"প্রধানমন্ত্রী,আপনি জানেন দিল্লিতে আমাদের বন্ধুদের নির্দেশে কিভাবে ফলাফল আগেই ঠিক করা হয়েছিল। তারা যেভাবে চেয়েছিল সেভাবেই আমরা চলেছিলাম"। -হিলারি
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসে বাংলাদেশ ১১ নভেম্বর, ২০১৩, ০৯:১১:৪২ সকাল
http://probasebangladesh.com/2013.11.11.10056.html
শফিক রেহমানঃ
হিলারি : আমি ভেবেছিলাম আমাকে এত দূর যেতে হবে না। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য, আমি ভুল ভেবেছিলাম। আপনি জানেন এবং আমরাও জানি কিভাবে আপনার সরকার ক্ষমতায় এসেছে। ভুলে যাবেন না, নির্বাচনের পর আমরা বলেছিলাম, সেটা অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে এবং আপনাকে সাহায্য করেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী,আপনি জানেন দিল্লিতে আমাদের বন্ধুদের নির্দেশে কিভাবে ফলাফল আগেই ঠিক করা হয়েছিল। তারা যেভাবে চেয়েছিল সেভাবেই আমরা চলেছিলাম। প্লিজ, আপনি এটাও ভুলে যাবেন না যে, জেনারেল মইন যিনি আপনাকে ক্ষমতায় এনেছিলেন, তিনি এখন আমেরিকাতে আছেন এবং আপনি যতখানি কল্পনা করতে পারেন, তার চেয়েও বেশি এখন আমরা জানি। আমি বলছি না যে, এখনই আপনার কাছ থেকে আমরা দূরে সরে যাব।
দৈনিক পত্রিকা অফিসে সকাল বেলাটা হচ্ছে ডেড আওয়ার। বেলা বারোটা পর্যন্ত সেখানে উপস্থিতির সংখ্যা থাকে খুব কম। সিটি এডিশন ছাপানো, প্যাকিং ও ডেলিভারি শেষ হয়ে যাওয়ার পর ভোর রাত থেকে পত্রিকা অফিস হয়ে যায় প্রায় মৃত। তখন থাকে না রোটারি প্রেসের শব্দ। থাকে না কম্পিউটার স্কৃনের আলো। থাকে না রুম থেকে রুমে স্টাফের চলাচল। সকালে ক্লিনাররা আসার পর থেকে পত্রিকা ভবন জেগে উঠতে শুরু করলেও সকাল এগারোটার দিকে চিফ রিপোর্টারের মিটিং শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত অন্যান্য স্টাফ থাকে খুব কম। তাই এমন সময়টাই পুলিশ বেছে নেয় পত্রিকা অফিসে হামলা করার জন্য। তাই এমন সময়ই পুলিশ কাওরানবাজারে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা অফিসে হামলা চালিয়ে সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করতে পেরেছিল ন্যূনতম বাধার মুখে।
কোনো সম্পাদকই এই সময়টায় অফিসে থাকেন না। কিন্তু মাহমুদুর রহমান চার মাসেরও বেশি সময় ধরে আমার দেশ পত্রিকা অফিসে দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা কাটাচ্ছিলেন। কারণ—তিনি আশঙ্কা করছিলেন অফিস থেকে বের হলেই বিনা প্রতিরোধে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারবে। সেই সুযোগটা তিনি পুলিশকে দিতে চাননি। ফলে শেষ অবধি পুলিশ বাধ্য হয় তার অফিস থেকে তাকে গ্রেফতার করতে এবং সেজন্য বেছে নেয় সকাল বেলা।
দৈনিক শুকতারার সম্পাদক শামীম প্রচলিত রীতি ভেঙে সেদিন সকাল এগারোটায় নিউজ রিপোর্টিং আর এডিটিং বিভাগের সব সিনিয়র ও জুনিয়র স্টাফদের উপস্থিত হতে নির্দেশ দিয়েছিল। সে নিজে সকাল এগারোটার মধ্যে পৌঁছে গিয়েছিল। সেদিন ছিল রোববার ১০ নভেম্বর ২০১৩।
নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে হালকা শীতের পরশ ছিল। স্টাফদের পোশাকে সেটা বোঝা যাচ্ছিল। পুরুষরা কেউ কেউ জ্যাকেট পরে এসেছিল। নারীরা সোয়েটার পরে। তাদের মুখে মৃদু গুঞ্জন ছিল, কেন শামীম ভাই আজ সকালে এরকম একটা ইমার্জেন্সি মিটিং ডেকেছেন?
এই প্রশ্নের উত্তর পেতে তাদের বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি।
মিটিংয়ে শামীমের দুই পাশে বসল নিউজ এডিটর মরিয়ম খান মেরি ও চিফ রিপোর্টার ফয়েজ আনসারি, কান্টৃ এডিটর রমেন বোস, ফিচার এডিটর মৌসুমি হক।
শামীম বলা শুরু করল। তার হাতে ধরা ছিল সেদিন সকালের কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা।
প্রিয় বন্ধু ও প্রিয় বান্ধবীরা। তোমরা সবাই জানো গত শুক্রবার রাত থেকে আওয়ামী লীগ সরকার চলে গেছে হার্ড লাইনে। মুখোমুখি সংঘর্ষ ও সংঘাতের পথ বেছে নিয়েছে সরকার। ঢাকায় গ্রেফতার করেছে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের এবং সেই সঙ্গে বিএনপির কিছু অফিস স্টাফকে। আর সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধরপাকড়ের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আমি শনিবারের কয়েকটি পত্রিকার ফ্রন্ট পেইজ দেখাচ্ছি। কয়েকটি হেডলাইন পড়ে শোনাচ্ছি।
মানবজমিন : হেডলাইন—মওদুদ, আনোয়ার, রফিকুল, মিন্টু, শিমুল গ্রেফতার। সাবহেড—ফখরুল, জমির, আব্বাস, গয়েশ্বর, খোকা, মান্নান, খোকন, ফারুক, আলাল, সালাম, সরোয়ার, এ্যানিসহ ৩০ নেতার বাসায় তল্লাশি, দেশজুড়ে বিক্ষোভ, কাল থেকে ৭২ ঘণ্টার হরতাল।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : কেন্দ্রীয় নেতাদের গণগ্রেফতার। খালেদার অফিস, বাড়ি ঘেরাও, বাসায় বাসায় তল্লাশি।
কালের কণ্ঠ : বিএনপির ৫ শীর্ষ নেতা আটক।
যুগান্তর : মওদুদ, আনোয়ার ও রফিকুল গ্রেফতার।
সমকাল : মওদুদ, আনোয়ার ও রফিকুল গ্রেফতার।
নয়া দিগন্ত : মওদুদ আনোয়ার রফিক গ্রেফতার। মিন্টু ও শিমুল গ্রেফতার।
ইত্তেফাক : মওদুদ এমকে আনোয়ার রফিকুল মিয়া গ্রেফতার। মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বরসহ পাঁচ নেতার বাসায় অভিযান।
আমাদে অর্থনীতি : হার্ড লাইনে সরকার। মওদুদ এমকে আনোয়ার রফিকুল ইসলাম মিয়া গ্রেফতার।
প্রথম আলো : হরতাল ঘোষণার পর ধরপাকড়। কাল থেকে সারাদেশে টানা ৭২ ঘণ্টার হরতাল।
ডেইলি স্টার : গভর্নমেন্ট গোজ টাফ অন অপজিশন (বিরোধীদের প্রতি শক্ত হচ্ছে সরকার)।
পত্রিকাগুলো ভাঁজ করে টেবিলে রেখে শামীম আবার বলা শুরু করল।
তোমরা লক্ষ্য করবে কোনো পত্রিকাই হেডলাইন দিতে সাহস পায়নি যে আসলেই পরশুদিন শুক্রবার থেকে সারাদেশে একটি অঘোষিত গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে। এটা ঢাকায় বসে সরকার সমর্থক পত্রিকা পড়ে অথবা সরকার সমর্থক টিভি দেখে বোঝা যাবে না। জানা যাবে না। আমরা জানি সেটা। বিএনপি আহূত প্রথম টানা ৬০ ঘণ্টার হরতালের প্রথম ঘণ্টা থেকেই এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে। রোববার ২৭ অক্টোবরের প্রথম প্রহর থেকেই মফস্বলে কঠোরভাবে হরতাল পালিত হয়েছে। এর আগেই অসমর্থিত সূত্রে আমরা জানতাম, আওয়ামী লীগ যদি গায়ের জোরে তাদের সাজানো নির্বাচন করতে যায় তাহলে ইনডিয়ান গোয়েন্দা সূত্রের মতে কমপক্ষে বিশটি জেলায় ব্যালট পেপার পৌঁছানো সম্ভব হবে না। সম্ভব হলেও ভোটকেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট নেয়া সম্ভব হবে না। আমেরিকান গোয়েন্দা সূত্রের মতে কমপক্ষে ত্রিশটি জেলায় ব্যালট পেপার পৌঁছানো সম্ভব হবে না। সাজানো নির্বাচনে জয়লাভকামী আওয়ামী লীগের জন্য পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ মনে হয়েছে দেশজুড়ে হরতালের কঠোরতা দেখে। তারা মনে করেছে পুলিশ পাহারা ছাড়া কয়েকটি আসনে আওয়ামী প্রার্থীরা পৌঁছতেও পারবে না এবং এরকম একটা এক তরফা নির্বাচন করলে প্রার্থীদের ও অন্যান্য আওয়ামী নেতাদের বাড়িঘর আক্রান্ত হতে পারে।
পরের সপ্তাহে বিএনপি আহূত দ্বিতীয় টানা ৬০ ঘণ্টার হরতালের প্রথম দিনে সোমবার ৪ নভেম্বরে একই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হয়। রাজধানী ও মফস্বলে তার কঠোরতা ছিল অপরিবর্তিত। বুধবার ৬ নভেম্বরে আবার দেশজুড়ে হরতাল পালিত হয়।
পরপর দুই সপ্তাহে মোট এই ১২০ ঘণ্টার হরতালে আওয়ামী লীগ সরকার সিদ্ধান্তে আসে যে রাজধানীর বাইরে বিএনপির কমান্ড ও কনট্রোল ব্যাপক এবং অটল। আগামীতে মফস্বলে এই অচলাবস্থা আরও বাড়বে যদি কেন্দ্র থেকে বিএনপি হরতাল চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। প্রশ্ন ছিল, এবার বিএনপি কয়দিনের এবং মোট কয় ঘণ্টার হরতাল ডাকবে এবং কবে?
শুক্রবার ৮ নভেম্বর দুপুরে বিএনপি ও ১৮ দলীয় জোট ঘোষণা দেয়, রোববার ১০ নভেম্বর থেকে টানা ৭২ ঘণ্টার হরতাল হবে। পরে এটাকে বাড়িয়ে টানা ৮৪ ঘণ্টার হরতালের ঘোষণা আসে। শুক্রবারে বিএনপির ওই ঘোষণার পর সরকার পয়েন্ট অব নো রিটার্নে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে করেই হোক,
১. এই গণঅবাধ্যতা বা সিভিল ডিসওবিডিয়েন্স দমন করতে হবে।
২. সেই লক্ষ্যে বিএনপির নেতা ও সংগঠকদের গ্রেফতার করতে হবে।
৩. যারা নেতা নন, যেমন- খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, ব্যক্তিগত সহকারী শিমুল বিশ্বাস, কম্পিউটার অপারেটর হুমায়ুন কবির প্রমুখকে গ্রেফতার করতে হবে। অর্থাত্, খালেদা জিয়ার সঙ্গে বহির্বিশ্বের যোগাযোগ ছিন্ন করতে হবে।
৪. সেই লক্ষ্যে খালেদা জিয়াকে নিজের বাড়িতে অঘোষিত অন্তরীণ করে রাখতে হবে।
৫. বিএনপির অন্য নেতা-সংগঠকদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালাতে হবে। ফলে আত্মপক্ষে ঢাকার দুই অফিসে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি কমে যাবে। এর ফলে বিএনপির কর্মীমহলে উদ্বেগ-আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়বে। বিএনপি ছত্রভঙ্গ এবং হতবিহ্বল হয়ে পড়বে।
৬. এই পটভূমিতে রোববার ১০ নভেম্বর থেকে পঁচিশ হাজার টাকায় আওয়ামী লীগের দফতর থেকে মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করতে হবে। শেখ হাসিনাই হবেন মনোনয়নপত্রের প্রথম ক্রেতা এবং তিনি দাঁড়াবেন গোপালগঞ্জ থেকে। এটা অবশ্য সবারই জানা ছিল কারণ —অন্য কোনো স্থান থেকে শেখ হাসিনা জিতবেন না। এমনকি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এবার গোপালগঞ্জ থেকেও তিনি হয়তো জিতবেন না।
৭. বিএনপি নেতা-সংগঠক-কর্মীদের গ্রেফতার করে প্রথমে তাদের রিমান্ডে পাঠাতে হবে এবং পরে বশীভূত বিচার ব্যবস্থার আওতায় তাদের জেল দিতে হবে।
৮. নির্বাচন কমিশনের রীতিনীতি উপেক্ষা করে রাষ্ট্রীয় খরচে এখনই শেখ হাসিনা নির্বাচনী অভিযান শুরু করবেন।
৯. কিছু স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে বিএনপি—জামায়াতকে দোষীসাব্যস্ত করতে হবে। প্রয়োজনে এই হামলার মাত্রা আরও ব্যাপক করতে হবে। যেন (ক) সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ভীত হয়ে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয় এবং (খ) ইন্ডিয়া এগিয়ে আসতে পারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাহায্যার্থে অথবা তাদের ভাষায় এদেশে অসাম্প্রদায়িকতা প্রতিষ্ঠা করতে।
১০. আগামী জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন সেরে ফেলতে হবে
প্রাথমিক এই দশটি লক্ষ্যের মধ্যে শেষটি বাদে অন্যসব লক্ষ্যই আওয়ামী সরকার ইতিমধ্যে কমবেশি অর্জন করেছে। একটি ব্যতিক্রম মারুফ কামাল খান। শুক্রবার রাতে হাতের কাছে পেয়েও তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। শীর্ষ নেতাদের মধ্যে প্রায় সবাই আত্মগোপনে আছেন। শুধু রুহুল কবির রিজভী নয়াপল্টনে তার অফিস রক্ষা করে চলেছেন। প্রেস কনফারেন্স করেছেন। তার সাহস অসীম। এরশাদ আমলেও তিনি এমন সাহস দেখিয়ে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।
খালেদা জিয়া সেমি-অন্তরীণ হবার পরপরই প্রথম সাহস দেখিয়েছেন কিছু শিক্ষক।
৯ নভেম্বর শনিবার রাত সোয়া নয়টায় ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউটাব)-র একটি প্রতিনিধিদল খালেদা জিয়ার বাসভবনে যান। এই প্রতিনিধিদলে ছিলেন ইউটাব-এর সভাপতি আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, ইউটাব-এর মহাসচিব প্রফেসর তাহমিনা আখতার টফি, ঢাকা ইউনিভার্সিটির প্রফেসর মোরশেদ হাসান খান, প্রফেসর আশাফুল ইসলাম চৌধুরী, প্রফেসর মজোদ্দেদী আল হোসেনী, প্রফেসর গোলাম রাব্বানী, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইউনিভার্সিটির প্রফেসর কামাল আহমেদ প্রমুখ।
রাত সোয়া ১১টায় সুপৃম কোর্ট আইনজীবী সমিতির একটি প্রতিনিধিদল খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। এই দলে ছিলেন সমিতির সভাপতি এজে মোহাম্মদ আলী, আফজাল হোসেন চৌধুরী, মাসুদ আহমদ তালুকদার, ব্যারিস্টার আমিনুল হক ও ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান।
এরপর দেখা করেন ডা. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)-এর একটি প্রতিনিধিদল। আরো উপস্থিত হন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, বিএফইউজের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, ডিইউজের একাংশের সভাপতি আবদুল হাই শিকদার, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান প্রমুখ। এছাড়া এদিন মুভি ডিরেক্টর চাষী নজরুল ইসলামসহ কয়েকজন কৃষিবিদ এবং ইঞ্জিনিয়ার দেখা করেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে।
এদের এই সাহস অনুকরণীয় বললে কম বলা হবে। বস্তুত, এই সাহস অনুকরণীয় তো বটেই — এখন সেটি অনুকরণ করতে হবে কোনো সময় নষ্ট না করে। তোমাদের সবার নিশ্চয়ই মনে আছে তিন বছর আগে ১৩ নভেম্বর ২০১০-এ খালেদা জিয়াকে যখন ক্যান্টনমেন্টে তার প্রায় চল্লিশ বছরের বাসস্থান থেকে আওয়ামী সরকার উচ্ছেদ করে সেদিন কেউ তার পাশে দাড়ায় নি। হতে পারে সেই বাড়িটা ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে ছিল বলে। হতে পারে সেই সময়ে সাহসের ঘাটতি ছিল বলে। এখন আমি আশাবাদী যে প্রতিদিনই খালেদাকে সমর্থন জানানোর জন্য সাহসী ব্যক্তি ও বিভিন্ন গোষ্ঠী গুলশানে তার বাড়ি অথবা তার অফিসে দলে দলে যাবেন।
মনে রাখতে হবে, এই সাহস তোমাদের কাছে, সবার কাছে খালেদা জিয়া দাবি করতে পারেন। গোটা জাতির কাছে এটা তার ন্যায্য পাওনা। তিনি নিজে খুবই সাহসী নারী। আর সেজন্যই একদিকে স্বদেশে যেমন জনপ্রিয়তার শিখরে উঠেছেন, অন্যদিকে বিদেশে তেমনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। খালেদা জিয়ার তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ে, অর্থাত্ ২০০১ থেকে ২০০৬-এর মধ্যে বার বার ইনডিয়া এবং আমেরিকার চাপের মধ্যে পড়েছিলেন।
ইনডিয়া চেয়েছিল পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ইনডিয়াতে যাবার করিডোর এবং ওই এলাকার অশান্ত জনগণ দমনে সহযোগিতা।
আমেরিকা চেয়েছিল ইরাকযুদ্ধে আমেরিকার পক্ষে লড়বার জন্য বাংলাদেশী সৈন্য। এই অনুরোধ করতে আমেরিকার তদানীন্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড, দুটি ভিন্ন টৃপে ঢাকায় এসেছিলেন। কিন্তু দুইবারই তিনি আমেরিকান মন্ত্রীদের নিরাশ করেন। একটি মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে, আরেকটি মুসলিম দেশের সেনা নিয়োগে খালেদা রাজি হননি। ইরাকে আমেরিকান সেনা অভিযানে তাদের পাশে দাড়িয়েছিল তিনটি দেশ — বৃটেন, অস্ট্রেলিয়া এবং পোল্যান্ড। অন্যান্য শক্তিশালী ও ধনবান দেশগুলোর পক্ষে আমেরিকান অনুরোধ অগ্রাহ্য করা সহজ ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ একটি ছোট গরিব দেশ, যার আয়তন টেক্সাসের চাইতেও কম এবং দেশটি বহুভাবে আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল। তবুও সেই টেক্সাসের শক্তিধর জর্জ ডাবলিউ বুশের অনুরোধ খালেদা তখন রাখেন নি। শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের মতো তিনি সরব স্লোগান দেন নি, “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” খালেদা জিয়া নীরবে নিভৃতে মুক্তির কূটনীতি, স্বাধীনতার কূটনীতি অনুসরণ করেছিলেন। বাংলাদেশকে তিনি পশ্চিমি স্বার্থের প্রভাব মুক্ত রেখেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বজায় রেখেছিলেন।
৭ মার্চের সেই ঘোষণার ১৮ দিন পরে শেখ মুজিব আত্মসমর্পণ করেছিলেন। খালেদা জিয়া আত্মসমর্পণ করেন নি। মে ২০০৩-এ ইরাক যুদ্ধের চুয়াল্লিশ মাস পরে খালেদা জিয়াকে হারাতে হয়েছিল বাংলাদেশে আবার ক্ষমতাসীন হবার সম্ভাবনা। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা, এই দুটি দেশ, ইনডিয়া ও আমেরিকাকে দাসত্ব লিখে দিয়েছিলেন তখন। তাই ডিসেম্বর ২০০৮-এর নির্বাচনে খালেদা হন পরাজিত। হাসিনা হন বিজয়ী।
খালেদা জিয়া পরাজিত হলেও প্রতিষ্ঠিত করেছেন তার দেশপ্রেম ও সাহস। সুতরাং এখন তিনি দেশবাসীর কাছে তাদের দেশ-প্রেম ও সাহসের প্রমাণ দাবি করতে পারেন। এই মুহূর্তে যদি দেশবাসী দেশপ্রেম ও সাহস দেখাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে বাংলাদেশ তলিয়ে যেতে থাকবে পরাধীনতার অন্ধকারে এবং ভীরুতার আত্মগ্লানিতে।
এই প্রসঙ্গে আমি আমেরিকায়, ওবামা প্রশাসনের প্রথম মেয়াদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও শেখ হাসিনার একটি টেলিফোন সংলাপের একটি অংশ উদ্ধৃত করতে চাই।
১৬ জানুয়ারি ২০১১-তে প্রকাশিত হিলারি-হাসিনার ইংরেজি টেলি-সংলাপের বিবরণে জানা যায়, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি সৌজন্য ও সমর্থনমূলক আচরণের অনুরোধ করে ওয়াশিংটন থেকে হিলারি ক্লিনটন ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি ফোন কল দিয়েছিলেন। এই ফোন কলের পরে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয় যে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী সরকারের কাজের প্রশংসা করে হিলারি ফোন করেছিলেন। এতে ঢাকায় আমেরিকান দূতাবাসের এবং ওয়াশিংটনে স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন। কারণ ওই ফোন কলে হিলারি কোনো প্রশংসা তো দূরের কথা, বরং মৃদু সমালোচনা করেছিলেন। এর কয়েকদিন পরে ওই ফোন কলের ট্রান্সকৃপ্ট ঢাকায় পাওয়া গেলেও আওয়ামী মিডিয়া সেটা এড়িয়ে যায়। কেন? কারণটা তোমরা এখনই বুঝবে। ওই ইংরেজি টেলি-সংলাপের শেষাংশটা আমি পড়ে শোনাচ্ছি :
Hilary : Madame Prime Minister, I thought I would not have to go that far. But, unfortunately, I was wrong. I hope you know as much we know, how your government came to power. Don’t forget that we helped you congratulating you after the election, terming it as free and fair. You know Prime Minister, how this election result was pre-arranged at the behest of our good friends in New Delhi. We acted the way they suggested us. And please don’t forget that Gen. Moyeen, who brought you to power, now in the USA and perhaps, we now know, more than you could possibly imagine. Prime Minister, I am not saying that we will disown you so soon. I am just trying to place issues in the order of history demands it.
Hasina : Madame Secretary, we are aware of your support and assistance. We will do all we can to keep you happy. Don’t worry. We noted your point. Now let me know when you are coming to visit my country.
Hilary : Thanks for the invitation, Madame Prime Minister. I thank you for your time.
Hasina : Madame Secretary, please bring President Clinton and your daughter and son-in-law.
Hilary hangs up on the other side...
এবার শোন বাংলায়।
হিলারি : আমি ভেবেছিলাম আমাকে এত দূর যেতে হবে না। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য, আমি ভুল ভেবেছিলাম। আপনি জানেন এবং আমরাও জানি কিভাবে আপনার সরকার ক্ষমতায় এসেছে। ভুলে যাবেন না, নির্বাচনের পর আমরা বলেছিলাম, সেটা অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে এবং আপনাকে সাহায্য করেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী,আপনি জানেন দিল্লিতে আমাদের বন্ধুদের নির্দেশে কিভাবে ফলাফল আগেই ঠিক করা হয়েছিল। তারা যেভাবে চেয়েছিল সেভাবেই আমরা চলেছিলাম। প্লিজ, আপনি এটাও ভুলে যাবেন না যে, জেনারেল মইন যিনি আপনাকে ক্ষমতায় এনেছিলেন, তিনি এখন আমেরিকাতে আছেন এবং আপনি যতখানি কল্পনা করতে পারেন, তার চেয়েও বেশি এখন আমরা জানি। আমি বলছি না যে, এখনই আপনার কাছ থেকে আমরা দূরে সরে যাব। আমি শুধু ঐতিহাসিকভাবে বিভিন্ন ইসু তুলে ধরছি।
হাসিনা : আমরা আপনার সমর্থন ও সাহায্য বিষয়ে জানি। আপনাকে খুশি রাখার চেষ্টা করব। দুশ্চিন্তা করবেন না। আপনার কথাগুলো মনে রাখব। এখন বলুন, কবে আমাদের দেশ সফর করতে আসবেন?
হিলারি : আমন্ত্রণের জন্য ধন্যবাদ। আপনি যে সময় দিলেন সেজন্য ধন্যবাদ।
হাসিনা : প্লিজ, প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনকে, আপনার মেয়েকে, জামাইকেও সঙ্গে নিয়ে আসবেন।
ততক্ষণে হিলারি ফোন ছেড়ে দিয়েছেন।
এখানে হিলারির কথায় কয়েকটি বিষয় ফুটে উঠেছে।
এক. তিনি প্রথমে হাসিনাকে আঘাত করতে চাননি।
দুই. আমেরিকা জানে কিভাবে শেখ হাসিনা ডিসেম্বর ২০০৮-এর নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন।
তিন. ওই নির্বাচনকে ‘ফৃ অ্যান্ড ফেয়ার’ (অবাধ ও সুষ্ঠু) সার্টিফিকেট দিয়ে আমেরিকা অভিনন্দন পাঠিয়েছিল হাসিনাকে সাহায্য করার জন্য।
চার. ইনডিয়ান সরকার সেই নির্বাচনের ফলাফল আগেভাগেই স্থির (পৃঅ্যারেঞ্জড) করেছিল।
পাচ. আমেরিকা সেটা জানতো এবং নতুন দিল্লির কর্মকর্তাদের ব্যঙ্গাত্মকভাবে ‘আওয়ার গুড ফ্রেন্ডস’ (আমাদের ভালো বন্ধুরা) রূপে বর্ণনা করেছেন হিলারি।
ছয়. শেখ হাসিনা, যিনি সবসময়ই মুখে সেনাবাহিনী সম্পর্কে খালেদা জিয়াকে সতর্ক করে দেন, তিনিই সেনাবাহিনীর সহায়তায় ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করেন এবং ডিসেম্বর ২০০৮-এ সফল হন। হিলারি সরাসরি বলেছেন, হাসিনা যেন ভুলে না যান তাকে তদানীন্তন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ক্ষমতায় এনেছিলেন।
সাত. শেষে হিলারি আরো বলেছেন, হাসিনা যা কল্পনাও করতে পারেন না — তার সম্পর্কে এখন ওয়াশিংটন আরো বেশি জানে। হিলারির এই উক্তি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই উক্তির পাশাপাশি বিবেচনা করতে হবে পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি প্রত্যাহার। এই ক্ষেত্রে কে বা কারা দুর্নীতিতে জড়িত ছিল এবং সেই দুর্নীতিতে ডলার লেনদেনের পরিমাণ কতো ছিল, তার আংশিক খবর ওয়াশিংটন সম্ভবত জানে।
বলা যায়, ২০১১ থেকে হাসিনা-ওয়াশিংটন দূরত্ব সৃষ্টি হয় এবং কালক্রমে এই দূরত্ব বেড়ে যেতে থাকে। ওয়াশিংটন বুঝতে পারে, যদিও হাসিনা নীতিকথা বলেন, তবুও তিনি কতোটা অনৈতিক। যদিও হাসিনা গণতন্ত্রের কথা বলেন, তবুও তিনি কতোটা স্বৈরতান্ত্রিক। যদিও হাসিনা জনগনের কথা বলেন তবুও তিনি কতোটা পরিবারতান্ত্রিক। এবং যদিও হাসিনা জনপ্রিয়তা দাবি করেন, তবুও তিনি কতোটা অজনপ্রিয়।
এখন শেখ হাসিনার ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বা দ্বৈত আচরণ এবং চাতুরি ধরা পড়ে গেছে বিদেশে এবং দেশে। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা এবং সততা ক্রমেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফলে ২০০৭-এর তুলনায় আমেরিকা এবং ইইউসহ পশ্চিম, মধ্যপ্রাচ্য এবং দূরপ্রাচ্যের দেশগুলোতে হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ সমর্থন ও সহানুভূতি হারিয়েছে। যদিও হাসিনা তার ইসলামি তাশ খেলতে চেয়েছেন, তবুও তাতে ইনডিয়া ছাড়া আর কাউকেই তিনি পাশে রাখতে পারেন নি। দেশে এবং বিদেশে হাসিনা প্রায় একা হয়ে পড়েছেন। তাকে রক্ষার শেষ চেষ্টার জন্য ইনডিয়া এখন খোলামেলাভাবে এগিয়ে এসেছে। ইনডিয়ান মিডিয়া এবং ইনডিয়ান সাবেক ও বর্তমান ব্যুরোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে হাসিনাকে ক্ষমতাসীন রাখার ফর্মুলার নির্বাচন বিষয়ে জোরালোভাবে বলা হচ্ছে।
দিল্লি থেকে প্রকাশিত টাইমস অফ ইনডিয়ার ১ নভেম্বর ২০১৩-র সংখ্যায় সুবীর ভৌমিক বাংলাদেশে ইনডিয়ান সামরিক হস্তক্ষেপের ডাক দিয়েছেন। এতে মনে হতে পারে জানুয়ারি ২০১০-এ দিল্লিতে গিয়ে শেখ হাসিনা ইনডিয়ার সঙ্গে যে চুক্তি করে এসেছেন, তারই কোনো অপ্রকাশিত ধারায় ইনডিয়া বাংলাদেশে সেনা অভিযানের বৈধতা দাবি করবে। তোমরা মনে রেখ, ওই চুক্তি বিষয়ে শেখ হাসিনা সংসদে কোনো আলোচনা করেননি। এখন আর আলোচনার দরকার নেই। ইনডিয়ান সেনাবাহিনী যদি বাংলাদেশে অভিযান চালায়, তাহলে জনগন বুঝে যাবে ওই চুক্তিতে কি ছিল।
আমার আজকের এই বৃফিংয়ে তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ বলতে পারো আমি নিরপেক্ষতা বিসর্জন দিয়েছি এবং এক ব্যক্তি, খালেদা জিয়ার প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছি। হ্যা। ঠিক তা-ই। জাতি এবং মানুষের জীবনে কিছু সময় আছে যখন নিরপেক্ষতা হয় সুবিধাবাদিতা। সেই সুবিধাবাদে আত্মরক্ষা সম্ভব হলেও হতে পারে — কিন্তু দেশ ও জাতি রক্ষা সম্ভব হয় না। যেমন ধরো ১৯৭১-এর সময়টা। ওই সময়ে আমি বিশ্বাস করেছি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে দেশকে হানাদার বাহিনী মুক্ত করাই আমার কর্তব্য। অনেকে মুক্তিযুদ্ধে যাননি বা যেতে পারেননি। তারা মুক্তি আন্দোলনকে সহায়তা করেছেন অলক্ষ্যে থেকে। তখন কেউ কেউ নিরপেক্ষ থেকেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বলেননি। পাকিস্তানের পক্ষেও বলেননি। কিন্তু সেই সময়ে কারো নিরপেক্ষ থাকার সুযোগ ছিল না। সবার সমর্থন করা উচিত ছিল মুক্তিযুদ্ধকে প্রকাশ্যে অথবা গোপনে।
আমরা যারা মিডিয়ায় কাজ করি, তারা অনেকটা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের মতো। দেশে যখন আগুন জ্বলে তখন আমাদের নিরপেক্ষ থাকার কোনো সুযোগ নেই। আগুন নেভানোর জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে যেতেই হবে। নইলে এই আগুনে গোটা দেশ পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।
গতকাল রাতে চ্যানেল আইতে প্রবীন সাংবাদিক এবিএম মূসা বলেন, ‘সাদেক হোসেন খোকা মুক্তিযোদ্ধা। দা-কুড়াল নিয়ে মাঠে নামার ডাক তাকে মানায় না। তার উচিত ছিল মেশিনগান, এসএলআর অথবা রাইফেল নিয়ে মাঠে নামার ডাক দেওয়া।’
একই রাতে বাংলাভিশনে সম্পাদক নূরুল কবীর বলেন, ‘সংলাপ ও আলোচনার নামে শেখ হাসিনা ভন্ডামি করছেন। এটা দেশবাসীকে আমরা বারবার বলা সত্ত্বেও যখন পোষ্য মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবীরা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছিল, তখন শেখ হাসিনা নিজেই উদ্যোগ নিয়ে প্রমান করে দিলেন, আমরাই ঠিক ছিলাম।... বিএনপির ওপর দোষ চাপাতে আওয়ামী লীগ নিজেই জ্বালাও-পোড়াও করছে।
আমার আজকের বৃফিং এখানেই শেষ। আমি দৈনিক শুকতারাকে নিরপেক্ষ করতে চাই না। আমি চাই দেশ রক্ষা করতে। তাই এখন শুকতারাকে সর্বাত্মক সমর্থন দিতে হবে খালেদা জিয়াকে। শুধু মুখে নয়, কাগজে কলমে নয়, রাজপথে, গ্রামে গঞ্জে, লঞ্চে কোচে ট্রেনে, সর্বত্র তার পক্ষে সংঘবদ্ধ হয়ে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত, সোচ্চার ও সক্রিয় থেকে। ধন্যবাদ তোমাদের সবাইকে।
অ্যাসেম্বলি হল থেকে শামীম তার রুমে ফিরে গেল।
রিসেপশন কর্মী জানাল, ইউনিসোপ থেকে একজন প্রতিনিধি এসেছেন। তিনি শুকতারাতে আগামী কয়েকদিন জুড়ে তাদের একটি বিশেষ পণ্যের বিজ্ঞাপন দিতে চান।
পাঠিয়ে দাও ওনাকে। শামীম বলল।
কিছুক্ষণ পর রিসেপশন কর্মী নিয়ে এল চল্লিশ ছুঁই ছুঁই একজন স্মার্ট ভদ্রলোককে। হাতে স্যামসনাইট বৃকফেস। পরনে শাদা শার্ট, নেভি ব্লু সুট ও স্কাই ব্লু টাই। চকচকে কালো জুতা।
প্লিজ, বসুন। শামীম বলল।
থ্যাংক ইউ। এই বলে আগন্তুক তার একটা ভিজিটিং কার্ড বাড়িয়ে দিলেন। সেখানে তার নাম আলতাফ হোসেন চৌধুরী। পদবি ভাইস প্রেসিডেন্ট, ইউনিসোপ লিমিটেড।
আপনাদের প্রডাক্টটা কি? শামীম জানতে চাইল।
সোপ, সাবান। সংক্ষিপ্ত উত্তর দিলেন আলতাফ।
ব্র্যান্ড নাম?
কলংকমোচন সাবান। ভাবলেশহীন মুখে আলতাফ জানালেন।
কলংকমোচন সাবান? শামীম অবাক হলো।
হ্যা। ব্র্যান্ড নাম কলংকমোচন সাবান। আমাদের কম্পানি ইউনিসোপের দৃঢ় বিশ্বাস আগামী বছরের মধ্যেই আমরা ইউনিলিভারের লাইফবয় সাবানের কাটতিকে বিট করতে পারব। আলতাফ বললেন।
তাই নাকি? এটা কি নতুন কোনো ধরনের হালাল সাবান? শামীমের কথায় কিছুটা শ্লেষ ছিল।
না। এটা কলংকমোচন সাবান। শ্লেষ উপেক্ষা করে আলতাফ দৃঢ় স্বরে বললেন।
মানেটা কি? ছেলে মেয়েদের শার্ট প্যান্টে দাগ মুছে ফেলার কার্যকর সাবান? অথবা নরনারীর দেহে ময়লা ধুয়ে ফেলার? শামীম বলল।
না। এই সাবান ইউনিক। ড. ইউনূসের আবিষ্কৃত ক্ষুদ্রঋণের পরে বিশ্ববাসীকে উপহার দেওয়ার জন্য এটাই বাংলাদেশের দ্বিতীয় আবিষ্কার। এই সাবান দিয়ে জামা কাপড় অথবা হাত পা মুখ-চুল-শরীরের দাগ বা কলংক, যা-ই বলুন না কেন, সে সবই মোছা সম্ভব। কিন্তু তার চাইতেও আরো কিছু বেশি সম্ভব। এই সাবান দিয়ে ব্যক্তি, গোষ্ঠি এবং জাতির কলংক মোচনও সম্ভব। তাই আমরা এর নাম রেখেছি কলংকমোচন সাবান। আলতাফ বললেন।
অসাধারণ! শামীমের এই মন্তব্যে বিস্ময় ছিল। কিন্তু কৌতুক ছিল না।
আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, গত প্রায় পাচ বছর যাবত্ আওয়ামী সরকার বিভিন্ন ধরনের কলংক মোচনে লিপ্ত ছিল। আমরা মনে করি এই আওয়ামী সরকার বিদায় নিলে তাদের সম্পর্কে আরো অনেক বেশি রকমের কলংক জাতির সামনে উদঘাটিত হবে যা আমরা কেউ এখন কল্পনা করতে পারছি না। সেই ভয়েতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়ছে না এবং নিজেরাই যাতে পুনঃনির্বাচিত হতে পারে সেই রকমভাবে নির্বাচন সাজাচ্ছে। কিন্তু তারা এটা করে পার পাবে না। গোটা দেশ এখন একদিকে, এক ব্যক্তি হাসিনা এবং এক দল আওয়ামী লীগ আরেক দিকে। এই যুদ্ধে তারা হেরে যাবে। এই যুদ্ধের পর ওদের বিচার হবে দেশদ্রোহিতার অপরাধে।
না। বিএনপি নেত্রী ২১ অক্টোবরে ওয়েস্টিন হোটেল প্রেস কনফারেন্স করে ওদের সবাইকে আগাম ক্ষমা করে দিয়েছেন। শামীম বলল।
আমরা জানি সেটা। কিন্তু বাংলাদেশে এখন মক্কেলের চাইতে উকিল-ব্যারিস্টারের সংখ্যা বেশি। তাদের অনেকেই মামলা ঠুকে দেবেন। ইনডিয়ার কাছে দেশ বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগে। মিডিয়া, বিচার বিভাগ, রাজনৈতিক দলগুলো সবাই তখন ঝাপিয়ে পড়বে এই কলংক মোচনের লক্ষ্যে। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হলেও তার প্রতিশ্রুতি তখন রক্ষা করতে পারবেন না। তবে যেহেতু খালেদা জিয়া আন্তরিক, সত্ এবং প্রতিশ্রুতি রক্ষায় বদ্ধপরিকর থাকবেন বলে আমাদের বিশ্বাস, সেহেতু, মামলা বিচার দন্ড প্রভৃতির ঝামেলায় না গিয়ে, তিনি এই কলংকমোচন সাবান কেনার অর্ডিনান্স জারি করতে পারেন। আমরা গ্যারান্টি দিতে পারি, এই সাবান মাখলে ওরা সব কলংক মোচন করতে পারবে। তার মানে, খুব সহজেই শান্তিপূর্ণভাবে কলংক মোচন হয়ে যাবে। আলতাফ বললেন।
আপনারা শুধু দেশদ্রোহিতার অপরাধে যারা অভিযুক্ত হতে পারেন তাদেরই টার্গেট করেছেন? শামীম প্রশ্ন করল।
না। এই মুহূর্তে যদি খালেদা জিয়ার পাশে অকুতোভয়ে দাঁড়াতে বিএনপি নেতা-কর্মী-সমর্থকরা ব্যর্থ হয়, তাহলে পরবর্তীকালে তাদেরও কলংক মোচনের জন্য এই সাবানের দরকার হবে। আলতাফের কথায় এবার কিছুটা শ্লেষ ফুটে উঠলো।
এরপর আলতাফ তার স্যামসনাইটটা খুলে ধবধবে শাদা রংয়ের একটা ছোট গিফট প্যাকেট বের করে বললেন,
এই নিন, একটা স্যাম্পল কলংক মোচন সাবান। আপনার জন্য গিফট। আজই মেখে দেখবেন।
থ্যাংকস। মেনি থ্যাংকস। শুধু আওয়ামী লীগ, বিএনপি কেন? আমাদের প্রত্যেকেরই অনেক কলংক আছে। প্রতিদিন সেই কলংক বাড়ছে। অতএব আমি আজকেই ট্রাই করে দেখব। শামীম আন্তরিকভাবে বলল।
গুড। আপনি আজ ট্রাই করে দেখুন। বিজ্ঞাপনের বিষয়টি আমি পরে আরেকদিন এসে ডিসকাস করব। আত্মপ্রসাদের হাসি মুখে আলতাফ চলে গেলেন।
Hillary Clinton - Sheikh Hasina tele-conversation
January 17, 2011 at 3:28am
Transcript of Hillary Clintons tele-conversation with Bangladesh Prime Minister Sheikh Hasina:
Prime Minister Hasina (PM): Good Morning, Madame Secretary. I am very pleased to hear your voice.
Secretary Clinton: Good afternoon Madame Prime Minister. I hope I reached you at a good time.
PM: Yes, yes, you reached me at a good time. For you, any time is good time for me. Please feel free to call me anytime.
Secretary: Madame Prime Minister I have been updated by Ambassador-at-Large Stephen Rapp about his visit to Dhaka. Honestly, at the request of New Delhi, we sent him there and tried our best to help you better organize the trial. After listening from Amb. Rapp and our Ambassador Moriarty, I felt obligated to inform you that both I and President Obama take the issue of human rights in its proper spirit. It is on this context, I called you to inform you that United States does not support the trial in its form and content. Bangladesh has to reform the whole process in a way so that it doesn’t become a conduit of punishing opposition.
PM: Madame Secretary, I understand your concern and I already asked my Law Minister to take note of what Amb. Rapp suggested. This is a trial we undertook with active support and assistance of New Delhi. I am sure Indian Ambassador in Washington DC will brief you further on that.
Secretary: Prime Minister, United States stands for a certain values and policies which may or may not be the likes of New Delhi. Of course, we have been attentive to New Delhi’s most of the suggestions but this one I thought I should forewarn you.
PM: Madame Secretary we noted your concerns and can tell you this much that this was in our manifesto and our people would like to see the trial should go on.
Secretary: Absolutely, but that has to done in an way so that it is accepted internationally. I am sure, even people who voted for your party, may not accept the trial in its form and format which is, to our view, flawed and politically motivated. President Obama working hard to bring peace to your part of the world, Madame Prime Minister. Therefore, United States would not allow any action that may only help some legitimate political forces going underground to create more problem for you and thereby, for us as well.
PM: I understand. I understand. Don’t worry we will fix it. Don’t take it that seriously. We are doing it as we have to do and there are some culprits who we need to straighten up.
Secretary: Ambassador Rapp also informed me about your government’s influence on the Judiciary and I was told how Judiciary is giving verdict they way you want. This is not good at the end. You have to be watchful.
PM: Thank you, thank you. I always value suggestion from yourself and President Clinton.
Secretary: Madame Prime Minister, let me come to the core point for which I called you. As you have seen even Washington Post picked up your treatment to Dr.Yunus and Grameen Bank. I thought it is about time to tell you how upset we are in Washington DC. I am personally upset because Dr.Yunus has been a family friend to the Clintons long before his wining of Nobel Prize. President Clinton is equally upset. Hope you are aware how hard he worked to see Dr.Yunus gets this award. I know people may have personal issues, but when it comes to national icon like Dr.Yunus, I thought Bangladesh shouldn’t demonize country’s only Nobel Laureate.
PM: Madame Secretary, please listen, please listen----
Secretary: Madame Prime Minister, please let me finish first. I hope you are aware that President Obama is a big fan of micro-credit. He is a fan of microfinance since his mother had her thesis on this subject. So, I am making this call to let you know how upset both of us-President Obama and I-at your continued effort to demonize Dr.Yunus.
PM: Madame Secretary, I hope you are aware that it is not us who brought this issue. Norway is the first to complain about Dr.Yunus’s misplaced fund. After all, this is our domestic issue and Madame Secretary we will do it as per our own rules and regulations.
Secretary: Madame Prime Minister, I thought I would not have to go that far. But, unfortunately, I was wrong. I hope you know as much we know, how your government came to power. Don’t forget that we helped you congratulating you after the election terming it as a free and fair. You know Prime Minister, how this election result was pre-arranged at the behest of our good friends in New Delhi. We acted the way they suggested us. And please don’t forget that Gen. Moyeen, who brought you to power, now in the USA and perhaps, we now know, more than you could possibly imagine. Prime Minister, I am not saying that we will disown you so soon. I am just trying to place issues in the order of history demands it.
PM: Madame Secretary we are aware of your support and assistance. We will do all we can to keep you happy. Don’t worry. We noted your point. Now let me know when you are coming to visit my country.
Secretary: Thanks for the invitations, Madame Prime Minister. I thank you for your time.
PM: Madame Secretary, Please bring President Clinton and your daughter and son in law.
Hilary hangs up on the other side----
Note: Could anyone in the USA makes a request under the freedom of information act to State Department and proof the source wrong.
১০ নভেম্বর ২০১৩
fb.com/ShafikRehmanPresents
বিষয়: বিবিধ
১৮৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন