গল্পঃ এসো জাফর ইকবাল কে জানি part:1

লিখেছেন লিখেছেন মহাজাগতিক শয়তান ১৮ অক্টোবর, ২০১৩, ১২:৫৫:৪০ দুপুর

"লেখকের কথাঃ এটি কেবলই একটি গল্প, আমি খুব খুশি হব যদি এটা সত্যের সাথে ঘুণাক্ষরেও মিলে না যায়। আর কারো জীবনের কোন অংশের সাথে যদি মিলেও যায়, লেখক তার জন্য এতটুকুও দায়ী নয়"

বৃহস্পতিবার, বিকেল চারটার দিকে পরীক্ষা শেষ হল আসিফদের। এটা সেকেন্ড মিডের শেষ এক্সাম। সবাই যার যার মত হেলেদুলে ক্লাস থেকে বের হচ্ছে, কেউ কেউ আবার প্রশ্ন নিয়ে কথাবার্তা বলছে। এমন সময় কাকলী রিশাদকে বলে উঠল,

'অ্যাই রিশাদ, ফেব্রুয়ারি তো চলে আসল। বই মেলায় যাবি না?’'

'যাওয়ার ইচ্ছা তো আছে, কিন্তু সময় করতে পারব কিনা কে জানে। নেক্সট মানথেই তো থার্ড মিড।’'

'মিড টিড যাই থাকুক, এবার আমি যাবই। সেই কত বছর আগে গিয়েছিলাম। তাছাড়া মেলায় তো জাফর ইকবাল স্যার আসবে। জানিস তো, উনি আমার প্রিয় লেখক। কত স্বপ্ন দেখেছি উনাকে নিয়ে। ইশ, একবার যদি উনার সাথে দেখা করতে পারতাম, তাহলে পা ছুঁয়ে সালাম করতাম। এবার আর দেখা করার চান্সটা একদমই মিস করতে চাই না।'’

'‘হুম, স্যার আসলেই অসাধারণ। ঠিক আছে, সময় করে একদিন যাওয়া যাবে। কিন্তু স্যার কবে আসবে সেটা জানব কিভাবে?’'

'‘সে পরে জানা যাবে। বাট দেখা এবার উনার সাথে করতেই হবে।’'

কথা শুনে এগিয়ে এল আসিফ। '‘কার সাথে দেখা করবা কাকলী? বয় ফ্রেন্ড নাকি! কবে হইল?’'-আসিফের মুখে ধূর্ত হাসি, যেন বিশাল কিছু আবিষ্কার করে ফেলেছে।

'ধুর, তোমার খালি বাজে কথা। জাফর ইকবাল স্যারের কথা বলছিলাম।’'

'‘তোমরা এই জাফর ইকবাল লোকটার মধ্যে যে কি পাইছ আল্লাই জানে। এই লোকটা যে একটা ভণ্ড সেইটা জান?’'

'‘কী? তুমি জাফর ইকবাল স্যারকে ভণ্ড বল? তোমার কি মাথা টাথা ঠিক আছে?’'

'‘মাথা আমার ঠিকই আছে, বরং এই লোকটাই তোমাদের মাথা আওলায়া দিছে।’'

'‘হোয়াট ননসেন্স, এই রকম একটা ভাল মানুষের নামে এসব কথা বলার আগে নিজের দিকে একবার তাকাও। তুমি কোথাকার কে উনাকে নিয়ে কথা বলার? তুমি দেশের জন্য কি করেছ? উনি দেশকে কি দিয়েছেন তুমি জান? তুমি উনার লেখা পড়েছ একটাও? না পড়লে আগে পড় তারপর কথা বলতে আস।’'

'‘ইয়েস ম্যাডাম, আমি তার লেখা পইড়াই আপনের সাথে কথা বলতে আসছি। আপনাদের মত আমি নাম শুইনাই লাফাই না। জাফর ইকবাল কি লেখে আমার খুব ভালই জানা আছে। এই ব্যাটা যদি সাইন্স ফিকশন না লেখত তাইলে পোলাপান তো দূরে থাক, দেশের কেউই তারে চিনত না।’'

রিশাদ এতক্ষণ কথা শুনে যাচ্ছিল। এখন সেও যোগ দিল, '‘সাইন্স ফিকশন লেখায় খারাপের কি দেখলে?’'

আসিফ ভ্রু উঁচিয়ে বলল, ‘'সাইন্স ফিকশন খারাপ তা তো বলিনাই। কিন্তু উনি যে এইগুলা বিদেশি সাইন্স ফিকশন থেকে কপি মারছে সেইটা তো গোপন না করলেও হইত। তাছাড়া সিনেমা দেখেও এই ব্যাটা গল্প লেখে, আর চালায় নিজের নামে। এগুলা চুরি না? আর উনি যে দেশ নিয়া এত লাফালাফি করে- এইটা সস্তা পপুলারিটির জন্য। তার এই নকল দেশপ্রেম দেইখাই তোমরা কিছু না বুঝে তার পিছনে লাফাও।’'

রিশাদের মেজাজ এবার চটে গেল। সে হুংকার ছেড়ে বলল, '‘জাফর ইকবাল স্যারের নামে একটা বাজে কথাও বলবানা। না জেনে অনেক কথাই বলা যায়।’'

'‘তুমি তার সম্পর্কে এত কথা বল, তুমি কতটুকু জান? বল তো উনি কোন বিষয়ে কোথা থেকে পি এইচ ডি করছে? আর এখন কোন সাবজেক্টে পড়ায়?’'

কাকলী আগ বাড়িয়ে বলল, '‘জাফর স্যার আমেরিকা থেকে পি এইচ ডি করেছেন, কম্পিউটার সাইন্সে। আর উনি শাহজালাল ইউনিভার্সিটিতে সি এস ই তে পড়ান।’'

'‘বাহ, এই তোমাদের জানার বহর? শোন, উনি ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনে পি এইচ ডি করছে ফিজিক্স নিয়া। আর শাহজালালে পড়াইতেছে সি এস ই। এইটা ভণ্ডামি না?’'

কাকলী আরো এক কাঠি ক্ষেপে গিয়ে বলল, ‘'তাতে তোমার এত মাথা ব্যথা কেন? উনি না পড়াইতে পারলে কি উনারে এমনি এমনি সাস্টে নিয়োগ দিছে? তাছাড়া আমার এত কিছু জানার দরকার নাই। উনি একজন ভাল মানুষ, এইটাই কথা। এসব উল্টাপাল্টা কথা দিয়া উনার কোন ক্ষতি করতে পারবা না তোমরা, বুঝছ? ভাল হয়ে যাও।’'

'‘শোন, আওয়ামীলীগ করলে আর আমেরিকা-ইন্ডিয়ার দালালি করলে সাস্টে না, ডি ইউতেও নিয়োগ পাওয়া যায়। আর ছাত্রলীগ যা শুরু করছে, বুয়েটরেও তো বাদ রাখব না মনে হইতেছে।’'

'‘তাইলে ডি ইউতে গেল না কেন উনি? আর তোমার এত্ত বড় সাহস, তুমি উনাকে দালাল বল? তুমি কি রাজাকারদের দলে নাকি? রাজাকার ছাড়া তো অন্য কারও উনাকে দালাল বলার কথা না।’'

'‘এই যে, এইবার আসল জায়গায় আসছ। ঠিক এই জিনিসটা দিয়াই উনি তোমাগো মগজ ধোলাই করেন। কারও লগে কথায় না পারলেই পাইকারি হিসাবে রাজাকার বইলা দেওয়া। শোন, আগে ভালমত জাইনা আস তারপর আমার সাথে কথা বইলো। উনি কোন সাবজেক্টে পি এইচ ডি করছে সেইটাই বলতে পারলা না। তোমার নলেজ লেভেল কোথায় আছে ভালই বুঝতে পারতেছি। শোন, আমি আজকে তোমারে একটা লিংক পাঠাব ফেসবুকে, রিশাদ তোমারেও পাঠাব। সেইখানে দেইখো তোমাদের প্রিয় জাফর ইকবালের কাণ্ড-কীর্তি। তারপর জাইনাশুইনা আমার লগে কথা কইয়ো।’'

কাকলী রাগে আগুন হয়ে বলল, ‘'তোমার মত ছেলের সাথে আমার কথা বলতে যাওয়াই ভুল হইছিল। স্টুপিড কোথাকার। তোমার ওইসব ফালতু লিংক আমার কোন দরকার নাই।’'

রিশাদ অবস্থা বেগতিক দেখে কাকলীকে একটু দূরে সরিয়ে নিয়ে বলল, ‘'কাকলী, বাদ দাও তো। ঠিক আছে আসিফ তুমি লিংক পাঠিয়ে দিও, তোমার সাথে পরে কথা হবে'-এই বলে রিশাদ কাকলীকে নিয়ে ক্লাস থেকে বের হয়ে গেল।

'‘তাতো পাঠাবই, শোন চিল্লাচিল্লি কইরা কোনদিন সত্যরে লুকায়া রাখতে পারবা না। সত্য একদিন সবাই জানব, তখন কি বলবা দেখব নে’'- আসিফের ঠোঁটের কোণে হাসি।

আসিফ বেশ খুশি। মনে মনে ভাবে- এমন ধরা খাইল মাইয়াডা, আহারে। জিহ্বা দিয়ে চুকচুক শব্দ করতে লাগল সে। এগুলা আসলে এই রকমই, জানে না কিছু না, আবার চিল্লায়। বাসায় এসে কাপড় বদল করেই নেটে বসে গেল সে। জাফর ইকবালকে নিয়ে সে যে পেজটা খুলেছে সেটায় ইতোমধ্যে দু হাজারের বেশি মানুষ লাইক দিয়েছে। কিছু গালাগালিও খেতে হচ্ছে। তাতে বরং ভালই হয়েছে, আসিফ কমেন্ট মডারেশন করে না। জাফর ইকবালের চামচারা কি রকম গালাগালি করতে জানে সেটা মানুষকে দেখতে দেয়া দরকার। যত পারুক গালাগালি করুক, তাতে আখেরে তারই তো লাভ। পেজ খুলে দেখে, ওর ভাইয়া নতুন একটা পোস্ট দিয়েছে। রগরগে পোস্ট, জাফর ইকবালের মেয়ের অনেকগুলো ব্যক্তিগত ছবি। আহ্ কী মজা, মাইয়ার ফেসবুক প্রোফাইলের লিংকও আছে দেখি, এইবার খেলা জমবে ভাল। এখন কই যাবা সোনার চান্দুরা? তোমাগো জাফর চান্দুর দিন শেষ- মনে মনে ভাইয়াকে বাহবা দেয় আসিফ। ভাইয়া যে এসব কোত্থেকে পায় কে জানে! এই পেজের এডমিন আসিফেরই বড় ভাই শরীফ।

আসিফরা চার ভাই বোন। বাবা ইবনে সিনা হাসপাতালের ডাক্তার, মা গৃহিনী। ভাই বোনের মধ্যে সবার বড় শরীফ, ইসলামী ব্যাংকের যাত্রাবাড়ী শাখার ম্যানেজার। আর দুই বোনের মধ্যে বড় বোনের বিয়ে হয়েছে, পেশায় কলেজের শিক্ষক। ছোট বোন ডাক্তারি পড়ছে সিলেট রাবেয়া মেডিকেল কলেজে। আর আসিফ পড়ছে এক্সিস ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে, ই. ই. ই. তে, থার্ড ইয়ারে। বাবা ভেবেছিলেন মাদ্রাসায় পড়াবেন ছেলে-মেয়েদের। কিন্তু এখনকার দিনে বেঁচে থাকতে হলে কি আর শুধু ধর্মীয় শিক্ষায় চলে? ছেলে-মেয়েরা কী খাবে, সে চিন্তা অবশ্য তাঁকে করতে হয় না- টাকার অভাব তাঁর নেই। কিন্তু ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিতে হলে তথ্য প্রযুক্তি আর বিজ্ঞানের মাধ্যমেই সেটা করতে হবে- পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া মজিদ সাহেব সেটা খুব ভাল করেই জানেন। তাই বাংলা মাধ্যমেই পড়িয়েছেন সবাইকে।

রাত দশটার দিকে কাকলী ফেসবুকে ঢুকল। ঢুকেই দেখল আসিফের একটি মেসেজ। তাকে একটা পেজের লিংক দিয়েছে। সেখানে গিয়ে তো কাকলী হতভম্ব! একি! পেজটার নাম '‘জাফর ইকবালকে জানো’'!! আসিফ না বলেছিল জাফর ইকবালের কুকীর্তির কথা আছে ওই পেজে? কিন্তু লিংকে ক্লিক করতেই কাকলী দেখতে পেল ভেতরকার অবস্থা। পুরো পেজ জুড়ে জাফর ইকবালের বিষোদগার, তাঁর মেয়েকেও ছাড় দেয়নি ওরা। আর পেজটায় দেখা যাচ্ছে লাইকও করেছে দু হাজার মানুষ। এখনো দেশে এত রাজাকার আছে- মনে মনে ভাবল কাকলী। কাকলী একটা একটা করে পোস্ট পড়তে লাগল আর মাথায় চুল টানতে লাগল। এ কী করে সম্ভব? জাফর ইকবাল স্যার এমন কাজ করতেই পারেন না। স্যারের হিন্দী আইটেম সং এর সাথে মেয়েদের হাত ধরে নাচের ভিডিও, স্যারের মেয়ের বিদেশি ছেলেদের সাথে ছবি, তাও আবার মদের বোতল হাতে। নিশ্চই এগুলো সব মিথ্যে, রাজাকাররা তো সব সময় উনার পেছনে লেগেই থাকে। কাকলী পারলে ওদের টুটি ছিঁড়ে ফেলত। আপাতত সেটা যেহেতু করা যাচ্ছে না, তাই সে ঠিক করল পোস্টে গিয়ে আচ্ছামত ঝাড়ি দিয়ে আসবে। যে কথা সেই কাজ, কিন্তু কমেন্ট করা যাচ্ছে না কেন? ও আচ্ছা, পেজ লাইক না করলে তো কমেন্ট করা যাবে না। তাই পেজ লাইক করে সে কমেন্ট করা শুরু করল। কমেন্টের প্রতিউত্তরে আরো কমেন্ট। একটা কমেন্টের চেয়ে আরেকটা বেশি ঝাঁঝালো। যেভাবেই হোক, জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রুখতেই হবে। এই মানুষটার নামে রাজাকাররা এসব উল্টোপাল্টা বলে বেড়াবে আর কাকলীকেও তা মুখ বুজে সহ্য করতে হবে? তবে কমেন্ট করতে গিয়ে লক্ষ্য করল যে, বেশির ভাগ মানুষই কাকলীর মতই স্যারের পক্ষে, কেউ কেউ ইনিয়ে বিনিয়ে স্যারের পক্ষে যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করছে। কাকলী তাদের উদ্দেশ্যে কমেন্ট করল, ভাই এদেরকে নরমভাবে বললে হবে না, এই কুকুরগুলোকে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলতে হবে। এরা সমাজের জঞ্জাল। কেউ কেউ আবার তীব্র ভাষায় পোস্টগুলোতে গালিগালাজও করল। কাকলী তাদের কমেন্টে লাইক করল। যদিও কাকলীর এসব আপত্তিজনক ভাষা পছন্দ নয়, কিন্তু স্যারের জন্য সে সবকিছু করতে রাজি আছে।

এদিকে রিশাদ যখন ফেসবুকে ঢুকল, তখন রাত এগারোটা হবে। কাল ছুটি, আজ সারারাত চুটিয়ে মেয়েদের সাথে চ্যাট করা যাবে- মনে মনে ভাবল সে। ঢুকেই চোখে পড়ল আসিফের স্ট্যাটাস। ওই পেজের লিংক স্ট্যাটাসে দিয়েছে সে। তাছাড়া মেসেজও করেছে রিশাদকে। পেজে গিয়ে রিশাদের তো চক্ষু চড়কগাছ! হায় খোদা, এসব কী? যতই পড়ছে, ততই রিশাদের কান গরম হয়ে যাচ্ছে। জাফর ইকবাল স্যার কি সত্যি নাস্তিক? আর তাঁর বইয়ে এরকম মুসলমান বিদ্বেষ আছে এটা তো সত্যি! এই বইগুলো তো সেও পড়েছে। এভাবে তো কখনো চিন্তা করে দেখেনি। তাহলে কি ওদের কথাই ঠিক? আর স্যার নাকি বিদেশি বই থেকে কপি করে লেখেন, এটা তো রীতিমত অপরাধ। ইশ, আজ আর কোন মেয়ের সাথে চ্যাট করা হল না। কিন্তু সেটা ভেবে রিশাদের মন যতটা খারাপ, তার চেয়ে বেশি খারাপ হল জাফর স্যারের বিরুদ্ধে এতগুলো পোস্ট দেখে। সে নিজের চোখকে সত্যি বিশ্বাস করাতে পারছে না।

কয়েকদিনের মধ্যে এই পেজটির লিংক ক্লাসের মোটামুটি সবার কাছে চলে গেল এবং সবাই ওই পেজে গিয়ে নিজেদের মতামত জানিয়ে এসেছে। যে ছেলে-মেয়েগুলো স্যারের অন্ধ ভক্ত ছিল, তাদেরও অনেকেই এখন সংশয়ে ভুগছে। সত্যি তো, স্যারের কাছ থেকে বা স্যারের পরিবারের কাছ থেকে তাদের আশা যে অনেক বেশি ছিল, কিন্তু এখন এসব কী দেখছে? খোদা, এগুলো যেন সত্যি না হয়!

এদিকে আসিফ মহাখুশি। তার উদ্দেশ্য সার্থক হয়েছে, অন্তত তার ক্লাসের গাধাগুলোকে সে বোঝাতে পেরেছে যে জাফর ইকবাল একজন নব্যরাজাকারই শুধু না, সে বাংলাদেশের কলঙ্ক। আর তার পেছনে যারা ছোটে, তারা আরো মহাগাধা। জাফর ইকবালের মেয়ের অশ্লীল ছবি দিয়ে সে তার পেজ ভরিয়ে ফেলেছে। সবাই হায় হায় করছে, তারা এতদিন কি ভুল পথেই না ছিল! এই লোকটা যে ইসলামের, বোরখার, আস্তিকতার বিরোধিতা করে আসছিল, ভারতের দালালি করে আসছিল, আর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের কথা বলে বিদেশি সংস্কৃতিকে আমাদের মাঝে ঢুকিয়ে দিচ্ছিল, সেটা তো এতদিন তারা বুঝতেই পারেনি! এখন আবার আদিবাসীদের অধিকারের কথা বলে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়! সংখ্যালঘুদের কথা বলে সংখ্যাগুরুদের অধিকার হরণ করতে চায়! এভাবেই এই পেজটাকে সব ইউনিভার্সিটির ছেলে-মেয়েদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চায় আসিফ। আর খুলে দিতে চায় জাফর ইকবালের মুখোশ।

কিন্তু কিছু মানুষ সব সময়ই ভাল কাজে বাগড়া বাধায়, এরকম একজন হচ্ছে লিজা। এই মেয়েটাকে আসিফ কিছুতেই বোঝাতে পারছে না যে, জাফর ইকবাল একজন ভণ্ড। এই মেয়েটাকে পরীক্ষাতেও কখনো হারাতে পারেনি সে। প্রতিবারই মেয়েটা কীভাবে যেন ফার্স্ট হয়ে যায়, আর আসিফ হয় সেকেন্ড কিংবা থার্ড। দুজনই ভার্সিটি ডিবেটে অংশগ্রহণ করে। ভার্সিটিতে সব সময় লিজা থাকে ওর বিপরীত পক্ষে, আর প্রতিবারই আসিফের দল হেরে যায় ওর কাছে। কথা, যুক্তি কোনকিছুতেই যেন হার মানার নয় মেয়েটা। ইন্টার ভার্সিটি ডিবেটে প্রতিবারই আসিফকে টপকে লিজাই নির্বাচিত হয়। সুতরাং, ইন্টার ভার্সিটি ডিবেট পর্যন্ত তার কখনোই যাওয়া হয় না। মেয়েটা এত পড়াশুনা করে কীভাবে কে জানে! আসিফ ভাবে, ওকে ধরে একদিন যদি একটা উচিত শিক্ষা দিতে পারত, যুক্তি ওর ইয়ে দিয়ে বের হয়ে যেত!

লিজা এবার আসিফকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছে, ‘'পারলে প্রমাণ কর তোমার কথা।'’

আসিফও বলে দিয়েছে, '‘গ্রুপে এত প্রমাণ দিলাম তাও তোমার মন ভরে নাই?’'

'‘ওগুলো কোন প্রমাণ হল? মূর্খ মানুষ ছাড়া ওগুলো কেউ বিশ্বাস করবে না। আর যদি বিশ্বাসও করে, তবুও আমি বলব, আমি তো ওগুলোতে কোন সমস্যা দেখি না।’'

'‘হ, এইবার লাইনে আসছ। আসলে তোমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখায়ে দিলেও তোমরা বুঝবা না। তোমাদের অন্তরে সিল মাইরা দিছে আল্লাহ। এখনো সময় আছে, সত্য মাইনা নেও।’'

'‘আমি তোমার সাথে ওপেন বিতর্কে বসব। এখন কবে বসতে চাও সেটা বল। বিতর্ক ক্লাসেই হবে, এবং সবার সামনেই হবে। তারপর দেখা যাবে কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা।’'

আসিফের ভেতরটা কেমন যেন ধ্বক করে উঠল। সে এক্ষুণি একটা ঢোক গেলার তাগিদ অনুভব করছে ভেতর থেকে, কিন্তু ও লিজার সামনে এটা করতে চায় না। লিজা হয়ত ভাববে সে ভয় পেয়েছে, তাই বহু কষ্টে সে ঢোকটা আটকে রাখল।

চলবে..................................................................

বিষয়: সাহিত্য

৩৬৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File