এটা আর তেমন কি ?
লিখেছেন লিখেছেন বিষুব আহমেদ ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৯:২১:১৭ রাত
বিকালে কোন কাজ ছিল না। বন্ধুকে নিয়ে মুক্ত বাতাস গায়ে লাগানোর জন্য বেড়িয়ে পড়লাম। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় হাটছিলাম। বিশ্বের ২য় (আবাস অযোগ্যতার দিক থেকে) সিটি ঢাকার বুকে যেন একখন্ড ইউরুপ। শেষ প্রান্তে খোলা মাঠ। দিগন্ত জুড়ে শুধু বালি আর বালি। হাটতে হাটতে কখন যে সন্ধা হয়ে গেল বুঝতেই পারিনি।
মাগরিবের আজান দূর থেকে কানে ভেসে আসল। সেদিন ছিল পবিত্র শবে-বরাত। বসুন্ধরার ঠিক মাঝখানে একটা বিশাল মসজিদ আছে সে দিকেই দুই বন্ধু মিলে হাটা দিলাম। আলীশান মসজিদ। পাথর বিছানো মেঝে। সেজদার সময় কপালে লাগা পাথরের কোমলতা বেশ সময় ধরে অনুভূত হয়। মসজিদের দেয়ালে নোটিশ টানানো 'কেউ জোড়তে আমীন বলবেন না, প্রশ্ন থাকলে মুফতি সাহেবের সাথে যোগাযোগ করুন।' মসজিদের পাশেই মাদরাসা, বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার। নোটিশটা যেন তাদের 'ইলমের প্রতাপ' বহন করছে।
মাগরিবের নামাজ শেষ হলো। মাদরাসার ছাত্ররা জরো হয়ে বসেছে। হুজুর ওয়াজ করবেন। বসুন্ধরা গ্রুপের মালিক শাহ আলম সাহেব সামনের কাতারে হুজুরের মুখোমুখি বসা। কিছুক্ষণ ওয়াজের পর হুজুর বললেন, মসজিদ সম্প্রসারণ ও মাদরাসার নতুন বিল্ডিং নির্মানের জন্য কয়েক কোটি টাকা প্রয়োজন।
মসজিদ থেকে বেড়িয়ে পড়লাম। মসজিদের বাম পাশেই মাদরাসার বিশাল রান্নাঘর। সুস্বাদু খাবারের ঘ্রাণ আসছে। রান্না ঘরের সামনে কয়েকটা গরু ও ছাগল বাধা।
মাদরাসার মাঠে দুইটি পিকআপ ভর্তি বিরানী নামাতে দেখা গেল। একজনকে জিজ্ঞেস করলে বলল, বসুন্ধরার মালিক মাদরাসার জন্য হাদিয়া পাঠিয়েছেন।এভাবে প্রতিদিনই লোকজন এখানে এসে গরু-ছাগল, টাকা পয়সা ইত্যাদি দান করে যায়। এটা দিয়েই মাদরাসার ছাত্রদের খাওয়া দাওয়া চলে। খাবারের জন্য ছাত্রদের কোন টাকা দিতে হয় না।
মিম্বারে হুজুর বয়ান করছেন। হুজুরের সামনে (ভূ..দ..) শাহ আলম সাহেব হাটু গেড়ে বসা। ছাত্ররা নির্বাক বসে আছে। পেছন থেকে ভেসে আসছে বিরানীর ঘ্রাণ।
আমি বন্ধুকে নিয়ে মসজিদ কমপ্লেক্সের গেইটে চলে আসলাম। শবে বরাত উপলক্ষে ফকির-মিসকিনরা গেইটে ভীড় করেছে। এক মহিলা কোলে একটি ফুটফুটে বাচ্চা নিয়ে আমাদের কাছে হাত পাতলো। আমি পকেট থেকে একটা পাঁচ টাকার কয়েন বের করে ধরিয়ে দিলাম।
প্রশস্ত রাস্তা ধরে হাটছি। সোডিয়ামের আলোতে সন্ধারাতকেই কেমন গভীর গভীর মনে হচ্ছে। বন্ধু বললো, কাউকেই আর আজকাল বিশ্বাস করা ঠিক না। এই যে, মহিলার কোলে বাচ্চাটা দেখ নাই, এটা সে ভাড়া করে এনেছে। কোলে বাচ্চা থাকলে মানুষ ভিক্ষা বেশী দেয় তাই তারা বস্তি থেকে এসব বাচ্চা ভাড়া করে নিয়ে আসে।
আমি মিন মিন করে বললাম এ আর তেমন কি ?
সবাই তো করছে... ওরা না হয় বেচে থাকার জন্য একটু আধটু করলোই...
...
আমার বন্ধু আমার দিকে কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েছিল
বিষয়: বিবিধ
১১৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন