বন্ধু যদি প্রতারক হয় !!!!সিদ্বান্ত নিতে হবে এখনই....!!

লিখেছেন লিখেছেন চেতনাধারী ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৫:২০:৩১ বিকাল

কিছু ঐতিহ্য, কিছু মনন, কিছু সৌন্দর্য, কিছু রূপ, কিছু পন্থা, কিছু পথ, কিছু গান, কিছু মান, কিছু আনন্দ, কিছু কান্না একান্তই আমাদের নিজেদের। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এই সব উপাদান নিয়েই আমাদের জীবন, আমাদের বেঁচে থাকা। এসব কেড়ে নিলে আমাদের আমিত্ব হারিয়ে যায়, আমাদের স্বকীয়তা নষ্ট হয়ে যায়, আমদের অনন্য বৈশিষ্ট্য লুপ্ত হয়ে যায়।

আমাদের জীবন প্রণালীর সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের ভৌগলিক অবস্থা, আমাদের রুচি ইত্যাদি। আমাদের প্রতিদিনের ব্যবহার্য এইসব দ্রব্য আমাদের নিজের অবস্থান নির্দেশ করে, এইসব পণ্য বা দ্রব্য আমাদের অনেকটা সাইনের মত। আমাদের ভৌগলিক অবস্থান, আমাদের রেপুটেশন, আমাদের স্বাতন্ত্র্য এই পণ্যের উপর নির্ভর করে। প্রতিটা পণ্যের তাই ভৌগলিক নির্দেশক বা জিওগ্রাফিকাল ইন্ডিকেশন আছে। এই পণ্যগুলি আমাদের গ্রাম-গ্রামান্তরে লোক-লোকান্তরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রতিটি পণ্যের নামের সংরক্ষণ ও পরিচিতি নিশ্চিতের মাধ্যমে উৎপাদনের কোয়ালিটি ঠিক রেখে বিনিয়োগ করা সম্ভব। এই জন্যে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা একটি চুক্তি করে, যা “বাণিজ্য সম্পর্কিত মেধা-স্বত্ব অধিকার চুক্তি” বা ট্রিপস(ট্রেড রিলেটেড অ্যাসপেক্টস অফ ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস) নামে পরিচিত। এই চুক্তির অধীনে কোন দেশ তাদের নিজের ঐতিহ্যবাহী পণ্যের স্বত্ব নিশ্চিত করতে পারে। যেসব প্রাকৃতিক সম্পদ, জীব বৈচিত্র্য, ঐতিহ্য, মানুষের তৈরি পণ্য বহুকাল ধরে কোন এলাকায় উৎপাদিত হয়ে আসছে, সেই সব পণ্যের উপর যেন ওই এলাকার মালিকানা অটুট থাকে তা এই চুক্তি নিশ্চিত করে। ট্রিপস চুক্তির ২৭.৩ ধারায় বিভিন্ন দ্রব্যের ভৌগলিক নির্দেশক দেশসমূহকে আইন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এই সুযোগে ১৯৯৯ সালেই ভারত আইন করে বিভিন্ন দ্রব্যের পেটেন্ট করা শুরু করে। কিন্তু এখনও বাংলাদেশে এ নিয়ে কোন আইন এই। ২০০৮ সালে কেয়ার টেকার সরকার অধ্যাদেশ জারী করে আইনের খসড়া তৈরি করে দিয়ে গেলেও পরবর্তীতে আওয়ামী লিগ সরকার তা আইনে পরিণত করে নি। এর ফলে আমাদের ঐতিহ্যবাহী নানান দ্রব্যের পেটেন্ট ভারত সরকার এক প্রকার চুরি করে নিয়ে গেছে। এরই মধ্যে ফজলি আমি, নকশি কাঁথা, জামদানি সহ প্রায় ৬৬টি পণ্যের পেটেন্ট নিয়ে ফেলেছে ভারত। এসব নাকি তাদের পণ্য! হাস্যকর সব যুক্তি দেখিয়ে লোলুপ ভারত সরকার আমাদের পেটেন্ট ছিনিয়ে নিয়েছে বলা চলে।

ঢাকাই মসলিনের ঐতিহ্য কি আজকের? এই মসলিনের উত্তর সংস্করণই হল জামদানি, এই জামদানীকে অন্ধ্রপ্রদেশের উপ্পাদা নামক কাপড়কে জামদানী হিসেবে দেখিয়ে ভারত পেটেন্ট নিয়ে নিয়েছে।

যে নকশী কাঁথার সাথে বাংলাদেশের মেধা মনন মিশে রয়েছে, সেই নকশি কাঁথার পেটেন্টও ভারত নিয়ে গেছে পশ্চিমবঙ্গের পণ্য হিসেবে দেখিয়ে।

আর যে চিরচেনা মধুর ফজলি আম,যে ফজলি আম আমের রাজা, যে ফজলি আম চাঁপাইনবাবগঞ্জ রাজশাহী এলাকার গর্ব, সেই ফজলি আমকে ভারত পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার অধীনে পেটেন্ট করিয়ে নিয়েছে।

শুধু তাই নয় ভাই, লোলুপ হায়েনা ভারত এবার নজর দিয়েছে ইলিশের উপর। আর বাংলাদেশের সাহসিকতার প্রতীক, সৌন্দর্যের প্রতীক রয়েল বেঙ্গল টাইগার-যা জন্মের পর থেকেই আমরা বাংলার বাঘ নামে জেনে আসছি-যার নামের সাথেই বেঙ্গল কথাটা আছে-তার স্বত্ব নেবার পথে ভারত অনেকখানি এগিয়ে গেছে। এই পেটেন্ট ভারত নিয়ে নিলে আমাদের ক্রিকেট টিমের লোগো যে রয়েল বেঙ্গলে টাইগার, সেটা ব্যবহার করতে আমাদের ভারতকে টাকা দেওয়া লাগবে। ব্যাপার কিন্তু খুব সাংঘাতিক।

নিম গাছ ঔষধি গাছ হিসেবে শত শত বছর ধরে বাংলার ঘরে ঘরে ব্যবহার করে আসছে। বাংলাদেশের জিয়া সৌদি সরকারকে নিম গাছ উপহার দিয়েছিলেন। এই নিম গাছ সেখানে জিয়া ট্রি নামে পরিচিত। এই নিম গাছ সৌদি আরবে লাখ লাখ হাজীদের ছায়া দিয়ে আসছে। আর এই নিম গাছের পেটেন্ট প্রথমে মার্কিনীরা নিয়ে নিয়েছিল। এর পর ভারত মামলা করে সেই স্বত্ব তাদের করে নেয়। আমরা কিছুই করতে পারি নি।

নিমের সাথে সাথে অনেক ঔষধি গাছগাছড়ার পেটেন্ট ভারত নিজেদের করে নিয়েছে।

আমাদের যে সুগন্ধি বাসমতী চাল, তার পেটেন্টও ভারত নিয়ে গেছে। এতে আবার তাদের সাথে ভাগ বসিয়েছে পাকিস্তান।

এই স্বত্ব জিনিসটা কিন্তু হেলাফেলার জিনিস না। ট্রিপস চুক্তি বাস্তবায়ন শুরু হলে আমাদের বিপদ আছে। এসব পণ্য রফতানি, বিপণন, উৎপাদনে আমাদের ভাল পরিমাণে টাকা স্বত্বাধিকার পাওয়া ভারতকে দেওয়া লাগবে। ফলে এসব পণ্য দেশে উৎপাদন বিপণন বাঁধা পাবে, হুমকির মুখে পড়ে একসময় হারিয়েই যাবে। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা আমাদের ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলব। যে জাতির নিজের ঐতিহ্য নেই, কি আছে সেই জাতির?

তাই এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই হবে। জাতীয় পর্যায়ের সাথে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জোরদার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আইনের আশ্রয় দরকার হলে নিতে হবে। সরকারকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ফোরামে বিষয়টি উত্থাপন করতেই হবে। যেসব পণ্যের পেটেন্ট এখনও হাতছাড়া হয় নি, তাদের বিষয়ে সময় নষ্ট করা একদমই উচিত হবে না।

কেননা নিজেদের ঐতিহ্য হাতছাড়া হয়ে গেলে আত্মমর্যাদা বলে আর কিছুই থাকবে না।

বিষয়: বিবিধ

১২৬২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File