ফুকুশিমা শরণার্থীদের ভবিষ্যত কি?
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসে বাংলাদেশ ১২ নভেম্বর, ২০১৩, ০৯:৪০:৫৭ সকাল
প্রবাসে বাংলাদেশ টোকিও, জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক দুর্ঘটনার কারণে কয়েক হাজার মানুষকে তাঁদের বাসস্থান থেকে অন্যত্র সরিয়ে দেয়া হয়েছিল৷ দুর্ঘটনাস্থল পরিষ্কার করা হলে, তাঁরা আবারো তাঁদের পুরোনো আবাসনে ফিরতে পারবেন বলে জানিয়েছে সরকার৷
২০১১ সালের মার্চে জাপানে ভূমিকম্প ও তার ফলে সৃষ্ট সুনামির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্র৷ ক্ষতিগ্রস্ত চুল্লির ছিদ্র থেকে তেজস্ক্রিয় পানি বের হওয়ায় ঐ এলাকার আশপাশ থেকে অনেক মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়৷ ভূতের শহরে পরিণত হয় ঐ এলাকাটি৷ এমনই এক শরণার্থী ৬১ বছরের ইশিরো কাজাওয়া বললেন, এমন ভাসমান অবস্থায় পুরো জীবন কাটানো তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়৷
গত আড়াই বছর ধরে ঐ এলাকার হাজারো মানুষ অস্থায়ীভাবে বসবাস করছেন বিভিন্ন এলাকায়৷ জাপান সরকার পারমাণবিক চুল্লির আশপাশের এলাকা পরিষ্কারের জন্য যে লক্ষ্য ঠিক করেছিল, তাতে এখনো পৌঁছাতে সমর্থ হয়নি৷ পারমাণবিক চুল্লিটি সারাতে এবং তেজস্ক্রিয়তা যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য কয়েকশ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ের পরিকল্পনা করছে জাপান সরকার৷
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে-র জোটের পার্লামেন্ট সদস্যরা সোমবার পরামর্শ দিয়েছেন, শরনার্থীদের জানাতে হবে যে আগের সরকার ৩০ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ফুকুশিমার সমস্যা সমাধানের যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিলেন, তা অর্জন সম্ভব নয়৷ নতুন নীতি অনুযায়ী, এই লক্ষ্যে পৌঁছানো গেলে শরনার্থীদের বাড়ি ফিরতে আর বাধা থাকবে না৷ তখন বন্ধ করে দেয়া হবে ক্ষতিপূরণ৷
সমাজ র্মীদের রিপোর্ট অনুযায়ী, আগস্টে শরণার্থীদের মধ্যে ১৫৩৯ জন মারা গেছেন অসুস্থতায়, সংখ্যাটা সুনামিতে নিহতদের কাছাকাছি৷ যাঁরা বেঁচে আছেন তাঁদের বেশিরভাগই হতাশাগ্রস্ত৷ খালি করে ফেলা এলাকাটুকু হংকং-এর চেয়ে একটু বড়৷ তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা অনুযায়ী, ঐ এলাকাটিকে ১১টি জোনে ভাগ করা হয়েছে৷
পরিবেশমন্ত্রী জানিয়েছেন, ১১টি জোনের মধ্যে ৭টি জোনের কাজ এরই মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, তা সম্ভব না হওয়ায় নতুন তারিখ ঠিক করা হয়েছে৷
সবচেয়ে তেজস্ক্রিয় এলাকা তোমিওকা, সেখানকার অধিবাসী কিকো সিওই জানালেন, যতক্ষণ না তেজস্ক্রিয়তা পুরোপুরি সারানো যাচ্ছে, তাঁদের যত ইচ্ছেই থাকুক সেখানে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়৷
সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট থেকে দেখা গেছে, ঐ এলাকার শরণার্থীদের মধ্যে মাত্র ১২ ভাগ তাঁদের পুরোনো বাড়িতে ফেরার আগ্রহ দেখিয়েছেন৷ কেননা ঐসব এলাকার স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, অফিস আদালত কিছুই আর সচল নেই৷জাপানে ভয়াবহ সুনামির আঘাতের দুই বছর হয়েছে৷ ২০১১ সালের ১১ মার্চ আঘাত হানা ঐ সুনামির কারণে ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রেও দুর্ঘটনা ঘটেছিল৷ এরপর তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সরকার ঐ বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশেপাশের ২০ কিলোমিটার এলাকায় থাকা সব বাসিন্দাদের সরে যেতে অনুরোধ করেন৷ এতে প্রায় এক লক্ষ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে যায়৷
তবে আদতে ২০ কিলোমিটারের বাইরের লোকজনও নিরাপত্তার কারণে এলাকা ছেড়ে চলে যায়৷
এদের একজন মিকিও নিহাই৷ ৩৮ বছর বয়সি নিহাই'এর স্ত্রী তাদের ছোট্ট দুই মেয়েকে নিয়ে ফুকুশিমা ছেড়ে এখন থাকছেন টৌকিওতে৷ আর নিহাই জীবিকার তাগিদে রয়ে গেছেন ফুকুশিমাতেই৷ কারণ তিনি সেখানে একটি গাড়ি কারখানায় চাকরি করেন৷ অর্থাৎ তাঁর পরিবার দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে৷
যাতায়াত ব্যয়বহুল হওয়ায় নিহাইয়ের পক্ষে মাসে একবারের বেশি টোকিও যাওয়া সম্ভব হয় না৷ তাই মানসিকভাবে কষ্টে আছেন নিহাই৷
এমন কাহিনি ভুরিভুরি৷ তাইতো সরকারি হিসেবে ফুকুশিমা দুর্ঘটনায় কেউ নিহত না হলেও এর কারণে মানুষকে যে দুর্ভোগ পোহাত হচ্ছে তার কোনো শেষ নেই৷
শুরুতে যখন বাড়ি ছাড়তে বলা হয়েছিল তখন ধারণা ছিল, হয়তো বছর দুয়েকের মধ্যে আবার ফেরা সম্ভব হবে৷ কিন্তু আজ দুবছর পার হতে চললেও কবে ফুকুশিমায় ফেরা যাবে তা জানেন না নিহাই৷
যদিও সরকার সহ আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ সংস্থাগুলো বলছে যে, ফুকুশিমার পরিবেশে এখন যে তেজস্ক্রিয়তা রয়েছে তাতে স্বাস্থ্যগত ক্ষতির সম্ভাবনা নেই৷ কিন্তু তারপরও মানুষ আশ্বস্ত হচ্ছে না৷ তারা ফিরে যেতে চাইছেন না৷
লিতাতে গ্রামের মেয়র নোরিও কানো, যিনি ফুকুশিমা ছেড়ে এখন টোকিওতে থাকছেন, তিনি বলছেন ফুকুশিমার পরমাণু চুল্লি ও তার আশেপাশের এলাকা পুরোপুরি তেজস্ক্রিয়তা মুক্ত করতে লাগতে পারে প্রায় ৩০ বছর৷
ফুকুশিমা এলাকার কৃষক ও মৎসজীবীরাও রয়েছেন বিপদে৷ গবেষণায় তাদের উৎপাদিত ফসল ও মাছ তেজস্ক্রিয়তামুক্ত বলে প্রমাণিত হলেও মানুষ তা কিনতে চাইছে না বলে জানান তারা
দুইবছর আগে ফুকুশিমায় দুর্ঘটনার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে নতুন করে ভেবেছে৷ কারও উপর আবার কোনো প্রভাবই পড়েনি৷ বাংলাদেশে প্রথমঃ পাবনার রূপপুরে বাংলাদেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হতে যাচ্ছে৷ রাশিয়ার সহায়তায় তৈরি হতে যাওয়া এই কেন্দ্র থেকে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷
DW/এপিবি/ডিজি (এপি/রয়টার্স)
বিষয়: বিবিধ
১১৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন