সে-ই স্বাধীন যে সিজদা করে এক আল্লাহকে

লিখেছেন লিখেছেন চিরবিদ্রোহী ০৩ মে, ২০১৫, ০৩:২২:৫৮ দুপুর

মুসলিম জাহানের বিভিন্ন অঞ্চলের দায়িত্বশীলদের প্রতি হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর একটি ফরমান ছিল নিম্নরূপ :

إن أهم أموركم عندي الصلاة، فمن حفظها أو حافظ عليها حفظ دينه ومن ضيعها فهو لما سواها أضيع

‘তোমাদের সব বিষয়ের মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ‘সালাত’। যে তা রক্ষা করেছে অথবা বলেছেন, যে এ ব্যাপারে যত্নবান হয়েছে সে তার দ্বীনকে রক্ষা করেছে। আর যে তা ধ্বংস করেছে সে তো অন্যান্য ব্যাপারে হবে আরো বিধ্বংসী।’ (মুয়াত্তা মালেক, হাদীস ৬; সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস ২০৯৬)

আল্লাহর রাসূলের দ্বিতীয় খলীফার এ বাণী ও ফরমান এক অমোঘ বাস্তবতার তরজুমান। আল্লাহর ভয়ই হচ্ছে ঐ মহা নিয়ন্ত্রক শক্তি যা মানুষের ভিতর-বাহির গোপন-প্রকাশ্য সকল অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে। যে শক্তি দুর্বলকেও নিয়ন্ত্রণ করে, শক্তিমানকেও নিয়ন্ত্রণ করে, ক্ষমতাহীনকেও নিয়ন্ত্রণ করে, ক্ষমতাসীনকেও নিয়ন্ত্রণ করে। আল্লাহর ভয় না থাকলে শত ব্যবস্থার মাঝেও অন্যায়-অনাচার চলতে থাকে এবং অন্যায়-নিয়ন্ত্রণের ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব যাদের তারাই অন্যায়-অবিচারে জড়িয়ে পড়ে; বরং আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। আর তখনই রক্ষক পরিণত হয় ভক্ষকে আর ব্যবস্থার বজ্র আঁটুনী পর্যবসিত হয় ফস্কা গেরোতে। সত্য যে, পার্থিব জীবনের স্থিতি ও ভারসাম্যের জন্যও তাকওয়া ও আল্লাহ-ভীরুতার কোনো বিকল্প নেই।

আল্লাহভীরু মানুষের মনেই প্রশ্ন জাগে ন্যায়-অন্যায় এবং করণীয়-বর্জনীয়ের। একারণেই যে কুরআন সর্বমানবের পথ-প্রদর্শনের জন্য অবতীর্ণ তার শুরুতেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ঘোষণা ‘هدى للمتقين’ ‘এ কুরআন পথপ্রদর্শক আল্লাহ-ভীরুদের জন্য।’ (সূরা বাকারা ২ : ৩) অর্থাৎ কুরআনের বিধান ও নির্দেশনায় এদের উপকার হয়। তো এই আসমানী কালাম ও সর্বোত্তম ব্যবস্থার দ্বারাই যখন শুধু তারাই পরিশুদ্ধ হয় যারা আল্লাহ-ভীরু, তাহলে অন্য সকল ব্যবস্থার নীতিকথার উপদেশ বাণীতে আল্লাহর ভয় ছাড়া কীভাবে কারো পরিশুদ্ধি ঘটতে পারে। একারণে ব্যক্তি-সংশোধন ও সমাজ-সংশোধনের গোড়ার কথা হচ্ছে, মানুষের মনে আল্লাহর স্মরণ ও আল্লাহর ভয় জাগ্রত করা। এ সেবাই ব্যক্তি ও সমাজের সবচেয়ে বড় সেবা। এ সেবায় যারা নিয়োজিত তারাই সমাজ ও ব্যক্তির সবচেয়ে বড় সেবক। এ সত্য যে জাতি উপলব্ধি করে না সে জাতি আপন শত্রু-মিত্র নির্ভুলভাবে নির্ণয়ে ব্যর্থ হয়। আর যে নেতৃত্ব এ বাস্তবতা সম্পর্কে উদাসীন হয় বা উদাসীন বনে তার দ্বারা জাতীয় কল্যাণের আশা আত্মপ্রবঞ্চনা মাত্র।

জাতীয় উন্নতি-অগ্রগতির জন্য প্রয়োজনীয় জাগতিক শিক্ষা ও কুশলতা অপরিহার্য। আর এ কারণে জাতির সর্ব প্রকারের যোগ্যতা ও কর্ম-কুশলতার বিকাশ-চেষ্টা অতি জরুরি। এ অঙ্গনেও সত্যিকারের কর্ম-পরিকল্পনা ও কর্ম-তৎপরতা তাদের মাধ্যমেই সম্ভব যারা সত্যিকার অর্থেই জাতির ওফাদার সেবক। জাতির প্রতি ওফাদারীর প্রভাবক চেতনা এবং ব্যক্তিস্বার্থ ও দলীয় স্বার্থের উর্ধ্বে ওঠার সৎসাহসেরও প্রধান সূত্র ঈমান ও তাকওয়া। এ দুয়ের অনুপস্থিতিতে ঐ বাস্তবতাই ঘুরে ঘুরে আসে, মুসলিম জাহান এখন যার ভুক্তভোগী।

দ্বিতীয়ত জাতির সম্মিলিত মেধা ও কুশলতাকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্যও প্রয়োজন তাকওয়া ও খোদাভীতির। এর অনুপস্থিতিতে সকল যোগ্যতা ও কর্মশক্তি ব্যবহৃত হয় ভোগ-বিলাস, অন্যায়-অনাচার ও যুলুম-অবিচারের নিত্য নতুন কৌশল উদ্ভাবনে। ফলে জাতি নিমজ্জিত হয় আত্মবিস্মৃতির এক সর্বগ্রাসী অন্ধকারে এবং জড়িয়ে পড়ে আত্মঘাতী ও ভ্রাতৃঘাতী এক অনিঃশেষ চক্রে। কুরআন মাজীদের ঐ অমোঘ সত্যের মর্মান্তিক উদাহরণ সৃষ্টি হতে থাকে- فأنساهم أنفسهم । কবির ভাষায় :

وہ ايک سجدہ جسے تو گراں سمجھتا ہے + ديتا ہے تجھکو ہزار سجدوں سے نجات

ঐ একটি মাত্র সেজদা যাকে তুমি মনে করেছ সুকঠিন। এ-ই তোমাকে দেয় হাজার সিজদা থেকে মুক্তি।

যে আল্লাহকে সিজদা করে না সে সিজদা করে শয়তানকে; সিজদা করে নিজ খাহিশ ও প্রবৃত্তিকে, সিজদা করে অর্থ ও স্বার্থকে, সিজদা করে প্রচলিত সকল পার্থিব রীতি-নীতিকে, সিজদা করে সকল অন্যায়-অনাচারকে, সর্বোপরি সিজদা করে এবং করতেই থাকে দেশী-বিদেশী অসংখ্য প্রভুকে। যে ব্যক্তি ও জাতি সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে সিজদা করতে ‘অপমান’ বোধ করে আল্লাহ তাঁর অসংখ্য দাসকে তার প্রভুতে পরিণত করেন। সে তখন ওদেরকেও সিজদা করতে থাকে। এসকল দাস-প্রভুর অধীনতা ও দাসত্বই হয় তার ললাট-লিপি।

এই অধীনতা-প্রবণ মানবের কীভাবে পরিচয় ঘটবে প্রকৃত স্বাধীনতার সাথে? আর কীভাবেই বা সে রক্ষা করবে তার ক্ষুদ্র ও বৃহৎ স্বাধীনতা। অতপর এই শ্রেণীই যদি নিয়োজিত হয় জাতি-গোষ্ঠির হক্ব রক্ষার দায়িত্বে তখন যে ধ্বংসযজ্ঞের সূচনা হয় তার ধারা প্রবাহিত হতে থাকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। আল্লাহর নবীর খলীফা, অর্ধ বিশ্ব বিস্তৃত মুসলিম জাহানের আমীরুল মুমিনীন সত্যই বলেছেন- ومن ضيعها فهو لما سواها أضيع ‘যে সালাত ধ্বংস করে সে তো অপরাপর বিষয়ে হয় আরো বিধ্বংসী।’

আল্লাহ তাআলা আমাদের ক্ষমা করুন এবং আমাদের ক্ষুদ্র-বৃহৎ, নৈতিক জাগতিক, ভ‚খণ্ডগত, আদর্শগত সর্বপ্রকারের স্বাধীনতা রক্ষার তাওফীক দান করুন। আমীন

বিষয়: বিবিধ

১৪৩১ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

317922
০৩ মে ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৫১
শেখের পোলা লিখেছেন : বাস্তবিকই বলেছেন৷ আল্লাহ এ ভূ খণ্ড দিয়েছিলেন এই ওয়াদার প্রেক্ষিতে যে আমরা এখানে প্রকৃত আদল ইনসাফ কায়েম করে দেখিয়ে দেব ইসলাম কি৷ আজ সেই ভূ খণ্ডে ইসলামের সাধকদের যায়গা জেলে, অন্তিম ফাঁসীতে, কোরআন জিহাদী বই তাই পরিত্যাজ্য,হিজাব অপরাধ৷ ধর্ষনে উৎসাহ, মসজিদে বাধা, আজান নিষেধ৷ এই ভূখণ্ডের জন্য দোওয়া করার আগে জাতিকে অপরাধ স্বীকার করে তওবা করতে হবে,তবে যদি কবুল হয়৷ বিবেক জাগ্রত করার জন্য আরও লিখুন৷ ধন্যবাদ৷
০৪ মে ২০১৫ সকাল ০৯:৫২
259270
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন : অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই। আপনাদের পরামর্শ, অনুপ্রেরণাই আমার কলমের কালি।
জাযাকাল্লাহু খইর।
317935
০৩ মে ২০১৫ রাত ০৮:৫৯
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ভাইয়া, সমসাময়িক চমৎকার লিখেছেন
যে আল্লাহকে সিজদা করে না সে সিজদা করে শয়তানকে; সিজদা করে নিজ খাহিশ ও প্রবৃত্তিকে, সিজদা করে অর্থ ও স্বার্থকে, সিজদা করে প্রচলিত সকল পার্থিব রীতি-নীতিকে, সিজদা করে সকল অন্যায়-অনাচারকে, সর্বোপরি সিজদা করে এবং করতেই থাকে দেশী-বিদেশী অসংখ্য প্রভুকে। যে ব্যক্তি ও জাতি সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে সিজদা করতে ‘অপমান’ বোধ করে আল্লাহ তাঁর অসংখ্য দাসকে তার প্রভুতে পরিণত করেন।

সত্যিই হৃদয় ভরে গেল। জাযাকাল্লাহ খাইর
০৪ মে ২০১৫ সকাল ০৯:৫১
259268
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন : অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
বারকাল্লাহু ফিহী ওয়া মিন্নি।
317940
০৩ মে ২০১৫ রাত ০৯:৫৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : শিক্ষনিয় ও উদ্দিপনামূলক পোস্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
০৪ মে ২০১৫ সকাল ১০:০০
259278
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন : আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই। জাযাকাল্লাহু খইর।
317945
০৩ মে ২০১৫ রাত ১০:২৫
আওণ রাহ'বার লিখেছেন :
যে আল্লাহকে সিজদা করে না সে সিজদা করে শয়তানকে; সিজদা করে নিজ খাহিশ ও প্রবৃত্তিকে, সিজদা করে অর্থ ও স্বার্থকে, সিজদা করে প্রচলিত সকল পার্থিব রীতি-নীতিকে, সিজদা করে সকল অন্যায়-অনাচারকে, সর্বোপরি সিজদা করে এবং করতেই থাকে দেশী-বিদেশী অসংখ্য প্রভুকে। যে ব্যক্তি ও জাতি সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে সিজদা করতে ‘অপমান’ বোধ করে আল্লাহ তাঁর অসংখ্য দাসকে তার প্রভুতে পরিণত করেন। সে তখন ওদেরকেও সিজদা করতে থাকে। এসকল দাস-প্রভুর অধীনতা ও দাসত্বই হয় তার ললাট-লিপি।

নূরের হরফে লিখা শব্দমালা নবীজীর নামাজ পড়া আছে ভাইয়া।
শাইখ ইলিয়াস ফায়সাল....?? Waiting Waiting
০৪ মে ২০১৫ সকাল ১০:০০
259277
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন : D'oh D'oh Yawn Yawn বুঝলাম না ভাই
০৪ মে ২০১৫ সকাল ১১:২২
259287
আবু জান্নাত লিখেছেন : ললাট-লিপি কি? এতো হিন্দুদের ধারনা, মুসলমানরা বলবে ভাগ্যলিপি। ধন্যবাদ।
০৫ মে ২০১৫ সকাল ১০:৫২
259509
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন : @আবু জান্নাত
ভাই, এমন করলে তো বাংলা ভাষাই বাদ দিতে হবে। কারণ, বাংলা ভাষাটার আবির্ভাবই হিন্দুধর্ম ভাষা সংস্কৃত হতে। রচনার প্রয়োজনে এ ধরণের শব্দ ব্যবহার করা নতুন কিছু না। আপনি নজরুল কে দেখেন, তাহলেই এটা স্পষ্ট হবে। আর অর্থও ভিন্ন হতে বারণ তো নেই, তাই না?
317946
০৩ মে ২০১৫ রাত ১০:২৫
tritiomot লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০৪ মে ২০১৫ সকাল ০৯:৫৬
259276
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ। জাযাকাল্লাহু খইর
317947
০৩ মে ২০১৫ রাত ১০:২৬
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : অনন্য সুন্দর পোষ্ট এর জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
জাজাকাল্লাহ।
Thumbs Up Thumbs Up Thumbs Up Praying Praying Praying Praying
০৪ মে ২০১৫ সকাল ০৯:৫৬
259275
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন : বহুত শুকরিয়া ভাই, বারকাল্লাহু ফিহী
317976
০৪ মে ২০১৫ রাত ১২:১১
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : সুন্দর পোস্ট, মানুষের হূদয় জেগে যাবার মত। ধন্যবাদ।
০৪ মে ২০১৫ সকাল ০৯:৫৬
259274
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন : বহুত শুকরিয়া। জাযাকাল্লাহু খইর।
317978
০৪ মে ২০১৫ রাত ১২:২০
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় ভাইয়া। অনেক দিন পর প্রেরণাদীপ্ত,শাণিত ও মূল্যবান লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু।
০৪ মে ২০১৫ সকাল ০৯:৫৫
259273
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন : বহুত শুকরিয়া আপু। আপনার হৃদয় নাড়া দিয়ে যাওয়া লেখাগুলো কিন্তু নিয়মিতই পড়ি, হয়তো মন্তব্য করা হয়না।
বারকাল্লাহু ফিহী ওয়া মিন্নি
317979
০৪ মে ২০১৫ রাত ১২:২৪
০৪ মে ২০১৫ সকাল ০৯:৫৪
259272
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন : আমিন ইয়া রব্বুল আ'লামিন
১০
317991
০৪ মে ২০১৫ রাত ০২:০৪
আবু জারীর লিখেছেন : হে রব! আমি একমাত্র তোমাকেই সেজদা করি। তুমি আমাকে কবুল কর।
ধন্যবাদ।
০৪ মে ২০১৫ সকাল ০৯:৫৪
259271
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন : إِيَّاكَ نَعْبُدُ وإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
জাযাকাল্লাহু খইর।
১১
376711
২৩ আগস্ট ২০১৬ রাত ১১:২৬
tritiomot লিখেছেন : ভালো লাগল অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File