এপ্রিল ফুলের ইতিবৃত
লিখেছেন লিখেছেন চিরবিদ্রোহী ২৬ মার্চ, ২০১৫, ০৮:৫৭:৫৬ রাত
সারা বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর এপ্রিল মাসের প্রথম তারিখটি ‘এপ্রিল ফুল” দিবস হিসেবে পালিত হয়ে থাকে। দিবসটির মূল উপজীব্য হলো হাস্য-কৌতুক ও রম্যরঙ্গের মাধ্যমে কাউকে বোকা বানিয়ে মজা করা। উনিশ শতক থেকে এই দিবস সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উৎসাহের সাথে পালন হয়ে আসছে এবং ক্রমেই আরো জনপ্রিয় হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে দিবসটি ‘এপ্রিল ফুল্্স ডে’ ‘অল ফুল্্স ডে’ ইত্যাদি নামে উদযাপিত হয়ে থাকে।
‘এপ্রিল ফুল’-এর ইতিহাস ঃ
প্রথমে আমরা দেখতে চাই যে, এপ্রিল ফুল জিনিসটি আসলে কী চিজ। প্রথমেই আমরা সাহায্য নিচ্ছি পৃথিবীর সবচে বৃহৎ দালিলিকগ্রন্থ এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকার। এপ্রিল ফুল নিয়ে সেখানে লেখা আছে- April FoolsÕ Day, also called All FoolsÕ Day, in most countries the first day of April.... ‘এপ্রিল ফুল দিবসকে অনেক দেশে ‘অল ফুলস ডে’ নামেও ডাকা হয়। এটি গ্রহণ করা হয়েছে মূলত এপ্রিলের প্রথম তারিখে হাস্য-কৌতুকের দিবস হিসেবে।... এটি কোথা থেকে শুর” হয়েছে, তা নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। এ দিবসকে প্রাচীন রোমের হিলারিয়া উৎসবের মতো উদযাপন করা হতো মার্চের ২৫ তারিখে,...তবে নতুনভাবে দিবসটি পালন করা হয় সম্ভবত ফ্রান্সের গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার গৃহীত হওয়ার পর থেকে, যা পূর্ববর্তী নতুন বছর শুর”র দিন ২৫ মার্চ থেকে জানুয়ারি ১ লা তারিখে পরিবর্তন করা হয় ১৫৮২ সালে।’এ কথা ঐতিহাসিকভাবে সত্য যে, অনেক আগে থেকেই পহেলা এপ্রিল বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে উদযাপিত হতো। তবে কিভাবে যে এপ্রিল ফুলের সূচনা হয় তা নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে বিস্তর মতভেদ রয়েছে। প্রাচীনকালে জনপ্রিয় উৎসবসমূহ পালিত হতো বসন্তকালীন বিষুব সময়ে (vernal equinox), অর্থাৎ যে সময়ে দিনরাত মোটামুটি সমান থাকে। সময়টি হলো ২১ মার্চ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ঋতু পরিবর্তনের প্রান্তিক সময় ২৫ মার্চ থেকে ২ রা এপ্রিল (অর্থাৎ শীতের শেষে বা বসন্তের শুর”তে) পুরাতন জুলিয়ান (Julian) ক্যালেন্ডার অনুযায়ী গোটা ইউরোপে সপ্তাহব্যাপী উৎসব উদযাপন চলতো। আঠার শতকে এপ্রিল ফুল বর্তমান অবয়ব ধারন করার আগ পর্যন্ত গ্রেট ব্রিটেনে সাধারণ মানুষদের ঐতিহ্যবাহী মেলা বসতো প্রতিবছরের পহেলা এপ্রিলে। স্কটল্যান্ডে এই দিনটিকে বলা হতো ‘কোকিল শিকারের দিন (hunting the gowk or cuckoo)’। এপ্রিল ফুল নতুনরূপে জন্মলাভের পর এর নামকরণ করা হয় এপ্রিল-কোকিল (April Gowk)। ইউরোপে সম্ভবত এপ্রিল ফুলের বিস্তৃতি ঘটে প্রথমে ফরাসিদের মধ্যে। ফ্রান্সই হলো প্রথম দেশ যে দেশে সরকারিভাবে নবম চার্লস (Charles the IX) ১৫৬৪ সালে এক ফরমানের মাধ্যমে ১ লা জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন । তিনি এটি করেন ১৫৮২ সালে ইতালিয়ান পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি (Pope Gregory XII) প্রবর্তিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার (যেটিকে আমরা বর্তমানে ভুল করে ইংলিশ ক্যালেন্ডার বলি) হিসেবে প্রচলন হওয়ারও আগে। এরই সাথে ১ লা এপ্রিলে বন্ধু-বান্ধবদের উপহার দেয়া নেয়ার প্রথাটি বদল হয়ে চলে যায় ১ জানুয়ারি বা নিউ ইয়ার উদযাপনের প্রাক্কালে। কারণ তখন পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নিউ ইয়ার পালিত হতো ১ লা এপ্রিলে। অনেকেই এই পরিবর্তনকে মেনে নিতে না পেরে এদিনই অর্থাৎ ১ লা এপ্রিলেই তাদের পুরোনো প্রথাসমূহ চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু বিপরীত ১ জানুয়ারির পক্ষের লোকজন এদেরকে ফাঁকি দিতে ১ লা এপ্রিলে ভূয়া উপহার পাঠানোর কালচারটি চালু করে। এখান থেকেই মূলত চালু হয় ‘এপ্রিল ফুল ডে’ অর্থাৎ এপ্রিলের বোকা দিবস। কেননা সেসময় যারা নতুন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকে গ্রহণ করে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারকে বিদায় দিয়েছিলো তারা বিদ্র”প করে অন্যান্য যারা তখনো জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বর্ষগনণা করতো তাদেরকে বোকা বানাতে ১ লা এপ্রিলে নববর্ষের উপহার পাঠাতো। এতে প্রাচীনপন্থীরা বোকা বনে যেতো এবং নতুন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারধারীরা উপহার পাঠিয়ে তাদেরকে পশ্চাদপদ বলে উপহাস করতো। ডাচরা পহেলা এপ্রিল পালন করে অন্য কারণে। স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ১৫৭২ সালে নেদারল্যান্ড শাসন করতেন। যারা তার শাসন অমান্য করেছিলো তারা নিজেদেরকে গুইযেন (ডাচে Geuzen ও ফরাসিতে Gueux বলা হয়, যার অর্থ ভিখারী) বলে পরিচয় দিতো। ১৫৭২ সালের এপ্রিলের ১ তারিখে গুইযেন বা বিদ্রোহীরা উপকূলীয় ছোটো শহর ডেন ব্রিয়েল (Den Brial) করায়ত্ব করে ফেলে। তাদের এই সফলতায় বিদ্রোহের দাবানল দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। শেষমেষ স্প্যানিশ সেনাপ্রধান দ্যা ডিউক অব অ্যালবা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হন। ‘ব্রিয়েল’ হলো ডাচ শব্দ, যার অর্থ কাঁচ। ১৯৭২ সালের ১ লা এপ্রিল স্মরণে ডাচরা বিদ্র”প করে স্প্যানিশদের ‘অ্যালবা কাঁচ হারিয়েছে (Alba lost glasses)’ বলে পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করে থাকে। উল্লেখ্য, অ্যালবা ছিলো স্পেনের একটি শহরের নাম, যেখানে দ্যা ডিউক অব অ্যালবার সদর দপ্তর ছিলো। এপ্রিল ফুলের আরেকটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রফেসর জোসেফ বসকিন (Joseph Boskin)। তিনি বলেছেন, এই প্রথাটির শুর” হয় রোমান সম্রাট কনস্ট্যান্টাইনের (২৮৮-৩৩৭ খ্রিস্টাব্দ) শাসনামলে। হাসি-ঠাট্টা নিয়ে মেতে থাকে এমন একদল বোকা গোপালভাঁড়েরা সম্রাটকে কৌতুক করে বলে, তারা রাজার চেয়ে ভালোভাবে দেশ চালাতে পারবে। রাজা মহোদয় বেশ পুলকিত হলেন। রাজা গোপালভাঁড়দের সর্দার কুগেলকে একদিনের জন্য বাদশাহ বানিয়ে ক্ষমতা ছেড়ে দিলেন। আর কুগেল সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যময় আইন জারি করে দিলো, প্রতিবছরের এইদিনে সবাই মিলে তামাশা করবে। আর সে দিনটি ছিলো এপ্রিলের ১ লা তারিখ। ১৯৮৩ সালে বার্তা সংস্থা এপি পরিবেশিত বসকিনের এই ব্যাখ্যাটি অনেক কাগজে নিবন্ধাকারে প্রকাশিত হয়। বসকিন মূলত আগের সব ব্যাখ্যাকে উড়িয়ে দিয়েছেন। আর্টিকেলটি ছাপানোর আগে এপি দুই সপ্তাহ ধরে ভেবেছে তারা নিজেরাই এপ্রিল ফুলের বোকামির শিকার হচ্ছে না তো! অন্যান্য দিবসের মত এই দিবসটির উৎপত্তি প্রাশ্চাত্যে শুর” হলেও এর বিস্তৃতি এখন দেশে দেশে।
কি করা হয় ‘এপ্রিল ফুল্্স ডে’তে-
দিনটির মুল আকর্ষন হলো পরিচিত বা অপরিচিত কাউকে যে কোন ভাবে বোকা বানিয়ে আনন্দ করা। স্থান ও ব্যক্তিভেদে এই কাজটি করতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হয়ে থাকে। এই কৌশলগুলো কৌতুক বা “ Prank” নামে পরিচিত। সাধারণ ভাবে যে কৌশলগুলো সবচেয়ে প্রচলিত তার মধ্যে হতে পারে- যেমন, এক ব্যক্তি তার বন্ধুকে এমন কোন কথা বললো, যা সে সহজে বিশ্বাস করতে পারছে না। একসময় যখন সে কথাটি বিশ্বাস করে বসলো তখনই ব্যক্তিটি সজোরে বলে উঠলো ‘এপ্রিল ফুল”, অর্থাৎ সে তার বন্ধুটিকে বোকা বানিয়ে ছেড়েছে। ইংল্যান্ডে ও সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশভূক্ত অঞ্চলগুলোতে এই ধরণের কৌশল বেশী প্রচলিত। এই অঞ্চলগুলোতে প্রচলিত আরেকটি মজার প্রথা হলো, কাউকে ‘এপ্রিল ফুল’ বানাতে হলে অবশ্যই দিনের প্রথমার্ধের মধ্যেই বানাতে হবে, অন্যথায় যে বানাবে উল্টো সে নিজেই ‘এপ্রিল ফুল’ বনে যাবে। (ইংল্যান্ডের The Independent পত্রিকায়০৪/০৪/২০১৩ইং তারিখে Archie Bland -এর লেখা "The Big Question: How did the April Fool's Day tradition begin, and what are the best tricks?" শীর্ষক কলাম)
স্কটল্যান্ডে কৌতুক করার সবচেয়ে জনপ্রিয় কৌশলটি ব্রিটিশদের থেকে একেবারেই আলাদা। সেখানে যে ব্যক্তিকে বোকা বানানো হবে তাকে ” Gowk ” এবং ১লা এপ্রিলকে ''Huntigowk Day' ' (যা মূলতঃ 'Hunt the Gowk' হতে এসেছে) বলা হয়। - যে লোককে বোকা বানানো হবে, তার হাতে একটি চিরকুট দেয়া হয় এই বলে যে, এই চিরকুটে খুবই গুর”ত্বপূর্ণ বার্তা আছে। অমুক লোকের কাছে এটিকে পৌছে সমাধান নিয়ে এসো। আসলে চিঠিটির ভিতর কোন গুর”ত্বপূর্ণ সমস্যা লেখা থাকে না, বরং লেখা থাকে “ Dinna laugh, dinna smile. Hunt the gowk another mile ”, যার অর্থ এড়শি ব্যক্তিটিকে আরো এক মাইল ঘুরিয়ে আনো। প্রাপক চিঠিটি পড়ার সাথে সাথেই বিষয়টি বুঝতে পারে, এবং চিঠি বহনকারী ব্যক্তিকে বলে যে, সে তখনই তাকে সাহায্য করতে পারব যদি বাহক ব্যক্তি চিঠিটি অন্য এক ব্যক্তির কাছে নিয়ে যায়। দ্বিতীয় প্রাপক ব্যক্তিও একই রকম উত্তর দেয় এবং এভাবেই বাহককে বিভিন্ন স্থানে ঘুরানো হয়। (The Lore and Language of Schoolchildren, Opie, Iona & Peter, pp. 245–246)
আইরিশরাও প্রায় কাছাকাছি কৌশল অবলম্বন করে থাকে। সেখানে চিঠিতে লিখে দেওয়া হয় 'send the fool further”, এবং পাঠক চিঠির বাহককে বলে যে এর সমাধান আমার কাছে নেই, তবে অমুক ব্যক্তির কাছে এর সমাধান থাকতে পারে। চিঠি বাহক সর্বক্ষেত্রে একই উত্তর পেতে থাকে এবং দিনশেষে প্রেরক ব্যক্তির কাছে ফিরে আসলে তাকে জানানো হয় যে তাকে ‘এপ্রিল ফুল’ বানানো হয়েছে। ((Bridget Haggerty. Irish Culture and Customs- এর April Fool's Day শীর্ষক অধ্যায়)
নরওয়ে, ডেনমার্ক ও সুইডেন এই ক্ষেত্রে অন্য সবার চেয়ে আরো এক ধাপ এগিয়ে। সেখানকার প্রধান প্রিন্ট মিডিয়া গুলোই পাঠকদের ‘এপ্রিল ফুল’ বানানো ‘মহান দায়িত্ব’ পালন করে থাকে। সেরা সংবাদপত্র গুলো এই দিনে অন্তত একটি ভূল খবর খুব ফলাও করে প্রচার করে, তাও আবার একেবারে প্রথম পাতায়। (International Business Times. পত্রিকায় ২৭/০৩/২০১৩ইং তারিখে প্রকাশিত "April Fool’s Day: 8 Interesting Things And Hoaxes You Didn't Know" শীর্ষক কলাম)
পোল্যান্ডের নাগরিকদের পয়লা এপ্রিল সংক্রান্ত বিশ্বাস অনেক গভীর ও শক্তিশালী। তারা এই প্রথাটির উপর এতটাই বিশ্বাসী যে, তারা এই দিনে কোন গম্ভীর কর্মকান্ডে জড়িত হতে চান না। এমনকি সেখানকার সংবাদ মাধ্যম ও সরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহও এই দিন উপলক্ষ্যে বিভিন্ন রম্য-কৌতুক করে থাকে। সেখানে বিষয়টা এতটাই গুর”ত্বপূর্ণ যে, ১৬৮৩সালের ১লা এপ্রিল পোল্যান্ড ও প্রথম লিওপোল্ডের সাথে সাক্ষরিত তুরস্কবিরোধী চুক্তির তারিখ লেখা হয়েছে ৩১শে মার্চ। (. The Express Tribune. পত্রিকায় ২৭শে মে, ২০১৩ তারিখে প্রকাশিত "Origin of April Fools’ Day" শীর্ষক কলাম)
ইতালি, ফ্রান্স, বেলজিয়াম এবং সুইজারল্যান্ড ও কানাডার ফরাসি ভাষাভাষি অঞ্চলে ১লা এপ্রিলের প্রথাটি ‘এপ্রিল ফিস’ হিসেবে পরিচিত। এখানকার বোকা বানানোর পদ্ধতি একেবারেই ভিন্ন। এখানকার লোকেরা এদিনে বন্ধু-বান্ধবদের পিঠে কাগজের মাছ ঝুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে, তবে শর্ত থাকে যে মাছ ঝোলানোর সময় ঐ ব্যক্তির টের পেলেই পাশা উল্টে যাবে। (International Business Times. পত্রিকায় ২৭/০৩/২০১৩ইং তারিখে প্রকাশিত "April Fool’s Day: 8 Interesting Things And Hoaxes You Didn't Know" শীর্ষক কলাম)
সমসাময়িক অন্যান্য দিবস এবং রীতিনীতি ঃ
বিশ্বের কয়েকটি অঞ্চলে বছরের বিভিন্ন সময়ে ‘এপ্রিল ফুল’-এর মতোই কিছু উৎসব উদযাপন করা হয়। স্পেন, ম্যাক্সিকো ও হিস্পানিক আমেরিকায় ২৮শে ডিসেম্বরে "Day of the Holy Innocents" বা পবিত্র নিস্পাপদের দিবস নামে একটি উৎসব পালন করা হয়। যদিও দিবসটির মূল তাৎপর্য ধর্মীয়, কিন্তু এই দিনেরও ঐ অঞ্চলের মানুষ বন্ধু-বান্ধব ও নিকটজনদের সাথে এপ্রিল ফুলের মতোই হাস্য-কৌতুক করে থাকে। যখনি কেউ কাউকে নিয়ে কৌতুক করতে সফল হয়, কৌতুককারী সজোরে বলে ওঠে--- Inocente palomita que te dejaste engañar ("You innocent little dove that let yourself be fooled") , আর ম্যাক্সিকোতে বলা হয়- Inocente para siempre! (Innocent forever!)। আর্জেন্টিনায় এমন কৌতুকের পরিসমাপ্তি হয় Que la inocencia te valga বলে। ব্রাজিল ও মেনোরকা দ্বীপপুঞ্জে ১লা এপ্রিল পালিত হয় যথাক্রমে "Dia da mentira" ("Day of the lie") ও Dia d'enganyar ("Fooling day")শিরোনামে।
‘এপ্রিল ফুল’ ও স্পেনের গ্রানাডায় মুসলিম গনহত্যাঃ-
এপ্রিল ফুলের ইতিহাস নিয়ে প্রায় সমস্ত বিশ্বের মুসলমানদের মধ্যে একটি প্রচলিত ধারণা হল- ‘এপ্রিল ফুল’ পালনের ইতিহাসটি এসেছে স্পেনের রাজা ফার্ডিনান্ড ও রাণী ইসাবেলা কর্তৃক নিরীহ মুসলমানদের বোকা বানিয়ে পুড়িয়ে মারার ঘটনা থেকে। ইতিহাসটি অনেকটা এরকম- ৭১২ সালে মুসলিম সেনাপতি তারেক বিন জিয়াদ কর্তৃক স্পেন বিজিত হওয়ার পর সেখানে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। সুদীর্ঘ ৮০০ বছর এই শাসন সগৌরবে অব্যাহত থাকে। নবম থেকে পঞ্চদশ শতক খ্রিষ্টানদের মধ্য যুগের শেষ পর্যায়। স্পেনের গ্রানাডার মুসলিম রাষ্ট্র তীব্র গতিতে ছুটছিল ধ্বংসের দিকে। রাজা পঞ্চম ফার্ডিনান্ডের সাথে পর্তুগিজ রানী ইসাবেলার বিয়ের মাধ্যমে গড়ে ওঠা খ্রিষ্টান শক্তির ঐক্য স্পেনে মিটমিট করে জ্বলতে থাকা মুসলমানদের প্রদীপে বাতাসের প্রবল ঝাপটা দিলো। ফার্ডিনান্ডের শক্তির সামনে ছোট ছোট খ্রিষ্টান শাসকরা ছিল সাধারণ সর্দারের মতো। মুসলমানদের ধর্মচ্যুত করার কঠোর প্রয়াস চলে ফার্ডিনান্ডের আমলে। মুসলমানদের আরবি পড়া নিষিদ্ধ হয়। আরবীয় পোশাক বেআইনি করা হয়। বাধ্য করা হয় মুসলমানদের খ্রিষ্টান স্কুলে ভর্তি হতে। যারা খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করত, তাদের জন্য ছিল বিভিন্ন সুযোগ। মুসলমানদের জন্য বিশেষ পোশাকের ব্যবস্থা ছিল। হাটেঘাটে অপদস্থ করা হতো তাদের।মুসলমানদের নানা দুর্বলতার সুযোগে খ্রিষ্টান শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এবং ষড়যন্ত্রের জাল বোনে স্পেনের মাটি থেকে মুসলমানদের চিরতরে উচ্ছেদ করতে। সে লক্ষ্যে পর্তুগিজ রানী ইসাবেলা চরম মুসলিমবিদ্বেষী পাশের দেশের খ্রিষ্টান সম্রাট ফার্দিন্যান্দের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। দু’জন মিলে মুসলিম নিধনের গভীর ষড়যন্ত্রে নেমে পড়ে। অন্যান্য খ্রিষ্টান সম্রাটও তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে। প্রথমে তারা কৌশলে সপক্ষে আনে স্পেনের যুবরাজকে। তারপর শুর” করে মুসলিম উচ্ছেদ। হাজার হাজার নারী-পুর”ষ হত্যা করে, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে ছুটে আসে শহরে দিকে। ঘুরে দাঁড়ায় মুসলমানেরা। এতে ভড়কে যায় খ্রিষ্টান সম্মিলিত বাহিনী।
পয়লা এপ্রিল। ১৪৯২ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ৮৯৭ হিজরির ১২ রবিউল আউয়াল। নিভে গেল মিটমিট করে জ্বলতে থাকা মুসলিম রাষ্ট্রশক্তির প্রদীপের শেষ আলো। অনেক আগেই রাজা ফার্ডিনান্ড ও রানী ইসাবেলা মুসলমানদের হাত থেকে কর্ডোভাসহ অনেক অঞ্চল দখল করে নিয়েছিলেন। বাকি ছিল গ্রানাডা। এর শাসনকর্তা ছিলেন আবুল হাসান। কিন্তু পুত্র আবু আব্দুল্লাহর বিশ্বাসঘাতকতার জন্য হারান শাসন ক্ষমতা। মসনদে বসেন আবু আব্দুল্লাহ। কিন্তু বেশি দিন স্থায়ী হয়নি তার এ মসনদ। অবশেষে নিজের জীবন বাঁচাতে ফার্ডিনান্ডের সাথে সন্ধি করেন। বীর সেনাপতি মুসা রাজা ফার্ডিনান্ডের কাছে আত্মসমর্পণের চেয়ে সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করে প্রাণ বিসর্জন দেয়াকেই অধিক সম্মানজনক মনে করে ছিলেন। আবু আব্দুল্লাহ খ্রিষ্টানদের কাছে আত্মসমর্পণ করে প্রাণে রক্ষা পাবেন বলে যে ধারণা করেছিলেন, শিগগিরই তা মিথ্যায় পর্যবসিত হয়। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ফার্ডিনান্ড বাহিনী শহর অবরোধ করে রাখে। বিচ্ছিন্নভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যান কিছু মুসলমান। এ সময় রাজা ফার্ডিনান্ডের একটি ঘোষণাপত্র প্রচার করা হয়¬ ‘যেসব মুসলমান নিরস্ত্র হয়ে গ্রানাডার মসজিদগুলোতে আশ্রয় নেবে তাদের পূর্ণ নিরাপত্তা দেয়া হবে। আর যারা খ্রিষ্টান জাহাজগুলোতে আশ্রয় নেবে, তাদের অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেয়া হবে। অন্যথায় আমাদের হাতে তোমাদের প্রাণ হারাতে হবে।’ অসহায় মুসলমানরা সরল বিশ্বাসে বন্ধ করে দেন যুদ্ধ। অনেকে আরোহণ করেন জাহাজে, অনেকে আশ্রয় নেন মসজিদে। কিন্তু প্রতারক ফার্ডিনেন্ড মসজিদে আশ্রয় গ্রহণকারী নিরস্ত্র মুসলিম শিশু-বৃদ্ধ নরনারীকে পুড়িয়ে এবং জাহাজে আরোহণকারী মুসলমানদের জাহাজ ডুবিয়ে হত্যা করে।
“গ্রানাডার ট্র্যাজেডি” ও কিছু প্রশ্নঃ-
স্পেনে মুসলমানদের পরাজয় ও গ্রানাডায় অসহায় মুসলমানদের পুড়িয়ে মারার এই ঘটনাটি দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত আছে। সাধারণ মুসলমান এবং অনেক বিজ্ঞ আলেম এই ঘটনাটিকে পুরোপুরি সত্য হিসেবে মেনে নিলেও ইতিহাসের বই ছেঁকে কিন্তু এই ঘটনাটিকে প্রমাণ করা যায়নি। বিখ্যাত নাবিক ও আমেরিকার আবিস্কারক ক্রিস্টোফার কলম্বাস মুসলমানদের পরাজয় বরণের সময় স্পেনেই অবস্থান করছিলেন। করছিলেন। তিনিও অত্যন্ত বেদনাহত ভাষায় মুসলমানদের পরাজয়ের ব্যাপারটি বর্ণনা করেছেন। তিনি তার ডায়েরিতে সেদিনের সে ঘটনাটি খুব নিপুণভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি লিখেছেন-... This present year of 1492, after Your Highnesses had brought to an end the war with the Moors who ruled in Europe and had concluded the war in the very great city of Granada, where this present year on the second day of the month of January I saw the Royal Standards of Your Highnesses placed by force of arms on the towers of the Alhambra, which is the fortress of the said city; and I saw the Moorish King come out to the gates of the city and kiss the Royal Hands of Your Highnesses and of the Prince my Lord;(E. G. Bourne, ed., The Northmen, Columbus and Cabot (New York, 1906) কলম্বাস বলছেন,, ‘১৪৯২ সালে মহামান্য রানি গ্রানাডা শহর দখলের মাধ্যমে ‘মুর’দের (স্পেন ও গ্রানাডায় বসবাসকারী মুসলমানদের সে দেশের খ্রিস্টানরা মুর বলতো) হাত থেকে যুদ্ধ করে ছিনিয়ে আনেন বিজয়। মহামান্য রানি কর্তৃক মুরদের কাছ থেকে গ্রানাডা দখলের পর আমি শহরের দুর্গ আলহামরার চূড়ায় রাজকীয় পতাকা উড়তে দেখেছি। ...এবং আমি দেখলাম মুরদের রাজা (আবু আব্দুল্লাহ) শহর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় রানি এবং রাজকুমারের হাতে চুমু খেলেন...।’ কলম্বাসের ডায়েরিতেও পরাজয়ের দিন মসজিদে ঢুকিয়ে পুড়িয়ে মারার কোনো তথ্য নেই। পরবর্তী কয়েকমাসের দিনপঞ্জিও পাওয়া গেছে তবে সেগুলোর মধ্যেও এধরনের কোনো ঘটনার উল্লেখ নেই। তবে এই কথা কোনভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই যে, গ্রানাডা চুক্তির পরও খ্রিস্টান কর্তৃক বিভিন্ন পর্যায়ে মুসলমানদের উপর চলেছে নানাবিধ অসহনীয় অত্যাচার। গ্রানাডা চুক্তি ভঙ্গ করে তাদের জোর করে খ্রিস্টানে রূপান্তর করা অথবা স্পেন ছেড়ে চলে যাওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছিলো চুক্তির অল্প কয়েকমাস পরেই। সেই সাথে স্প্যানিশ সৈনিক, স্থানীয় সরকারী কর্মকর্তা এমনকি চার্চের যাজক কর্তৃক কারণে অকারণে মুসলিম নির্যাতনের ঘটনা ছিলো নিত্যনৈমত্যিক।
এখানে আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, খ্রিস্টানদের এই নির্যাতনের আওতায় কেবল মুসলমানরাই ছিলো না বরং গ্রানাডার অধিবাসী প্রায় তিন লাখ ইহুদিকেও এই একই ভাগ্যবরণ করতে হয়। উপরন্তু ইহুদিদের ওপর খ্রিস্টানরা মুসলমানদের চেয়ে বেশি নির্যাতন চালায় এবং ১৪৯২ সালের ৩১ মার্চ রানি ইসাবেলা ও রাজা ফার্ডিন্যান্ড ইহুদিদের দমনে ‘আল-হামরা ডিক্রি’ নামে একটি অধ্যাদেশ জারি করেন। সেখানে ইহুদিদের দুটি প্রধানশর্ত দেয়া হয়। এক. যদি স্পেনে থাকতে চাও তবে খ্রিস্টানধর্ম গ্রহণ করতে হবে; দুই. অন্যথায় এ দেশ থেকে চলে যেতে হবে। ষড়যন্ত্রপ্রিয় এবং দাঙ্গাপ্রিয় ইহুদিদেরকে অত্যন্ত অপমানজনকভাবে স্পেন থেকে তাড়ানো হয়। ১৪৯২ সালের মার্চে যদিও স্পেনের ইহুদিদের ৩ মাসের সময় দিয়ে আল-হামরা ডিক্রি জারি করা হয় কিন্তু এ ডিক্রির আওতায় মুসলমানরা ছিলো না। কেননা ২ রা জানুয়ারি ১৪৯২ সালে যে ‘ট্রিটি অব গ্রানাডা’ স্বাক্ষরিত হয় সেখানে মুসলমানদের সঙ্গে এ ধরনের কোনো আচরণ করা হবে না বলে শর্তারোপ করা ছিলো। তাই খ্রিস্টান শাসকরা কার্যত তখনো মুসলমানদের ওপর প্রত্যক্ষ কোনো বিধি-নিষেধ আরোপ করতে পারেনি।কিন্তু এর কিছুদিন পর থেকেই ক্রমান্বয়ে খ্রিস্টানরা গ্রানাডাচুক্তির শর্তগুলো ভাঙতে শুর” করে এবং ১৫০১ খ্রিস্টাব্দে তারা তাদের স্বরূপে আবির্ভূত হয়। ইহুদিদের মতো মুসলমানদেরকেও একই শর্ত দিয়ে নতুন অধ্যাদেশ জারি করা হয়; হয় তোমাদের খ্রিস্টান হতে হবে নয়তো ছাড়তে হবে স্পেন। এর পরের ইতিহাস অত্যন্ত বেদনাবহ এবং কর”ণ। প্রাণের ভয়ে হাজার হাজার মুসলমান খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে, নিজেদের মুসলিম পরিচয় বিসর্জন দিয়ে গ্রহণ করে ক্যাথলিকিজম। যাদের সামর্থ্য ছিলো তারা মাতৃভূমি ছেড়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আশ্রয় নেয় আফ্রিকার মুসলিম দেশগুলোতে। আর এভাবেই একসময় সমগ্র স্পেন হয়ে পড়ে মুসলিমশূন্য এক খ্রিস্টান দেশ। অনেকেই মনে করতে পারেন যে, এই দেশত্যাগ এবং খ্রিস্টধর্ম গ্রহণে বাধ্য করার সময়ে হয়তো এপ্রিল ফুল ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, আল-মাকারি বা অন্যান্য ঐতিহাসিকগণ মুসলমানদের স্পেনত্যাগের যে বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন সেখানে এমন কোনো তথ্য পরিবেশিত হয়নি।নির্ভরযোগ্য তথ্যের ওয়েবসাইট উইকিপিডিয়াতে মুসলমানদের স্পেনত্যাগের বিষয়টি অত্যন্ত নিরাবেগভাবে বর্ণনা করার চেষ্টা করা হয়েছে- সূত্র: http://en.wikipedia.org/wiki/Morisco#Genetic_legacy_of_Moriscos _in_Spain G
এ বিষয়টি নিয়ে ২০০৯ সালের ৪ সেপ্টেম্ব বিবিসি Muslim Spain (711-1492) নামে একটি ডকুমেন্টারি আর্টিকেল প্রকাশ করে। আর্টিকেলটির একদম শেষদিকে বলা হয়- The Muslims finally lost all power in Spain in 1492. By 1502 the Christian rulers issued an order requiring all Muslims to convert to Christianity, and when this didn't work, they imposed brutal restrictions on the remaining Spanish Muslims. “মুসলিমরা চূড়ান্তভাবে তাদের ক্ষমতা হারায় ১৪৯২ সালে। ১৫০২ সালে খ্রিস্টান সরকার এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে সমস্ত মুসলমানকে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হওয়ার আদেশ দেয়; সবাই সেটি মান্য না করায় তাদের ওপর নেমে আসে পাশবিক নির্যাতন।” সূত্র : http://www.bbc.co.uk/religion/religions/islam/history/spain_1.shtml
স্পেনে মুসলমানদের পরাজয়ের ঘটনার কয়েক দশক পরে আলজেরিয়ায় জন্ম নেয়া বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আবুল আব্বাস আহমাদ ইবনে মোহাম্মদ আল মাকারি (১৫৭৮-১৬৩২) স্পেনে মুসলমানদের আগমন, শাসন এবং পতন নিয়ে রচনা করেন The history of the Mohammedan Dynasties in Spain (extracted from the Nafhu-t-Tib Min Ghosni-l-Andalusi-r-Rattib. Volume 2) (মূল আরবি বইয়ের ইংরেজি অনুবাদ) ‘দ্য হিস্ট্রি অব দ্য মোহাম্মাদান ডাইনেস্টি ইন স্পেন’। এ গ্রন্থে তিনি অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী ভাষায় ধারাবাহিক বর্ণনায় স্পেনে মুসলমানদের পরাজয়ের বিষয়গুলো লিপিবদ্ধ করেছেন। কিন্তু কোথাও তিনি এপ্রিল ফুল জাতীয় কোনো ঘটনার কথা উল্লেখ করেননি। উল্লিখিত গ্রন্থের ৪৪ নং পৃষ্ঠায় তিনি The End of Islamic Garnata‘ইসলামি গ্রানাডার সমাপ্তি’ শিরোনামে একটি অনুচ্ছেদে পরাজয়ের ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন এবং পরাজয় পরবর্তী সময়ে মুসলমানদের সঙ্গে খ্রিস্টান শাসকরা কেমন আচরণ করেছেন সে বিষয়েও আলোকপাত করেছেন। ঘটনার এতো নিকটবর্তী সময়ের একজন সমসাময়িক মুসলিম ঐতিহাসিক এমন বীভৎস ঘটনা ঘটে থাকলে তা উল্লেখ করবেন না- এমনটি ভাবা ভুল। তার ওপর তার পূর্বপুর”ষরাও ছিলেন স্পেনীয়। তিনিও বাস করতেন স্পেনের পার্শ্ববর্তী রাজ্যে। সুতরাং তার ইতিহাসগ্রন্থে এমন একটি গুর”ত্বপূর্ণ ঘটনা বাদ যাবে- তা হতে পারে না। তিনি তার গ্রন্থের ৪৪ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন- After a series of negotiations and assurances that the Christians would safeguard the agreement that was about to be signed, the Garnata Capitulations were signed in 1491, (otherwise known as The Treaty of Garnata), and in 1492 the Christian forces took over the city, and thus Islamic rule of Andalus ended after almost 780 years of continuous rule. Albeit this did not mean that 1492 marked the end of the Muslim presence in Andalus... পুরো অনুচ্ছেদে মুসলমানদের মসজিদে ঢুকিয়ে আগুনে পুড়িয়ে মারার কোনো তথ্যই নেই বা এই জাতীয় কোনো ঘটনার কথাও বলা হয়নি।
উপরোক্ত তথ্যাদি ও আরো কিছু উপাত্তের উপর ভিত্তি করে কিছু সংখ্যক আধুনিক ঐতিহাসিক “গ্রানাডা ট্রাজেডি”কে শুধুমাত্র প্রচলিত মুখরোচক গল্প হিসেবেই উড়িয়ে দেন।
তবে এই ঘটনার পক্ষে যারা, তারা কিছু যুক্তির মাধ্যমে তাদের দাবীকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করেন। স্বনামধণ্য ভারতীয় ঐতিহাসিক আল্লামা গোলাম মূর্তজা স্থানীয় ইসলামী ম্যাগাজিনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “মোঘল শাসনামলে ভারতবর্ষের মুসলমানের সংখ্যা কোনমতেই নগন্য ছিলো না। তা স্বত্ত্বেও আকবর কর্তৃক মসজিদ ধ্বংস করে তদস্থলে ঘোড়ার আস্তাবল, সরাইখানা ও মন্দির নির্মাণ এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকার হরণের জন্য জারীকৃত বিভিন্ন আইন সংক্রান্ত ঘটনাবলি এখন মুল ধারার ইতিহাস হতে প্রায় বিলুপ্ত । সেখানে পরাজিত ও বিতাড়িত দূর্বল গ্রানাডার মুসলমানদের পক্ষে খ্রিস্টান ও ইহুদি ঐতিহাসিক কর্তৃক পরিবেশিত ইতিহাস যে একেবারে নিখাদ সত্য হবে, বা এমন কোন ঘটনা চেপে যাবে না তা বিশ্বাস করাও তো শক্তই বটে!”
‘এপ্রিল ফুল’ ও মুসলিমদের ভূমিকাঃ-
ইসলাম মানুষকে শিক্ষা দেয় সর্বোত্তম চরিত্র ও জীবন আদর্শের। একজন মুসলমানের চরিত্র বে নির্মল, সরল ও সততায় পরিপূর্ণ। একজন মুসলমান হবে রাসূল (সাঃ)-এর চরিত্রের অনুসারী। সুতরাং, এমনকি হাসি-ঠাট্টায়ও মিথ্যা, ছল-চাতুরী বা ধোঁকা দেওয়া মুসলমানের চরিত্র হতে পারে না। হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন “যে ধোঁকা দেয় বা প্রতারণা করে সে আমার উম্মত নয়।”
তাছাড়ও, মুসলমানদের জন্য শুধু তারাই অনুসরণীয় যারা ইসলামী আদর্শ ও চরিত্রের আলোয় আলোকিত। পথভ্রষ্ঠ আহলে কিতাব তথা ইহুদি-খ্রিষ্ঠানদের রীতি-নীতি, প্রথা-প্রচলণ অনুসরণ মুসলমানদের জন্য আদৌ অনুমোদিত নয়। হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে তার হাশর-নশর তাদের সাথে হবে।”
ইসলামী দৃষ্টিকোণে অন্যতম ঘৃণিত হচ্ছে হাসি-মসকরাচ্ছলে মিথ্যা বলা। অনেকে ধারণা করে যে হাসি-রসিকতায় মিথ্যা বলা বৈধ। আর এ থেকেই বিশ্ব ধোঁকা দিবস বা এপ্রিল ফুলের জন্ম। এটা ভুল ধারণা, এর কোন ভিত্তি ইসলামে নেই। রসিকতা কিংবা স্বাভাবিক অবস্থায় মিথ্যা সর্বাবস্থায় হারাম। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমি রসিকতা করি ঠিক, তবে সত্য ব্যতীত কখনো মিথ্যা বলি না”। (তাবরানী ১২/৩৯১; ছহীহুল জামে হা/২৪৯৪)।
আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, ছাহাবায়ে কেরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা একদা বললেন, ইয়া রসূলুল্লাহু! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি তো আমাদের সঙ্গে রসিকতা করেন। তিনি বললেন, আমি সত্য ভিন্ন কিছু বলি না। (তিরমিযী শরীফ)।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ‘এপ্রিল ফুল ডে’ উদযাপন তথা একে অন্যকে বোকা বানিয়ে, মিথ্যা বলে আনন্দ লাভ করার প্রচেষ্টা ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শের পরিপন্থী। সুতরাং এ থেকে আমাদের বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সহী সমঝ দান কর”ন-আমীন!
বিষয়: বিবিধ
২৮৩৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক দিন এপ্রিল ফুল ডের একটি ইতিহাস নিয়ে হাজির হওয়ার জন্য অনেক ভালো লাগলো ।
গুরুত্বপূর্ণ চমৎকার পোষ্টটির জন্য জাযাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন