তেতুল তত্ত্ব আবিষ্কারের পর এবার হেফাজতে ইসলামকে দমাতে মাঠে নামাচ্ছে ইফার ডিজি মাজারপন্থী ভন্ডদের-----আর কত দালালি করবে এ মুখোশধারীটা
লিখেছেন লিখেছেন মোমের মানুষ ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৯:৩১:১৬ রাত
হেফাজতে ইসলাম এবং কওমি মাদরাসাগুলোর বিরুদ্ধে দেশের মাজার ও খানকাগুলোকে সক্রিয় করা হচ্ছে। এ লক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা) ইতোমধ্যেই মাজার ও খানকাগুলোর তালিকায় উল্লিখিত পরিচালকদের নামসহ ডাটা সংগ্রহ করেছে। পাশাপাশি মাজারগুলোর পরিচালকদের সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজস্ব খাত থেকে ২৩ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। একই সাথে প্রতিটি মাজারে একটি করে মাদরাসা স্থাপন করে ওই মাদরাসার মাধ্যমে হেফাজতে ইসলাম, কওমি মাদরাসা ও ওয়াহাবিবাদের বিরুদ্ধে মতবাদ ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ইফার মহাপরিচালক (ডিজি) সামীম মোহাম্মদ আফজল সম্প্রতি বায়তুল মোকাররমে চট্টগ্রামের মাজারপন্থী আলেমদের সাথে এক বৈঠক করে তাদের মতামতের ভিত্তিতে এ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, গত রমজানের কয়েকদিন আগে ইসলামিক ফাউন্ডেশন সভাকক্ষে চট্টগ্রামের মাজার ও খানকাপন্থী শীর্ষ আলেমদের নিয়ে ইফা ডিজির বৈঠকেই মূলত মাজার-খানকাগুলো সক্রিয় করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। চট্টগ্রামের ১৫ জনের মতো মাজারপন্থী আলেম ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ইফার ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজলের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সারা দেশে মাজার-খানকার পরিচালকদের নিয়ে সম্মেলন করার পদক্ষেপের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘হ্যাঁ করা হবে।’ সম্মেলনের উদ্দেশ্য ও অন্যান্য ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যস্ত আছি, এখন বলতে পারবো না।’ ইফা সূত্রে জানা গেছে, দেশের সব গ্রামে অবস্থিত মাজার ও খানকাগুলোর তালিকা একটি ছক মোতাবেক প্রস্তুত করার জন্য ইফা ডিজি নির্দেশ প্রদান করেন। ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম ডিজিটালে রূপান্তর ও ডিজিটাল আর্কাইভ স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রেরিত পত্রে মাজার ও খানকাগুলোর গদিনসিন তথা পরিচালকদের টেলিফোন এবং মোবাইল নম্বরও সংগ্রহ করতে বলা হয়। তথ্যের জন্য প্রদত্ত ছকে মাজার ও খানকায় মাদরাসা আছে কি না তাও জানতে চাওয়া হয়। প্রায় ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ওই তালিকার কাজ শেষ হয়। ওই তালিকা ওয়েবসাইটে দেয়ার কাজ চলছে। এ দিকে অপর এক পত্রে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে মাজারগুলোর পরিচালকদের সম্মেলনের জন্য নতুন করে অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, মাজারগুলোর পরিচালকদের সম্মেলনের জন্য প্রতিটি জেলায় ২০ হাজার ৫০০ টাকা এবং প্রতিটি উপজেলার জন্য দুই হাজার টাকা করে মোট ২২ লাখ ৯২ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ইফার সমন্বয় বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে এ সম্মেলন অনুষ্ঠানের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতে বলা হয়। গতকাল রোববার ইফার বোর্ড সভায় এই বরাদ্দ চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্র জানায়, মাজার-খানকা এবং তরিকতপন্থী লোকজন আগে থেকেই কওমি মাদরাসার ঘোরবিরোধী। হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন জোরালো হওয়ার পর মাজার-খানকাপন্থী আলেমসহ তাদের অনুসারীরা হেফাজতবিরোধী বক্তব্যের পাশাপাশি নানা কর্মসূচি পালন করে। চট্টগ্রামে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। সামীম মো: আফজল ডিজি হওয়ার পর থেকে মাজার-খানকাপন্থীদের নানাভাবে সহায়তা দিয়ে আসছেন। পাশাপাশি মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদসহ সরকার সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত কওমি আলেমদের মাধ্যমে তিনি কওমি আলেমদের একটি অংশকেও নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করেন। তাদের মাধ্যমে মূল কওমি ধারার সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টাও করেন ডিজি। কিন্তু সেটা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয় কওমি কমিশন থেকে আল্লামা শফী সরে যাওয়ার পর। তা ছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনে মাজারপন্থীদের আধিক্য, ইমামদের সামনে ব্যালে নৃত্যের আয়োজন এবং ডিজির কিছু বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে কওমি আলেমরা সামীম মোহাম্মদ আফজলের বিপক্ষে অবস্থান নেন। কওমি আলেমদের বড় একটি অংশ বর্তমান সরকারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। কিন্তু হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে কওমি আলেমদের মূলধারা সর্বশেষ সরকারের বিপক্ষে চলে যায়। এরপরও ইফা ডিজি সরকারের পক্ষে আল্লামা শফীর সাথে দেখা করে সমঝোতার চেষ্টা করেন। কিন্তু আল্লামা শফী তাকে সাক্ষাতের সময় না দেয়ায় সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপরই মূলত ইফা ডিজি কওমি ও হেফাজতবিরোধী প্রচারণা শুরু করেন। তিনি আল্লামা শফী সম্পর্কেও বিরূপ মন্তব্য করেন যা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীকে সামনে রেখে তিনি আলোচনার নামে সারা দেশে প্রতি জেলায় কাওয়ালি গানের আসরের আয়োজন করেন। এতে গণশিক্ষা প্রকল্পের ইমামদের প্রশিক্ষণ ভাতার টাকা ব্যয় করা হয়। আগামী ৪ সেপ্টেম্বর সেই আলোচনা ও কাওয়ালি গানের আসর শেষ হওয়ার কথা। মাজার-খানকার তালিকা তৈরিতে ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ের ব্যাপারে ইফার ডিজিটাইলেশন প্রকল্পের পরিচালক সাহাব উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুধু মাজার-খানকা তৈরির জন্যই ২৭ লাখ টাকা ব্যয় হওয়ার খবর সঠিক নয়। পুরো তথ্য সংগ্রহের জন্য অর্থ বরাদ্দ ছিল। প্রকল্পের মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য সংগ্রহে টাকা ব্যয় করার কথা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডাটা তৈরির জন্য অর্থ বরাদ্দ আছে। মাজার-খানকার পরিচালকদের সম্মেলনের অর্থ বরাদ্দের ব্যাপারে ইফার অর্থ বিভাগের পরিচালক ডা: খিজির হায়াত খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইফার কোনো বিষয়ে সরাসরি সাংবাদিকদের সাথে কথা না বলার নির্দেশনা রয়েছে। সব বিষয়ে জনসংযোগ কর্মকর্তাকে কথা বলার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ইতঃপূর্বে মাজার-খানকার পরিচালকদের সম্মেলন করার মতো কাজের জন্য ইফার রাজস্ব থেকে কোনো অর্থ বরাদ্দের নজির আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব বিষয় আমি কিছুই বলতে পারবো না।
বিষয়: রাজনীতি
১৪৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন