কে হচ্ছেন পরবর্তী পেট্রলবোমার শিকার? কেন হবেন?
লিখেছেন লিখেছেন সামছুল করিম ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৪:০৪:৫৬ রাত
সাতক্ষীরা, রংপুর, যাত্রাবাড়ী, চৌদ্দগ্রাম, গাইবান্ধা এই সব এলাকায় ইতোমধ্যে নিয়মিত বিরতিতে প্রাণ সংহারী পেট্রল বোমা হামলা হয়েছে। মাসাধিক কালের অবরোধে পেট্রল বোমা হামলায় হামলার ২টি ধরণ দেখা যায়। প্রথমতঃ পেট্রল বোমা হামলা হয় ভয় ভীতি সৃষ্টির জন্য। দ্বিতীয়তঃ জীবন সংহারের জন্য। উল্লেখ্য প্রথম ধরনের পেট্রল বোমা দিনের বেলা বা সন্ধার দিকে নিক্ষেপ করা হয়, সাধারণত সন্ধা ৭/৮ টার মধ্যে। আর জীবন সংহারী পেট্রল বোমা গভীর রাতে বা মধ্য রাতের কাছাকাছি সময়ে। গত কয়েকদিনে এই প্রবনতাই দেখা গেছে। একটু খেয়াল করলেই ২য় ধরনের পেট্রল বোমার কিছু বৈশিষ্ট পাওয়া যাবে, এর থেকে কয়েকটি বিষয় পরিষ্কার হতে পারে।
জীবন সংহারী পেট্রল বোমা নিক্ষেপ করা হয় মুলত বিএনপি-জামাত প্রভাবাধীন এলাকায়, এবং এর পর পরই এই বোমা হামলার হতাহত নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। র্যাব ডিজি, আইজিপি, স্হানীয় প্রশাষণ সেখানে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। সভার ১/২ দিন পরেই স্হানীয় বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের ক্রসফায়ারে দেয়া হয় ( মানে টার্গেট কিলিং করা হয়)। ঠিক একই ফর্মূলা বিগত কয়েকটি স্হানে অনুসরণ করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন এটা করা হচ্ছে? আর কে এই ঘৃনিত কাজটি করছে?
বিরোধীদল ভীতি সৃষ্টির জন্য সাধারণত প্রথম ধরণের পেট্রলবোমা ব্যবহার করে আসছিল। কিন্ত কারা এই ২য় ধরণের পেট্রল বোমা নিক্ষেপ করছে। আমার প্রথমিক বিশ্লেষণে এর সাথে সরকার বা তার গোয়েন্দা সংস্হা, বা দলীয় লোকজন জড়িত থাকার সম্ভাবনাই বেশী। কিন্তু কেন? আপনাদের মনে থাকার কথা ২০১৩ সালের সরকার বিরোধী আন্দোলন যখন চুড়ান্ত পর্যায়ে তখন ঢাকায় বাসে পেট্রল বোমা হামলায় কয়েকজন যাত্রীর দগ্ধ হওয়া এবং সম্ভবত ১ জনের মৃত্যু ঐ সময়ের আন্দোলনকে বেকায়দায় ফেলে দেয়। ফলে বিএনপি বিশেষ ভাবে সমালোচিত হয়।
বর্তমানের এই আন্দোলন যখন মানুষের সহানুভূতি পাচ্ছিল ঠিক তখনই জীবন সংহারী পেট্টলবোমা রংপুরে নিক্ষেপ করা হয়। আরও উল্লেখ করার মত বিষয় হচ্ছে আইজিপি এবং র্যাব ডিজির জীবন বাজি রেখে বর্তমান সরকারের জন্য লড়ার ঘোষণা দেয়ার পর দিনই রংপুরে জীবন বিধংসী পেট্রল বোমা হামলা হয়। হামলার পর পরই উপরের নির্মূল ফর্মুলা অনুসরণ করা হয়।
কেন এই জীবন সংহারী পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে? বর্তমানে সরকার শুধুমাত্র বিরোধী আন্দোলনের ব্যাপারে ঘৃণা তৈরীতেই ব্যাস্ত নয়, বরং দীর্ঘ মেয়াদে বিরোধীদল দমণ সরকারের উদ্দ্যেশ্য। মজার বিষয় হচ্ছে সরকারের আচরণ, ভাষা, আর নাটকীয়তা দেখে মনে হচ্ছে সরকার বিষয়টি নিয়ে তার পরিকল্পনামাপিক এগুচ্ছে। সম্ভবত এই পরিকল্পপনার অংশ হচ্ছে সমগ্র বাংলাদেশকে সরকারের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসা। আর নিয়ন্ত্রনের জন্য বিরোধীদের দমন অপরিহার্য। কিন্তু বিরোধীদের সরাসরি হত্যা করলে জনমত সরকারের বিপক্ষে চলে যাবে। বরং পেট্রল বোমা হামলা করে জনমত বিরোধী দলের বিপক্ষে নিয়ে গিয়ে বিরোধীদের হত্যা করলে সরকার সবদিক থেকেই লাভবান। আমার ধারণা সঠিক হলে এই ধরণের জীবন বিধ্বংসী পেট্রল বোমা হামলা হবে কমপক্ষে ১৯ জেলায়। ২০১৩ সালের সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময় সরকার ১৯ জেলাকে সরকারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণহীন বলে চিন্হিত করে। অধিকন্ত ঢাকার যাত্রাবাড়ী, ঢাকার উপকন্ঠের গাজীপুর ছিল সরকারের আংশিক নিয়ন্ত্রণহীন। এই ২১ টি স্হানে জীবন সংহারী পেট্রল বোমা হামলা হতে পারে এবং বেশ কিছু মানুষ হতাহত হতে পারে। এর ফলে টিভিতে অনবরত পোড়া মানুষের ছবি, বিভৎসতা, এবং অসহায় মানুষের আহাজারী প্রচারিত হবে। এতে কান্নার পরিমাণ কম হলে প্রয়োজনে সুটিং করে গ্লিসারিন ব্যবহার করে মানুষের আহাজারী টিভিতে প্রচার করা হবে। দুঃখজনক হলেও আমরা ২/৩ দিন আগে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে সেই ধরণের সুটিংই দেখলাম।
ফলশ্রুতিতে, আন্দোলনের ব্যপারে জনমত বিপক্ষে যাবে। সরকার বিনা বিচারে বিরোধীপক্ষের উদীয়মান নেতাকর্মীদের হত্যার লাইসেন্স পাবে। মানুষ সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল না হলেও বিরুপ হবেনা। আর যে সমস্ত অন্চল সরকার বিরোধী বলে পরিচিত তারাও দমিত হবে। সরকার দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকবে, আর ব্যর্থ বিএনপি জোট নিশ্চিন্হ হবে।
জয় হোক ক্ষমতা লোভের, জয় হোক ধ্বংসের,
ধ্বংস হোক মানবিকতা।
বিষয়: বিবিধ
১২৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন