জমাই ভাল মাইনি পায়
লিখেছেন লিখেছেন ওবায়েদ উল্লাহ সোহেল ০৩ জুলাই, ২০১৪, ০৯:২৫:৩৯ সকাল
সুসংবাদটা ছিলো এক কাজীনের
বিয়ের খবর পেলাম । পাত্র বেশ
সুদর্শন,ছ'ফুট । বেসরকারী এক
নামকরা ব্যাংকের উচ্চপদস্থ
কর্মকর্তা ,মোটা মাইনে পায় ।
কিন্ত হটাত করেই শুনলাম
যে পাত্রী বিয়েতে রাজী না !!!
অবাক করা কান্ড !! বাবা মায়ের
বকুনীর
পাশাপাশি পাড়া প্রতিবেশীরাও
একথা বলাবলী করছিলো যে "নিশ্চয়
কারো সাথে সম্পর্ক আছে"
অবাকই লেগেছিলো উনার এই
সিদ্ধান্ত গ্রহনের খবরটি জেনে ।
আগে নামাজ কালাম খুব
একটা পড়তোনা,এখন নামাজের
পাশাপাশি হিজাবই ব্যাবহার
শুরু করেছে । এই অবস্থায়
বাবা মায়ের সাথে বিয়ের
ব্যাপারে দ্বিমত পোষন !!!
.
ভালো করে খোজ নিয়ে যখন
কারনটা জানতে পারলাম তখন
গর্বে বুকটা ভরে গেল । পাত্রের
ব্যাপারে উনার কোন অভিযোগ
ছিলোনা,অভিযোগ
ছিলো পাত্র এমন এক ব্যাংকের
মাইনে প্রাপ্ত
কর্মকর্তা সেটি সূদের
ভিত্তিতে চলে । যার অর্থ সম্পূর্ন
হারাম !! সারাটি জীবন কষ্ট
করে নামাজ রোজা আর
বন্দেগী করে যদি সূদের টাকায়
শরীর
গড়ে ওঠে তাহলে তো কোন
প্রকারের ঈবাদাতই কবুল হবেনা ।
তাই তিনি বিয়েতে রাজী নন ।
কারনটা উনার
বাবা মা সিম্পলি দেখছিলো ।
যুক্তি ছিলো আজকাল
সবকিছুতেইতো সূদ । সূদ
ছাড়া আবার ব্যাংকিং হয়
নাকি !!
যাইহোক শেষ পর্যন্ত
উনারা ব্যাপক যুক্তি তর্কের
পরে মেয়ের সাথে একমত হয়েছেন
। আল্লাহ উনাদের পরিবারের
সবাইকেই সঠিক বুঝ বোঝার
তাওফীক দিয়েছেন ।
***
সূদকে আরবীতে বলা হয় রিবা,
ইংরেজীতে Interest । এর
ভয়াবহতা সম্পর্কে পবিত্র কোরআন
এর বর্ননা >>
• হে বিশ্বাসীগণ!
তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ
খেয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় কর।
যাতে তোমরা সাফল্য
লাভ করতে পার। (আলে ইমরান-১৩০)
• যারা সুদ খায়
তারা ( কেয়ামতের দিন )
সে ব্যক্তির মত দাঁড়াবে,
যাকে শয়তান আপন স্পর্শ
দিয়ে মোহাবিষ্ট করে দেয়।
তাদের এ অবস্হার কারণ,
তারা বলে বেড়াতোঃ ব্যবসা তো সুদের
মতই। অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল
আর সুদকে হারাম করেছেন।
(বাকারা- ২৭৫)
• আল্লাহ তা’আলা সুদকে নিশ্চিহ্ন
করেন এবং দান
খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ
পছন্দ করেন না কোন
অবিশ্বাসী পাপীকে।
(বাকারা - ২৭৬)
• হে ঈমানদারগণ,
তোমরা আল্লাহকে ভয় কর
এবং সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে,
তা পরিত্যাগ কর,
যদি তোমরা ঈমানদার
হয়ে থাক। (বাকারা ২৭৮)
পবিত্র হাদিস এর বর্ননা >>
•রাসূল (সা বলেন "মেরাজ
রাতে আমাকে উর্ধ্বলোকে বিচরণ
করানোর সময় আমি আমার মাথার
উপরে সপ্তম আকাশে বজ্রে প্রচন্ড
গর্জনের শব্দ শুনতে পেলাম। চোখ
মেলে এমন কিছু লোক
দেখতে পেলাম, যাদের
পেটগুলো বিশাল ঘরের মত
সামনের দিকে বের হয়ে আছে।
তা ছিলো অসংখ্য সাপ ও
বিচ্ছুতে পরিপূর্ণ।
যেগুলো পেটের
বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছিলো।
অনন্তর আমি জিজ্ঞেস করলাম,
'হে জিবরাঈল ! এরা কারা?'
তিনি বললেনঃ 'এরা সুদখোর।’ (ইবনে মাযা ও
আহমদ)
• হযরত আবদুর রহমান ইবনে মাসউদ
(রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত আছে, যখন কোন
জাতির মধ্যে ব্যভিচার ও সুদ
ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে, তখন
আল্লাহ পাক সেই জাতিকে ধ্বংস
করার নির্দেশ দেন। (আবু
ইয়া’লা ও হাকেম) সে সমাজে সুদ
বিস্তার লাভ করে, তাদের
মধ্যে পাগলের
সংখ্যা বেড়ে যায়।
যে সমাজে ব্যভিচারের
ব্যপকতা ঘটে,তাদের মৃত্যুর হার
বেড়ে যায়। আর ওজনে কম
বেশী করার
অভ্যাসে অভ্যস্তদের উপর আল্লাহ
সামান্য ফোঁটা পরিমাণ বৃষ্টিও
বন্ধ করে দেন।
(ইবনে মাজা, বায়হাকী ও
হাকেম)
•সুদ থেকে অর্জিত এক দিরহাম
পরিমাণ অর্থ ইসলামের
দৃষ্টিতে ৩৬বার ব্যভিচার
করা অপেক্ষা গুরুতর অপরাধ।
(ইবনে মাজা, বায়হাকী)
•সুদখোর, সুদ প্রদানকারী, উভয়ের
উপর আল্লাহ
অভিসম্পাত করেন। (মুসলিম)
[তিরমিযির বর্ণনায় "সুদের
সাক্ষী ও লেখক" কথা দুটি যোগ
হয়েছে।]
•••সুদের গুনাহ সত্তরটি। তার
মধ্যে অপরাধের দিক
থেকে সর্বনিম্ন গুনাহটি হল, আপন
মায়ের সাথে যৌনাচারের
গুনাহের সমান। আর সবচেয়ে জঘন্য
প্রকারের সুদ হলো,সুদের
পাওনা আদায়ের জন্য কোন
মুসলমান ভাইয়ের
সম্ভ্রমহানি করা বা তার সম্পদ
দখল করা। (ইবনে মাজা,
তাবারানী)•••
আমি এখানে একটি মহান
অভিজ্ঞতাকে শেয়ার
করতে এসেছি । আপনারাও
সূদ সম্পকে সচেতন হউন ।
লেনদেনের অনেক জায়েজ
পন্থা আছে,ইসলামী শরীয়াত
মোতাবেক
আছে ইসলামি ব্যাংকিং যা.সুদভিত্তিক
প্রচলিত
ব্যাংকিং ব্যবস্থার
বিপরীতে পরিচালিত
ব্যাংকিং ব্যবস্থা যেখানে লাভ-
ক্ষতি ভাগাভাগির শর্তা আছে।
মুদারাবা, মুশারাকা,
মুরাবাহা ইত্যাদি নানা নামের
অর্থনৈতিক লেনদেনের নিয়ম
রয়েছে ।
সেগুলো সম্পর্কে বিস্থারিত
ধারনা নেন,হারাম থেকে বাঁচুন
।
(হ্যাঁ অনেক ব্যাংকই নামমাত্র এই
সেবাগুলো চালু
করেছে,এখানে সে ব্যাপারে তর্ক
করবোনা,অন্য একদিন)
# sorািাbonam
বিষয়: বিবিধ
১২৮০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কিন্তু ব্যাংক ছাড়া একজন লোক টাকা কোথায় রাখবে ?
সব টাকা যদি ব্যবসায়/জমি ক্রয়ে লগ্নি করা হয় তাহলে ক্রাইসিস মোমেন্টে টাকা পাওয়া খুব কঠিন হবে যেটা ব্যাংকে হয় না ।
ব্যবসা তো সবার পক্ষে করা সম্ভব হয় না এবং যৌথ ব্যবসায় প্রতারনাই বেশী হয় বলে সেখানে সহজে কেউ যেতে চায় না । আর ব্যবসায়ীরা মানুষের কাছে মিথ্যা বলে তাদের পন্য বিক্রি করে । ব্যবসাতে পুঁজির চেয়ে মিথ্যা বলার ভাগ বেশী ।
কাঁচা বাজারের বা কোন শপিংমলে গিয়ে বুঝবেন যে কিভাবে একজন ব্যবসায়ী মিথ্যা বলে তার পন্য স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে বেশী দামে বিক্রয় করে । আর এভাবে মিথ্যা না বলে যদি সঠিকভাবে বিক্রি করে তাহলে সে লাভের মুখ দেখবে না । দুদিন পরেই ব্যবসা গুটাতে/পাল্টাতে বাধ্য হবে । কিন্তু সবখানেই একই ট্রেন্ড।
আর টাকা যদি ব্যাংকেও রাখলো না , আবার ব্যবসাতেও বা জমিতেও লগ্নি করলো না - তাহলে সে কি টাকাগুলো বাড়িতে রাখবে ? এতে কি তার রিস্ক বেড়ে যাবে না ?
সুদ মুক্ত কারবার সব মুসলমানই তো চায় , কিন্তু পরিবেশ তো তাকে বাধ্য করে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন