সালাত ও পবিত্রতা – ওজু, গোসল ও সালাত সম্পাদনের পদ্ধতি
লিখেছেন লিখেছেন Shopner Manush ২১ মার্চ, ২০১৪, ০৯:১৩:১৯ রাত
রহমান রহীম আল্লাহ্ তায়ালার নামে-
ওজু, গোসল ও সালাত সম্পাদনের পদ্ধতি
সর্ববিধ প্রশংসা আল্লাহ রাববুল আলামীনের জন্য এবং দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক সর্বশেষ নবী, মুত্তাকীনদের ইমাম ও সৃষ্টির সেরা আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীগণের উপর।
আল্লাহ তা‘আলার প্রতি মুখাপেক্ষী বান্দাহ মুহাম্মদ ইবন ছালেহ আল-উসাইমীন বলছিঃ
আল্লাহর কিতাব ও সুন্নাতে রাসূলের আলোকে, ওজু, গোসল ও সালাত সম্পর্কে এই ক্ষুদ্র পুস্তিকাটি লিখা হলো।
ওজুর পদ্ধতি
ওজু
এটি একটি অপরিহার্য পবিত্রতা যা ছোট ছোট নাপাকী যেমন পেশাব, পায়খানা, বায়ু নির্গমণ, গভীর নিদ্রা ও উটের গোশত ভক্ষণ ইত্যাদি থেকে অর্জন করতে হয়।
ওজু সম্পাদনের পদ্ধতি
প্রথমে মনে মনে ওজুর নিয়ত করবে। এই নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা যাবে না। কেননা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওজু, সালাত বা অন্য কোনো ইবাদতের শুরুতে নিয়ত উচ্চারণ করেননি। দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ তা‘আলা তো অন্তরের সবকিছু সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত, সুতরাং অন্তরস্থ কোনো বিষয় সম্পর্কে উচ্চারণ করে তাঁকে খবর দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
এরপর আল্লাহ নাম নিতে গিয়ে বলবেন : “বিসমিল্লাহ”।
তারপর উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করবে।
অতঃপর কুলি করবে এবং পানি দিয়ে তিনবার নাক ঝাড়বে।
এরপর আপন চেহারা তিনবার ধৌত করবে, প্রস্থে এক কান থেকে অপর কান পর্যন্ত এবং দৈর্ঘ্যে মাথার চুলের গোড়া থেকে দাড়ির নীচ পর্যন্ত।
এরপর উভয় হাত আঙ্গুলির অগ্রভাগ থেকে কনুই পর্যন্ত তিনবার ধৌত করবে; প্রথমে ডানহাত পরে বামহাত ধৌত করবে।
এরপর ভিজা হাতদ্বয় দিয়ে একবার মাথা মসেহ করবে; হাতদ্বয় প্রথমে মাথার সম্মুখভাগ থেকে পশ্চাৎভাগে নিয়ে যাবে এবং পুনরায় মাথার অগ্রভাগে নিয়ে আসবে।
তারপর উভয় কান একবার করে মসেহ করবে; উভয় তর্জনী অঙ্গুলীর অগ্রভাগ উভয় কানের ভিতরে ঢুকাবে এবং উভয় বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দিয়ে বহির্ভাগ মসেহ করবে।
এরপর উভয় পা আঙ্গুলসমূহের অগ্রভাগ থেকে উভয় গোড়ালী পর্যন্ত তিনবার ধৌত করবে; প্রথমে ডান পা পরে বাম পা ধৌত করবে।
গোসল
গোসল
একটি অপরিহার্য পবিত্রতা যা জানাবাত ও হায়েয (ঋতু) জাতীয় বড় নাপাকি থেকে অর্জন করতে হয়।
গোসল করার পদ্ধতি
প্রথমতঃ অন্তরে গোসলের নিয়ত করবে; মুখে তা উচ্চারণ করা যাবে না।
এরপর আল্লাহ তা‘আলার নাম নিতে গিয়ে বলবে : ‘বিসমিল্লাহ’
তারপর পূর্ণভাবে ওজু করবে।
এরপর মাথার উপর পানি ঢালবে; পানি যখন ছড়িয়ে পড়বে তখন গায়ের উপর তিনবার ব্যাপকভাবে পানি ঢেলে দিবে।
অতঃপর সম্পূর্ণ শরীর ধৌত করবে।
তায়াম্মুম
তায়াম্মুম
একটি অপরিহার্য পবিত্রতা, যা পানি না পাওয়া অথবা পানি ব্যবহারে অক্ষম অবস্থায় মাটির দ্বারা ওজু বা গোসলের পরিবর্তে অর্জন করা হয়।
তায়াম্মুম করার পদ্ধতি
প্রথমে অজু বা গোসল যে বিষয়ের পরিবর্তে তায়াম্মুম করবে তার নিয়ত করবে। অতঃপর মাটিতে অথবা মাটি সংশ্লিষ্ট দেয়াল বা অন্য কিছুর উপর হাত মারবে এবং চেহারা ও উভয় পাঞ্জা মসেহ করবে।
সালাত
সালাত
আর তা বহুবিধ কথা ও কাজ সম্বলিত এমন একটি ইবাদত যার শুরু হয় ‘তাকবীর’ (আল্লাহু আকবার) বলে এবং শেষ হয় ‘সালাম’ (আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ) বলে।
যখন কোনো মুসলিম ব্যক্তি সালাত আদায়ের ইচ্ছা পোষণ করে তখন তার উপর ওয়াজিব হয় সে যেন এর পূর্বে ওজু করে যদি সে ছোট নাপাকি অবস্থায় থাকে; অথবা সে যেন তায়াম্মুম করে যদি সে পানি না পায় অথবা পানি ব্যবহারে সে অক্ষম হয়। এরপর সে যেন তার সমস্ত শরীর, কাপড় ও সালাতের স্থান নাজাসাত (নাপাক বস্তু) থেকে পবিত্র রাখে।
সালাত আদায়ের পদ্ধতি
প্রথমে সম্পূর্ণ শরীরসহ কিবলামূখী হবে; অন্য কোনো দিকে ফিরবে না বা লক্ষ্যও করবে না।
এরপর যে সালাত আদায়ের ইচ্ছা পোষণ করে অন্তরে তার নিয়ত করবে; এই নিয়ত মুখে উচ্চারণ করবে না।
এরপর ইহরামের তাকবীর দিতে গিয়ে বলবে ‘আল্লাহু আকবার’ এবং তাকবীরের সময় উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাবে।
তারপর ডান হাতের পাঞ্জা বাম হাতের পাঞ্জার বহির্ভাগে ধরে বুকের উপর রাখবে।
এরপর ইস্তেফতাহের (প্রারম্ভিক) দু‘আ পড়বে এবং বলবে,
«اللهم باعد بيني وبين خطاياي كما باعدت بين المشرق والمغرب اللهم تقّني من خطاياي كما ينقى الثوب الأبيض من الدنس اللهم أغسلني من خطاياي بالماء والثلج والبرد»
উচ্চারণঃ “আল্লাহুম্মা বা-ইদ বাইনী বাইনা খাতায়ায়া- কামা বা‘আদতা বাইনাল মাশরিক্বী ওয়াল মাগরিবি, আল্লাহুম্মা নাক্কীনী মিন খাতায়ায়া কামা ইনাক্কাছ্ ছাওবুল আবইয়াদু মিনাদ্ দানাসী, আল্লাহুম্মাগছিলনী মিনাল খাতায়ায়া- বিল মা-ঈ ওয়াস সালজী ওয়াল বারাদি।”
অর্থ: হে আল্লাহ! পূর্ব ও পশ্চিম যেমন পরস্পর থেকে দূরে আমাকে তেমনি আমার পাপ থেকে দূরে রাখ। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে পাপ মুক্ত করে এমনভাবে পরিস্কার করে দাও, যেমন সাদা কাপড় ধৌত করলে তা ময়লা থেকে পরিস্কার হয়। হে আল্লাহ! তুমি আমার পাপসমূহ পানি, বরফ ও শিশির দ্বারা ধৌত করে দাও।” অথবা বলবেঃ
«سُبْحَانَكَ اللهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، تَبَارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ»
উচ্চারণঃ “সুব্হানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়াতাবারাকাস্ মুকা ওয়াতা‘আলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।”
অর্থ: “সমস্ত মর্যাদা ও গৌরব তোমারই হে আল্লাহ! সমস্ত প্রশংসা কেবল তোমারই জন্য, তোমার নামেই সমস্ত বরকত ও কল্যাণ এবং তোমার মর্যাদা অতি উচ্চে। আর তুমি ব্যতীত সত্যিকার কোনো মা‘বুদ নেই।
এরপর বলবেঃ
أعوذ بالله من الشيطان الرجيم
“আউজু বিল্লাহি মিনাশ্ শাইত্বনির রজীম” অর্থাৎ আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ তা‘আলার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
অতঃপর বিসমিল্লাহ বলে সূরা ফাতিহা পড়বে এবং বলবেঃ
﴿ بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ١ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ٣ مَٰلِكِ يَوۡمِ ٱلدِّينِ ٤ إِيَّاكَ نَعۡبُدُ وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ ٥ ٱهۡدِنَا ٱلصِّرَٰطَ ٱلۡمُسۡتَقِيمَ ٦ صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمۡتَ عَلَيۡهِمۡ غَيۡرِ ٱلۡمَغۡضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ ٧ ﴾ [الفاتحة: ١، ٧]
অর্থ: ১. যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের রব্ব। ২. যিনি অতি মেহেরবান ও পরম দয়ালু। ৩. যিনি প্রতিফল দিবসের মালিক। ৪. হে আল্লাহ, আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি। ৫. আমাদেরকে সরল-সঠিক পথ দেখাও। ৬. ঐ সমস্ত লোকের পথ যাদেরকে তুমি নিয়ামত দান করেছ। ৭. ওদের পথ নয় যাদের প্রতি তোমার গজব নাজিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট।
তারপর বলবেঃ ‘আমী-ন’ অর্থাৎ হে আল্লাহ কবুল কর’।
এরপর পবিত্র কুরআন শরীফ থেকে যে পরিমাণ সহজসাধ্য হয় পড়বে, তবে ফজরের সালাতে দীর্ঘ ক্বিরাত পড়ার চেষ্টা করবে।
তারপর রুকুতে যাবে অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি তা‘যীম প্রদর্শনার্থে মাথাসহ আপন পিঠ নত করবে। রুকুতে যাওয়ার সময় তাকবীর বলবে এবং উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাবে। সুন্নাত হলোঃ নামাজী রুকুতে তার পিঠ নত করবে, মাথা তার বরাবর রাখবে এবং উভয় হাতের আঙ্গুলিগুলি খোলা অবস্থায় উভয় হাঁটুতে রাখবে।
রুকুতে তিনবার سبحان ربي العظيم ‘সুবহানা রব্বিয়াল ‘আযীম’ বলবে। আর যদি এর অতিরিক্ত ‘সুব্হানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আল্লাহুম্মাগফিরলি’ বলে তা হলে উত্তম হয়।
তারপর রুকু হতে এই বলে মাথা উঠাবেঃ سمع الله لمن حمده ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ্’ এবং উভয় হাত উভয় কাঁধ বরাবর উঠাবে। মুক্তাদী হলে উহার পরিবর্তে বলবেঃربنا ولك الحمد ‘রব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’ অর্থাৎ হে আল্লাহ তুমি আমাদের রব এবং তোমারই জন্য সর্ববিধ প্রশংসা।
এরপর রুকু থেকে মাথা উঠানোর পর বলবেঃ
ربنا ولك الحمد ملء السموات والأرض وملء ما شئت من شيء بعد
উচ্চারণঃ “রব্বানা ওয়া লাকাল হামদ মিলআস সামাওয়াতি ওয়া মিলআল আরদ ওয়া মিলআ মা শি’তা মিন শাইয়িন বা‘দু”
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তোমার জন্য ঐ পরিমাণ প্রশংসা যা আকাশ ভর্তি করে দেয়, যা পৃথিবী পূর্ণ করে দেয় এবং এই গুলি ছাড়া তুমি অন্য যা কিছু চাও তা পূর্ণ করে দেয়।
এরপর বিনীত হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে প্রথম সিজদা করবে এবং সিজদায় গিয়ে বলবেঃ ‘আল্লাহু আকবার’ অর্থাৎ আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। সাতটি অঙ্গের উপর সিজদাহ করবে; অঙ্গগুলো হলো: নাকসহ কপাল, উভয় হাতের তালু, উভয় হাঁটু এবং উভয় পায়ের অগ্রভাগ। উভয় মাসল শরীরের উভয় কিনারা থেকে ব্যবধানে রাখবে, যমীনের উপর উভয় বাহু কনুই পর্যন্ত বিছাবে না এবং অঙ্গলীসমূহের অগ্রভাগ কিব্লার দিকে রাখবে।
সিজদায় গিয়ে তিনবার বলবেঃ سبحان ربي الأعلى “সুবহানা রব্বিয়াল আ‘লা” অর্থাৎ আমার সর্বোচ্চ প্রভুর প্রশংসা করছি।
আর যদি এর অতিরিক্ত নিম্নের তাসবীহও পাঠ করে তাহলে উত্তম হয়ঃ
سبحانك اللهم ربنا وبحمدك اللهم اغفرلي
“সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রব্বানা ওয়া বিহামদিকা, আল্লাহুম্মাগফিরলী”
অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমাদের প্রভু তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, তোমার প্রশংসা সহকারে, হে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা কর।”
এরপর “আল্লাহু আকবার” বলে সিজদাহ থেকে মাথা উঠাবে।
তারপর উভয় সিজদাহ’র মধ্যবর্তী সময়ে বাম পায়ের উপর বসবে এবং ডান পা খাড়া করে রাখবে। ডান হাত ডান জানুর শেষ প্রান্তে অর্থাৎ হাটু সংলগ্ন অংশের উপর রাখবে এবং খিনছির ও বিনছির আঙ্গুলদ্বয় মিলিয়ে রাখবে, তর্জনী উঠিয়ে রাখবে ও দু‘আর সময় নাড়াবে এবং বৃদ্ধাঙ্গুলীর অগ্রভাগ মধ্যমাঙ্গুলীর অগ্র ভাগের সাথে গোলাকারে মিলিয়ে রাখবে। এইভাবে বাম হাতের আঙ্গুলগুলি খোলা অবস্থায় হাঁটু সংলগ্ন বাম জানুর উপর রাখবে।
উভয় সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকে বলবেঃ
رب اغفرلي وارحمني واهدني وارزقني واجبرني وعافني
এরপর আল্লাহর প্রতি বিণীত হয়ে কথা ও কাজে প্রথম সিজদাহ’র মত দ্বিতীয় সিজদাহ্ করবে এবং সিজদায় যাওয়ার সময় তাকবীর বলবে।
এরপর দ্বিতীয় সিজদাহ থেকে আল্লাহু আকবার’ বলে মাথা উঠাবে এবং কথা ও কাজে প্রথম রাকা‘আতের মত দ্বিতীয় রাকা‘আত পড়বে, তবে প্রথম রাকা‘আতের মত প্রারম্ভিক দু‘আ পড়তে হবে না।
তারপর দ্বিতীয় রাকা‘আত শেষে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে বসবে এবং উভয় সিজদাহর মধ্যবর্তী বৈঠকের মতই বসবে।
এই বৈঠকে তাশাহ্হুদ (আত্তাহিয়্যাতু) পড়বে; আর তাশাহ্হুদ হলোঃ
التحيات لله والصلوات والطيبات السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته السلام علينا وعلى عباد الله الصالحين، أشهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن محمدا عبده ورسوله -
«اللهم صل على محمد وعلى آل محمد كما صليت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد، اللهم بارك على محمد وعلى آل محمد كما باركت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنّك حميد مجيد» (رواه البخاري ومسلم)
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত্ব ত্বাইয়্যিবাতু আস্সালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিইয়্যু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু, আসসালামু আলাইনা ওয়া ‘আলা ইবাদিল্লাহিস্ সালিহীন। আশহাদু আল্-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।
আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ কামা সাল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া আলা আ-লি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
আল্লাহুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদিন, কামা বা-রাকতা ‘আ-লা ইবরাহীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ।
অর্থ: “যাবতীয় সম্মান-সম্ভাষণ, সকল সালাত, ও পবিত্রতা সমস্তই আল্লাহর জন্য, হে নবী আপনার উপর আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো মা‘বুদ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দাহ ও তাঁর রাসূল।
হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি সালাত প্রেরণ কর, যেমনভাবে সালাত প্রেরণ করেছিলে ইবরাহীম আলাইহিস্ সালাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান।
হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি বরকত প্রেরণ কর, যেমনভাবে বরকত প্রেরণ করেছিলে ইবরাহীম আলাইহিস্ সালাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান।
এরপর বলবেঃ
أعوذ بالله من عذاب جهنم ومن عذاب القبر ومن فتنة المحيا والممات ومن فتنة المسيح الدجال -
উচ্চারণঃ “আঊযুবিল্লাহি মিন আযাবি জাহান্নামা, ওয়া মিন আজাবিল ক্বাবরি, ওয়া মিন ফিত্নাতিল্ মাহ্ইয়া ওয়াল মামাতি ওয়া মিন ফিত্নাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জালি।
অর্থ: “আমি আল্লাহর আশ্রয় কামনা করি জাহান্নামের আযাব থেকে, কবরের শাস্তি থেকে, জীবন ও মৃত্যুর যন্ত্রণা থেকে এবং মাসীহ দাজ্জালের ফেতনা থেকে।”
এরপর আপন প্রভু- প্রতিপালকের কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের মঙ্গল চেয়ে পছন্দমত যে কোনো দু‘আ করতে পারে।
পরিশেষে ডান দিকে মুখ ফিরিয়ে “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বলবে। এই ভাবে বাম দিকেও মুখ ফিরিয়ে সালাম বলবে।
সালাত যদি তিন রাকা‘আতী অথবা চার রাক‘আতী হয় তা হলে প্রথম তাশাহ্হুদ অর্থাৎ আশহাদু আন লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু” পড়ে থেকে যাবে।
এরপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সোজা দাঁড়িয়ে যাবে এবং উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাবে।
এরপর অবশিষ্ট সালাত দ্বিতীয় রাকা‘আতের বর্ণনা অনুযায়ী আদায় করবে; তবে সালাতের এই অংশে দাঁড়িয়ে শুধু সূরা ফাতিহা পড়বে।
এরপর তাওয়াররুক করে বসবে অর্থাৎ ডান পা খাড়া করে রাখবে এবং বাম পা ডান পায়ের নিম্ন দিয়ে বের করে রাখবে। পাছা যমীনের উপর স্থির রাখবে এবং উভয় হাত উভয় জানুর উপর সেইভাবে রাখবে যেভাবে প্রথম তাশাহ্হুদের সময় রেখেছিল।
এই বৈঠকে পূর্ণ তাশাহ্হুদ (আত্তাহিয়্যাতু) পাঠ করবে।
অবশেষে “আস্সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ” বলে প্রথমে ডান দিকে এবং পরে বাম দিকে সালাম করবে।
যে সব বিষয় সালাতে মাকরূহ
সালাতের মধ্যে মাথা বা চক্ষু দিয়ে এদিক-ওদিক ভ্রুক্ষেপ করা। আকাশের দিকে চক্ষু উত্তোলন করা হারাম।
সালাতের মধ্যে বিনা প্রয়োজনে নড়া-চড়া করা।
সালাতের মধ্যে ব্যস্ত রাখে অথবা মনোযোগ আকর্ষণ করে এমন কোনো বিষয় সঙ্গে রাখা; যেমন, ভারী কোনো বিষয় বা রঙ্গিন কোনো কিছু যা দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
সালাতের মধ্যে তাখাছ্ছুর অর্থাৎ কোমরে হাত রাখা।
যে সব বিষয় সালাত বাতিল করে
ইচ্ছাকৃত কথাবর্তা বলা, তা কম হলেও।
সম্পূর্ণ শরীর ক্বিবলার দিক হতে ফিরে যাওয়া।
পিছন দিক থেকে বাতাস বের হওয়া অথবা ওজু গোসল ওয়াজিব করে এমন কোনো বিষয় ঘটে যাওয়া।
বিনা প্রয়োজনে পরপর অধিক মাত্রায় নড়াচড়া করা।
হাসি, তা কম হলেও সালাত বাতিল করে।
ইচ্ছা করে অতিরিক্ত রুকু, সিজদা, ক্বিয়াম বা উপবেশন করা।
ইচ্ছা করে ইমামের আগে-আগে যাওয়া।
ওজু ভেঙ্গে যাওয়া।
সালাতে ভুলের সিজ্দাহ আদায় সম্পর্কে কয়েকটি হুকুম
যদি কেউ সালাতে ভুল করে অতিরিক্ত কোনো রুকু, সিজদাহ ক্বিয়াম বা উপবেশন করে ফেলে তাহলে সে প্রথম সালাম ফিরিয়ে ভুলের জন্য দু’টি সিজদাহ্ দিবে এবং আবার সালাম করবে।
উদাহরণঃ কোনো লোক যোহরের সালাত পড়তে গিয়ে পঞ্চম রাকা‘আতের জন্য দাঁড়িয়ে গেল, অতঃপর তার ভুল স্মরণ হ’ল অথবা কেউ তাকে স্মরণ করিয়ে দিল, তখন সে বিনা তাকবীরে ফিরে গিয়ে বসে পড়বে এবং তাশাহ্হুদ (আত্তাহিয়্যাতু) পড়ে সালাম ফিরাবে; তারপর দুই সিজদাহ্ দিয়ে উভয় দিকে সালাম ফিরাবে। এ ভাবে যদি সে এই অতিরিক্ত কাজ সম্পর্কে সালাত শেষ হওয়ার পূর্বে অবগত না হয় তাহলে শেষ পর্যায়ে সে ভুলের দুই সিজদাহ দিবে এবং সালাম ফিরাবে।
কেউ যদি ভুলে সালাত শেষ করার পূর্বে সালাম করে ফেলে এবং কিছু সময়ের মধ্যে তা স্মরণ হয়ে যায় অথবা কেউ তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় তখন সে প্রথম সালাতের উপর ভিত্তি করে অবশিষ্ট সালাত পূর্ণ করবে, তারপর সালাম করবে; অতঃপর দু’টি সিজদাহ দিয়ে আবার সালাম করবে।
উদাহরণঃ কোনো লোক যোহরের সালাত পড়তে গিয়ে ভুল করে তৃতীয় রাকা‘আতে সালাম করে ফেললো, অতঃপর স্মরণ হলো অথবা কেউ তাকে স্মরণ করিয়ে দিল; তখন সে উঠে চতুর্থ রাকা‘আত পড়ে সালাম করবে, তারপর ভুলের জন্য দুই সিজদাহ দিয়ে পুনরায় সালাম করবে। আর যদি সালাতের অনেক পরে এই ভুল স্মরণ হয় তাহলে সালাত প্রথম থেকে পুনরায় পড়তে হবে।
যদি কোনো লোক প্রথম তাশাহ্হুদ (আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহ) অথবা সালাতের অন্য কোনো ওয়াজিব ভুলে ছেড়ে দেয়, তাহলে সে সালামের পূর্বে শুধু ভুলের দুই সিজদাহ আদায় করলে চলবে; অন্য কিছু করতে হবে না। আর যদি স্থান ত্যাগের পূর্বে স্মরণ হয়ে যায় তাহলে তখনই তা পড়ে নিবে; অন্য কিছু করতে হবে না। তবে স্থান ত্যাগের পর এবং পরবর্তী স্থানে পৌঁছার পূর্বে যদি স্মরণ হয়ে যায় তাহলে সেই স্থানে ফিরে তা আদায় করে নিবে।
উদাহরণঃ যদি নামাজী প্রথম তাশাহ্হুদ ভুলে না পড়ে তৃতীয় রাকা‘আতের জন্য পূর্ণ ভাবে দাঁড়িয়ে যায় তাহলে সে আর প্রত্যাবর্তন না করে শেষ বৈঠকে সালামের পূর্বে ভুলের জন্য দুই সিজদাহ আদায় করবে। আর যদি তাশাহহুদের জন্য বসে তাশাহহুদ পড়া ভুলে যায়, এরপর দাঁড়ানোর পূর্বে তার স্মরণ হয়ে যায় তাহলে তখনই সে তাশাহহুদ পড়ে সালাত পূর্ণ করে নিবে। তার অন্য কিছু করতে হবে না। এ ভাবে যদি সে তাশাহ্হুদের জন্য না বসে দাঁড়িয়ে যায় এবং পূর্ণভাবে দাঁড়ানোর পূর্বে তা স্মরণ হয়ে যায় তাহলে সে ফিরে বসে তাশাহ্হুদ পড়ে সালাত পূর্ণ করে নিবে। তবে আলেমগণের মতে এমতাবস্থায় সে ভুলের দুই সিজদাহ আদায় করবে। কেননা, সে তাশাহহুদ না পড়ে উঠতে গিয়ে সালাতে অতিরিক্ত কাজ করে ফেলেছে।
কারো যদি সালাতে সন্দেহ হয় যে, সে দু’রাকা‘আত পড়লো না তিন রাকা‘আত এবং কোনো একটির প্রতি তার বেশী ঝোঁক না হয়, এমতাবস্থায় সে এক্বীন অর্থাৎ কম সংখ্যার উপর ভিত্তি করবে; অতঃপর সালামের পূর্বে ভুলের জন্য দুই সিজদাহ দিবে এবং সালাম করবে।
উদাহরণঃ একজন লোক যোহরের সালাত পড়তে গিয়ে দ্বিতীয় রাকা‘আতে সন্দেহে পতিত হয়, এটা দ্বিতীয় রাকা‘আত না তৃতীয় রাকা‘আত? এবং কোনো একদিকে তার মন অগ্রাধিকার দিচ্ছে না, এমতাবস্থায় সে এক্বীন অর্থাৎ কম সংখ্যার উপর ভিত্তি করবে; অতঃপর সালামের পূর্বে ভুলের জন্য দুই সিজদাহ দিবে এবং সালাম করবে।
কেউ যদি সালাতে সন্দেহ করে যে, সে দু’রাকা‘আত পড়লো না তিন রাকা‘আত এবং কোনো একদিকে তার অধিকতর ঝোঁক থাকে তখন সে ঐ দিকের উপর ভিত্তি করে, তা কম হোক অথবা বেশী হোক, সালাত পূর্ণ করবে; অতঃপর সে সালামের পর দু’টি ভুলের সিজদাহ আদায় করে আবার সালাম করবে।
উদাহরণঃ একজন লোক যোহরের সালাত পড়ছিল। দ্বিতীয় রাকা‘আতে তার সন্দেহ হলো: সালাত দু’রাকা‘আত পড়লো না তিন রাকা‘আত; তবে তার মন অগ্রাধিকার দিচ্ছে তিন রাকা‘আতের। এমতাবস্থায় সে তিন রাকা‘আত ধরেই সালাত পূর্ণ করে সালাম ফিরাবে; অতঃপর ভুলের দুই সিজদা দিয়ে পুনরায় সালাম করবে।
সালাত শেষ করার পর যদি কারো সন্দেহ হয় তা হলে এর প্রতি সে যেন ভ্রুক্ষেপ না করে। হ্যাঁ, যদি স্থির বিশ্বাস হয় তা হলে সে সেমতেই কাজ করবে।
যদি কেউ বেশী বেশী সন্দেহ পোষণকারী হয় তাহলে সে তার সন্দেহের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করবে না। কারণ, এটা শয়তানের কুমন্ত্রণা।
আল্লাহ পাকই ভাল জানেন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের প্রিয়নবী, তার পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণের উপর দরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন।
বিষয়: বিবিধ
১৫১০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন