ধন্যবাদ, জয়!
লিখেছেন লিখেছেন চেতনাধারী ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১১:৫২:৩৭ সকাল
ধন্যবাদ, জয়!
সজীব ওয়াজেদ জয় ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে এক সময় রাজনীতিতে আসবেন, এই ধারণা দেশের নিরানব্বই শতাংশ মানুষের ছিল। জয়ের সাম্প্রতিক বক্তব্য-বিবৃতি ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এই ধারণা বাস্তব প্রমাণিত হলো। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত না থাকলেও প্রধানমন্ত্রীতনয় হিসেবে তাঁর অবস্থান সুসংহত। ধারণা করা হচ্ছে দল এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাঁর মতামতকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয়া হয়।
জনমনে প্রশ্ন ছিল রাজনীতিতে পদার্পণ করে তিনি কি আমাদের ঘুণেধরা রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারবেন? 'স্মার্ট', শিক্ষিত-সচেতন তরুণ হিসেবে পারবেন, প্রত্যাশা ছিল অনেকের। কিন্তু শুরুতেই (নামাজের জন্য নয়) কথিত অপপ্রচারের জবাব দেয়ার জন্য (কেবল) শুক্রবারে মুসজিদে যাওয়ার 'নির্দেশ' তথা রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহারের পথ বাতলে দিয়ে এবং তদন্তের আগে ঘটনার জন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দোষারোপের পুরনো জীর্ণ পথে হেঁটে আশাবাদীদের হতাশ করলেন। তারও আগে তিনি হাওয়া থেকে পাওয়া 'তথ্য'-এর ভিত্তিতে আগামীতে আওয়ামীলীগের ক্ষমতায় আসার ভবিষ্যদ্বাণী করে হাস্য-রসের সৃষ্টি করতে পারলেও রাজনৈতিক অপটুতার পরিচয় দিয়ে সমালোচিত হয়েছেন। এরকম দু'-একটা বিষয়কে সমালোচকেরা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন। এসব কারণে আশাহত হয়েছেন বলে দাবি করছেন, জয় রাজনীতিতে নতুনত্ব আনতে পারবেন না বলে তাঁরা মনে করছেন।
জয় রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারবেন না-- নিন্দুকদের এই পূর্বাভাস কি ঠিক? আমি মনে করি আংশিক ঠিক, পুরোপুরি ঠিক নয়। স্বাধীনতার পর থেকে এ দেশে যে অসুস্থ রাজনীতি চলে আসছে, তিনি এই বলয়ের বাইরে যেতে পারবেন না। তবে জয়ের শত্রুদের তাঁর একটা গুণ স্বীকার করতে হবে। জয় সৎ; নিজের বিশ্বাসের কাছে সৎ। তসলিমা নাসরিনের মতো সৎ। রাজনীতিবিদদের একটা অভ্যাস সম্পর্কে সবাই জানে, বেশির ভাগই অসৎ। তাঁরা যা বিশ্বাস করেন, প্রকাশ করেন তার উল্টো। স্বল্পতম রাজনৈতিক জীবনে জয় যেভাবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন, এতে তাঁকে ব্যতিক্রম মনে হচ্ছে। তিনি যা বিশ্বাস করেন, তা প্রকাশ করতে নির্দ্বিধ-নিঃসঙ্কোচ।
দ্বিতীয় বৃহত্তম একটি মুসলিম রাষ্ট্রের প্রধান রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যৎ-কর্ণধার জয় বুঝে হোক অথবা না বুঝে, মাদরাসার ছাত্র কমানোর চেষ্টায় রত আছেন বলে নিঃসঙ্কোচে স্বীকার করেছেন। এটা কম সততা ও সাহসিকতার কথা নয়। এই অসীম সততা ও সাহসিকতার জন্য প্রধানমন্ত্রীপুত্রের ধন্যবাদ প্রাপ্য। অবস্থান স্পষ্ট করায় জনগণ তাঁর ব্যাপারে নতুন করে ভাববার সুযোগ পাবে। এর আগেই অবশ্য মেয়েদের বোরকাপ্রীতির কারণে উব্দেগ প্রকাশ করে জয় নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছিলেন। পূর্বাপর চিন্তা করে এখন আলেমসমাজ জয়কে মাদরাসাশিক্ষার জন্য বিপজ্জনক ঘোষণা করতে পারবেন, তাঁর অনিষ্ট থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন।
জয়ের ভাষ্য অনুযায়ী নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে দেশে এসেছেন দলকে সাহায্য করার জন্য, দলের পক্ষে প্রচারণা চালানোর জন্য। প্রচারণা চালাতে গিয়ে দেশের সিংহভাগ মানুষের 'পালস' ধরতে ব্যর্থ জয় যেভাবে মানুষের চিরায়ত বিশ্বাস ও মূল্যবোধের বিপরীত বক্তব্য দিচ্ছেন, তাতে কি দলের উপকার হবে, না হিতে বিপরীত হবে?-- আশা করি আওয়ামীলীগের শীর্ষ মহল ভেবে দেখবেন। উপসংহারে বিনা ভিজিটে প্রেসক্রিপশন।
বিষয়: বিবিধ
১৪৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন