ঈদ-ভাবনা আমরা মুসলিম : কত মহান আমরা, কত দীন
লিখেছেন লিখেছেন চিরবিদ্রোহী ২১ জুলাই, ২০১৫, ০১:৫৭:২৭ রাত
টুডে ব্লগের মডারেশন কর্তৃপক্ষ, লেখক ও পাঠকবৃন্দদের জানাই ঈদের শুভেচ্ছা (বাসি) ঈদ মুবারক। _
(দুঃখিত ভাই, বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে টাটকা ঈদ মুবারক জানাতে পারলাম না। অনেকদিন পর একটু অবসর পাওয়ায় টুডের সবার সাথে ঈদ উপলব্ধি ভাগাভাগি করে নিতে চাই)
বরাবরের মতো এবারও আমরা উদযাপন করেছি ঈদুল ফিতর। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেছি। ফজরের নামায পড়েছি। গোসল করেছি। মিষ্টিমুখ করেছি এবং আতর-গোলাবে সুরভিত হয়ে ঈদগাহে (অথবা মসজিদে) গমন করেছি। উচ্চ-নীচের ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে ঈদের নামায পড়েছি, একসাথে বসে খুৎবা শুনেছি এবং পরস্পর কুশল ও সৌজন্য বিনিময় করেছি। এদিন হয়তো কিছু পরিমাণে হলেও জেগেছিল আমাদের আত্মপরিচয়ের বোধ এবং ভ্রাতৃত্বের চেতনা।
আমার শাশ্বত পরিচয় তো এই-‘বল, আমার নামায, আমার কুরবানী এবং আমার জীবন ও আমার মরণ আল্লাহরই জন্য, যিনি সমগ্র বিশ্বের প্রতিপালক। তাঁর কোনো শরীক নেই। এ আদেশই আমাকে করা হয়েছে এবং আমি সর্বপ্রথম আজ্ঞাবাহী।’-সূরা আনআম : ১৬২-১৬৩
আমরা তো অনুসারী এক মহান দ্বীনের-‘নিশ্চই দ্বীন আল্লাহর নিকট এই ইসলাম ...।’-সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৯
‘যে কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন অন্বেষণ করবে তার থেকে তা কখনো কবুল করা হবে না। আর আখেরাতে সে হবে
ক্ষতিগ্রস্ত।’-সূরা আলে ইমরান (৩) : ৮৫
‘তার চেয়ে উত্তম দ্বীন কার হতে পারে, যে সৎকর্মপরায়ণ হয়ে আল্লাহর আদেশের সামনে আত্মসমর্পণ করেছে এবং একনিষ্ঠ ইবরাহীমের দ্বীন অনুসরণ করেছে। এবং আল্লাহ ইবরাহীমকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন।-সূরা নিসা (৪) : ১২৫
‘ঐ ব্যক্তির চেয়ে কার কথা উত্তম, যে আল্লাহর দিকে আহবান করেছে, সৎকর্ম করেছে এবং বলেছে, আমি মুসলিম ...।’-সূরা হা-মীম আসসাজদা (৪১) : ৩৩
আমরা তো ধারক এক সুপ্রাচীন ও চিরনবীন ঐতিহ্যের-‘সমস্ত মানুষ একই ধর্মে-ছিল। তারপর (তাদের মাঝে বিভেদ হল এবং সত্য-মিথ্যা প্রকাশের জন্য) আল্লাহ নবীগণকে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করলেন এবং তাদের সাথে সত্য কিতাব নাযিল করলেন, মানুষের মাঝে সেই বিষয়ে মীমাংসা করার জন্য যা নিয়ে তারা মতবিরোধ সৃষ্টি করেছিল!’-সূরা বাকারা (২) : ২১৩
‘আর এই উপদেশই দিয়ে গেছেন ইবরাহীম তার সন্তানদেরকে এবং ইয়াকুবও যে, হে আমার সন্তানগণ! নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের জন্য দ্বীন নির্বাচন করেছেন। কাজেই তোমরা যেন ঐ অবস্থাতেই মৃত্যুবরণ কর যখন তোমরা মুসলিম।’-সূরা বাকারা (২) : ১৩২
সুতরাং এ তো বলাই-বাহুল্য যে, এটিই একমাত্র সত্যের পথ।
‘আমাদের কতক আত্মসমর্পণকারী আর কতক সীমালংঘনকারী; যারা আত্মসমর্পণ করে তারা সুচিন্তিতভাবে সত্যপথ গ্রহণ করেছে। পক্ষান্তরে সীমালংঘনকারীরা তো জাহান্নামের ইন্দ্বন।’-সূরা জিন : ১৪-১৫
এই মহান সত্য হৃদয়ে ধারণ করেই তো আমরা এই প"থিবী থেকে বিদায় নিতে চাই।
‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করে চল, যেমন তাঁকে ভয় করা উচিত। আর মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।-সূরা আলে ইমরান (২) : ১০২
আমাদের এই সত্য-সম্পদই তো পৃথিবীর অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠীকে ঈর্ষাকাতর করে তুলেছে। মুসলিম হওয়ার ‘আপরাধেই’ আজ আমাদের রক্ত ঝরছে, অশ্রু ঝরছে। এ আমাদের দীনতা নয়। আমাদের দীনতা এই যে, আমরা আমাদের যন্ত্রণাকাতর ভাই-বোনের পাশে দাঁড়াতে পারিনি। সবযুগেই সত্যপন্থীর রক্ত ঝরেছে। মিথ্যাপন্থী দাম্ভিকেরা নির্যাতন-নিপীড়নে তাদের ধ্বংস করতে চেয়েছে এবং তাদেরকে সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতিকারী আখ্যা দিয়ে নিজেদের দুষ্কৃতি ঢাকতে চেয়েছে।’
‘ফিরাউন বলল, আমার অনুমতির আগেই তোমরা তার প্রতি ঈমান আনলে। নিশ্চয় এটা এক চক্রান্ত, যা তোমরা সবাই মিলে এ নগরে করেছ। যাতে এর অধিবাসীদের এখান থেকে উচ্ছেদ করতে পার। তবে তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে।’
‘আমি অবশ্যই তোমাদের হাত ও বিপরীত দিকের পা কেটে ফেলব, এরপর তোমাদের সকলকে শূলে চড়াব।’
‘তারা বলল, আমাদের তো আপন প্রতিপালকের নিকট ফিরে যেতেই হবে। আমাদের প্রতি তোমার শত্রুতা শুধু একারণেই যে, আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলীতে ঈমান এনেছি; যখন আমাদের কাছে পৌঁছেছে। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের উপর ধৈর্যের ঢাকনা খুলে দাও এবং আমাদের মৃত্যু ঘটাও মুসলিমরূপে।’
‘ফিরআওনী সম্প্রদায়ের প্রধানগণ বলল, তুমি মূসা ও তার সম্প্রদায়কে দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করার এবং তোমাকে ও তোমার দেবতাগণকে বর্জিত করে ফেলার সুযোগ দিচ্ছ? সে বলল, এবার আমি তাদের ছেলেদেরকে হত্যা করব এবং নারীদেরকে জীবিত রাখব। আমার তো তাদের উপর প্রবল!’-সূরা আ’রাফ : ১২৩-১২৭
রক্ত ও আগুনের মাঝে ফিরআউনী শক্তির অট্টহাসি আমরা শুনেছি আসামে ও মিয়ানমারে। শুনে চলেছি ইরাকে ও ফিলিস্তিনে। এরই মাঝে আমরা আদায় করেছি ঈদের নামায।
আমরা তো দিবস-রজনী কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করে চলেছি। আমরা কি উপলব্ধি করছি আল্লাহর বাণীর যথার্থতা-‘অনুমতি দেওয়া হল সেসব লোককে-যাদেরকে কাফিররা আক্রান্ত করছে। এজন্য যে, তারা অত্যাচারিত হয়েছে; এবং আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করতে সম্পূর্ণ সক্ষম। যাদেরকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে অন্যায়ভাবে বের করে দেওয়া হয়েছে শুধু একারণে যে, তারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। এবং যদি প্রতিহত না করতেন আল্লাহ মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা, তাহলে ধ্বংস করে দেওয়া হত খৃস্টান ও সংসার বিরাগীদের উপাসনালয়, ইয়াহূদীদের ইবাদতের স্থান এবং মসজিদসমূহ, যেগুলোতে আল্লাহর নাম প্রচুর স্মরণ করা হয়। এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে সাহায্য করবেন, যে তাঁকে সাহায্য করে; নিঃসন্দেহে আল্লাহ শক্তিমান, মহাপরাক্রান্ত।’-সূরা হাজ্জ : ৩৯-৪০
আসাম ও মিয়ানমারের সাম্প্রদায়িক দস্যুদের দাঁত ও নখের রক্ত, আমাদের ভাই-বোনের অগ্নিদগ্ধ শরীর দর্শনের পরও আমরা আমাদের মুসলিম ভাই-বোনের পাশে দাঁড়াতে পারিনি। এ ক্ষুদ্রতা নিয়েই আমরা উদযাপন করেছি ঈদুল ফিতর ।
আল্লাহ কি ক্ষমা করবেন আমাদের এই দীনতা ও কাপুরুষতা? ইয়া আল্লাহ তুমি আমাদের ক্ষমা কর এবং আমাদের জড়দেহে প্রাণের সঞ্চায় কর। তুমিই তো ‘মৃত’ থেকে ‘জীবিত’ এবং ‘জীবিত’ থেকে ‘মৃত’ বের করে থাক।
বিষয়: বিবিধ
১৮০৩ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ঈদ মোবারক।
ঈদের শুভেচ্ছার সাথে অনেক কিছু মনে করিয়ে দিলেন! যা আমরা বারবার ভুলে যাই!!!! খুবই ভালো লাগলো লেখাটি ধন্যবাদ।
পড়ার ও মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধণ্যবাদ। জাযাকাল্লাহ
তাক্বব্বাল্লাহু মিন্নী ওয়া মিনকুম।
ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ (রাহি.) তাঁর জগৎবিখ্যাত কিতাব ফাতাওয়ায়ে কুবরা-এ এক প্রশ্নের উত্তরে লিখেছেন, "যখন কোন মুসলিম ভুখন্ড শত্রুপক্ষ কর্তৃক আক্রান্ত হয় তখন নিজ ভুখন্ডের স্বাধিনতা তথা দ্বীনের মাকাম বারক্বারার রাখার জন্য প্রত্যেক সামর্থবান পুরুষের জন্য জীহাদে অংশগ্রহন করা বাধ্যতামুলক হয়ে যায়। যদি তারা কোন কারণে অক্ষম বা অপ্রতুল হয় তখন তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগীতা করা প্বার্শবর্তী মুসলিম দেশসমূহের উপর বাধ্যতামূলক হয়ে যায়; এভাবে একসময় পুরো মুসলিম উম্মাহর উপর বাধ্যতামূলক হয়ে যায়।"
একবার ভেবে দেখি আমাদের বর্তমান অবস্থা কি.............
তাক্বব্বাল্লাহু মিন্নী ওয়া মিনকুম।
অনেক ধন্যবাদ, ঈদ মোবারক
ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ (রাহি.) তাঁর জগৎবিখ্যাত কিতাব ফাতাওয়ায়ে কুবরা-এ এক প্রশ্নের উত্তরে লিখেছেন, "যখন কোন মুসলিম ভুখন্ড শত্রুপক্ষ কর্তৃক আক্রান্ত হয় তখন নিজ ভুখন্ডের স্বাধিনতা তথা দ্বীনের মাকাম বারক্বারার রাখার জন্য প্রত্যেক সামর্থবান পুরুষের জন্য জীহাদে অংশগ্রহন করা বাধ্যতামুলক হয়ে যায়। যদি তারা কোন কারণে অক্ষম বা অপ্রতুল হয় তখন তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগীতা করা প্বার্শবর্তী মুসলিম দেশসমূহের উপর বাধ্যতামূলক হয়ে যায়; এভাবে একসময় পুরো মুসলিম উম্মাহর উপর বাধ্যতামূলক হয়ে যায়।"
একবার ভেবে দেখি আমাদের বর্তমান অবস্থা কি.............
তাক্বব্বাল্লাহু মিন্নী ওয়া মিনকুম।
ঈদ তো হবে সেইজন্য একতা তৈরির দিন।
আল্লাহ তায়ালা সবাইকে বুঝার তাওফীক দান করুন।
ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ (রাহি.) তাঁর জগৎবিখ্যাত কিতাব ফাতাওয়ায়ে কুবরা-এ এক প্রশ্নের উত্তরে লিখেছেন, "যখন কোন মুসলিম ভুখন্ড শত্রুপক্ষ কর্তৃক আক্রান্ত হয় তখন নিজ ভুখন্ডের স্বাধিনতা তথা দ্বীনের মাকাম বারক্বারার রাখার জন্য প্রত্যেক সামর্থবান পুরুষের জন্য জীহাদে অংশগ্রহন করা বাধ্যতামুলক হয়ে যায়। যদি তারা কোন কারণে অক্ষম বা অপ্রতুল হয় তখন তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগীতা করা প্বার্শবর্তী মুসলিম দেশসমূহের উপর বাধ্যতামূলক হয়ে যায়; এভাবে একসময় পুরো মুসলিম উম্মাহর উপর বাধ্যতামূলক হয়ে যায়।"
একবার ভেবে দেখি আমাদের বর্তমান অবস্থা কি.............
মন্তব্য করতে লগইন করুন