মারিয়াম ফ্রান্সিস কেরাহ "ইসলামের ছিদ্রান্বেশন কারী হতে দাঈ ইলাল্লাহ"
লিখেছেন লিখেছেন চিরবিদ্রোহী ০১ জুলাই, ২০১৫, ০৩:৪৮:০৭ দুপুর
ফেসবুকে পড়ুন এখানে
মারিয়াম ফ্রান্সিস কেরাহ। ১২ বছর বয়সেই ক্যাট উইন্সলেটের ছোট বোন হিসেবে Sense and Sensibility (1995) ছবিতে অভিনয় করেন। তার পর Paws (1997) এবং New Year's Day (2000) মুভিতে অভিনয় করেন। মারিয়াম ফ্রান্স ও আইরিশ বংশদ্ভুদ ব্রিটিশ নাগরিক। ৯/১১ পূর্ববর্তী সময়ে ইসলাম সম্পর্কে প্রচন্ড রকমের নেতীবাচক ধারণা পোষণকারী এই নারী ৯/১১ এর পর ইসলাম বিদ্বেষি অরিয়ানা ফালাসির একটা বই পড়ে ইসলাম সম্পর্কে জানার জন্যে রিসার্চ করা শুরু করেন।
অরিয়ানা ফালাসির বই পড়ে মরিয়ম দেখেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্বের আগে ইউরোপে ইহুদীদের বিরুদ্বে যেসব প্রচার করা হতো, তাই এখন মুসলিমদের বিরুদ্বে করা হচ্ছে। ইসলাম নিয়ে প্রচুর রিচার্স করার পর ২০০৩ সালে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
মরিয়ম ক্যাম্ব্রিজ হতে বিএ, জর্জটাউন ইউনি হতে এম এ, এবং বর্তমানে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি সম্পন্ন হবার পথে। মরিয়ম বর্তমানে বিবাহিত, তার এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে।
ভার্সিটির বিভিন্ন সেমিনারে প্রয়ই ইসলাম ও নারী নিয়ে মরিয়ম লেকচার দেন। ইসলাম নিয়ে ভালই জ্ঞান রপ্ত করেছে মরিয়ম। আপনারা হয়তো সবসময় ইসলামে নারীর অধিকার নিয়ে পুরুষ বক্তা ও লেখকদের লেখা দেখেন। কিন্তু মরিয়মের লেকচার গুলো ব্যতিক্রম ও ভিন্ন। সে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিবে ইসলাম নারীদের কি অধিকার দিয়েছে এবং মুসলিম পুরুষরা কি অধিকার দিচ্ছে। তার সবচেয়ে বেশী ভালো লাগে ইসলামের ব্যালেন্স সিস্টেমটা। ইসলাম কোথাও পুরুষদের একটু বেশী অধিকার দিয়েছে, কখনো নারীদের বেশী অধিকার দিয়েছে। মরিয়মের লেকচারগুলো খুবই দারুন ও ইন্টারেস্টিং!!
মরিয়ম প্রাচ্যের অনেকগুলো দেশ ভ্রমন করেছন। মরক্কো হতে বাংলাদেশ পর্যন্ত। বিবিসির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ও মরিয়ম প্রায় অংশগ্রহন করেন। ইসলাম ও মুসলিমদের বিভিন্নভাবে ডিফেন্ড করেন।
যেমন, আমাদের কি ধর্মের প্রয়োজন একটা নৈতিক সমাজ গঠনের জন্যে?
বাংলাদেশের এতিম শিশুদের সাহায্যের জন্যে তার একটা সংগঠন আছে সেইভ এন অরপেন নামে। বাংলাদেশের কুমিল্লা সহ বিভিন্ন এলাকায় এতিমখানায় তাদের সংস্হা সাহায্য করে।
কিছুদিন পূর্বে মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক একটি সাপ্তাহিকিতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মরিয়ম স্মৃতিচারণ করেন কিভাবে মুসলমানদের ঘায়েল করতে কুরআন পড়া শুরু করে একসময় তিনি নিজেই ঘায়েল হয়ে যান-
আমি ইসলাম গ্রহণ করেছিলাম গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর। এর আগে আমি ছিলাম সংশয়বাদী ক্যাথলিক, ঈশ্বরে বিশ্বাসী ছিলাম, কিন্তু চার্চকেন্দ্রিক ধর্মে আস্থাহীন ছিলাম।
প্রথম যখন কোরআন হাতে পেলাম, তখন এর প্রতি আমার ক্রোধ ছিল। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, এটা আমি পড়ব আমার মুসলিম বন্ধুদের ভুল প্রমাণ করার জন্য। পরে অবশ্য আমি আরো খোলা মনে এটা পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।
পবিত্র কোরআনের শুরু সুরা ফাতেহা দিয়ে। এতে সমগ্র মানবজাতিকে উদ্দেশ করে বলা হয়েছে। আর এটাই আমার মনে পরিবর্তন নিয়ে আসে। এতে আগের কিতাবগুলোর স্বীকৃতি রয়েছে, তবে ভিন্নভাবে। খ্রিস্টান ধর্ম নিয়ে আমার মনে যেসব সংশয় ছিল, এতে তার অনেকগুলোর স্বীকৃতি ছিল। হঠাৎ করেই আমি পরিণত হয়ে গেলাম।
আমি বুঝতে পারলাম, কোরআনে নৈতিক সত্যের ওপর জোর দেয়। কেউ যদি দর্শনের কথা বলে, তবে বলতে হবে, কোরআনের দর্শন সবার ওপর। এতে একসাথে কোঁতে, হিউম, সার্ত্রে, অ্যারিস্টোটল রয়েছে। মানব অস্তিত্ব নিয়ে কয়েক শ’ বছর ধরে যেসব গভীর প্রশ্নের জন্ম হয়েছে, এতে সেসবের জবাব রয়েছে। সবচেয়ে মৌলিক যে প্রশ্ন, ‘আমরা এখানে কেন?’- এই প্রশ্নের জবাবও কোরআন দিয়েছে।
নবি মোহাম্মদের (সা.) মধ্যে আমি একটি গতিশীল মিশনের অস্তিত্ব পেলাম। তাঁর পূর্বসূরি হজরত মুসা, হজরত ঈসা ও হজরত ইব্রাহিমও এমন মিশনে অংশ নিয়েছেন।
আমার চিন্তা-ভাবনা অনেক বন্ধুর সাথে শেয়ার করলাম। তাদের বেশির ভাগই একমত হলো না। তবে আমার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু সর্বাত্মকভাবে আমাকে সমর্থন করতে লাগল। আমি অনেককে বোঝাতে চাইলাম, ইসলামের অনেক মূল্যবোধের সাথে আমি একমত, মুসলিম হই আর না হই।
আমার ধর্মান্তরকে আমি কখনোই আমার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ‘প্রতিক্রিয়া’ কিংবা বিরোধিতা হিসেবে দেখিনি। বরং আমার কাছে যেসব কাজ সবসময় প্রশংসাভাজন মনে হতো, এটা ছিল তারই স্বীকৃতি।
আবার মুসলিম সমাজের সবকিছুই আমার কাছে ভালো লাগেনি। অনেক নিয়মই আমার কাছে অদ্ভূত মনে হতো।
তবে নবিজির বাণী আমাকে বদলে দিতে থাকল। আমার মনে যে আত্মবিশ্বাসের প্রয়োজন ছিল, সেটা আমি তাঁর কাছ থেকেই পেয়েছি। ইসলাম সবসময় ভারসাম্যপূর্ণ ধর্ম। আমি মনে করি নবিজি (সা.) সবসময় আমাদের ভারসাম্য আর সাম্যের বার্তা দিয়েছেন।
নবিজি (সা.) সবসময় খারাপ থেকে দূরে থাকতে এবং সত্যের প্রতি সাড়া দিতে বলেছেন।
তিনি মনে করেন, ইসলামের সৌন্দর্য তখনই স্বকীয় হয়ে ওঠে, যখন তা পরিস্ফূট হয়, আর এটা তখনই পরিস্ফূট হয়, যখন আপনি এটাকে মানবজাতি আর বিশ্বের কল্যাণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবেন।
(মরিয়াম ফ্রান্সিস-চেরাহ ১৯৯০-এর দশকে হিট ফিল্ম সেন্স অ্যান্স সেনসিবিলিলিটির মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়েছিলেন। এখন তিনি আরো বেশি জনপ্রিয় হয়েছেন ব্রিটেনে ক্রমবর্ধমান হারে ইসলাম ধর্মগ্রহণকারী শিক্ষিত মধ্যবিত্ত নারীদের অন্যতম হওয়ার মধ্য দিয়ে।
সাম্প্রতিক সময়ে তিনি যুক্তরাজ্যে তৈরি ইসলামবিষয়ক বেশ কিছু ভিডিওচিত্র তৈরি করার কাজে নিয়োজিত হয়েছেন।)
ফেসবুকে পড়ুন এখানে
বিষয়: বিবিধ
১৬২৩ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কিন্তু এই ঘটনাটি সত্য; উইকিপিডিয়ায় দেখুন
জাযাকাল্লাহ
বেশ ভালো লাগলো ঘটনাটি জেনে। এরকম ঘটনা সত্যি প্রাণকে ইমানকে উজ্জিবিত করে।
আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ আমাদেরকে এরকম পরীক্ষা করেন নি। সরাসরি মুসলিম ঘড়ে জন্ম দিয়ে আমাদের উপর দয়া করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ!
জাযাকাল্লাহ খইর
বেটার লাক নেক্সট টা্ইম
মন্তব্য করতে লগইন করুন