সেই আংটি
লিখেছেন লিখেছেন হারুন হায়দার ৩১ আগস্ট, ২০১৩, ০১:২২:৫১ দুপুর
প্রায় ঘন্টা খানেকের কাছাকাছি বাসস্ট্যান্ডে দাড়িয়ে আছে রিশা বাসের অপেক্ষায়। বাসের দেখা মিলছে না তার গন্তব্যে পৌছার। বিপরীত দিক বাস যাচ্ছে একের পর এক। সে যে দিকে যাবে সেদিকের বাস আসছেনা মোটেও। প্রকৃতির সাথে নিজের খুব হিংসে হচ্ছে, কেন বা হবে না। সেই কখন থেকে দাড়িয়ে থাকতে থাকতে পায়ে ব্যথা শুরু হয়েছে। কাধে ভ্যানিটি ব্যাগ, পিঠে বই খাতার ব্যাগ, ডান হাতে আরেকটা ব্যাগ, আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র অন্য একটা পটলায়। বিকেল বেলা হালকা বাতাস বইছে, তবু চোখে মুখে একটা শংকার ছাপ রিশার , একদিকে বাসের চিমত্মা অন্য দিকে সন্ধ্যার পরে হলে ঢুকতে দিবেনা। গত বছর ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে রিশা। মেডিকেলে পড়া হয়নি অনেক জটিলতার কারনে তাই ভার্সিটিতে অবশেষে। বাইরে দাড়িয়ে থাকার একটা মজাও আছে নানান ধরনের জিনিস দেখা যাচ্ছে। এদিকটা একবার ওদিকটা একবার চেয়ে দেখছে রিশা।
তবে একটি বিষয় রিশা বার বার লক্ষ্য তার আশে পাশে সবাই তার দিকে তাকাচ্ছে। ছেলে থেকে সত্তর বছর বয়স্ক লোকেও, কারো বয়স রিশার দাদার মত, কারোও বাবার মত, কারোও গুরুর মত বয়স। কিন্তু উপায় তো নেই কাঙ্খিত বস্ত্তু বাসটি আসলেই অপেক্ষার প্রহর শেষ। রিশা বারবার নিজের শরীরের দিকে তাকায় কাপড় টেনে ঠিক করে আর ওড়নাটা বুকের ওপর খুব ভাল করে দেয়। মেয়েদের একটা অভ্যেস আছে নিজের কাপড় সময়ে অসময়ে ভালভাবে ঠিক করা, মেয়ে বলে কথা। যদিও রিশা তেমন ফ্যাশন বা স্টাইল করে চলেনা। দাড়িয়ে থাকার কথাটা হটাৎ হালকা হয়ে গেল রিশার বাস আসছে বলে। তল্পি তল্পা নিয়ে বাসে উঠলো রিশা। বাসে বসার জন্য কোন সিট খালি নেই। একটা ক্লান্তির ছাপ বুঝতে পারছে রিশা নিজে। বিরক্তিকর অবস্থা ঘন্টা খানেক বাসের জন্য দাড়িয়ে থাকা তারপর বাসে সিট নেই ইত্যাদি জটিলতার জন্য। এভাবে দাড়িয়ে আছে বাসের ভিতর পরের স্টান্ডে একটা সিট খালি হলো। রিশা একটু সসিত্মবোধ করে যে, এবার বসা যাবে। সাথে আর একটি সিটে একটা ছেলে বসা। কোন উপায়মত্মর না দেখে রিশা বাধ্য হয়ে সেই খালি সিটটিতে বসে। রিশা ছেলেটিকে নিয়ে অত কিছু ভাবার সময় পেলনা প্রতিকুল পরিবেশের কারনে। তবে ছেলেটির গায়ের চামড়া সাদা যাকে আমরা ফর্সা বলে থাকি। রিশার ভাবনা সবার চেয়ে ভিন্ন কারন সে মানুষকে কখনো কালো, ফর্সা মনে করেনা। সবাই মানুষ, সবার রক্ত লাল এটাই সত্য। এরকম কিছু ভাবছে রিশা। বাসের গতি খুব ভালই রিশা আশাবাদী তাড়াতাড়ি যাওয়া যাবে। মাঝে মাঝে ধাক্কা খাচ্ছে বাসটি। কেউ কারোও দিকে তাকাচ্ছেনা। রিশার কোন মাথা ব্যথা নেই, ছেলেটি তাকে নিয়ে ভাবছে কিনা। কখন বা জিজ্ঞেস করবে আপনার নাম কী? কী করেন? যদি বলি পড়ালেখা, তাহলে কোথায় কিসে পড়া লেখা করছেন? কোথায় বাড়ি? আপনি দেখতে সুন্দরী বা আপনার কথা খুব মিষ্টি ইত্যাদি ইত্যাদি। বাসের জানালা খোলা আছে ফুরফুর করে বাতাস আসছে। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছেনা রিশা। শরীরটা নিসেত্মজ হয়ে আসছে। চোখ এমনিতে বন্ধ আসছে রিশার। নিজেকে শক্ত করে ধরে রাখছে। তারপরেও একসমায় রিশা ঘুমিয়ে পড়ে। বাস চলছে তো চলছেই। রিশার এই অবস্থায় ভাড়ার কথাও বলতে পারছেনা কনটাক্টর। অঘোর ঘুমুচ্ছে রিশা। বাসের ব্রেক আর ধাক্কার কারনে রিশার মাথা আস্তে আস্তে হেলতে থাকে। এক সময় তার মাথাটা ছেলেটার কাধে এসে পড়ে। ছেলেটি কিছু বলার সাহস পাচ্ছেনা, না পারছে হাত দিয়ে মাথাটাকে সরিয়ে দিতে। কিছু সময় এভাবে কাটলো। ছেলেটি বাসের এদিক সেদিক তাকায়। অনেক মানুষ কে কী মনে করবে। এসব ভেবে খুব কষ্ট করে রিশার মাথাটা সরিয়ে দেয়। খনিকটা সময় কাটলো এভাবে। আবার একই অবস্থা রিশার মাথা হেলে তার কাধে, মেয়েটা খুব ক্লান্ত ভেবে ছেলেটা কিছু মনে না করে চুপচাপ বসে আছে। বাস চলছে তার নিজেস্ব গতিতে আর এদিকে ঘটেছে নতুন সব কান্ড, যা ঘটেনি কোনদিন অপরিচিত মেয়েটি বা ছেলেটির জীবনে। রিশা অঘোর ঘুমিয়ে বাসের একটা ধাক্কায় তার মাথা ছেলেটির কোলে। এরকম একটি অষ্টাদশী সুঠাম দেহের অধিকারী মেয়ে যদি পাশে বসা থাকে তাতে তো মন ঠিক থাকে না ভাবছে ছেলেটা, তারপর আবার আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে কে আর ঠিক থাকে। সব ভাবনা বিসর্জন দিয়ে ছেলেটি রিশার মাথায় হাত বুলাতে থাকে। ছেলেটি রিশার এলোমেলো চুল ঠিক করে দিচ্ছে। জানালা দিয়ে দুষ্ট বাতাস এসে আবার চুল গুলোকে এলোমেলো করে দিচ্ছে। ছেলেটির মনে হচ্ছে সে রিশার খুব যত্ন নিচ্ছে। ছেলেটির মাথায় একটা বুদ্ধি এল তার হাতের আংটি রিশার হাতে পড়িয়ে দিল। কোন দিন এরকম অঘটন বা উল্টাপাল্টা ঘটনা ঘটেনি রিশার জীবনে। বাস কখন পৌঁছাবে তার কোন হদিস নেই, রিশা সে তো ঘুমিয়ে। ছেলেটি তো নিজেও জানে না রিশা কোথায় নামবে? কারণ তার সাথে কোন কথা হয়নি, সে বুঝবে কিভাবে। হঠাৎ চিৎকারে ঘুম ভাঙ্গে রিশার। কিন্তু রিশা নিজে ভেবে পায়না সে এখন কোথায় বাসে না বিছানায়। চোখ খুলে দেখে সে ছেলেটির কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে ছিল, আর ছেলেটি তার মাথার চুলে হাত বুলাচ্ছে। রিশা লজ্জা, ক্ষোভ, মান-অভিমানে লাল হয়ে গেছে। এমন বিব্রতর অবস্থা তার কখনও ঘটেনি। রিশা চাইলেও তার মাথাটা ছেলেটির কোল থেকে উঠাতে পারছেনা লজ্জায়। উপায় কোন নেই বাস স্টান্ডে থেমে গেছে রিশাকে নামতে হবে। খুব কষ্ট করে লজ্জা রাঙ্গা অবস্থায় মাথা কোল থেকে উঠালো। তাড়াতাড়ি সবকিছু নিয়ে বাস থেকে নামলো। ছেলেটি কিছু বলার মত সময় পেলনা রিশা। ছেলেটি বা কি বলবে রিশাকে। কোন রকম একটা রিকশা নিয়ে হলে গেল রিশা। ছেলেটি অবাক হয়ে ভাবে মেয়েটি কোন কিছু বলল না তাকে। দুঃখিত কথাটিও তো বলতে পারতো। কিন্তু কেন? কোন কিছুই তো বলল না, না মেয়েটি আমাকে অপরাধী ভেবে কিছু বলেনি। না মান সম্মানের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে লোক জড়ায়নি। রিশা হলে গিয়ে শুধু সে ছেলেটির কথা ভাবে। অপরিচিত একটা ছেলে তার কোলে মাথা রেখে কেন ঘুমাতে গেলাম। ছিঁ ছিঁ নিজের উপর ঘৃণা হচ্ছে। তবে রিশার স্পষ্ট মনে আছে ছেলেটার চেহারা। ছেলেটি আবার হাতে একটি আংটি পড়িয়ে দিযেছে। রিশা না খেয়ে রাতে ঘুমিয়ে পরে। রিশা মনে করে যদি কোন দিন ছেলেটির দেখা পাই তবে তার হাতের আংটি তাকে পড়িয়ে দিব। তারপর সরি বলবে। এভাবে কয়েক ভাবে বছর কেটে গেল। রিশার পড়াশুনা শেষ সে এখন বাড়িতে ফলাফলের অপেক্ষায়। এদিকে আজ তাকে বর পক্ষদেখতে আসবে ভাল লাগলে এঙ্গেসমেন্ট হবে আজকেই। বাড়িতে লোকজন আসছে, আপ্যায়ন শেষ সব পছন্দ এখন ছেলে মেয়ে দেখার পালা তার সাথে আংটি পড়ানো। রিশা দরজায় ঢুকতেই সেই ছেলেটিকে দেখতে পেল। কোন কথা নেই রিশা দৌড়ে গিয়ে ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরলো তারপর ছেলেটির হাতে আংটি পড়িয়ে দিল।
বিষয়: বিবিধ
১৪৯৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন