হামাস ফিলিস্তিনের সামরিক ও সারবভৌমতব রাক্ষাকারী বাহিনী
লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা ০৯ আগস্ট, ২০১৪, ১২:২০:৩৯ রাত
ফিলিস্তিনের গাজায় গত ৮ জুলাই শুরু হওয়া ইসরায়েলি অভিযানে ইতিমধ্যে নিহত হয়েছেন এক হাজার ৭০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নারী-পুরুষ ও শিশু। ইসরায়েল বলছে, ফিলিস্তিনের
হামাসের বিরুদ্ধে তাদের এই অভিযান। এ ব্যাপারে মার্কিন সাংবাদিক ও টেলিভিশন উপস্থাপক চার্লি রোজ সম্প্রতি হামাসের প্রধান খালেদ মেশালের সঙ্গে কথা বলেছেন। ব্লুমবার্গ বিজনেসউইক সাময়িকীতে সম্প্রতি ওই আলাপচারিতা প্রকাশিত হয়েছে। কথোপকথনের পুরোটাই এখানে তুলে ধরা হলো
রোজ: ভয়াবহ পরিণতি সত্ত্বেও গাজার জনগণ কি হামাসের প্রতি সমথর্ন দিয়েই যাবে?
খালেদ মেশাল: গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিরা বলছে, ‘আমরা ইসরায়েলের অপরাধের কারণে যন্ত্রণা ভোগ করছি।’ এমনকি হত্যাকাণ্ড ও তাদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া সত্ত্বেও
তারা বলছে, ‘খালেদ মেশাল সাহেব, দখলদারি থেকে মুক্তি নিশ্চিত হওয়া না পর্যন্ত আমরা এই যুদ্ধের অবসান চাই না। আমরা তিলে তিলে মারা যাচ্ছিলাম। এফ-সিক্সটিনসহ ইসরায়েলি ও আমেরিকান অন্যান্য প্রযুক্তির কারণে এখন আমরা তাৎক্ষণিকভাবে মরছি।’ ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর অনেক নিপীড়ন হয়েছে। তারা এখন ধীরে ধীরে মৃত্যু ও তাৎক্ষণিক মৃত্যুর মধ্যে তফাত পর্যন্ত খুঁজে পায় না। তারা বলে, ‘আমাদের বাড়িঘর ও পরিবার লক্ষ্য করে হামলা হচ্ছে। তবে, আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চাই এবং দখলমুক্ত হতে চাই।
রোজ: কীভাবে এই হত্যাকাণ্ড বন্ধ হবে? আপনারা কী চান?
মেশাল: মানুষকে আত্মরক্ষা করতে হয়। আমরা যদি অনাহারে মরি, অবরুদ্ধ থাকি; নিজেদের রক্ষা করতে হবে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যখন শান্তি প্রতিষ্ঠার সব ধরনের প্রচেষ্টা বন্ধ করে দেন, বাকি বিশ্ব তখন পশ্চিম তীর ও গাজায় বিস্ফোরণের প্রত্যাশা করে। হামাস কী চায়, সেটা জানতে চাইছেন? শান্তি। কিন্তু আমরা চাই, কোনো ধরনের দখলদারি, বসতি স্থাপন, ইহুদীকরণ ও অবরোধ ছাড়াই শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক। আমরা আর সব দেশের মানুষের মতো বাঁচতে চাই। আমরা ফিলিস্তিনে বেঁচে থাকতে চাই।
রোজ: আপনি কি চান না ইসরায়েল নির্মূল হোক? নাকি দেশটির সঙ্গে সহাবস্থান চান?
মেশাল: আমি জবরদখল ও বসতি স্থাপনের মতো বিষয়ের পাশাপাশি সহাবস্থানের পক্ষে নই। আপনি কি মনে করেন দখলদারি ও বসতি নির্মাণের কারণে নিপীড়িত ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলকে নির্মূল করতে পারবে? না, এটা বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার... আমরা, হামাসের সবাই ইসলামের উদারতায় বিশ্বাসী। আমরা ধর্মান্ধ নই। ধর্মীয় কারণে আমরা ইহুদিদের বিরুদ্ধে লড়াই করি না। আমরা দখলদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি। আমি ইহুদিদের সঙ্গে খ্রিষ্টানদের সঙ্গে, আরবদের সঙ্গে, অনারবদের সঙ্গে পাশাপাশি অবস্থানের জন্য প্রস্তুত। আমি অন্যান্য ধর্মের মানুষের সঙ্গে থাকতে রাজি...। যখন আমাদের একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে, তখন ফিলিস্তিনি জনগণ তাদের মতামত জানাতে পারবে। এখানে অসামঞ্জস্য রয়েছে, কিন্তু আমাদের দাবিটা বেশি জোরালো। প্রতিটি দখলদারির অবসান ঘটে এবং জনগণই জয়ী হয়।
রোজ: ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে কীভাবে আপনি আস্থার সম্পর্ক তৈরি করবেন?
মেশাল: আপনি মনে করছেন, আস্থার ব্যাপারটি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আসলে শত্রুপক্ষ। আর
তারা জবরদখলকারী। সমাধানের বিষয়টি তাই আস্থার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পরিপূর্ণ অভিযান হচ্ছে ইসরায়েলি দখলদারির উদ্দেশে বলা, ‘বন্ধ করো। যথেষ্ট হয়েছে।’ তাদের উচিত ইসরায়েলকে দখল ছেড়ে যেতে বাধ্য করা। শত্রুকে কীভাবে বিশ্বাস করব? তাদের সঙ্গে আমাদের বেশ কয়েকটি বিষয়ে সমঝোতা হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো ব্যর্থ হয়েছে। কেউ কেউ বলেন, ইসরায়েলের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনের উত্থান অবশ্যই রুখতে হবে। কেন বিশ্ব সম্প্রদায় শুধু ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবে এবং ফিলিস্তিনের নিরাপত্তা নিয়ে মোটেও মাথা ঘামায় না? একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র পেতে হলে কী কারণে সেই রাষ্ট্রে কোনো সামরিক বাহিনী থাকতে পারবে না? নিরস্ত্র একটি রাষ্ট্রকে কে মেনে নেয়? তখন এটি অন্যের আগ্রাসনের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে। আমি অন্য কারও অভিভাবকত্ব মেনে নিতে পারব না। যদি আপনি বলেন, ‘আসুন, আপনি ফিলিস্তিনি। আমরা আপনাকে এখানে এক খণ্ড, ওখানে আরেক খণ্ড জায়গা দেব একটু একটু করে’—না। তা হবে না।
রোজ: কোনো চুক্তির ব্যাপারে আপনাদের কি হামাসের সামরিক শাখার অনুমোদন প্রয়োজন পড়ে?
মেশাল: এমন তো নয় যে আমাদের দুই মাথা বা দুই শরীর। আমরা একটিমাত্র লক্ষ্য নিয়ে আন্দোলন করছি। যখন রাজনৈতিক নেতৃত্ব কোনো বিষয়ে অঙ্গীকার করে, তখন সামরিক শাখাও একই অঙ্গীকার করে। যদি নেতারা কোনো সিদ্ধান্ত নেন, তখন প্রত্যেকে—সামরিক বা বেসামরিক যে শাখার সদস্যই হোক—তা মেনে নেন।
রোজ: আপনি গাজায় না থেকে কাতারে অবস্থান করছেন কেন?
মেশাল: এটি অত্যন্ত যৌক্তিক প্রশ্ন। আপনি শুধু খালেদ মেশালকেই নন, ভিনদেশে বসবাসরত ৬০ লাখ ফিলিস্তিনিকে এ কথা জিজ্ঞেস করতে পারেন। কেন তারা পশ্চিম তীরে অবস্থান করছে না? কেন তারা গাজায় বসবাস করছে না? কারণ, সেখান থেকে ফিলিস্তিনিদের ১৯৪৮ ও ১৯৬৭ সালে বের করে দিয়েছে ইসরায়েল। আমি পশ্চিম তীর থেকে এসেছি। সেই ১৯৬৭ সাল থেকে আমি বিতাড়িত। জর্ডান ও কুয়েতে থেকেছি, যখন ছাত্র ছিলাম। তারপর সিরিয়ায় চলে যাই এবং এখন কাতারে আছি। আপনি আমেরিকায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে পাবেন। তারা দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিনে ফিরে যেতে চায়। মার্কিন নাগরিক হলেও তারা মাতৃভূমি ফিলিস্তিনে ফেরার জন্য গভীর তাগিদ অনুভব করে। আর সে কারণেই আমরা শরণার্থীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন চাই। এটাই আমার ও অন্যদের আকাঙ্ক্ষা। আমার অস্তিত্বের শিকড় পড়ে আছে ফিলিস্তিনে, অথচ আমি এখানে থাকতে বাধ্য হচ্ছি।
বিষয়: আন্তর্জাতিক
১৪২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন