সুর্য প্রণাম করতে অস্বীকার করলে যদি সমুদ্রে ডুবে মরা উচিত হয়, তাহলে.....................
লিখেছেন লিখেছেন চিরবিদ্রোহী ১১ জুন, ২০১৫, ০৩:১৯:০৭ দুপুর
বিভিন্ন অনলাইন নিউজ মিডিয়ায় দেখলাম, ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির উত্তর প্রদেশের গোরক্ষপুর আসনের এমপি যোগী আদিত্যনাথ নাকি বলেছেন, ‘যারা সূর্য প্রণাম করতে অস্বীকার করছেন, তাদের সমুদ্রের পানিতে ডুবে মরা উচিত।’ (Source- http://bangla.irib.ir/2010-04-21-08-29-09/item/74254-সূর্যকে-প্রণাম-না-করলে-সাগরে-ডুবে-মরা-উচিত-যোগী-আদিত্যনাথ
http://www.monitor-bd.net/newsdetail/detail/200/133148 )
উক্ত ভদ্রলোকের (!) এই কথা শোনার পর হাঁসবো, কাঁদবো না রাগে গজগজ করবো ভেবেই পাচ্ছি না।
আজ সকালেই দেখলাম, ফেসবুকে করা একটি পোস্টের মন্তব্যে এক ভারতীয় বলছেন "আগে ভারতের বুকে মহামানব আর মহামনীষিরা জন্ম নেয়, আর সেই রত্নগর্ভা ভারতের বুকে জন্ম নেয় সব চু*# রা।” কথাটার প্রমাণ যে এতটাই গরম গরম পেয়ে যাবো তা কিন্তু কল্পণাও করিনি।
এই কি যোগী না ঠগী লোকটার আক্কেলজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন করার আগে ওনার সুন্দর সদ্য পাকা জাম্বুরার মতো টাক মাথাটা দেখে কিছুটা অনুমান করতে পারলাম ভিতরটা কি পরিমানে উর্বর। কান্ডজ্ঞান তো দূর, চুল ও গজাতে দেয়নি।
তিনি তার মন্তব্যের যুক্তিতে বলেছেন, "জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কাউকেই নিজের আলো থেকে বঞ্চিত করেন না সূর্যদেব---তাই যে তার উত্তাপ হতে উপকৃত হওয়ার পরও নূন্যতম সম্মান দেয় না, তার ডুবে মরা উচিত।"
আহ...বিনোদন----ব্যাপক বিনোদন। আরেকটা পোস্টের কথা মনে করিয়ে দিলো-
Yahoo Answers-এ এমনই এক উর্বর মস্তিস্কের অধিকারী প্রশ্ন করেছিলেন তিনি নাকি তার বন্ধুর সাথে বাজি ধরেছেন যে অস্ট্রেলিয়ায় বৃষ্টি হয় না। কারণ, যেহেতু অস্ট্রেলিয়া গ্লোবের একেবারে নিচে অবস্থিত তাই বৃষ্টির পানি সেখানে পৌছোবে না। বাহ...দুনিয়াটা কত রকমের নমুনায় ভরা।
এবার ওনার উত্তরে আসি। প্রবাদ আছে, "গাধার কাছে জাফরানের মূল্য নেই।" তো এই লোকটাকে কুরআন-হাদীস বা যুক্তি দিয়ে লাভ হবে না। একদম সোজা কথা, আমরা মুসলমান। এক আল্লাহর গোলামী আর তাঁর হাবীব রাসূলে আকরাম (সাঃ) -এর আনুগত্য করে আমরা এমন এক পর্যায় লাভ করেছি যে, আল্লাহ সারা আসমান জমীন, এমনকি জান্নাতকেও আমাদের খেদমতে নিয়োজিত করে দিয়েছেন, আমাদের খেদমত করাটা তাদের জন্য সম্মানের বিষয় করে দিয়েছেন। তাই আমরা নয়, বরং সূর্যই কৃতজ্ঞতায় নিজের মাথা ঝুঁকিয়ে মহান আল্লাহকে সিজদা করে; কারণ আল্লাহ তাকে সেই মানুষগুলোর সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন, যে মানুষগুলোকে আল্লাহ শুধুই নিজের ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন।
হে বিবেকের দুশমন, তুমি সূর্যের প্রতি অকৃতজ্ঞতার কথা বলছো? তুমি কি একবারও ভেবে দেখেছো, আজকে যে ষাঁড়ের মতো বিশাল দেহটা নিয়ে তুমি দম্ভভরে হেঁটে বেড়াচ্ছো, কিভাবে পেলে এই দেহ- এই জীবন? কে তোমাকে এই অস্তিত্বে আনলো, এক ফোঁটা নাপাক পানি থেকে? কে তোমাকে জীবশ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে সৃষ্টি করে, চিন্তা করার-ভালো মন্দ বোঝার শক্তি দিয়ে বিশাল ইহসান করছেন? তুমি কি তার সেই আর্শিবাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকো? যদি থাকো, তাহলে কিভাবে সেই নিরাকার সর্বশক্তিমানকে ভূলে নিজ হাতে তৈরি করা মাটির পুতুলের সামনে মাথা ঝোঁকাও, সেজদা করো? কিভাবে সেই একক স্বত্ত্বার সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করো? তোমার স্ত্রী যদি তোমাকে বলে, “তুমিই আমার স্বামী, মানে তুমি সবচেয়ে বড় স্বামী, তবে আরো কিছু সহকারী সহযোগী স্বামীও আছে, যারা তোমারই রূপ এবং তাদের খুশি করার মাধ্যমেই তোমাকে খুশী করতে চাই”; তোমার সন্তানরা যদি বলে “তুমিই আমাদের বাবা, সবচেয়ে বড় বাবা, তবে আমাদের আরো কিছু ছোট খাটো বাবাও আছে, যারা তোমারই রূপ এবং তাদের বাবা বলে ডাকার মাধ্যমে আমরা তোমাকে বাবা বলে ডাকি” তাহলে কেমন লাগবে তোমার? ভেবে দেখ, দুনিয়ার এই সম্পর্কের ক্ষেত্রেই তুমি অংশীদারীত্ব সহ্য করতে পারবে না, আর সেই এক-অদ্বিতীয় প্রভুর সাথে যখন তুমি মূল্যহীন মাটির মুর্তিকে অংশীদার সাব্যস্ত করো তখন সেই প্রভুর ক্রোধ কোন পর্যায়ে যেতে পারে?
তুমি সনাতনী হিন্দু? তাতে কি? চেয়ে দেখেো তোমার ধর্মে কি বলে। হাতে তুলে নাও তোমার বেদ- ঋক, যর্জু, অথর্ব; পুরান-অগ্নী, ভগবত, ব্রক্ষ্মা, গরুদ, কর্মা; উপনিষদ, পড়ে দেখ সেখানে ঈশ্বরকে কিভাবে বর্ণনা করা হয়েছে-
”একম ব্রহ্মা ৈদ্বত্য নাস্তি নহিনা নাস্তি কিঞ্চান “। অর্থাত ইশ্বর একজন তার মতো কেউ নেই, কেউ নেই সামান্য নেই ।
”তিনি একজন তারই উপাসনা করো”(ঋকবেদ ২/৪৫/১৬)।
“এক্ম এবম অদ্বৈতম ”অর্থাত তিনি একজন তার মত আর দ্বিতীয় কেউ নেই (ঋকবেদ ১/২/৩)। ”একজনই বিশ্বের প্রভূ”(ঋকবেদ ১০/১২১/৩)।
”ন্ দ্বিতীয় ন্ তৃতীয় চতূর্থ না পুচ্যতে।
ন্ পঞ্চম ন্ ষস্ট সপ্ত না পুচ্যতে ।।
ন্ অস্টম ন্ নবম দশমো নআ পুচ্যতে।
য এতং দেব মেক বৃত্যং বেদ।।” (অথর্ব বেদ সুক্ত ১৪/৪/২)
"একমেবা দ্বিতীয়াম"
"তিনি এক একক, যাঁর কোন দ্বিতীয় নাই ।" [চান্দোগ্য উপনিষদ ৬ঃ২ঃ১]
"ন-কস্য কাসুজ জানিতা ন কাধিপাহ"
"তাঁর কোন পিতা-মাতা নাই, কোন প্রভুও নাই ।"
[সেভতাসাভাতারা উপনিষদ ৬,৯, দ্বিতীয় ভাগ, পৃষ্ঠা ২৬৩]
"ন তস্য প্রতিমা আসাতি"
"তার সমতুল্য কেহ নাই"
[সেভতাসাভাতারা উপনিষদ, অধ্যায় ৪ঃ১৯]
এবার চোখের সামনে পড়ে থাকা অজ্ঞতার ঠুলি, কানের উপর পড়ে থাকা স্বার্থের পর্দা আর মগজের উপর জমে থাকা মুর্খতার ধুলোগুলোকে সরিয়ে ভেবে দেখো একবার, তুমি মানুষকে সামান্য সূর্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা না প্রকাশ করলে সাগরে ডুবে মরতে বলো, তাহলে সেই সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, যিনি তোমার সৃষ্টিকর্তা, তার প্রতি কৃতজ্ঞা প্রকাশ না করে বরং নিলর্জ্বের মতো তাকে অন্যের সাথে তুলনা করার কারণে তোমার কোন বিষ্টাময় নর্দমায় ডুবে মরা উচিত?
বিষয়: বিবিধ
১৫৪৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কিন্তু এই দেশের কোন নাস্তিক যুক্তিবাদি!! এই বিষয়ে কোন কথাই বললেন না যে একটি হাইড্রোজেন এর বল কে সন্মান জানাতে বলে তিনি কোন অপরাধ করেছেন!!
অতি ইনুদোনমূলক কথা........ হাহা, হাহা,হাহা.......
এই কথাগুলি যদি ভাবার মত ভাবে, একজন মুশরিক ঈমানদার হওয়ার জন্য যথেষ্ট। আসল কথা হল হিদায়াত নসীবে থাকতে হবে তো!
অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ খাইর
মন্তব্য করতে লগইন করুন