বিশ্বনবীর লাশ চুরি ইহুদিদের চক্রান্ত <>ওবায়দুল্লাহ সোহেল
লিখেছেন লিখেছেন ওবায়েদ উল্লাহ সোহেল ২৩ মার্চ, ২০১৫, ১১:৫৬:৪৮ রাত
বিশ্বনবীর লাশ চুরি ও ইহুদী চক্রান্ত
.
by admin
বৃটেন যেভাবে আরববিশ্বকে
বিভক্ত করেছিল
খাপ খোলা তলোয়ার
ইসলামের যুদ্ধনীতি এবং
রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর যুদ্ধ ও
অভিযান সমূহের উপরে
পর্যালোচনা
.
হিজরী ৫৫৭ সালের একরাতের
ঘটনা।
সুলতান নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র
তাহাজ্জুদ ও দীর্ঘ মুনাজাতের পর
ঘুমিয়ে পড়েছেন। চারিদিক নিরব
নিস্তব্দ। কোথাও কোন সাড়া-শব্দ
নেই। এমতাবস্থায় হঠাৎ তিনি
স্বপ্নে দেখলেন স্বয়ং রাসুল (স) তার
কামরায় উপস্থিত। তিনি কোন
ভূমিকা ছাড়াই দু’জন নীল চক্ষু
বিশিষ্ট লোকের দিকে ইঙ্গিত
করে বললেন, (নূরুদ্দীন) মাহমূদ! (এরা
আমাকে বিরক্ত করছে), এ দুজন থেকে
আমাকে মুক্ত কর।
.
এই ভয়াবহ স্বপ্ন দেখে নূরুদ্দীন
জাঙ্কি (র অত্যন্ত ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে
ঘুম থেকে জাগ্রত হলেন এবং
কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গোটা কক্ষময়
পায়চারি করতে লাগলেন। সাথে
সাথে তার মাথায় বিভিন্ন প্রকার
চিন্তা ঘুরপাক খেতে লাগল। হৃদয়
রাজ্যে ভীড় জমাল হাজারও রকমের
প্রশ্ন। তিনি ভাবলেন-
আল্লাহর রাসূল তো এখন কবরে
জীবনে!
.
তার সাথে অভিশপ্ত ইহুদীরা এমন কী
ষড়যন্ত্র করতে পারে?
কী হতে পারে তাদের চক্রান্তের
স্বরুপ?
.
তারা কি রাসূল (স)-এর কোন ক্ষতি
করতে চায়?
.
চায় কি পর জীবনেও তার সাথে
ষড়যন্ত্র লিপ্ত হতে?
.
আমাকে দু’জন ইহুদীর চেহারা
দেখানো হল কেন?
.
শয়তান তো আল্লাহর নবীর অবয়বে
আসতে পারে না। তাহলে কি আমি
সত্য স্বপ্ন দেখেছি?
.
এসব ভাবতে ভাবতে সুলতান অস্থির
হয়ে পড়লেন। তিনি অজু-গোসল সেরে
তাড়াতাড়ি দু’রাকাত নামায
আদায় করলেন। তারপর মহান আল্লাহর
দরবারে ক্রন্দনরত অবস্থায় অনেকক্ষণ
মুনাজাত করলেন।
.
সুলতানের এমন কেউ ছিল না যার
সাথে তিনি পরামর্শ করবেন। আবার
এ স্বপ্নও এমন নয় যে, যার তার কাছে
ব্যক্ত করবেন। অবশেষে আবারও তিনি
শয়ন করলেন। দীর্ঘ সময় পর যখনই তার
একটু ঘুমের ভাব এলো, সঙ্গে সঙ্গে
এবারও তিনি প্রথম বারের ন্যায়
নবী করীম (সা)কে স্বপ্নে দেখলেন।
.
তিনি তাকে পূর্বের ন্যায় বলছেন,
(নূরুদ্দীন) মাহমূদ! এ দুজন থেকে
আমাকে মুক্ত কর।
এবার নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র “আল্লাহ্,
আল্লাহ্” বলতে বলতে বিছানা
থেকে উঠে বসলেন। তারপর কোথায়
যাবেন, কী করবেন কিছুই ঠিক করতে
পা পেরে দ্রুত অজু-গোসল শেষ করে
মুসল্লায় দাড়িয়ে অত্যধিক ভীত
সন্ত্রস্ত অবস্থায় দু’রাকাত নামায
আদায় করলেন এবং দীর্ঘ সময় অশ্রু
সিক্ত নয়নে দোয়া করলেন।
.
রাতের অনেক অংশ এখনও বাকী। সমগ্র
পৃথিবী যেন কি এক বিপদের সম্মুখীন
হয়ে নিঝুম হয়ে আছে। কী এক মহা
বিপর্যয় যেন পৃথিবীর বুকে সংঘটিত
হতে যাচ্ছে । কঠিন বিপদের ঘনঘটা
যেন চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ছে।
.
তিনি মুখ তুলে আকাশ পানে
তাকালেন। মনে হলো স্বপ্ন দেখা ঐ
দু’জন লোক যেন তাকে ধরার জন্য
দ্রুতগতিতে ধেয়ে আসছে। তিনি
সেই চেহারা দুটোকে মনের
মনিকোষ্ঠা থেকে সরাবার
চেষ্টা করলেন। কিন্তু কিছুতেই তা
সম্ভব হল না। শেষ পর্যন্তু নিরুপায়
হয়ে নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র চোখ বন্ধ
করে আবারও তন্দ্রা-বিভোর হয়ে
শুয়ে পড়লেন।
.
শোয়ার পর তৃতীয়বারও তিনি একই
ধরনের স্বপ্ন দেখলেন।
রাসূল (সা)-এর বক্তব্য শেষ হওয়ার পর
নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র ক্রন্দনরত অবস্থায়
বিছানা পরিত্যাগ করলেন। এবার
তার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মাল যে, নিশ্চয়ই
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের রওজা মোবারক
কোন না মহাবিপদের সম্মুখীন
হয়েছে।
তিনি তড়িৎ গতিতে অজু-গোসল করে
ফজরের নামায আদায় করলেন।
নামায শেষে প্রধানমন্ত্রী
জালালুদ্দীন মৌশুলীর নিকট গিয়ে
গোপনীয়তা রক্ষার প্রতিশ্রুতি
নিয়ে স্বপ্নের বিবরণ শুনালেন এবং
এ মুহূর্তে কী করা যায়, এ ব্যাপারে
সুচিন্তিত পরামর্শ চাইলেন।
.
জালালুদ্দীন মৌশুলী স্বপ্নের
বৃত্তান্ত অবগত হয়ে বললে, “হুজুর! আপনি
এখনও বসে আছেন? নিশ্চয়ই প্রিয় নবীর
রওজা মোবারক কোন কঠিন
বিপদের সম্মুখীন হয়েছে। তাই এ
বিপদ থেকে উদ্ধার করার জন্য
বারবার তিনি আপনাকে স্মরণ
করছেন। অতএব, আমার পরামর্শ হল, সময়
নষ্ট না করে অতিসত্তর মদীনার পথে
অগ্রসর হোন।”
.
নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র আর কালবিলম্ব
করলেন না। তিনি ষোল হাজার
দ্রুতগামী অশ্রারোহী সৈন্য এবং
বিপুল ধন সম্পদ নিয়ে বাগদাদ থেকে
মদিনা অভিমুখে রওয়ানা হলেন।
রাত দিন সফর করে ১৭তম দিনে
মদিনা শরীফে পৌঁছলেন এবং
সৈন্য বাহিনীসহ গোছল ও অজু সেরে
দু’ রাকাত নফল নামাজান্তে দীর্ঘ
সময় ধরে মোনাজাত করলেন। তারপর
সৈন্য বাহিনী দ্বারা মদিনা
ঘেরাও করে ফেললেন এবং সঙ্গে
সঙ্গে আদেশ জারী করে দিলেন যে,
বাইরের লোক মদিনায় আসতে
পারবে, কিন্তু সাবধান! মদিনা
থেকে কোন লোক বাইরে যেতে
পারবে না।
.
নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র জুম্মার খোৎবা
দান করলেন এবং ঘোষণা দিলেন,
“আমি মদিনাবাসীকে দাওয়াত
দিয়ে এক বেলা খানা খাওয়াতে
চাই। আমার অভিলাষ, সকলেই যেন এই
দাওয়াতে অংশ গ্রহণ করে।”
সুলতান মদিনাবাসীকে আপ্যায়নের
জন্য বিশাল আয়োজন করলেন এবং
প্রত্যেকের নিকট অনুরোধ করলেন,
মদিনার কোন লোক যেন এই
দাওয়াত থেকে বঞ্চিত না হয়।
নির্ধারিত সময়ে খাওয়া-দাওয়া
শুরু হল। প্রত্যেকেই তৃপ্তিসহকারে
খানা খেল। যারা দুরদুরান্ত থেকে
আসতে পারেনি তাদেরকেও শেষ
পর্যন্ত ঘোড়া ও গাধার পিঠে
চড়িয়ে আনা হল। এভাবে প্রায় পনের
দিন পর্যন্ত অগণিথ লোক শাহী
দাওয়াতে শরিক হওয়ার পর সুলতান
জিজ্ঞাসা করলেন আরও কেউ অবশিষ্ট
আছে কি? থাকলে তাদেরকেও
ডেকে আন।
.
এই নির্দেশের পর সুলতান বিশ্বস্ত
সূত্রে অবগত হলেন যে, আর কোন লোক
দাওয়াতে আসতে বাকী নেই। একথা
শুনে তিনি সীমাহীন অস্থির হয়ে
পড়লেন। চিন্তার অথৈই সাগরে
হারিয়ে গেলেন তিনি। ভাবলেন,
যদি আর কোন লোক দাওয়াতে
শরীক হতে বাকী না থাকে তাহলে
সেই অভিশপ্ত লোক দু’জন গেল
কোথায়? আমি তো দাওয়াতে
শরীক হওয়া প্রতিটি লোককেই
অত্যন্ত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ
করেছি। কিন্তু কারও চেহারাইতো
স্বপ্নে দেখা লোক দুটোর
চেহারার সাথে মিলল না, তাহলে
কি আমার মিশন ব্যর্থ হবে? আমি কি ঐ
কুচক্রী লোক দুটোকে গ্রেফতার
করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দিতে সক্ষম
হব না? এসব চিন্তায় বেশ কিছুক্ষণ
তিনি ডুবে রইলেন। তারপর আবারও
তিনি নতুন করে ঘোষণা করলেন,
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, মদিনার সকল
লোকদের দাওয়াত খাওয়া এখনও
শেষ হয়নি। অতএব সবাইকে আবারও
অনুরোধ করা যাচ্ছে, যারা এখনও
আসেনি তাদেরকে যেন অনুসন্ধান
করে দাওয়াতে শরীক করা হয়।
.
একথা শ্রবণে মদিনাবাসী সকলেই
এক বাক্যে বলে উঠল, “হুজুর! মদিনার
আশে পাশে এমন কোন লোক বাকী
নেই, যারা আপনার দাওয়াতে অংশ
গ্রহণ করেনি।” তখন নূরুদ্দীন জাঙ্কি
(র বলিষ্ঠ কন্ঠে বললেন, “আমি যা
বলেছি, ঠিকই বলেছি। আপনারা
ভাল ভাবে অনুসন্ধান করুন।”
সুলতানের এই দৃঢ়তা দেখে লক্ষাধিক
জনতার মধ্য থেকে এক ব্যক্তি হঠাৎ
করে বলে উঠল, “হুজুর! আমার জানামতে
দু’জন লোক সম্ভবত এখনও বাকী আছে।
তারা আল্লাহ্ওয়ালা বুযুর্গ মানুষ।
.
জীবনে কখনও কারও কাছ থেকে
হাদীয়া তোহফা গ্রহণ করেন না,
এমনকি কারও দাওয়াতেও শরীক হন
না। তারা নিজেরাই
লোকদেরকে অনেক দান-খয়রাত
করে থাকেন। নীরবতাই অধিক পছন্দ
করেন। লোক সমাজে উপস্থিত হওয়া
মোটেও ভালবাসেন না।”
লোকটির বক্তব্য শুনে সুলতানের
চেহারায় একটি বিদ্যুত চমক খেলে
গেল। তিনি কাল বিলম্ব না করে
কয়েকজন লোক সহকারে ঐ লোক
দুটোর আবাসস্থলে উপস্থিত হলেন।
তিনি দেখলেন, এতো সেই দু’জন,
যাদেরকে স্বপ্নে দেখানো
হয়েছিল। তাদেরকে দেখে
সুলতানের দু’চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করল।
তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “কে
তোমরা? কোথা থেকে এসেছ?
তোমরা সুলতানের দাওয়াতে শরীক
হলে না কেন?”
.
লোক দুটো নিজের পরিচয় গোপন
করে বলল, “আমরা মুসাফির। হজ্বের
উদ্দেশ্য এসেছিলাম। হজ্ব কার্য
সমাধা করে জিয়ারতের নিয়তে
রওজা শরীকে এসেছি। কিন্তু প্রিয়
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের প্রেমে আত্মহারা
হয়ে ফিরে যেতে মনে চাইল না।
তাই বাকী জীবন রওজার পাশে
কাটিয়ে দেওয়ার নিয়তেই এখানে
রয়ে গেছি। আমরা কারও দাওয়াত
গ্রহণ করি না। এক আল্লাহর উপরই
আমাদের পূর্ণ আস্থা। আমরা তারই উপর
নির্ভরশীল। এবাদত, রিয়াজত ও
পরকালের চিন্তায় বিভোর থাকাই
আমাদের কাজ। কুরআন পাক
তিলাওয়াত, নফল নামায ও অজিফা
পাঠেই আমাদের সময় শেষ হয়ে যায়।
.
সুতরাং দাওয়াত খাওয়ার সময়টা
কোথায়?”
উপস্থিত জনগণ তাদের পক্ষ হয়ে বলল
যে, “হুজুর! এরা দীর্ঘদিন যাবত
এখানে অবস্থান করছে। এদের মত ভাল
লোক আর হয় না। সব সময় দরিদ্র, এতিম
ও অসহায় লোকদের প্রচুর পরিমাণে
সাহায্য করে। তাদের দানের উপর
অত্র লোকদের প্রচুর পরিমাণে
জীবিকা নির্ভর করে।”
.
নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র লোকদের কথা
শুনে লোক দুটোর প্রতি পুনরায়
গভীর দৃষ্টিতে তাকালেন। অত্যন্ত
সুক্ষ্মভাবে তাদের পা থেকে
মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করলেন। এতে
আবারও তিনি নিশ্চিত হলেন, এরা
তারাই যাদেরকে তিনি স্বপ্নে
দেখেছিলেন।
এবার সুলতান জলদ গম্ভীর স্বরে
তাদেরকে বললেন, “সত্য কথা বল।
তোমরা কে? কেন, কী উদ্দেশ্যে
এখানে থাকছ?”
এবারও তারা পূর্বের কথা
পুনরাবৃত্তি করে বলল, “আমরা পশ্চিম
দেশ থেকে পবিত্র হজ্বব্রত পালনের
জন্য এখানে এসেছি। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের নৈকট্য লাভই
আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। এ উদ্দেশ্যেই
আমরা এখানে অবস্থান করছি।”
সুলতান এবার কারও কথায় কান না
দিয়ে তাদেরকে সেখানে আটক
রাখার নির্দেশ দিলেন, অত:পর
স্বয়ং তাদের থাকার জায়গায়
গিয়ে খুব ভাল করে অনুসন্ধাণ
চালালেন। সেখানে অনেক মাল
সম্পদ পাওয়া গেল। পাওয়া গেল বহু
দুর্লভ কিতাবপত্র। কিন্তু এমন কোন
জিনিষ পাওয়া গেল না, যদ্বারা
স্বপ্নের বিষয়ে কোন প্রকার
সহায়তা হয়।
.
নূরুদ্দীন জাঙ্কি(র অত্যধিক
পেরেশান, অস্থির। এখনও রহস্য
উদঘাটন করতে না পারায় তিনি
সীমাহীন চিন্তিত। এদিকে
মদীনায় বহু লোক তাদের জন্য
সুপারিশ করছে। তারা আবারও বলছে,
“হুজুর! এরা নেককার বুযুর্গ লোক।
দিনভর রোজা রাখেন। রাতের
অধিকাংশ সময় ইবাদত বন্দেগীতে
কাটিয়ে দেন। পাঁচ ওয়াক্ত
নামাযই রওজা শরীফের নিকটে
এসি আদায় করেন। প্রতিদিন
নিয়মিত জান্নাতুল বাকী যিয়ারত
করতে যান। প্রতি শনিবার মসজিদুল
কোবাতে গমন করেন। কেউ কিছু
চাইলে খালি হাতে ফিরিয়ে
দেন না।”
.
সুলতান তাদের অবস্থা শুনে
সীমাহীন আশ্চর্যবোধ করলেন।
তথাপি তিনি হাল ছাড়ছেন না।
কক্ষের অংশে অনুসন্ধানী দৃষ্টি
ফিরিয়ে যাচ্ছেন। ঘরের প্রতিটি
বস্তুকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ
করছেন। কিন্তু সন্দেহ করার মত কিছুই
তিনি পাচ্ছেন না।
.
নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র এক পর্যায়ে
সঙ্গীদের বললেন- “আচ্ছা, তাদের
নামাযের মুসাল্লাটা একটু উঠাও
দেখি।” সঙ্গীরা নির্দেশ পালন
করল। নামাযের মুসল্লাটি
বিছানো ছিল একটি চাটাইয়ের
উপর। সুলতান আবার নির্দেশ দিলেন,
“চাটাইটিও সরিয়ে ফেল।”
চাটাই সরানোর পর দেখা গেল
একখানা বিশাল পাথর। সুলতারেন
নির্দেশে তাও সরানো হল। এবার
পাওয়া গেল এমন একটি সুরঙ্গপথ যা
বহুদূর পর্যন্ত চলে গেছে। এমনকি তা
পৌছে গেছে, রওজা শরীফের অতি
সন্নিকটে।
.
এ দৃশ্য অবলোকন করা মাত্র নূরুদ্দীন
জাঙ্কি (র বিজলী আহতের ন্যায়
চমকে উঠলেন। অস্থিরতার কালো
মেঘ ছেয়ে যায় তার সমস্ত হৃদয়
আকাশে। ক্রোধে লাল হয়ে যায়
গোটা মুখমন্ডল। অবশেষে লোক
দুটোকে লক্ষ্য করে ক্ষিপ্ত-ক্রদ্ধ
সিংহের ন্যায় গর্জন করে
ঝাঁঝাঁলো কন্ঠে বললেন-
“তোমরা পরিস্কার ভাষায় সত্যি
কথাটা খুলে বল, নইলে এক্ষুনি
তোমাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির
সম্মুক্ষিন হতে হবে। বল, তোমরা
কে? তোমাদরে আসল পরিচয় কী?
কারা, কী উদ্দেশ্যে
তোমাদেরকে এখানে
পাঠিয়েছে?”
.
সুলতানের কথায় তারা ঘাবড়ে
গেল। কঠিন বিপদ সামনে দেখে
আসল পরিচয় প্রকাশ করে বলল,-
“আমরা ইহুদী। দীর্ঘদিন যাবত
আমাদেরকে মুসল শহরের ইহুদীরা
সুদক্ষ কর্মী দ্বারা প্রশিক্ষণ দিয়ে
প্রচুর অর্থ সহকারে এখানে
পাঠিয়েছে। আমাদেরকে এজন্য
পাঠানো হয়েছে যে, আমরা যেন
কোন উপায়ে মুহাম্মদ (স)-এর শবদেহ
বের করে ইউরোপীয় ইহুদীদের
হাতে হস্তান্তর করি। এই দুরূহ কাজে
সফল হলে তারা আমাদেরকে আরও
ধনসম্পদ দিবে বলে প্রতিশ্রুতি
দিয়েছে।
সুলতান বললেন, “তোমরা
তোমাদের পরিকল্পনা
বাস্তবায়নের জন্য কী পদ্ধতি অবলম্বন
করেছিলে? কিভাবে তোমরা কাজ
করতে?”
.
তারা বলল, “আমাদের নিয়মিত কাজ
ছিল, রাত গভীর হলে অল্প পরিমাণ
সুড়ঙ্গ খনন করা এবং সাথে ঐ
মাটিগুলো চামড়ার মজকে ভর্তি
করে অতি সন্তর্পণে মদীনার বাইরে
নিয়ে ফেলে আসা। আজ দীর্ঘ তিন
বৎসর যাবত এ মহাপরিকল্পনা
বাস্তবায়নের কাজে আমরা অনবরত
ব্যস্ত আছি। যে সময় আমরা রওজা
মোবারকের নিকট পৌছে গেলাম
এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম যে, এক
সপ্তাহের মধ্যে বিশ্বনবীর লাশ
বের করে নিয়ে যাব, ঠিক সে সময়
ধরে আমাদের মনে হল, আকাশ যেন
ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে।
জমীন যেন প্রচন্ড ভূমিকম্পে থরথর করে
কাঁপছে। যেন সমগ্র পৃথিবী জুড়ে
মহাপ্রলয় সংঘটিত হচ্ছে। অবস্থা
এতাটাই শোচনীয় রূপ ধারণ করল,
মনে হল সুড়ঙ্গের ভিতরেই যেন আমরা
সমাধিস্থ হয়ে পড়ব। এ অবস্থা প্রত্যক্ষ
করে ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে আমরা কাজ বন্ধ
করে রেখেছি।”
তাদের বক্তব্যে সুলতানের নিকট সব
কিছুই পরিস্কার হয়ে গেল। তাই
তিনি লোক দুটোকে নযীর বিহীন
শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন
। যাতে ভবিষ্যতে কেউ আর এমন
দু:সাহস দেখাতে না পারে।
তিনি মসজিদ হতে অর্ধ মাইল দূরে
একটি বিশাল ময়দানে বিশ তাহ উঁচু
একটি কাঠের মঞ্চ তৈরী করলেন।
সাথে সাথে সংবাদ পাঠিয়ে
মদীনা ও মদীনার আশেপাশের
লোকদেরকে উক্ত ময়দানে হাজির
হওয়ার নির্দেশ প্রদান করলেন।
নির্ধারিত সময়ে লক্ষ লক্ষ লোক উক্ত
মাঠে সমবেত হল। সুলতান নূরুদ্দীন
জাঙ্কি (র অপরাধী লোক দুটোকে
লৌহ শিকলে আবদ্ধ করে মঞ্চের উপর
বসালেন । তারপর বিশাল জনসমুদ্রের
মাঝে তাদের হীন চক্রান্ত ও ঘৃণ্য
তৎপরতার কথা উল্লেখ করলেন।
সুলতান নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র -এর বক্তব্য
শ্রবণ করে লোকজন বিস্ময়ে হতবাক
হয়ে গেল। তারা এ ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করল।
সুলতান বললেন- হ্যাঁ, এদের শাস্তি
দৃষ্টান্তমূলকই হবে।
তিনি লোকদেরকে বিপুল পরিমাণ
লাকড়ী সংগ্রহের নির্দেশ দিলেন।
তারপর লক্ষ জনতার সামনে সেই ইহুদী
দুটোকে মঞ্চের নিম্নভাগে আগুন
লাগিয়ে পুড়ে ভস্ম করে ফেলেন।
কোন কোন বর্ণনায় আছে, সেই আগুন
নাকি দীর্ঘ এগার দিন পর্যন্ত
জ্বলছিল।
অত:পর তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়
করে এক হাজার মন সিসা গলিয়ে
রওজা শরীফের চতুষ্পার্শে মজবুত
প্রাচীর নির্মাণ করে দেন। যেন
ভবিষ্যতে আর কেউ প্রিয় নবীজির কবর
পর্যন্ত পৌছাতে সক্ষম না হয়।
তারপর তিনি কায়মনোবাক্যে
আল্লাহ্পাকের শুকরিয়া আদায় করলেন
এবং তাকে যে এত বড় খেদমতের জন্য
কবুল করা হল সেজন্য সপ্তাহকাল
ব্যাপী আনন্দাশ্রু বিসর্জন দিলেন।
ইতিহাসের পাতা থেকে অবগত
হওয়া যায় যে, নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র
ইন্তিকাল করলে অসীয়ত মোতাবেক
তার লাশকে রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা
মোবারকের অতি নিকটে দাফন
করা হয়।
ইসলামঃ আপনার জিজ্ঞাসার জবাব
বিশ্বনবীর লাশ চুরি ও ইহুদী
চক্রান্ত” লেখক: জিল্লুর রহমান
নাদভী । আল এছহাক প্রকাশনী।
এছাড়াও এই ঘটনাটা পাবেনঃ
“রওজা শরীফের ইতিকথা”–
মুহিউদ্দিন খান(সম্পাদক, মাসিক
মদীনা),
মা’আলেমে দারুল হিজরা, পৃঃ১৪৬,
জযবুল কুলুব
বিষয়: বিবিধ
১২০৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন