আমরা কি এতটাই অন্ধ হয়ে গেলাম?
লিখেছেন লিখেছেন হাশেমি ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৬:১৫:১৩ সন্ধ্যা
আমাদের বুকের উপর দিয়ে ভারতীয়দের যানবাহন যাবার করিডর দিতে আমাদের আপত্তি থাকেনা..........
কিন্তু আমাদের চোখের ন্যায্য পানিটুকুর (তিস্তা, ফারাক্কা, টিপাইমুখ...) বিষয়ে কথা বলতে যখন মমতা ম্যাডাম খোদ রাষ্ট্রপতিকে উপেক্ষা করে আলোচনা না হবার ঘোষনা দেয়, তখনও আমরা চুপচাপ বসে বসে মমতার সাহসের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করি, আবার কেউ কেউ মমতার দেশপ্রেম নিয়ে প্রসংশায় মত্ত হই।
গোলাম আজমকে যখন যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়, তখন আমরা অসন্তোষ প্রকাশে শাহবাগে প্রতীকী ফাঁসির আয়োজন করি.....
কিন্তু মিষ্টার প্রনব মুখার্জী যখন সরকারীভাবে দেশ সফরে এসে, বেসরকারী ভাবে রুপসী বাংলায় ঘন্টাব্যাপী বৈঠক করে ইমরান এইচ সরকার নামের এক বেসরকারি ব্যাক্তির সাথে, তখন আমরা তার মাঝেও কোন গন্ধ খুঁজে পাইনা।
একাত্তরের ধর্ষন কাহিনী নিয়ে আমরা ফাঁসীর আন্দোলন করতে পারি, আমরন অনশনেও যেতে পারি....
কিন্তু এই যুগের কুলাঙ্গার, যারা ধর্ষনে সেঞ্চুরী করে উৎসব উদযাপন করে, পরিমল, পান্না মাষ্টারের মত দেড়শতেরও বেশি ধর্ষন করে শিক্ষক জাতির সম্মানকে ধুলোয় লুটিয়ে বীরদর্পে ঘুরে বেড়ায়, কোন শিক্ষক সমাজ তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেনা, আমরা যারা একাত্তর নিয়ে পড়ে আছি, তাদের চোখে এসব পড়ে কি? অতীতের সুষ্ঠু বিচার পেতে হলে বর্তমানকে আগে কলংকমুক্ত করতে হবে, আমরা তা পারছি কি? আর পারছিনা বলেই আজ জাতীর জনকের ছবি, তার কন্যার ছবি ঝুলিয়ে আবাসিক ফ্ল্যাট ভাড়া করে পতিতালয় হিসেবে চলাটাও আমাদের দেখতে হয়েছে।
আমাদের রাজনৈতিক নেতারা তারপরও কেন এই সব চিহ্নিত দোষীদের বারবার আশ্রয় দিয়ে যায়? মানবতার নামে তাদের গালফোলা বুলিগুলোর সত্যতা প্রমান করতে আমরা কখনো
তাদের বাধ্য করেছি কি? কিন্ত তারা তো আমাদের সাথে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা তা ভুলে যাই।
আমাদের বুকে খাম্বা বসিয়ে যখন ভারতীয়রা বিদ্যুৎ সাপ্লাইয়ের ব্যাবস্থা করে তাদের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে, আমরা মুখে কুলূপ এটে বসে থাকি, আর ভাবি তারা তো আমাদের প্রতিবেশিই...............
কিন্তু প্রকাশ্যে আমাদের রক্তের বোন ফেলানীকে হত্যা করে কাঁটাতারে ঝুলে রাখার পরও যখন আসামীকে বেকসুর খালাস দেয় তারা, আমরা নিজেরা তো ব্যাক্তিগতভাবে পারিইনা, আবার রাষ্ট্রীয়ভাবেও কিছু বলিনা, কোন প্রতিবাদ করিনা এই অমানবিক প্রহসনের........
কোথায় আজকের মুক্তিযোদ্ধার দ্বিতীয় প্রজন্ম? তোমাদের সেই দীপ্ত কন্ঠ কোথায় গেল? আজ পর্যন্ত একটা জোড় অভিযোগও জানাতে পারলেনা এই বিচারের নামে। নাকি ফেলানীদের তোমরা নিজেদের বোন ভাবতে পারনা?
ফেলানী, আমাদের ক্ষমা করিস বোন। আমরা তোর জন্য কিছুই করতে পারলামনা। কি আর বলব বল, যখন আমরা নিজেরাই নিজেদের সত্তা বেঁচে দিতে পারি সামান্য কিছু পাবার লোভে, দেশের অবিসংবাদিত দুই নেতাকে নিয়ে যখন টানাটানি করতে পারি জাতীয় সংসদে, শুধুমাত্র ক্ষমতার লোভে, তখন তোকে নিয়ে ভাববার সময় কোথায়?
আমাদের বাংলাদেশি হয়েও সেই বাংলাদেশিদের প্রতি চরম ঘৃণা দেখানো উচিত, যারা নিজেদের স্বার্থে আপন বোনকেও বিক্রি করতে দ্বিধা করেনা। নিজের বোনকে হত্যা করলেও যারা তার জন্য প্রতিবাদটুকুও জানাতে দ্বিধা দেখায়, যারা সামান্য কিছুর লোভে গোটা দেশকে বিলিন করে দিতে এতটুকুও ভাবেনা।
যে দেশের মাটিতে শেইখ মুজিবের মত বীরের জন্ম, মাওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা, ডঃ মুহাম্মদ শহিদুল্লাহর জন্ম,
যে দেশের ভাষার রক্ষার জন্য তাজা প্রাণ উৎসর্গ করতে পারা সালাম, রফিক, বরকতদের জন্ম, দেশ রক্ষার জন্য মতিউর, জাহাঙ্গীর, নূর মোহাম্মদের মত বীরশ্রেষ্ঠদের জন্ম সেই দেশে জন্ম নিয়েও আজ আমাদের ভিনদেশি চরমপন্থি মমতার কাছ থেকেই শিখতে হচ্ছে, কিভাবে দেশের জন্য দীপ্ত কন্ঠে কথা বলতে হয়!!
এটা কি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়? নাকি পরিতাপের??
বিচারের ভার পাঠক বন্ধুদের উপর।
বিষয়: বিবিধ
১২৩১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন