সাদা ..........................।

লিখেছেন লিখেছেন মহাজাগতিক শয়তান ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১০:২০:৪৫ রাত

ফিরোজ এমন একটা ছেলে যার উনিশ নাম্বার জন্মদিনে সে আবিষ্কার করলো বাড়িতে ভাত খেতে হলে বাজার থেকে চাল কিনতে হবে। বাংলাদেশে উনিশ বছর বয়সী ছেলেরা কলেজ শেষ করে ভার্সিটিতে যায়। আর ফিরোজ গেলো মুদী দোকানে। পারিবারিক ব্যবসা। দোকানের নাম ফিরোজের দাদীর নামে রাখা। মমতাজ কনফেকশনারী।

মমতাজ কনফেকশনারীতে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, লবণ সহ নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব আইটেমই পাওয়া যায়। অন্যান্য দোকান থেকে এ দোকানটার অমিল হলো এখানে ফিরোজ আছে। অন্যান্য দোকানদারদের বয়স বেশি, আচার আচরণে অশিক্ষায় ছাপ সুস্পষ্ট। আর ফিরোজ এত সুন্দর ভাষায় দোকানদারি করে যে এলাকার ক্রেতারা ফিরোজ বলতে পাগল। দোকান ভাল চলছে, ফিরোজের পরিবারও ভাল চলছে।

এ মুহুর্তে দোকানে কোন কাস্টমার নেই। এ ফাঁকে ফিরোজ পড়ছে বই। গল্প উপন্যাস নয়। তার বন্ধু রবিন ঢাকা কলেজে অনার্স পড়ে। একাউন্টিং ফার্স্ট ইয়ার। সে সপ্তাহের প্রথম রবিবার কলেজে যায়, বাকীদিন ফিরোজের দোকানে বসে আড্ডা মারে। রবিবার কলেজে যাওয়ার বিশেষ কারণ আছে। রবিবার রবিনের বাবা জুলফিকার মিয়া বাসায় থাকে। বাবা বাসায় থাকলে তার সিগারেট টানা হয়না। সিগারেট টানার জন্যই সে কলেজে যায়। ফিরোজের হাতে রবিনের একটা বই। বইটার কোন পাতাগুলো নতুন, এখনো ধরা হয়নি। রবিন মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে সে যে কোনদিন বিদেশ চলে যাবে। শুধু শুধু দেশে পড়ালেখা করে মাথা নষ্ট করার কোন মানে নেই।

-আপনার দোকানে ফেসিয়াল টিস্যু আছে।

-হ্যাঁ।

-গোলাপীটা কেন? সাদাটা নেই?

-শেষ হয়ে গেছে।

-গোলাপী নেবোনা।

-আমি দুঃখিত।

-হি হি।

-আমি সত্যিই দুঃখিত। কাল পাওয়া যাবে।

-আমারতো আজকে টিস্যু দরকার। আর আপনার দুঃখ দিয়ে আমি কী করবো?

-নেই তাই বললাম।

-আপনি দেখা যায় ভদ্র দোকানদার।

-ধন্যবাদ।

-কী বই পড়ছেন?

-তেমন কিছুনা। কাজ নেই তাই পড়ছি।

-কাজ না থাকলে মানুষ পড়ে নাকি। কাজ না থাকলে আমি নাচি।

-আচ্ছা।

-আমি কিন্তু খুব ভালো নাচতে পারি। দেখলে আপনার মাথা ঘুরে যাবে।

মেয়েটা সম্ভবত স্কুলে পড়ে। এ বয়সী মেয়েরা দোকানদারের সাথে ঠাট্টা মশকরা করতে পছন্দ করে। ফিরোজের চেহারায় বোকা বোকা ভাব আছে। স্কুলে পড়া একটা মেয়ে তার সাথে ঠাট্টা মশকরা খুব স্বাভাবিক।

-আপনি কী ভাবছেন? আমার কথা শুনেই আপনার মাথা ঘুরছে?

-আমি ঠিক আছি।

-আমাকে গোলাপি টিস্যুই দিন। আপনার বিহেভিয়ার ভাল।

-ধন্যবাদ।

-এত ধন্যবাদ দিবেন না। মনে হয় কাস্টমার কেয়ারে ফোন করেছি। আপনি আমার কথায় মাইন্ড করেছেন?

-না।

-মাইন্ড করবেন না। দোকানদার মাইন্ড করলে দোকানে লালবাতি জ্বলবে। আপনার ডিউটি হলো কাস্টমারদের পটানো। এম আই রাইট?

-হ্যাঁ।

-আর শুনুন। আমি কিন্তু এ বছর ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি। আমাকে স্কুলের মেয়ে ভাবার কোন কারণ নেই। আচ্ছা যাই। কাল সাদা টিস্যু নিবো।

ফিরোজ বই বন্ধ করে মেয়েটার চলে যাওয়া দেখছে। আর কখনো এমন হয়নি। সে আর দশটা দোকানদারের মত মেয়েদের সাথে টাংকি মারেনা। মনের লোভ সামলে ব্যবসার লাভ নিয়ে চিন্তা করে। ব্যবসাটায় কোন সুখ নেই, সে সুখ খোঁজেও না। সুখ পাওয়া যায় বিছানায় ঘুমিয়ে যাওয়ার আগে। বাড়ির সবাই যখন ঘুমিয়ে পরে তখন ফিরোজ ডুবে যায় বইয়ের পাতায়।

কিছু কিছু মেয়েরা ছেলেদের পেটের কথা জেনে ফেলে। এ মেয়েটা ঠিক সে ধরণের মেয়ে। এ মেয়েটার চলে যাওয়া দেখতে ফিরোজের ভাল লাগছে, কেমন যেন সুখ হচ্ছে একপ্রকার। এ সুখটা ভালো নাকি মন্দ ফিরোজ তা জানতে চাইছেনা। জানলে সমস্যা হবে। আপাতত আগামী কালকের জন্য অপেক্ষা করা যাক। অপেক্ষা ব্যাপারটা সুন্দর, সাদা টিস্যুর চেয়েও সুন্দর।।

বিষয়: সাহিত্য

১৫৭৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File