইরে এরকম অনেক ঘটনা ঘটছে… এতো মানুষ মারা যাচ্ছে, এরকম হওয়াই তো উচিৎ… অবশ্য আমি নিশ্চিত নই, নিশ্চিত হওয়ার কোন ব্যবস্থাও নেই… অনেকক্ষণ ধরে আটকে আছি রানা প্লাজার চতুর্থ তলায়। সময় কতক্ষন কেটেছে, জানি না। প্রতিটা সেকেন্ডকে একেকটা ঘণ্টার মত বড় মনে হচ্ছে… শ্বাস নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে… তবুও অপেক্ষা করছি… কখন দেয়াল ভেঙ্গে কোন এক দেবদূত উঁকি দিয়ে বলবে, আমরা এসে পড়েছি, ভয় নেই… আমি দেয়ালে কান পেতে আছি…

বিষয়: বিবিধ

১১১০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File