সরকার নির্বিকার : ম্যাগি নুডলসে সিসা শনাক্ত!
লিখেছেন লিখেছেন ওবায়েদ উল্লাহ সোহেল ১৯ জুন, ২০১৫, ০৯:৪৬:৩৯ সকাল
সরকার নির্বিকার :
ম্যাগি নুডলসে সিসা
শনাক্ত!
.
নেসলে বাংলাদেশের পণ্য ম্যাগি
নুডলসে এবার সিসা শনাক্ত
করেছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান
ও শিল্প গবেষণা পরিষদ
(বিসিএসআইআর)।
.
বিসিএসআইআর-
এর খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
ইনস্টিটিউট থেকে ভোক্তা
অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর
ম্যাগি নুডলস পরীক্ষা করালে
তাতে সিসা ধরা পড়েছে বলে
জানা গেছে। তবে এ নিয়ে
রীতিমতো লুকোচুরি চলছে।
.
এর আগে ভারতে বিতর্ক শুরু হবার
পর অস্বাভাবিক দ্রুততার সাথে
বাংলাদেশ টেস্টিং অ্যান্ড
স্ট্যান্ডার্ডাইজিং
ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই)
পণ্যটিতে কোন ক্ষতিকারক
উপাদান নেই বলে ‘ভালত্ব’র সনদ
দেয়। আর সেই সনদকে কাজে
লাগিয়ে বাংলাদেশে
বাজার ধরে রাখতে ব্যাপক
প্রচারণা শুরু করেছে নেসলে।
.
এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে
সরকারের পক্ষ থেকে কোন
পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
অন্যদিকে দেশের প্রায় সব
গণমাধ্যমে ম্যাগির বিজ্ঞাপন
দিয়ে দেশের গণমাধ্যমের মুখ
বদ্ধ রাখার চেষ্টা করছে
নেসলে।তবে এ বিষয়ে
সরকারের পক্ষ থেকে কোন
ব্যবস্থা নেয়া না হলেও
ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নেয়া
শুরু করেছে। বড় বড় সুপার শপ
থেকে শুরু করে
বাজারকেন্দ্রিক দোকান,
এমনকি গলির মোড়ের মুদি
দোকানের বিক্রেতারাও
ম্যাগি নুডলস থেকে মুখ
ফিরিয়ে নিচ্ছেন। আর
সাধারণ ক্রেতারা অন্য নুডল
কিনলেও ম্যাগির কথা মুখে
আনছেন না। ফলে ম্যাগি
নুডলসের বাজার ক্রমে পড়ছেই।
.
বর্তমানে ঢাকা শহরে
ম্যাগির বিক্রি অর্ধেকে
নেমে এসেছে।জানা যায়,
ভারত, নেপাল ও সিঙ্গাপুরে
ম্যাগি নুডল নিষিদ্ধ হওয়ায়
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের
নির্দেশে পণ্যটি পরীক্ষা
করার উদ্যোগ নেয় ভোক্তা
অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
.
প্রতিষ্ঠানটি গত সপ্তাহে
বিসিএসআইআর থেকে পণ্যটি
পরীক্ষা করে। বিসিএসআইআর
পরীক্ষার রিপোর্টার
সিলগালা করে ভোক্তা
অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের
পাঠায় গত সপ্তাহে। অধিদপ্তর
সেই রিপোর্ট আবার পাঠিয়ে
দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে।
.
প্রায় ১০ দিন ধরে রিপোর্টটি
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পড়ে
থাকলেও এ বিষয়ে
সংশ্লিষ্টরা একেবারেই নীরব
ভূমিকা পালন করছে।
বিসিএসআইআর-এর পরীক্ষার ওই
রিপোর্টে ম্যাগিতে সীসা
শনাক্ত হওয়ার কথাই উল্লেখ
রয়েছে বলে জানিয়েছে
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।এ বিষয়ে
খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড.
জহিরুল হক জানান, পরীক্ষায়
ম্যাগিতে সীসা পাওয়া
গেছে। তবে এর মাত্রা
সহনশীলতার মধ্যে রয়েছে কি
না তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে
অধিকতর পরীক্ষা প্রয়োজন। যা
অব্যাহত রয়েছে। দুই-একদিনের
মধ্যে সেই রিপোর্ট চূড়ান্ত
হবে বলে তিনি জানান।
.
এদিকে বিএসটিআই কর্তৃক
ম্যাগিকে নিরাপদ সনদ
দেয়ার পর বাংলাদেশে
বাজার ধরে রাখতে নেসলে
ব্যাপক প্রচারণা শুরু করেছে।
বাজার হারানোর ভয়ে
কোম্পানিটি ৬৬ টাকার
প্যাকের দাম কমিয়ে ৫০ টাকা
ও ১৩০ টাকার প্যাকের দাম ১০০
টাকা নির্ধারণ করেছে।
বিশেষ করে গণমাধ্যমকে
নিশ্চুপ রাখতে তারা দেশের
প্রায় প্রতিটি গণমাধ্যমে
বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। গত দুই
সপ্তাহে দেশের প্রায় সকল
গণমাধ্যমে বিএসটিআই-এর সনদ
উল্লেখ করে বিজ্ঞাপন দেখা
গেছে। আর বিজ্ঞাপন পাওয়ার
কারণে দেশের শীর্ষ স্থানীয়
বেশিরভাগ গণমাধ্যমই এ
বিষয়ে নিশ্চুপ ভূমিকা পালন
করছে। এ বিষয়ে নেসলে
বাংলাদেশের জনসংযোগ
বিভাগের কর্মকর্তা ফারাহ এস
আওলাদ বলেন, ‘ভারতের ম্যাগি
নুডলসে সিসা থাকার খবরের পর
বাংলাদেশের মার্কেটে
ম্যাগির প্রমোশনের জন্য
মূল্যছাড়ের বিশেষ কোনো
প্রোগ্রাম নেয়া হয়নি। তবে
এপ্রিল-মে মাসে আমাদের
পূর্বনির্ধারিত মূল্যছাড়ের
একটা অফার ছিল। সেটাই এখন
বিভিন্ন শপের আউটলেটে
দেখা যাচ্ছে। ভারতের
ম্যাগির প্রভাব বাংলাদেশে
পড়ার কথা নয়। এখানকার
ম্যাগি নুডলস বাংলাদেশেই
তৈরি হয়।’ম্যাগি নুডুলস
পরীক্ষা কাজ দেখভাল করছেন
বিসিএসআইআর’র প্রধান
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মনজুর
মোর্শেদ আহমেদ। তিনিও
বলেন, এ সংক্রান্ত একটি
পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। আরও
পরীক্ষা প্রয়োজন। একটি
পরীক্ষায় কী ফল পাওয়া গেছে
তা প্রকাশে অনাগ্রহ প্রকাশ
করে এই কর্মকর্তা বলেন,
রিপোর্ট সিলগালা করে
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ
অধিদপ্তরকে দেয়া হয়েছে। এর
ফল প্রকাশ কেবল তাদেরই
অধিকার।এ প্রসঙ্গে জাতীয়
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ
অধিদপ্তরের যুগ্ম-সচিব মাতিনুল
হক বলেন, বিসিএসআইর এর
সিলগালা রিপোর্ট আমরা
মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে
দিয়েছি। এ বিষয়ে আমরা
কোনও তথ্য জানাতে পারবো
না। আমাদের নিষেধ রয়েছে।
যা কিছু বলার মন্ত্রণালয় বলবে।
.
তবে অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা
বলেন, বাংলাদেশের
ম্যাগিতে সিসা রয়েছে কি
না সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া
হচ্ছে। কারণ, এটি আমাদের
বিশেষ করে শিশুদের শরীরের
জন্য খুবই ক্ষতিকর। জাতীয়ভাবে
বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে
করছেন এই কর্মকর্তা। অধিদপ্তর
থেকে মন্ত্রণালয়ে
রিপোর্টটি ১০ জুন পাঠানো
হয়েছে বলেও জানান তিনি।
.
ভারতের উত্তর প্রদেশের ফুড
সেফটি অ্যান্ড ড্রাগ
অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (একসডিএ) গত
মার্চ মাসে নেসলের ম্যাগি
নুডলসে উচ্চমাত্রার সিসা ও
মনো-সোডিয়াম গ্লুটামেট
(এমএসজি) পায়। পাশাপাশি
সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড
এনভায়রনমেন্টের (সিইসি)
গবেষণাতেও ম্যাগি নুডলসে
উচ্চমাত্রার লবণ ও ট্রান্স-ফ্যাট
পাওয়া যায়। বহুজাতিক এ
কোম্পানিটি তাদের খাবার
ট্রান্স-ফ্যাট মুক্ত বলে মিথ্যা
ঘোষণা দিলেও সিইসি
গবেষণায় উচ্চমাত্রার ট্রান্স-
ফ্যাট খুঁজে পেয়েছে। ফলে ২০১৫
সালের ২০ মে ভারতের উত্তর
প্রদেশ রাজ্য ম্যাগি নুডলস
প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়।
পরবর্তীতে অন্যান্য রাজ্যও এ
ঘোষণা দেয় এবং ভারতে
নিষিদ্ধ হয় ম্যাগি নুডলস।
.
ম্যাগি নুডলসের উৎপাদক নেসলে
কোম্পানিও ভারতে তাদের ৫
কোটি ডলার মূল্যের পণ্য
ধ্বংসের ঘোষণা দিতে বাধ্য
হয়।
বিষয়: বিবিধ
১০৮৫ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
রোকনউদ্দৌলার সময়ে বের হয়েছিল যে এসব নুডুলস্ বানিয়ে শুকাতে দেওয়া হয়েছে রিকশাওয়ালাদের গ্যারাজের বাথরুমে । এরপরেও এসব নুডুলস খাওয়া কমে নি , যেমনটা কমে নি পারসোনাতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ঘটনার পরও পারসোনাতে ক্রেতাদের আনাগোনা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন