রিবা: বর্তমানে বহু প্রচলিত এর কয়েকটি রূপ
লিখেছেন লিখেছেন চিরবিদ্রোহী ২৩ জুলাই, ২০১৫, ১১:৩৫:০৮ সকাল
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
====================================
সমস্ত প্রশংসা সেই মহান আল্লাহ রব্বুল আ'লামিনের জন্য, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, যিনি সবকিছুর ওপর কর্তৃত্বশীল এবং একদিন যাঁর কাছে সবাইকে ফিরে যেতে হবে। কোটি কোটি দুরুদ ও সালাম সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব, নবী-রাসূলগণের (আঃ) ইমাম, মুত্ত্বাক্বিদের রাহবার হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ), তাঁর পরিবার ও তাঁর সঙ্গীগণের উপর।
====================================
রিবা বা সুদ (Usury)-এর সংজ্ঞা ও পরিচিতি সম্পর্কে আমরা সবাই মোটামুটি ওয়াকেফহাল। রিবা শব্দের অর্থ হলো বৃদ্ধি, বাড়তি, অতিরিক্ত, উদ্ধৃত্ত (surpls), বেশি, সম্প্রসারণ, প্রবৃদ্ধি, উচু হওয়া, ফুলে উঠা, লাভ (gain), বহুগুণ হওয়া, ছাড়িয়ে যাওয়া, পাওনার চেয়ে বেশি নেওয়া, একদিকে বৃদ্ধি অন্যদিকে বৃদ্ধি ছাড়াই ইত্যাদি। সংক্ষেপে বলতে গেলে, টি একজাতের অর্থ, পণ্য বা সেবা বাকিতে ক্রয়-বিক্রয় করলে স্থগিতকৃত কাউন্টার ভ্যালু হয় ঋণ, ঋণের ওপর সময়ের ভিত্তিতে ধার্যকৃত বিনিময়হীন (মাগনা) অতিরিক্তকে বলা হয়েছে রিবা। অনুরূপভাবে ভিন্ন ভিন্ন জাতের অর্থ, পণ্য বা সেবা বাকিতে ক্রয়-বিক্রয় করা হলে স্থগিতকৃত কাউন্টার ভ্যালু হয় দেনা/পাওনা। এই দেনা/পাওনার ওপর সময়ের ভিত্তিতে ধার্যকৃত অতিরিক্তেকেও বলা হয় রিবা। অপরদিকে একজাতের বস্তু নগদ ক্রয়-বিক্রয়ে নির্ধারিত কোন কাউন্টার ভ্যালুর ওপর বিনিময়হীন বাড়তি নেওয়া হলে তাকে বলা হয়েছে রিবা। অনুরূপভাবে ভিন্ন ভিন্ন জাতের ক্রয়-বিক্রয়ে কোন কাউন্টার ভ্যালুর ওপর বিনিময় না দিয়ে বাড়তি নেওয়া হলে সেই বাড়তিকেও বলা হয়েছে রিবা। বস্তুতঃ রিবা হচ্ছে বাকি, নগদ উভয় ক্রয়-বিক্রয়ে এক পক্ষের কাউন্টার ভ্যালুর ওপর বিনিময়হীন (মাগনা) বৃদ্ধি (ফদল যিয়াদা)। পার্থক্য হচ্ছে বাকির ক্ষেত্রে রিবা ধার্য করা হয়ে সময়ের কারণে, সময়ের ক্ষতিপূরণ বা মূল্য হিসেবে। আর নগদের ক্ষেত্রে রিবা ধার্য হয় সময় ছাড়া অন্যবিধ কারণে। উক্ত সংজ্ঞায় সকল প্রকার ক্রয়-বিক্রয়ে উদ্ভূত সকল সুদই অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
ইসলামে রিবা কোন ভাবেই বা কোন কারণ্ই গ্রহণযোগ্য নয়। রিবাকে সবচেয়ে ঘৃণ্য হারাম কাজগুলোর একটি হিসেবে গণ্য করা হয়, এমনকি রিবার সাথে সম্পৃত্ত ব্যক্তিকে আল্লাহ ও তার রাসূল (সাঃ)-এর সাথে যুদ্ধ করার হুশিয়ারি প্রদান করা হয়েছে।
রিবা সম্পর্কিত কয়েকটি আয়াতঃ
আল-বাকারা ( আয়াত : ২৭৫-২৭৮) :
الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لاَ يَقُومُونَ إِلاَّ كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُواْ إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا وَأَحَلَّ اللّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا فَمَن جَاءهُ مَوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّهِ فَانتَهَىَ فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللّهِ وَمَنْ عَادَ فَأُوْلَـئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছেঃ ক্রয়-বিক্রয় ও তো সুদ নেয়ারই মত! অথচ আল্লা’হ তা’আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই দোযখে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে।
يَمْحَقُ اللّهُ الْرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ وَاللّهُ لاَ يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيمٍ (276
আল্লাহ তা’আলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ পছন্দ করেন না কোন অবিশ্বাসী পাপীকে।
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُواْ وَعَمِلُواْ الصَّالِحَاتِ وَأَقَامُواْ الصَّلاَةَ وَآتَوُاْ الزَّكَاةَ لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ (277
নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, সৎকাজ করেছে, নামায প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং যাকাত দান করেছে, তাদের জন্যে তাদের পুরষ্কার তাদের পালনকর্তার কছে রয়েছে। তাদের কোন শঙ্কা নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَذَرُواْ مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ (278
হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক।
সুরা আলে-ইমরান (আয়াত : ১৩০)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَأْكُلُواْ الرِّبَا أَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً وَاتَّقُواْ اللّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পারো।
সুরা আন-নিসা ( আয়াত: ১৬১)
وَأَخْذِهِمُ الرِّبَا وَقَدْ نُهُواْ عَنْهُ وَأَكْلِهِمْ أَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ مِنْهُمْ عَذَابًا أَلِيمً
আর এ কারণে যে, তারা সুদ গ্রহণ করত, অথচ এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল এবং এ কারণে যে, তারা অপরের সম্পদ ভোগ করতো অন্যায় ভাবে। বস্তুত; আমি কাফেরদের জন্য তৈরী করে রেখেছি বেদনাদায়ক আযাব।
সুরা আর- রুম (আয়াত: ৩৯) :
وَمَا آتَيْتُم مِّن رِّبًا لِّيَرْبُوَ فِي أَمْوَالِ النَّاسِ فَلَا يَرْبُو عِندَ اللَّهِ وَمَا آتَيْتُم مِّن زَكَاةٍ تُرِيدُونَ وَجْهَ اللَّهِ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْمُضْعِفُونَ
মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, এই আশায় তোমরা সুদে যা কিছু দাও, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না। পক্ষান্তরে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পবিত্র অন্তরে যারা দিয়ে থাকে, অতএব, তারাই দ্বিগুণ লাভ করে।
আমাদের মূল আলোচ্য বিষয় বর্তমান সময়ে রিবার প্রচলিত কয়েকটি রূপ। সময় ও স্থানের অভাবে এখানে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করছি, পরবর্তীতে পয়েন্টভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা করার ইচ্ছা আছে ইনশাআল্লাহ।
রিবার প্রচলিত কয়েকটি রূপঃ
রিবা প্রধানত দুই প্রকার : ১. রিবা নাসিয়্যাহ ২. রিবাল ফযল; একে রিবাল বাইও বলা হয়।
এখানে আমরা শুধু রিবা নাসিয়্যাহর প্রচলিত কয়েকটি রূপ নিয়ে আলোচনা করব।
রিবা নাসিয়্যাহর সংজ্ঞা:
ইমাম আবু বকর জাস্সাস রাহ. বলেন,
هو القرض المشروط فيه الأجل وزيادة مال على المستقرض.
এমন ঋণ যাতে মেয়াদ শর্ত করা হয় এবং গ্রহিতাকে অতিরিক্ত প্রদানের শর্ত করা হয়।-আহকামুল কুরআন ১/৫৫৭
অর্থাৎ অতিরিক্ত প্রদানের শর্তে কাউকে মেয়াদি ঋণ দেওয়া। একে রিবাল করযও বলা হয়। রিবান নাসিয়্যাহ-এর আরেক প্রকার হল, রিবাদ দাইন।
রিবাদ দাইনের সংজ্ঞা :
কারো থেকে কোনো পণ্যের বিক্রিলব্ধ বকেয়া-মূল্য পরিশোধের সময় হলে তখন অতিরিক্ত প্রদানের শর্তে মেয়াদ বাড়িয়ে নেওয়া। অর্থাৎ অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধের শর্তে সময় বাড়িয়ে নেওয়া। জাহেলী যুগে রিবা নাসিয়্যাহর উভয় প্রকারের প্রচলন ছিল খুব বেশি।
আজও এই উভয় ধরনের রিবা নাসিয়্যাহ ব্যাংকিং জগতে এবং মার্চেন্টদের সমাজে বহুল প্রচলিত।
বাজারে বিভিন্ন পণ্য কিস্তিতে বিক্রি হয়। কিন্তু কিস্তি সময়মত দিতে না পারলে একটা নির্ধারিত হারে অতিরিক্ত দেওয়ার শর্ত করা হয়। এটা রিবাদ দাইনের অন্তর্ভুক্ত।
রিবা নাসিয়্যাহর প্রচলিত রূপ ও ক্ষেত্রসমূহ
রিবা নাসিয়্যাহকে রিবাল কুরআন, রিবাল করয ও রিবাদ দাইনও বলা হয়। প্রচলিত ব্যাংকিং সুদ এর জ্বলন্ত উদাহরণ, এছাড়াও আরো ক্ষেত্র আছে, নিম্নে একেকটি করে সবিস্তারে আলোকপাত করা হল:
১. সুদী ব্যাংক : ব্যাংকের সংজ্ঞাতেই আছে যে, ব্যাংক হল, অল্প সুদে ঋণ নেয়, আর বেশী সুদে ঋণ দেয়। সুদী ব্যাংকের কারেন্ট একাউন্ট ছাড়া সকল প্রকার একাউন্ট সুদী একাউন্ট। তাই সুদী ব্যাংকের সেভিং একাউন্ট এবং সকল ধরনের ফিক্সড ডিপোজিট সুদী। চাই তা উচঝ হোক বা ঋউজ হোক অথবা সাধারণ ফিক্সড ডিপোজিট হোক; সবই রিবা নাসিয়্যাহ একাউন্ট। অনেকে মনে করেন সরকারী হলে সেটা আর সুদী হয় না। অথচ এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।
এছাড়া কারেন্ট একাউন্টেও ইদানিং সুদের মিশ্রণ দেওয়া হয়। এ ধরনের কারেন্ট একাউন্টকে SND কারেন্ট একাউন্ট বলে। এসকল একাউন্ট খোলাই সুদী চুক্তির গুনাহ। পরে সুদ গ্রহণ করলে তার গুনাহ ভিন্ন হবে।
সুদী ব্যাংকের সেভিং একাউন্ট খোলাটাই সুদী চুক্তির গুনাহ। তাই সুদ গ্রহণ না করলেও যে কোনো ধরনের সেভিং একাউন্ট করলে সুদী চুক্তির গুনাহ হবে।
২. ডি. পি. এস/ DPS ডিপোজিট পেনশন স্কীম : এটিও সম্পূর্ণ সুদী একাউন্ট।
৩. সুদী ব্যাংকের যে কোনো লোনই সুদী লোন। যেমন কার লোন, হোম লোন, হাউজ লোন,ইনভেস্টমেন্ট লোন, সিসি লোন, কৃষি লোন ইত্যাদি।
৪. প্রাইজবন্ড : সরকার প্রাইজবন্ড ছাড়ে। যা যে কোনো ব্যাংক থেকে ভাঙ্গানো যায়। একটা নির্ধারিত মেয়াদের পর লটারীর মাধ্যমে ড্র করা হয়। এরপর বিজয়ীদেরকে পুরস্কার দেওয়া হয়। এই পুরস্কারটাই রিবা নাসিয়্যাহ বা সুদ। প্রাইজবন্ড ক্রয়ের মাধ্যমে ব্যাংককে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। আর ব্যাংক প্রাইজ বা পুরস্কার দেয়ার নামে ক্রেতাকে সুদ দিচ্ছে।
৫. ক্রেডিট কার্ড : ক্রেডিট কার্ড মূলত এক প্রকার সুদভিত্তিক লোন কার্ড। কেননা এই কার্ডের চুক্তিপত্রেই লেখা রয়েছে যে, মিনিমাম ডিউ টাইমে/ডেটে বাকী পরিশোধ না করলে প্রতিদিন নির্দিষ্ট হারে সুদ দিতে হবে। যার ফলে অধিকাংশ ক্রেডিট কার্ড হোল্ডারই সুদের আওতায় পড়ে যান। এই সুদ রিবাদ দাইনের অন্তর্ভুক্ত, যা রিবা নাসিয়্যাহ। তাই সুদ থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই যথাসময়ে বাকী পরিশোধ করে দিতে হবে। তাহলে আর সুদী কারবার হবে না।
৬. ক্রেডিট কার্ড দ্বারা এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন করলে যে চার্জ নেওয়া হয় তা সুস্পষ্ট সুদ। কেননা কার্ডের ফি তো নিচ্ছেই। এখন অতিরিক্তটা ঋণের বিনিময়ে হচ্ছে।
৭. বন্ড : সরকারী এবং বেসরকারী বন্ড। এগুলো সম্পূর্ণ রিবা নাসিয়্যাহ। সরকারী হওয়ার কারণে কিংবা নির্দিষ্ট কোনো বাণিজ্যিক প্রকল্প, কোনো কোম্পানী বা রাস্তা-ঘাট কিংবা ব্রীজ নির্মাণের জন্য ঋণ নেওয়া হচ্ছে এমন কথা উল্লেখ করার কারণে কেউ কেউ মনে করতে পারেন যে, এটা সুদী হবে না, কিন্তু এ ধারণা ভুল। স্টক এক্সচেঞ্জ বা বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্য যে কোনো ব্যাংকে যে বন্ড ক্রয়-বিক্রয় হয় তাতে সুনির্দিষ্ট সুদের ঘোষণা দেওয়া থাকে। এ সকল বন্ডও সুদী বন্ড।
৮. স্টুডেন্ট লোন : বিভিন্ন ব্যাংক কর্তৃক স্টুডেন্ট লোন দিয়ে যা অতিরিক্ত নেওয়া হয় সেটাও সুদ। এটি ইন্টারেস্ট বা সার্ভিস চার্জ যে নামেই নেওয়া হোক না কেন।
৯. লটারী : রেডক্রিসেন্ট বা এজাতীয় সরকার অনুমোদিত কিছু প্রতিষ্ঠান দশটাকা বিশটাকা মূল্যের লটারী টিকেট ছাড়ে। এক লক্ষ, দুই লক্ষ টাকা, গাড়ি, মোটর সাইকেল ইত্যাদি পুরস্কারের প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা নেয়া হয়।
এক্ষেত্রে পুরস্কার পায় কেবল দু’তিনজন। আর বাকিরা কিছুই পায় না। তাদের মূল টাকাই গচ্চা যায়। এধরনের লেনদেনকেই শরীয়তের ভাষায় ‘কিমার’ বলে। যা সম্পূর্ণ হারাম। আর এক্ষেত্রে সবাই তো অতিরিক্ত পাওয়ার উদ্দেশ্যেই দশ-বিশ টাকায় লটারি ক্রয় করে থাকে। যদিও কেউ পুরস্কার পায় আর কেউ পায়া না। তাই এতে সুদও বিদ্যমান।
১০. পোস্ট অফিসের সঞ্চয়পত্র : পোস্ট অফিসের মাধ্যমে সরকারীভাবে বিভিন্ন নামের সঞ্চয়পত্র স্কীম রয়েছে। এগুলোর প্রত্যেকটি সম্পূর্ণ সুদী, রিবা নাসিয়্যাহ-এর অন্তর্ভুক্ত।
১১. জমি বন্ধক : বাংলাদেশের প্রায় সকল এলাকায় বহুল প্রচলিত লেনদেন হল, জমি বন্ধক রীতি। জমির মালিক একটা মোটা অংকের টাকা নেয়। বিনিময়ে বন্ধক গ্রহীতা জমিটি ভোগ করে এবং মেয়াদান্তে মালিক পুরো টাকা ফেরত দিয়ে জমিটি বুঝে নেয়। এক্ষেত্রে ঋণ গ্রহিতার জন্য বন্ধকি জমি ভোগ করা রিবা নাসিয়্যাহর অন্তর্ভুক্ত, যা হারাম। কোনো কোনো এলাকায় এটাকে জমি কট দেওয়াও বলে। আবার কেউ জমি খায়খালাসি দেওয়া বলে। নাম যাই হোক লেনদেন এবং হুকুম একই।
১২. বাড়ি বন্ধক : জমি বন্ধকের মত ঢাকা শহরে বাড়ি বন্ধকের প্রথা চালু হয়েছে। তা হল,বাড়িওয়ালা নিজ প্রয়োজনে ৫ বা ১০ লক্ষ টাকা ঋণ নেয়। বিনিময়ে পাঁচ বছর বা দশ বছর ঋণদাতাকে তার ফ্ল্যাটে বিনা ভাড়ায় থাকার সুযোগ দেয়। পরবর্তীতে যখন ঋণ পরিশোধ করে দিবে তখন এই চুক্তি সমাপ্ত হবে। এই লেনদেনও সম্পূর্ণ সুদী ও রিবা নাসিয়্যাহর অন্তর্ভুক্ত। যা সুস্পষ্ট হারাম। কেননা ঋণের কারণেই এ সুবিধা পাচ্ছে।
১৩. বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে সিকিউরিটি বেশি দিলে ভাড়া কমিয়ে দেওয়া : বাড়ি বন্ধকের উপরোক্ত পদ্ধতি নাজায়েয হওয়ার কারণে অনেকে হীলা হিসাবে এ পদ্ধতি চালু করেছে। যেমন, কোনো বাড়িওয়ালার টাকার প্রয়োজন । যেখানে সাধারণ হিসেবে অগ্রিম নেয়ার কথা ২০ হাজার টাকা,কিন্তু এর স্থলে বাড়িওয়ালা পাঁচ লক্ষ টাকা সিকিউরিটি মানি দাবি করে এবং এর বিনিময়ে ভাড়া কমিয়ে দেয় (যেমন, সাধারণ হিসেবে ভাড়া যদি হয় ১০ হাজার টাকা এক্ষেত্রে ভাড়া হবে ১/২ হাজার টাকা)- এটাও হারাম। কেননা ৫ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়ার কারণেই মূলত তার থেকে ভাড়া কম নিচ্ছে। এই ঋণকে ছুতা হিসেবে সিকিউরিটি মানি বলা হয়েছে। মূলত সিকিউরিটি মানি তো সেটাই যা সচরাচর সবাই দিয়ে থাকে। যা দিলে ভাড়া কমানো হয় না। ভাড়া স্বাভাবিকই থাকে। নাম যাই দেওয়া হোক ফেরতযোগ্য ৫ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়ার কারণেই ১০ হাজার টাকার ভাড়া ১/২ হাজারে নেমে এসেছে।
ফাযালা বিন উবাইদ রা. বলেন, যেই ঋণ কোনো মুনাফা নিয়ে আসে তা রিবার প্রকারসমূহের একটি। -সুনানে বাইহাকী ৫/৩৫০
ইমাম মালেক রাহ. বর্ণনা করেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, যে ব্যক্তি কোনো বস্তু ঋণ দিবে সে যেন অতিরিক্ত কোনো কিছু শর্ত না করে। যদিও এক মুঠো ঘাস হোক না কেন। -মুআত্তা মালেক, হাদীস ২৫১৩
১৪. ঐচ্ছিক প্রভিডেন্ট ফান্ড : সরকারী বা বেসরকারী ঐচ্ছিক প্রভিডেন্ট ফান্ড সুদী ফান্ড। ঐচ্ছিক হওয়ার কারণে এতে টাকা জমা দেওয়ার অর্থ ঋণ দিয়ে পরবর্তীতে অতিরিক্ত নেওয়া। আর এটাই রিবা নাসিয়্যাহ। আর পুরো সরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রভিডেন্ট ফান্ডের বাধ্যতামূলক যে অংশ এই ফান্ডে কেটে রাখা হয় এবং পরবর্তীতে এর সাথে অতিরিক্ত যে অংশ দেওয়া হয় তা সুদ নয়। তা নেওয়া জায়েয। তবে সরকারী প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক কেটে রাখার পাশাপাশি ঐচ্ছিকও কিছু কাটানোর সুযোগ থাকে। এক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকের অতিরিক্ত অংশ কাটানো সুদী চুক্তির অন্তর্ভুক্ত এবং এই অতিরিক্ত কর্তিত অংশের উপর উদ্বৃত্ত যা দিবে তা সুদ। তা নেওয়া বৈধ হবে না। তাই বাধ্যতামূলকের অতিরিক্ত উক্ত ফান্ডে জমা রাখাও জায়েয হবে না। কেননা ঐচ্ছিক অংশ রাখার অর্থই হল সুদী চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া। এছাড়া স্বায়ত্ত¡শাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রভিডেন্ট ফান্ডের সকল টাকা সুদী ব্যাংক বা বীমাতে রেখে বৃদ্ধি করা হয়। পরবর্তীতে সেটিই তাদেরকে দেওয়া হয়। তাই এসকল প্রতিষ্ঠানের ঐচ্ছিক ও বাধ্যতামূলক প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমার অতিরিক্ত নেওয়া জায়েজ হবে না। কেননা সেগুলোও সুদের অন্তর্ভুক্ত।
১৫. লাভের হার নির্ধারণ না করে নির্দিষ্ট পরিমাণ মুনাফা প্রদানের শর্তে বিনিয়োগ করা: ব্যাংক ছাড়াও ব্যক্তি পর্যায়ে ব্যবসায়ীদেরকে ব্যবসার জন্য টাকা প্রদান করে লাভ হিসেবে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেওয়ার শর্ত করা হয় এটাও সম্পূর্ণ সুদী লেনদেন ও সুদী বিনিয়োগ। ব্যবসার জন্য দেওয়া আর লাভ দেওয়ার কথা হলেই অনেকে মনে করেন তা ইসলামী হয়ে যায়; সুদী থাকে না। অথচ ব্যবসার জন্য টাকা দিয়ে নির্ধারিত অংকের কিছু দেওয়ার চুক্তি বা শর্ত করাই সুদ ও রিবা নাসিয়্যাহ। এক্ষেত্রে হালালভাবে বিনিয়োগ করতে চাইলে ব্যবসার প্রকৃত লাভের শতকরা হার নির্ধারণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে লাভ হলে নির্ধারিত অংশ অনুযায়ী ভাগ পাবে। আর লাভ না হলে পাবে না।
কিন্তু পূর্বোক্ত লেনদেনে লাভ হিসেবে নির্দিষ্ট কিছু দেওয়ার কথা হলে চুক্তি অনুযায়ী সে তা দিতে বাধ্য থাকে। লাভ হোক বা না হোক সর্বাবস্থায় তাকে তা দিতেই হয়। এটাই সুদ। তদ্রƒপ কোনো কিছু নির্দিষ্ট না করে এমনিতেই ব্যবসার জন্য কাউকে টাকা দেওয়া। এক্ষেত্রে কথা হয় যে, লাভ হিসেবে প্রতিমাসে কিছু কিছু দিবে। এটাও সুদী চুক্তি এবং রিবা নাসিয়্যাহর অন্তর্ভুক্ত।
১৬. স্বর্ণ বন্ধক জুয়েলারী দোকানে স্বর্ণ বন্ধক রেখে সুদের উপর লোন প্রদান করা হয়। তেমনিভাবে ব্রাক,আশা, গ্রামের মহাজন সুদের ভিত্তিতে লোকদেরকে লোন দিয়ে থাকে। এগুলো সবই রিবা নাসিয়্যাহ।
১৭. ফরম বিক্রির ছুতায় রিবা নাসিয়্যাহ : কোনো কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা সোসাইটি মানুষকে সুদবিহীন লোন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু তাদের নিয়ম হল, ঋণের পরিমাণ অনুযায়ী ফরম কিনতে বাধ্য করা হয় আর ঋণের হার অনুযায়ী ফরমের দাম কম-বেশি হয়। যেমন, দশ হাজার টাকা ঋণের জন্য পাঁচশত টাকার ফরম ক্রয় করতে হয়। আর বিশ হাজার টাকার জন্য এক হাজার টাকার ফরম ক্রয় করতে হয় । আর নির্ধারিত মেয়াদের ভেতর তা পরিশোধ না করলে পরে আবারও আরেকটি ফরম ক্রয় করে পূরণ করতে হয়। বাহ্যিকভাবে এটি ফরম ক্রয়-বিক্রয়। কিন্তু এর মাধ্যমেই সুদ অগ্রীম আদায় করে নেওয়া হচ্ছে। এজন্যই ঋণের পরিমাণ বাড়লে ফরমের মূল্যও বাড়তে থাকে। এটা হচ্ছে রিবা নাসিয়্যাহ গ্রহণের হীলা-বাহানা ও ছুতা অবলম্বন।
১৮. কিস্তিতে বিক্রি : বাজারে ফ্রিজ, কম্পিউটার ইত্যাদি ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী কিস্তিতে বিক্রি হয়। এই বিক্রির চুক্তিপত্রের মধ্যেই উল্লেখ থাকে সময়মত পরিশোধ করতে না পারলে একটা নির্দিষ্ট হারে সুদ বাড়বে। এটা রিবাদ দাইন ও রিবা নাসিয়্যাহর অন্তর্ভুক্ত। তাই এ ধরনের শর্ত সম্পূর্ণ নাজায়েয। আর বাধ্য হয়ে কেউ এধরনের শর্তে ক্রয় করলে নির্ধারিত মেয়াদের ভেতরই কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। নতুবা সুদ দেওয়ার গুনাহ হবে। অতএব এ ধরনের ক্ষেত্রে সুদ থেকে বাঁচতে চাইলে যথাসময়ে মূল্য পরিশোধ করে দিতে হবে।
১৯. ইনস্টাবাই : Instabuy বিভিন্ন কোম্পানী ক্রেডিট কার্ড হোল্ডারকে বিনা সুদে এবং অতিরিক্ত মূল্য ছাড়া ২/৩ বা ১২ কিস্তিতে মূল্য পরিশোধের সুবিধা দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রেও যথাসময়ে মূল্য পরিশোধ না করলে অতিরিক্ত সুদ দিতে হয়। এতে কারবারটি সুদী কারবারে পরিণত হয়ে যায়। তাই ইনস্টাবাই-এর সুবিধা গ্রহণ করলেও যথাসময়ে কিস্তি পরিশোধের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যথায় কারবার সুদী হয়ে যাবে। অর্থাৎ রিবাদ দাইনের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
আল্লাহ আমাদেরকে সকল প্রকার সুদ থেকে হেফাযত করুন, আমীন ।
বিষয়: বিবিধ
৩৮৪৬ বার পঠিত, ২৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ব্যবসা যে করব সেরকম ফিল্ড কি আছে ? ঠগবাজের দুনিয়াতে ব্যবসা করে সর্বস্ব বিসর্জন দিতে হবে । ব্যবসা করার যোগ্যতা বা লাক সবার কি ফেভার করে?
বেতন যদি ব্যাংকের মাধ্যমে হয় সেটাও তো সূদি ব্যাংক !
ইসলামী ব্যাংকের কথা বলবেন ? আপনি যে তাদের কাছে টাকা গচ্ছিত রাখবেন সেই টাকা তারা যাদের কাছে দেবে লোন হিসেবে সেটার আদায় সিস্টেম কি সুদের চেয়ে ভিন্নতর ?
এক্ষেত্রে এতটুকুই বলতে পারি যতটুকু ছবি তোলা বা তদ্রুপ মাসআলার সমাধানে বিজ্ঞ উলামায়ে কিরামগণ বলেছেন, নিতান্তই ভিন্ন উপায় না থাকলে সুদী ব্যাঙ্কে টাকা গচ্ছিত রাখা যেতে পারে, তবে শর্ত থাকে যে সুদ বা লাভ বা ইন্টারেস্ট বাবদ যা যোগ হবে তা হিসাব করে পাই টু পাই বের করে সাওয়াবের আশা না করে দান করে দিতে হবে। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল, আশরাফুল হিদায়া) এতটুকু তো করতেই পারি, তাই না?
আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টা, শারীআ সম্মত একটি নির্ভরযোগ্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা আমরা অনেকেই অনুভব করি;কিন্তু কেউই উদ্যোগী হই না।
(আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন , তিনিই সর্বজ্ঞানী)
জ্বী, এখানে অর্থের বিনিময়ে অর্থ হচ্ছে না বৈকি, কিন্তু নির্ধারিত সেবার বিনিময় হার কমিয়ে নেয়ার একটা কৌশল করা হচ্ছে। উদাহরণ দিয়ে বলতে গেলে, আপনার কিছু নগদ টাকার প্রয়োজন, যা মেটাতে আপনি আপনার বাড়ির্ ৪র্থ তলা বন্ধক দিতে ইচ্ছুক। আমি আপনাকে এই শর্ত দিলাম যে, আপনাকে আমি নগদ ৫ লক্ষ টাকা সিকিউরিটি মানি দিবো (আদতে ঋণ), যার পরিবর্তে আপনি আপনার উক্ত ফ্ল্যাটটির ভাড়া ৫,০০০ টাকা রাখবেন বা রাখবেনই না (যদিও উক্ত ফ্ল্যাটের ভাড়া ১০,০০০ বা তদুর্ধ্ব) এবং এটি ততদিন পর্যন্ত চলবে যতদিন না আপনি আমার টাকা ফেরত দিতে পারবেন।
এখানে (১) এই সুবিধাটুকু আপনার দুর্বলতার সুযোগে আমি গ্রহণ করলাম, (২) প্রতি মাসে আপনার নিকট হতে আমি ৫,০০০ বা ১০,০০০ টাকার আর্থিক সুবিধা ঋণের কারণে আমি গ্রহণ করলাম। সুতরাং সুদ তো হলোই, জুলুম ও হলো।
আশা করি বিষয়টি বুঝাতে পেরেছি। বাকী আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী।
জ্বী, এখানে অর্থের বিনিময়ে অর্থ হচ্ছে না বৈকি, কিন্তু নির্ধারিত সেবার বিনিময় হার কমিয়ে নেয়ার একটা কৌশল করা হচ্ছে। উদাহরণ দিয়ে বলতে গেলে, আপনার কিছু নগদ টাকার প্রয়োজন, যা মেটাতে আপনি আপনার বাড়ির্ ৪র্থ তলা বন্ধক দিতে ইচ্ছুক। আমি আপনাকে এই শর্ত দিলাম যে, আপনাকে আমি নগদ ৫ লক্ষ টাকা সিকিউরিটি মানি দিবো (আদতে ঋণ), যার পরিবর্তে আপনি আপনার উক্ত ফ্ল্যাটটির ভাড়া ৫,০০০ টাকা রাখবেন বা রাখবেনই না (যদিও উক্ত ফ্ল্যাটের ভাড়া ১০,০০০ বা তদুর্ধ্ব) এবং এটি ততদিন পর্যন্ত চলবে যতদিন না আপনি আমার টাকা ফেরত দিতে পারবেন।
এখানে (১) এই সুবিধাটুকু আপনার দুর্বলতার সুযোগে আমি গ্রহণ করলাম, (২) প্রতি মাসে আপনার নিকট হতে আমি ৫,০০০ বা ১০,০০০ টাকার আর্থিক সুবিধা ঋণের কারণে আমি গ্রহণ করলাম। সুতরাং সুদ তো হলোই, জুলুম ও হলো।
আশা করি বিষয়টি বুঝাতে পেরেছি। বাকী আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী।
আমার দেওয়া ৫,০০,০০০ টাকা আমি ঠিকই বুঝে পাচ্ছি, আবার তার বিপরীতে মাসিক ভাড়ায় নির্দিষ্ট অঙ্কের মওকুফ পাচ্ছি, তার উপর অধিকাংশ ক্ষেত্রে চুক্তির নির্দিষ্ট মেয়াদ নেই। এগুলো কি রিবার শর্তে পড়ে না?
অচিরেই মাল্টিপারপাস সোসাইটি বা সমবায় সমিতির শরীআ সম্মত বিকল্প নিয়ে একটি লেখা দিবো। পড়ার আমন্ত্রন রইলো।
ধন্যবাদ ভাইয়া খুব খুব
পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই। জাযাকাল্লাহু খইর।
অবশ্যই রিবা হারাম - এবং এর সংজ্ঞা কোরানেই দেওয়া আছে। কোরানের রিবার সংজ্ঞার সাথে ঐ সময়ের (নবী সাঃ এর সময়) পারিপার্শিকতার (context) সাথে মিলিয়ে নিলেই ব্যাপারটা বুঝা এত কঠিন নয়।
আপনার জানার কৌতুহলকে উৎসাহিত করি, কিন্তু অহেতুক ব্যাখ্যা বিশ্লেষন করতে যেয়ে মূল শিক্ষা বা উদ্দেশ্য থেকে সরে না যাওয়া হয়।
রাসূল (সাঃ)-এর সময় শুধুমাত্র আঙ্গুর ও খেজুরের রস থেকে উৎপাদিত মদ প্রস্তুত হতো, যা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। তাহলে বর্তমানে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উৎপাদিত অপ্রাকৃতিক এ্যালকোহল বা অন্যান্য মাদক কি জায়েজ হবে?
তালগোল পাকানোর কিছুই নেই।
যা খেলে বা পান করলে মাদকতা আসে তা'ই হারাম।
অনেকে নেশা হারাম বলে সিগারেটকেও হারাম বলা শুরু করেন। যেটা সত্য নয়। সিগারেট ক্ষতিকারক সেই হিসাবে ইসলামে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, কিন্তু ইসলামে যেটা হারাম (prohobited) বুঝানো হয় তা সিগারেটের বেলায় প্রযোজ্য নয়।
আরবি ভাষা আর ইসলামের context এ আরবি ভিন্ন। যা পরিভাষা বলা হয়। lexicon ও বলা যতে পারে।
অনেক আরবি অঞ্চলে হারাম মানে 'মানা, বা না' বলা হয়।
ইসলামের বিধান যে 'হারাম' মানে সম্পূর্ন রূপে নিষিদ্ধ।
এই দুইটা বিষয়কে আমরা বাংলাদেশীরা গুলিয়ে ফেলি।
রাসূল (সাঃ)-এর সময় শুধুমাত্র আঙ্গুর ও খেজুরের রস থেকে উৎপাদিত মদ প্রস্তুত হতো, যা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। তাহলে বর্তমানে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উৎপাদিত অপ্রাকৃতিক এ্যালকোহল বা অন্যান্য মাদক কি জায়েজ হবে?
মন্তব্য করতে লগইন করুন