নীরব শাহাদাত
লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা ১৯ জুলাই, ২০১৪, ১০:৫৭:১২ রাত
ফিলিস্তিনের উষর মরুভূমি। যুদ্ধবিধ্বস্ত এবড়ো-থেবড়ো জমিনে ঘরের একটুকরা ধ্বংসাবশেষ। কয়েকটা জীর্ণশীর্ণ খেজুরবিথী যেন বলতে চায় এখানেও একসময় একটা প্রাণচঞ্চল গ্রাম ছিলো। অভিশপ্ত এই মৃত্যুপুরী ছেড়ে পালিয়েছে শেষ যে ক'জন ছিলো। শুধু আসমা রয়ে গেছে তার তিন সন্তান নিয়ে এই ভাঙা ঘরটিতে, বোমার আঘাতে অর্ধাঙ্গ উড়ে যাওয়া স্বামী মৃত্যুর সাথে সপ্তাহ তিনেক পাঞ্জা লড়ে চলে গেছে তাদের অনাথ করে দিয়ে।
এখন কোথায় যাবে সে? কার কাছে নেবে আশ্রয়? এই দুর্গম মরুর পথঘাট যেমন অচেনা,স্বজন-পরিজন বলতেও তার পৃথিবীতে কেউ নেয়। অবশদেহে পেটের ক্ষুধা আর শারীরিক দুর্বলতাও এখন আর অনুভূত হচ্ছেনা। জীবন্তলাশের মত বসে আছে সে। কিন্তু বুক ফেটে আসা কান্না আর বাচ্চাদের আর্তনাদ এখনো জিইয়ে রেখেছে অপসৃয়মান প্রাণস্পন্দন। গত দুদিন ধরে বাচ্চাদের মুখে একফোঁটা পানিও দিতে পারেনি। ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে তাদের আওয়াজ। চোখের সামনে স্বামীর মৃত্যু হয়তো সহ্য করা যায়, কিন্তু নিজ সন্তানের মৃতদেহ দেখার মনোবল কোন মায়েরই থাকার কথা নয়।
মৃত্যু এত কঠিন কেন? হায়! প্রান যদি অন্যকে দিয়ে দেওয়া যেত! এই সন্তানদের মৃত্যুটা হয়তো একটু বিলম্বিত হতো, মা হিসেবে এই মুহূর্তে তার আর কিছু দেওয়ার নেই। আসমা আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে তারাগুলো বিদ্রুপ করছে তার সাথে। অথচ এই তারাদের পাণে তাকিয়ে সে কত স্বপ্ন বুনেছে, তখন তারাগুলো কত আশা জাগাতো মনে, সুখের ভবিষ্যত হাতছানি দিয়ে ডাকতো নির্জনে। আর আজ ঐ খেজুরবিথীগুলোও তার চেয়ে কত ভাগ্যবান; ধুকে ধুকে শুধু শেষ সূর্যের আশায় দিন গুজরান করছে, নেই পিছুটান, নেই স্বজন হারানোর ব্যাথা।
হঠাৎ বাচ্চাগুলো একযোগে কেঁদে উঠে; প্রদীপ নেভার আগে বুঝি শেষবার ঝলসে উঠছে। ছুটে যায় আসমা, বাচ্চারা কাতরায়-মা! পানি,পানি!!। আসমা ছুটে বেড়ায় বিবি হাজেরার মত এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। একসময় ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ে আসমা। দূর থেকে মনে হয় কে জানি কাঁধে করে কি নিয়ে আসছে। ও কি ওমর! রাতে খাবারের বস্তা নিয়ে বেরিয়েছে প্রজাদের দেখভাল করতে?! নাকি দেখার ভুল? হলে হোক, আশা করতে দোষ কি, আশায় বুক বেঁধেই তো এতোদিন বেঁচে ছিলো সে। মনে হল সাথে আরো কেউ আছে, আবু বকর, উসমান, আলীসহ বিশাল এক মিছিল। বসে পড়ে আসমা। অপেক্ষায় বুক বাধে। নাকে এসে লাগে খাবারের তীব্র সুগন্ধ, এ কী মরিয়মের জান্নাতী খাবার। আহ!মৃত্যু কতইনা আরামের! বাচ্চারা আগেই স্তিমিত হয়ে পড়েছে।
আসমা কি জানে এখন ওমরদের নয়, ফেরাউনদের যুগ!!
https://m.facebook.com/profile.php?id=361674527252580
http://preacherofislambd.blogspot.com/?m=1
বিষয়: আন্তর্জাতিক
৯৭৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর তোমাদের কি হল যে, তেমারা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদিগকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে, অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষালম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও।
মন্তব্য করতে লগইন করুন