ইসলামের ইতিকথা , পর্ব-২ (প্রাক ইসলামী যুগে আরবের ধর্মীয় ধ্যান ধারনা ও ইসলামে তার প্রভাব)
লিখেছেন লিখেছেন ফুয়াদ পাশা ০১ মে, ২০১৪, ০৩:২৪:৫৬ দুপুর
প্রাক ইসলামী যুগে আরবের ধর্মীয় ধ্যান ধারনা
কোরান হাদিস থেকে জানা যায় প্রাক ইসলামী যুগে আরবের মানুষ মূলত: পৌত্তলিক ছিল। তাদের ছিল নানা রকম দেব দেবী। ইসলামের মূল উপাসনালয় কাবা ঘরের মধ্যে ছিল ৩৬০ টা মূর্তি। এদের মধ্যে প্রধান দেবী ছিল তিনটা – লাত, উজ্জা আর মানাত। এদের নাম কোরানে উল্লেখ আছে।
তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও ওযযা সম্পর্কে। সূরা আন নাজম- ৫৩:১৯
এবং তৃতীয় আরেকটি মানাত সম্পর্কে? সূরা আন নাজম-৫৩:২০
তার মানে বোঝা গেল মোহাম্মদের সময় অন্তত: এই তিনজন শক্তিশালী দেবী ছিল যাদের মূর্তি ছিল কাবা ঘরের মধ্যে।
ইসলামের আগেই মক্কা মদিনার লোকজন আল্লাহ নামে একজন সৃষ্টিকর্তাকে ডাকাডাকি করত। এখন এই আল্লাহ কে ছিল সে সম্পর্কে কোরান হাদিসে পরিস্কার কোন তথ্য পাওয়া যায় না। এর কারনটা বোঝা কঠিন নয়। যদি সেটা স্বীকার করা হয় , তাহলে মোহাম্মদ যে ইব্রাহীম, ইসহাক , মূসা , ইসা ইত্যাদির ধারাবাহিকতায় নিজেকে নবী দাবী করছেন সেটা প্রশ্ন বিদ্ধ হয়ে যায়। কারন তৌরাত বা ইঞ্জিলের কোথাও আল্লাহ শব্দটা নেই। যুক্তি হিসাবে বলা হয় , তৌরাত ও ইঞ্জিলের আল্লাহকেই আরবী ভাষায় আল্লাহ বলা হয়। তাহলে মোহাম্মদ বা কোরানের আগে পৌত্তলিক আরবরা যাকে আল্লাহ বলত সে কে ? এইসব পৌত্তিলিকদের কাছে তৌরাত বা ইঞ্জিল কিতাব তো নাজিল হয় নি, তারা ইহুদি বা খৃষ্টান ধর্মও পালন করত না । তাই তাদের কাছে তৌরাত বা ইঞ্জিলের ঈশ্বরকে মানাও সম্ভব না। ইসলাম পূর্ববতী কালে আরবরা যে কাউকে আল্লাহ বলত তার বড় প্রমান হলো – মোহাম্মদের পিতার নাম ছিল আব্দুল্লাহ, যার অর্থ – আবদ + আল্লাহ= আল্লাহর দাস। এমন কি হাদিসেও দেখা যায় ইসলামের আগেই কোন আল্লাহকে তারা ডাকাডাকি করত।
সহিহ বুখারী :: খন্ড ১ :: অধ্যায় ১ :: হাদিস ৩
ইয়াহ্ইয়া ইব্ন বুকায়র (র) ......... আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) এর প্রতি সর্বপ্রথম যে ওহী আসে, তা ছিল ঘুমের মধ্যে সত্য স্বপ্নরূপে। যে স্বপ্নই তিনি দেখতেন তা একেবারে ভোরের আলোর ন্যায় প্রকাশ পেত। তারপর তাঁর কাছে নির্জনতা প্রিয় হয়ে পড়ে এবং তিনি ‘হেরা’ গুহায় নির্জনে থাকতেন। আপন পরিবারের কাছে ফিরে আসা এবং কিছু খাদ্যসামগ্রী সঙ্গে নিয়ে যাওয়া---- এইভাবে সেখানে তিনি একাধারে বেশ কয়েক রাত ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। তারপর খাদীজা (রা)-র কাছে ফিরে এসে আবার অনুরূপ সময়ের জন্য কিছু খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যেতেন। এমনিভাবে ‘হেরা’ গুহায় অবস্থানকালে একদিন তাঁর কাছে ওহী এলো। তাঁর কাছে ফিরিশতা এসে বললেন, ‘পড়ুন’। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেনঃ “আমি বললাম, ‘আমি পড়িনা’। তিনি বলেনঃ তারপর তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে এমন ভাবে চাপ দিলেন যে, আমার অত্যন্ত কষ্ট হলো। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘পড়ুন’। আমি বললামঃ আমিতো পড়ি না। তিনি দ্বিতীয়বার আমাকে জড়িয়ে ধরে এমন ভাবে চাপ দিলেন যে, আমার অত্যন্ত কষ্ট হলো। এরপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেনঃ ‘পড়ুন’। আমি জবাব দিলাম, ‘আমিতো পড়িন’। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেন, তারপর তৃতীয়বার তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে চাপ দিলেন। এরপর ছেড়ে দিয়ে বললেন, “পড়ুন আপনার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক থেকে। পড়ুন আর আপনার রব্ মহামহিমান্বিত।” (৯৬: ১-৩)
তারপর এ আয়াত নিয়ে ররাসূলুল্লাহ্ (সা) ফিরে এলেন। তাঁর অন্তর তখন কাঁপছিল। তিনি খাদীজা বিন্ত খুওয়ালিদের কাছে এসে বললেন, ‘আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও, আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও।’ তাঁরা তাঁকে চাদর দিয়ে ঢেকে দিলেন। অবশেষে তাঁর ভয় দূর হলো। তখন তিনি খাদীজা (রা) এর কাছে সকল ঘটনা জানিয়ে তাঁকে বললেন, আমি নিজের উপর আশংকা বোধ করছি। খাদীজা (রা) বললেন, আল্লাহ্র কসম, কখখনো না। আল্লাহ্ আপনাকে কখখনো অপমানিত করবেন না। আপনিতো আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করেন, অসহায় দুর্বলের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সাহায্য করেন, মেহমানের মেহমানদারী করেন এবং দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন। এরপর তাঁকে নিয়ে খাদীজা (রা) তাঁর চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইব্ন নাওফিল ইব্ন ‘আবদুল আসাদ ইব্ন ‘আবদুল ‘উযযার কাছে গেলেন, যিনি জাহিলী যুগে ‘ঈসায় ’ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ইবরানী ভাষা লিখতে জানতেন এবং আল্লাহ্র তওফীক অনুযায়ী ইবরানী ভাষায় ইনজীল থেকে অনুবাদ করতেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বয়োবৃদ্ধ এবং অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। খাদীজা (রা) তাঁকে বললেন, ‘হে চাচাতো ভাই! আপনার ভাতিজার কথা শুনুন।’ ওয়ারাকা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ভাতিজা! তুমি কী দেখ?’ রাসূলুল্লাহ্ (সা) যা দেখেছিলেন, সবই খুলে বললেন। তখন ওয়ারাকা তাঁকে বললেন, ‘ইনি সে দূত যাঁকে আল্লাহ্ মূসা (আ) এর কাছে পাঠিয়েছিলেন। আফসোস! আমি যদি সেদিন যুবক থাকতাম। আফসোস! আমি যদি সেদিন জীবিত থাকতাম, যেদিন তোমার কাওম তোমাকে বের করে দেবে।’ রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেনঃ তাঁরা কি আমাকে বের করে দিবে? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, অতীতে যিনিই তোমার মত কিছু নিয়ে এসেছেন তাঁর সঙ্গেই শত্রুতা করা হয়েছে। সেদিন যদি আমি থাকি, তবে তোমাকে প্রবলভাবে সাহায্য করব।’ এর কিছুদিন পর ওয়ারাকা (রা) ইন্তিকাল করেন। আর ওহী স্থগিত থাকে।
উক্ত হাদিসে দেখা যাচ্ছে , খাদিজা আল্লাহর নাম করছে , অথচ তখনও মোহাম্মদ তার ইসলাম প্রচার শুরু করেন নি। আর তাই খাদিজা কর্তৃক কথিত আল্লাহ কোরানের কথিত আল্লাহ হতে পারে না। সুতরাং প্রশ্ন হলো কুরাইশ প্যাগানদের কথিত সেই আল্লাহ আসলে কে ? দেখা যাচ্ছে সেই আল্লাহকেই মোহাম্মদ নিজের আরাধ্য আল্লাহ হিসাবেই গ্রহন করে নিয়েছেন।
এবার দেখা যাক, সেই কালে আরবরা কোন ধর্ম অনুসরন করত। আগেই বলা হয়েছে তাদের তিনটা প্রভাবশালী দেবতা ছিল – লাত, মানাত ও উজ্জা। আর তারা ছিল কাবা ঘরের প্রধান দেবতা হুবালের তিন কন্যা। সেটা কিন্তু কোরানেও দেখা যাচ্ছে যদিও হুবালের নাম কোরানে নাই। কোরানে দেখা যাচ্ছে নিচের আয়াত সমূহ :
তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও ওযযা সম্পর্কে। সূরা আন নাজম- ৫৩:১৯
এবং তৃতীয় আরেকটি মানাত সম্পর্কে? সূরা আন নাজম-৫৩:২০
পুত্র-সন্তান কি তোমাদের জন্যে এবং কন্যা-সন্তান আল্লাহর জন্য? সূরা আন নাজম- ৫৩:২১
সুতরাং দেখা গেল যে কুরাইশরা যে উক্ত তিনটি দেবীর পিতা হিসাবে আল্লাহকে কল্পনা করত , সেটাই কোরান বলছে। কিন্তু কোরানের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় যেহেতু আপাত: দৃষ্টিতে একেশ্বরবাদ, তাই প্রশ্ন করা হচ্ছে -পুত্র-সন্তান কি তোমাদের জন্যে এবং কন্যা-সন্তান আল্লাহর জন্য? এবং এর পরেই বলছে –
এমতাবস্থায় এটা তো হবে খুবই অসংগত বন্টন। সূরা নাজম- ৫৩: ২২
এগুলো কতগুলো নাম বৈ নয়, যা তোমরা এবং তোমাদের পূর্ব-পুরুষদের রেখেছ। এর সমর্থনে আল্লাহ কোন দলীল নাযিল করেননি। তারা অনুমান এবং প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে। অথচ তাদের কাছে তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে পথ নির্দেশ এসেছে।সূরা নাজম- ৫৩: ২৩
তার মানে উক্ত আয়াত সমূহ প্রকাশ করছে যে , কুরাইশরা আল লাত, উজ্জা ও মানাতকে আল্লাহর কন্যা সন্তান হিসাবে মনে করত , কিন্তু কোরান বলছে এটা ঠিক নয় , এবং এইসব দেব দেবী আসলে কিছু নাম ছাড়া কিছুই নয়। কিন্তু্ উক্ত আয়াত থেকে , কুরাইশরা কাকে আল্লাহ বলত সেটা পরিস্কার হয়ে গেল আর সেই আল্লাহ আর কেউ না , সেটা হলো সেই সময়ে আরবে অতি সম্মানিত উক্ত তিন দেবীর পিতাকে। আর মজার বিষয় হলো সেই আল্লাহকেই মোহাম্মদ তার আরাধ্য আল্লাহ হিসাবেই মেনে নিয়েছেন। সুতরাং এ থেকে এ প্রশ্ন রয়েই যায় যে ইব্রাহীম, ইসহাক, মুসা, ঈশা ইত্যাদি নবীরা যে ঈশ্বরের উপাসনা করত , মোহাম্মদের আল্লাহ সেই ঈশ্বর কি না , কারন ইহুদি খৃষ্টানরা আর যাই হোক , কুরাইশদের আল্লাহকে তাদের ঈশ্বর হিসাবে বিশ্বাস করত না।
অবশ্য কুরাইশরা কাবা ঘরে রক্ষিত ৩৬০ টা দেব দেবীর প্রধানকে ডাকত হুবাল বলে। এই হুবালের একটা মূর্তি ছিল কাবা ঘরের মধ্যে। আরবদের বিশ্বাস ছিল হুবালের নির্দেশে বাকী সব দেব দেবী তাদের কার্য পরিচালনা করে। তাহলে দেখা যাচ্ছে – কাবা ঘরে রক্ষিত সকল দেব-দেবীর প্রধান ছিল হুবাল, আবার তারা একজন প্রধান দেবতাকে বলত আল্লাহ, তাহলে উক্ত হুবাল আর আল্লাহ কি একই ব্যক্তিত্ব? এ ব্যাপারে আরও ভালভাবে জানা যেতে পারে এখান থেকে : http://www.studytoanswer.net/islam/hubalallah.html
ইসলামে চাঁদের চিহ্নকে খুব পবিত্রতার সাথে দেখা হয়। ইসলামের প্রায় সকল বিষয়ের সাথেই চাঁদকে সংযুক্ত করা হয়। প্রতিটি মসজিদের মিনারে চাঁদের আকার শোভা পায়, অধিকাংশ মুসলমান দেশের পতাকা হলো চাঁদ তারা সম্বলিত। ইসলামী বই পুস্তক সব কিছুর প্রথম পাতাতেই চাঁদের ছবি শোভা পায়। অনেক ইসলামী স্কলারকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলো , তারা উত্তর দেয় – চাঁদ আসলে বছর বা সময় গননার একটা প্রতীক মাত্র। বিশেষ করে রমজান মাস গননার জন্য এর দরকার সীমাহীন, মূলত: একারনেই ইসলামের প্রতিটি ক্ষেত্রেই চাঁদের এত কদর। এটা তাদের কাছে একটা মোক্ষম যুক্তি হতে পারে,কিন্তু বিষয়টা আসলেই কি তাই? বছর বা মাস গননার জন্য চাঁদের চাইতে সূর্য্যকেই দুনিয়ার সব দেশে ব্যবহার করা হয়ে থাকে বা অন্য কথায় সূর্যই হলো পৃথিবীর বছর মাস গননার সর্বজন গ্রাহ্য উপায়। তাই বলে সকল জাতি সূর্য্যকে কেউ এমন ভাবে সম্মান প্রদর্শন করে না যেমন মুসলমানরা করে চাঁদের ক্ষেত্রে। তাছাড়া শুধুমাত্র রমজান মাস গননার জন্য চাঁদকে এত পবিত্র জ্ঞান করে সর্বত্র চাঁদের ছবি বা আকৃতি ব্যবহারের কোন বাস্তব যৌক্তিক কারন আছে বলেও মনে হয় না। তবে ইসলাম পূর্ব আরবের ইতিহাসের দিকে তাকালে একটা ভিন্ন চিন্তা উকি দেয়।
ইসলাম পূর্ব আরব দেশে, চন্দ্র দেবতা এক বিশেষ মর্যাদায় আসীন ছিল। এ চন্দ্র দেবতা ছিল একজন পুরুষ দেবতা। উল্লেখ্য যে , চাঁদের আরবী শব্দ হলো ক্বামার , যা কিন্তু পুং লিঙ্গ। এই পুরুষ দেবতা চাঁদের প্রতীক ইসলামে এত প্রবিত্র হওয়ার কারন কি শুধুই বছর গননার জন্য ? নাকি পরোক্ষে এটা ভিন্ন কিছু নির্দেশ করে যার গোপন রহস্য সেই মোহাম্মদের আমল থেকেই গোপন করা হয়েছে? এ চন্দ্র দেবতার বহু মূর্তি প্রাক ইসলামী যুগের আরবের বিভিন্ন যায়গায় পাওয়া গেছে।
আরব ও আশ পাশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাপ্ত চন্দ্র দেবতা ও ইসলামের ক্রিসেন্ট ছবির সাদৃশ্য দেখা যেতে পারে :
মজার বিষয় হচ্ছে প্রাচীন কালের সকল ধর্মীয় বিশ্বাসেই চাঁদকে একজন শক্তিশালী দেবতা হিসাবে কল্পনা করা হয়েছে। প্রাচীন গ্রীক বা হিন্দু পৌরানিক কাহিনীতেও চন্দ্র দেবতার সরব উপস্থিতি দেখা যায়। প্রাচীন কালে আরবের সর্বত্রই চন্দ্র দেবতাকে পূজা করা হতো বিভিন্ন নামে। নানা দেশে প্রত্নতাত্তিক খননের মাধ্যমে এর অনেক প্রমানও পাওয়া গেছে।আর সেই চন্দ্র দেবতার প্রতীক ছিল ক্রিসেন্ট মুন অর্থাৎ চিকন চাঁদ। বেশ কৌতুহলোদ্দীপক বিষয় হলো – ইসলামে সেই বাকা বা চিকন চাঁদকেই সর্বোচ্চ পবিত্র জ্ঞান করা হয়। এটা যে শুধুমাত্র চান্দ্র মাস গণনার জন্য করা হয়, সেটা মনে করাটা খুব কঠিন। ভিতরে গোপন রহস্য কিছু থাকবেই , বরং না থাকাটাই অস্বাভাবিক ব্যাপার। এ ব্যাপারে আরও ভালভাবে জানা যাবে এখানে : http://en.wikipedia.org/wiki/Allah_as_Moon-god
যে প্রথাগুলো আরবের পৌত্তলিক ধর্ম থেকে ইসলামে এসেছে:
(১)কুরাইশরা ইসলাম পূর্ব কালে কাবা ঘরকে পবিত্র জ্ঞান করত তাদের একটা উপাসনালয় হিসাবে। দুর দুরান্ত থেকে লোকজন সেখানে আসত পবিত্র ধর্মীয় ভ্রমন উপলক্ষ্যে। তারা সেখানে এসেই প্রথমে কাবা ঘরের চার পাশে সাত বার ঘুরত। বর্তমানে যারাই হজ্জ বা ওমরা উপলক্ষ্যে কাবা ঘর পরিদর্শনে যায় তারা ঠিক একই ভাবে কাবা ঘরের চারপাশে সাত বার ঘোরে।
(২) এসময় তীর্থ যাত্রীরা তাদের মস্তক মুন্ডন করত, অর্থাৎ মাথা থেকে চুল ফেলে দিত। বর্তমানের হাজীরাও সেটা করে থাকে।
(৩) তারা সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে সাতবার দৌড়া দৌড়ি করত , হাজীরাও সেটা করে।
(৪)তীর্থ যাত্রীরা কাবার দেব দেবীদের উদ্দেশ্যে পশু বলি দিত , মুসলমানরা পশু কুরবানী দেয়।
(৫) কুরাইশরা কাবার ভিতরকার কাল পাথরকে চুমু খেত, যা মোহাম্মদ তার ইসলামে বাধ্যতামূলক করেছেন হজ্জ কালে।
(৬) মোহাম্মদের মিরাজ ভ্রমনের মত হুবহু একই কিচ্ছা ইসলামেরও বহু আগ থেকে প্রাচীন পারস্যে প্রচলিত জরস্থ্রুস্টিয়ান ধর্মের পৌরানিক কাহিনীতে পাওয়া যায়। The Book of Arta Viraf এ বর্ণিত আছে একজন সাধু এমন একটা ভ্রমনে বের হন তার সাথে ছিল একটা ফেরেস্তা যে তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে সাত আসমান ভ্রমন করিয়ে অবশেষে বিশ্ব স্রষ্টা ওমাজদের নিবাসে নিয়ে যায়।
(৭)কোরানে বর্ণিত বেহেস্তের সুন্দরী হুরের বিবরন আছে জরস্থ্রুস্টিয়ান পৌরানিক কাহিনীতে।
দাবী করা হয় যে , ইসলাম হলো ইহুদি ও খৃষ্টান ধর্মের সর্বশেষ সংস্করন। কিন্তু উপরিউক্ত একটা প্রথাও ইহুদি বা খৃষ্টান ধর্মে নেই। দাবী করা হয় মক্কার কাবা ঘর হলো আল্লাহর নির্দেশে আদম কর্তৃক তৈরী প্রথম উপাসনালয় যা পরে ইব্রাহিম কর্তক সংস্কার করা হয়। তৌরাত ও ইঞ্জিল কিতাবে মক্কা বা এর কাবা ঘরের কোন উল্লেখ নেই। বরং ইসলাম বিশ্বাস করে জেরুজালেমে সোলায়মানের দ্বারা তৈরী সলোমনের মন্দির যাকে বায়তুল মোকাদ্দাস বলা হয় তা আল্লাহ কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে তৈরী । এবং মোহাম্মদ দীর্ঘকাল ধরে সেই বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে মুখ করেই নামাজ পড়তেন। এমন কি কথিত মিরাজ ভ্রমনের সময় যখন আল্লাহ মোহাম্মদকে দৈনিক ৫ বার নামাজ পড়ার কথা বলে , তখনও আল্লাহ বলে নি কাবা ঘরের দিকে মুখ করে নামাজ পড়তে। যদি সত্যি সত্যি কাবা ঘর আল্লাহর প্রথম ঘর হয়ে থাকে , তাহলে তখনই সেটা মোহাম্মদকে বলে দেয়ার কথা। কাবা ঘরের দিকে মুখ করে নামাজ পড়ার নির্দেশ আসে মিরাজ ভ্রমনেরও প্রায় দেড় বছর পর আর সেটা আল্লাহর ইচ্ছাতে নয়, মোহাম্মদের ইচ্ছাতেই। আল্লাহর প্রথম ঘর যদি কাবা ঘর হয়ে থাকে , সেখানে আল্লাহ নিজেই বলে দেবে সেটাকে কিবলা করে নামাজ পড়তে , এটা কারও ইচ্ছা অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে না।
কোরানেই বলছে মোহাম্মদ চান কাবার দিকে মুখ করে নামাজ পড়তে :
নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই আমি আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্দ করেন। এখন আপনি মসজিদুল-হারামের দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকে মুখ কর। যারা আহলে-কিতাব, তারা অবশ্যই জানে যে, এটাই ঠিক পালনকর্তার পক্ষ থেকে। আল্লাহ বেখবর নন, সে সমস্ত কর্ম সম্পর্কে যা তারা করে। সূরা বাকারা - ২: ১৪৪
চাওয়া মাত্রই অনুমতি হাজির। বিষয়টা প্রশ্নের উদ্রেক করে। কাবা ঘর সত্যি সত্যি যদি আল্লাহর প্রথম ও প্রধান ঘর হয়ে থাকে , তাহলে আল্লাহর কাছে সেটাকে কিবলা করার ইচ্ছার কথা জানানোর দরকার নেই , আল্লাহ নিজেই সেটা করে দেবে এটাই স্বাভাবিক। আর যখন সেই কাবাকে কিবলা করা হয় তখনও কাবার মধ্যে ৩৬০ টা মূর্তি ছিল। সেটা বোঝা যায় নিচের হাদিসে :
সহিহ বুখারী :: খন্ড ১ :: অধ্যায় ৮ :: হাদিস ৩৯২
‘আবদুল্লাহ ইবন রাজা’ (র)......বারা’ ইবন ‘আযিব (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সঃ) বায়তুল মুকাদ্দাসমুখী হয়ে ষোল বা সতের মাস সালাত আদায় করেছেন। আর রাসূলুল্লাহ (সঃ) কা’বার দিকে কিবলা করা পছন্দ করতেন। মহান আল্লাহ নাযিল করেনঃ “আকাশের দিকে আপনার বারবার তাকানোকে আমি অবশ্য লক্ষ্য করেছি। (২:১৪৪) তারপর তিনি কাবার দিকে মুখ করেন। আর নির্বোধ লোকেরা –তারা ইয়াহুদী, বলতো, “তারা এ যাবত যে কিবলা অনুসরণ করে আসছিলো, তা থেকে কিসে তাঁদের কে ফিরিয়ে দিল? বলুনঃ (হে রাসূলুল্লাহ্ (সা) পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা সঠিক পথে পরিচালিত করেন। (২:১৪২)তখন নবী (সঃ) এর সঙ্গে এক ব্যক্তি সালাত আদায় করলেন এবং বেরিয়ে গেলেন। তিনি আসরের সালাতের সময় আনসারগনের এক গোত্রের পাশ দিয়ে যাচ্চছিল। তাঁরা বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করেছিলেন। তখন তিনি বললেনঃ (তিনি নিজেই) সাক্ষী যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর সঙ্গে তিনি সালাত আদায় করেছেন, আর তিনি (রাসূলুল্লাহ (সঃ) কা’বার দিকে মুখ করেছেন। তখন সে গোত্রের লোকজন ঘুরে কা’বার দিকে মুখ করলেন।
উক্ত সূরা বাকারা নাজিল শুরু হয় মক্কাতে , শেষ হয় মদিনায়। তার অর্থ মদিনায় যাওয়ারও ষোল /সতের মাস বায়তুল মোকাদ্দাস মূখী হয়ে নামাজ পড়েছেন। এরপর কাবা ঘরের দিকে মুখ করে নামাজ পড়া শুরু করেন। তখন কাবা ভর্তি ছিল ৩৬০ টা মূর্তিতে। তারপরেও তিনি মক্কা দখলের আগ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে আট বছর সেই মূর্তি ভর্তি কাবা ঘরের দিকে মুখ করেই নামাজ পড়তেন। সেই মূর্তির মধ্যে ছিল প্রধান দেবতা হুবাল। সুতরাং মোহাম্মদ প্রকারান্তরে সেই হুবালের দিক মুখ করে নামাজ পড়তেন ও সিজদা দিতেন , কিন্তু তিনি বলতেন যে আল্লাহর কাছে তিনি সিজদা দিচ্ছেন। তাহলে আসলে তিনি তখন কার কাছে সিজদা দিতেন? আল্লাহই বা কিভাবে মূর্তি ভর্তি কাবার দিকে মুখ করে সিজদা দিতে বলতে পারে যদি কাবার মধ্যেকার মূর্তিগুলো শুধুই পুতুল হয়ে থাকে? মক্কা বিজয়ের পর যখন কাবা ঘর থেকে পুতুল গুলো বের করে দেয়া হয় , তখন এ ধরনের নির্দেশ দিলে কোন সমস্যা হতো না।
চলবে====================
সূত্র : Click this link
বিষয়: বিবিধ
২৩০১ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নিজের পোস্টে নিজের প্রশংসায় নিজেরই ৩ টা কমেন্ট!!!
ব্যাপক বিনোদন
মন্তব্য করতে লগইন করুন