বাবার পছন্দের পাত্র???
লিখেছেন লিখেছেন মহাজাগতিক শয়তান ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১১:৪৫:৩৯ রাত
আপনি কি বাসা থেকে পালাচ্ছেন?
ভদ্রলোকের বয়স আনুমানিক ত্রিশ বত্রিশ হবে। ফর্সা চেহারার সাথে নেভি ব্লু শার্টটা চমৎকার মানিয়েছে। মাথাভর্তি ঘন চুল। টিপিক্যাল মেয়েরা এই ছেলেকে দেখা মাত্রই পটে যাবে। কথা বলার ভঙ্গিটাও সুন্দর। তবে আনিকা টিপিক্যাল মেয়ে নয়। টিপিক্যাল মেয়েরা বাসা থেকে পালায়। আর আনিকা বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
:- এক্সকিউজ মিঃ! আপনার কথাটা বুঝিনি।
- মানে আমি জানতে চাচ্ছিলাম আপনি কি বাসা থেকে পালাচ্ছেন।
:- না। বাস কাউন্টারে বসে থাকা আমার শখ। আপনার কোন সমস্যা?
- সমস্যা না ঠিক। তবে আপনি বিপদে পরতে যাচ্ছেন।
:- আপনি কি মানুষকে বিপদ থেকে উদ্ধার করে বেড়ান?
- না এটা আমার শখ। হা হা ...স্যরি। আপনার বিপদের কথা শোনান যাক।
:- লাগবেনা। আমি পালাচ্ছিনা।
- ভুল বললেন। বাসার জামা পরে চলে এসেছেন। চুলটা আঁচড়াতে পারেননি। চোখের কাজল ঠিক নেই। তাছাড়া আপনার ব্যাগটা ছোট এবং চেইনটা নষ্ট। বাস থেকে নেমে দেখলেন জামা কাপড় টুথপেস্ট টুথব্রাশ যা কিছু ছিল ব্যাগে কিছুই নেই।
:- আপনার কী! প্লিজ ডিস্টার্ব করবেন নাতো। আমাকে আমার মত থাকতে দিন।
- শেষ কথাটা একটা গানের মত হয়ে গেল। দিন এর জায়গায় দাও হলে একদম পারফেক্ট।
আনিকা এবার নিশ্চিত লোকটাকে বাবা পাঠিয়েছে। বাবার সাথে তার ঝগড়া হয়েছে। না জানিয়ে বিয়ে ঠিক করেছেন। সকালে নাস্তার টেবিলে বললেন সন্ধ্যায় তোর এনগেজমেন্ট, বাসায় থাকবি।
আনিকা বিকেল পর্যন্ত বাসায় ছিল। মাকে কিছু বলে লাভ নেই। মা সংসারে আছেন টিভির জন্য। সারাদিন রাত এই সিরিয়াল ঐ সিরিয়াল। কোন বিষয় মাকে বললে তিনি সিরিয়ালের মায়েদের মত এক্সপ্রেশন দেন। অসহ্য লাগে দেখতে। শেষমেশ আর কোন সলুশ্যন না করতে পেরে আনিকা বাসা ছেড়েছে। চিটাগং যাবে। বড়খালার বাড়ি। বড়খালা তার সবচে ক্লোজ। আনিকা খুন করে আসলেও হাসিমুখে আশ্রয় দিবেন।
:- আপনি কি আমার উপর বিরক্ত?
- মোটেও না। আমি আমার জন্মে এমন হ্যান্ডসাম ছেলে দেখিনি। দেখুন আমি ঘামছি।
:- হাহা আপনি বেশ সুন্দর করে লজ্জা দিতে জানেন। আর ঘামছেন কারণ ওদের এসিটা নষ্ট। শুধু ঘরঘর শব্দ হচ্ছে। দেখুন লোকজন এতেই স্যেটিসফাইড। এসি যে নষ্ট সেটা কেও ধরতে পারছেনা।
:- আপনি কিছু বলছেন না কেন?
কারণ শব্দটা আমার ভাল লাগছে। হেডফোন আনিনি সাথে। শব্দের সাথে বিভিন্ন গানের সুর পাচ্ছি।
আনিকার সন্দেহ আগের মত নেই। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। তারা বাবার অফিসে চাকরি করে। নয়টা ছয়টা অফিস করা লোক আর যাইহোক মেয়েদের ফলো করতে পারেনা। তাছাড়া সে দেখতে খুব সুন্দরী। বাবার পাঠানো ছেলেরা ডিউটি ভুলে প্রেমে পরে বসে থাকে। বোকার মত আচরণ করে। আর এই ছেলে যথেষ্ট চালাক। নিজের পরিচয় না দিয়ে কথা ঘোরাচ্ছে। এমন চালাক ছেলে কোনমতেই বাবার আন্ডারে চাকরি করবেনা।
তবে কী এই ছেলের সাথেই তার আজকে এনগেজমেন্ট হবার কথা! সে রাজী হয়নি শুনে কাউন্টারে ছুটে এসেছে। হাউ সিলি। ছুটে আসলেই যেন ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আঙুলে আংটি তুলে নিবে! অবশ্য এটা সিনেমায় সম্ভব। বাস্তবে কোন মেয়েকে না চিনে এনগেজমেন্টের জন্য রাজী হয়ে যাওয়া ছেলেরা এত রোম্যান্টিক হবেনা।
:- আপনি কে বলুন তো।
- বলবো। বাস আসুক। এরপর আপনি জানালা দিয়ে তাকাবেন আর আমি টা টা দিব। বাকি রাস্তা আপনি শুধু আমার কথা ভাববেন। আমার ভাল লাগবে।
আনিকা বিরক্ত হয়নি। ঘর থেকে বের হওয়ার পর কারো সাথে কথা বলেনি। ভাল লাগবে কথাটা শুনে তার নিজেরও কেন যেন ভাল লাগছে। বাস কাউন্টারের সামনে থামল। আনিকা পিছনে না তাকিয়ে ধুপধাপ বাসে উঠে পড়লো। পরিচয় জানার দরকার নেই। পরিচয় জানলে সত্যি লোকটা কথা ভাববে বাকী রাস্তা।
আনিকা জানালার বাইরে তাকায়। বাইরে থেকে বাসের ভিতরে দেখা যাচ্ছেনা বলে লোকটা দাঁড়িয়ে আছে অন্য জানালার সামনে। চেনা জানা নেই শুধুমাত্র ভুল জানালার সামনে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য লোকটার প্রতি মায়া হচ্ছে। ইচ্ছে হচ্ছে জানালা খুলে ডাক দিতে- এই যে আমি, এই যে আমি এখানে!
ছয় চাকার নাইটকোচটা বিশাল শরীর নিয়ে ফোঁস ফোঁস করছে। হর্ণ তুলে ছুটে যাবার আগেই কাউন্টারে ঝামেলা লাগার দরকার। ঝামেলা ছাড়া বাস দশমিনিট লেইট করবেনা। দশ মিনিটের জন্য আনিকা আর শোভনের দূরত্ব একজীবনের জন্য লেইট হয়ে যাবে।।
""29th september...আগামিকাল আমার জন্ম দিন সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন""
বিষয়: সাহিত্য
১৫৩২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন