ধর্মান্ধতাই ইসলাম অনুসরণের একমাত্র পথ।
লিখেছেন লিখেছেন ফুয়াদ পাশা ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১০:১৯:০৮ সকাল
ধর্মপালনের সাথে বেশ জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি শব্দ হল ধর্মভীরু, ধর্মপরায়ণ, ধর্মপ্রাণ, ধার্মিক, ধর্মান্ধ, ধর্মীয়-সাম্প্রদায়িক, ধর্মীয়-মৌলবাদী ইত্যাদি।
'বিশ্বাস' বিষয়টি সরাসরি পরিমাপযোগ্য বা প্রদর্শনযোগ্য নয়, কিন্তু ধারণ আবশ্যকীয় বিধায় এই শব্দগুলোর ব্যবহার মুলত ধর্মীয় আচার পালনের মাত্রাগত প্রাবল্যের সাথে সম্পর্কিত; একই সাথে এর সংযুক্ত অনুষঙ্গগুলো হল ধর্মীয় কারনে চিন্তার সংকীর্ণতা, আচরনে অনুদারতা এবং গোঁড়ামির প্রবণতা।
সাধারণভাবে, ধর্মপ্রভাবের প্রতি নমনীয় সমাজে ধর্মভীরু, ধর্মপরায়ণ, ধর্মপ্রাণ, ধার্মিক শব্দগুলো মডারেট বা মধ্যপন্থী ধর্মবিশ্বাসীদের জন্য এবং ধর্মান্ধ, ধর্মীয়-সাম্প্রদায়িক, ধর্মীয়-মৌলবাদী শব্দগুলো এক্সট্রিমিস্ট বা চরমপন্থীদের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়; একই সাথে মডারেটদের ইতিবাচক এবং এক্সট্রিমিস্টদের নেতিবাচক হিসেবে চিত্রিত করা হয়। ধর্মগুলোকে, বিশেষ করে ইসলাম ধর্মকে, টিকিয়ে রাখবার জন্যই কৌশলগত এই বিভাজন ধর্মব্যবসায়ীদের জন্য অত্যন্ত জরুরী।
জীবনযুদ্ধে ব্যস্ত মডারেট মুসলমানদের কুরান পড়ার ও বোঝার সময় না থাকলেও কুরানের কথিত সত্যতার প্রতি মোহ অটুট। অতি প্রাচীন এবং বাতিলযোগ্য এই ভ্রান্ত ধারণাগুলো আধুনিক জীবনাচারনে অচল হওয়া সত্ত্বেও, সেগুলোর কোনোটাই তারা পালন না করা সত্ত্বেও, শুধুমাত্র শৈশব থেকে পাওয়া ধর্মীয়-মতদীক্ষা এবং পূর্বপুরুষের পরম্পরার প্রতি অনুরক্তির কারণে তারা ধর্মমোহ থেকে মুক্ত হতে পারে না। তারা নিজেরাও এই বিভাজনকে সম্মানসূচক হিসেবেই দেখে, কারণ সেটা তাদের প্রতারণাপূর্ণ অবস্থানকে বৈধতা দেয়। সে বৈধতা না থাকলে অন্যান্য ধর্মগুলোর মত ইসলামেরও সহসা অবলুপ্তি ঘটার সম্ভাবনা ত্বরান্বিত হত।
প্রতিটি ধর্মীয় নির্দেশকে অভ্রান্ত মনে করা, প্রশ্নাতীতভাবে ধর্মবাণীর সত্যতার প্রতি স্থির বিশ্বাস আনা এবং প্রয়োজনে মানব প্রগতির বিরুদ্ধাচারণ করে হলেও কোনো বিচ্যুতি ব্যতিরেকে তা পালন করে যাওয়ার নাম হল ধর্মান্ধত্ব।
হৃদয় ও মস্তিস্ক বন্ধক দেয়ার এই প্রবনতা মানুষকে করে তোলে এক্সট্রিমিস্ট বা চরমপন্থী, এবং এক পর্যায়ে তারা দাঁড়ায় সকল শুভবোধের বিপরীতে, আশ্রয় নেয় বল প্রয়োগের, হয়ে ওঠে সন্ত্রাসবাদী বা তার সমর্থক।
ইসলামের দাবী অনুযায়ী, কথিত সত্যগ্রন্থ কোরআনের প্রতিটি শব্দই ঐশী বাণী, এবং তার প্রচারক শেষ নবী মুহাম্মদের জীবনাচার সকল যুগে, সকল কালের জন্য অনুকরণীয়। যদিও ব্যক্তি মুহাম্মদের বিব্রতকর আচরণগুলোকে (খুন, গুম-খুন, ভয়-ভীতি প্রদর্শন, বহুবিবাহ, শিশুকাম, দাসপ্রথার অনুসরণ, লুটতরাজ ইত্যাদি) তারা সে যুগে প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী ন্যায় ঙ্গত বা যুদ্ধাবস্থায় বিশেষ পরিস্থিতিতে করা হয়েছিল বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা এ সত্য বিস্মৃত হন যে, কথিত আল্লাহর বাণী ইসলাম কোনোভাবেই সংস্কারযোগ্য নয়, কারণ সংস্কার মানেই তা মুহাম্মদের প্রদর্শিত পথ হতে বিচ্যুতি; যা ইসলামের বিচারে গ্রহণযোগ্য নয়।
সংস্কারযোগ্য নয় বলেই হয় পরিপূর্ণভাবে ইসলাম মানা বা ধর্মান্ধত্ব ইসলাম অনুসরণের একমাত্র পথ। এখানে মডারেশনের কোনো সুযোগ আদৌ নেই। এর অন্যথায় সে ধর্ম থেকে বের হয়ে যাওয়াই শ্রেয়; কিন্তু এক্ষেত্রে নিজেদের সংখ্যাধিক্য প্রদর্শনের জন্য মডারেটদের সামান্য তিরস্কার করেই ধর্মান্ধরা ক্ষান্ত দেন, সেই সাথে আবার মডারেটদের বিচ্যুতিকেও মেনে নেন, কারণ তারা জানেন, মডারেটরা ইসলাম থেকে বেরিয়ে গেলে তারা নিজেরাই অস্তিত্বের সংকটে পড়বেন। এবং ইসলামের বিধান অনুযায়ী সেই বেরিয়ে যাওয়া মানুষদের মুরতাদ ঘোষণা করে হত্যা করতে হবে, যা আজকের আইনি কাঠামোয় অসম্ভব। সেই দিক বিবেচনায় ধর্মান্ধদের আচরণও প্রতারণাপূর্ণ।
সবচাইতে কৌতূহলোদ্দীপক দিকটি হল, মডারেট ও ধর্মান্ধ উভয়ে একে অপরকে ক্রমাগত দোষারোপ করা সত্ত্বেও উভয়েই ইসলামকে শান্তির ধর্ম বলে অভিহত করার হাস্যকর একটা চেষ্টায় ব্যগ্র থাকে, যা অন্যদের জন্য পীড়াদায়ক; কারণ ইসলামের বাণী বা এর চর্চার নির্দেশ, উভয়ই অত্যন্ত নির্দয় ও মার্জনাহীন।
বিষয়: বিবিধ
১০৪৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন