বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্লাসফেমি আইন ও এর প্রয়োগ কেন প্রয়োজন

লিখেছেন লিখেছেন চিরবিদ্রোহী ১৪ নভেম্বর, ২০১৪, ০৭:২৬:২১ সন্ধ্যা



গত এক-দেড় মাস সময়ের মধ্যে দেশে-বিদেশে দৃষ্টি ও মনযোগ আকর্ষণ করার মতো বেশ কটি ঘটনা ঘটেছে। সেসবের মধ্য থেকে তিনটি বিষয় নিয়ে এখানে পাঠকের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই। গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকের ঘটনা। পবিত্র হজ্বের একদম আগ মুহূর্তেই বলা যায়। এদেশের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী ব্যক্তি বিশ্ব মানবতার মহান ত্রাণকর্তা, নবী ও রাসূলদের সরদার, দোজাহানের বাদশাহ হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্য করেছে। আব্দুল লতীফ ছিদ্দিকী নামধারী ঐ পক্ককেশী লোকটি ইসলামের অন্যতম রুকন হজ্বের প্রতি তার বিদ্বেষ ও ঘৃণা প্রকাশ করতে গিয়ে সরাসরি রাসূলে কারীমের প্রতিই তার অন্তরের বিষ প্রকাশ করে দিয়েছে। সে ওই বক্তব্যে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম মানব-কাফেলা হযরাত সাহাবায়ে কেরামকেও ‘ডাকাত’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ ও তাচ্ছিল্যের সঙ্গেই সে আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে ‘টাঙ্গাইল সমিতি’ নামের একটি অপদার্থ আঞ্চলিক সংগঠনের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে এসব বক্তব্য রাখে (যদি তারা পদার্থ হত তবে কি এসব নিরবে শুনে যেত)। তার কুৎসিত বক্তব্যের সবটুকুরই অডিও-ভিডিও ফুটেজ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের আর্কাইভসহ ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোতে সংরক্ষিত আছে। সে বিষয়ে সবাই কমবেশি জানেন। এর পর সে বক্তব্য নিয়ে দেশব্যপি কী প্রতিক্রিয়া হয়েছে সেটাও কারো অজানা নয়। কিছুদিনের মধ্যে তাকে মন্ত্রীসভা থেকে ও সরকারী দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী সে এখন ভারতে পালিয়ে আছে। দেশের বিভিন্ন আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে। ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে গ্রেফতার করে এনে শাস্তি দেয়ার দাবিতে কয়েকটি ইসলামী দলের ডাকে গত ২৬ অক্টোবর রোববার দিনব্যাপি একটি হরতালও পালিত হয়েছে।

প্রায় ৯০% মুসলমানের দেশের ট্যাক্সের টাকায় বেতন-ভাতা পাওয়া ও প্রাচুর্যের জীবন-যাপনকারী মন্ত্রী পদবিধারী ওই লোকটি তাদেরই খরচে বিদেশে গিয়ে যে অসভ্যতা ও বর্বরতার পরিচয় দিয়েছে তার সম্পর্কে এখানে বিশেষ আলোচনা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। বরং এ সম্পর্কে কয়েকটি বিষয় পাঠকদের সামনে নিয়ে আসা আমরা প্রয়োজনীয় বোধ করছি। প্রথমত সরকারপন্থী ও সেক্যুলার গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে বলা হচ্ছে- ‘হজ্ব ও তাবলিগ সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্যের কারণে’ ওই ব্যক্তিকে মন্ত্রীত্ব থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে ইত্যাদি। তবে ওই কারণ দুটি সঠিক হলেও মূল বিষয়বস্তু আরো ভয়ংকর ও সাংঘাতিক। সে মূলত নবীজীর প্রতি এবং নবীজীর সাহাবীদের প্রতি চরম কুৎসা রটনা ও বিষোদ্গার করেছে। তার বিষোদ্গারের ভাষা ও বিষয়বস্তু ছিল এতটাই জঘন্য যে, স্মরণকালের মধ্যে পৃথিবীর কোনো অমুসলিম রাষ্ট্রের অমুসলিম মন্ত্রীও এ ভাষায় প্রকাশ্যে উক্তি করেছেন বলে শোনা যায়নি। তাকে চরম বেয়াদব, ধৃষ্ট ও শয়তান বললেও কম বলা হবে। মুসলিম পরিবারের সন্তান হিসেবে নিশ্চিতভাবেই সে এক পরিণত মুরতাদের দৃষ্টান্ত।

দ্বিতীয়ত, তার ওই জঘন্য উক্তি প্রকাশের পর তার সামনে দুঃখ ও অনুতাপ প্রকাশের বেশ কয়েকটি সুযোগ পার হয়েছে। সে কোনো সুযোগেই নিজের অপকর্ম থেকে ফিরে আসার মনোভাব দেখাতে পারেনি। বিভিন্ন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় এবং সর্বশেষ দলীয় কারণ-দর্শানো নোটিশের জবাবেও ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যের প্রতি তার অনমনীয় শয়তানীর পক্ষেই সে অবস্থান নিয়েছে। তার কাছ থেকে কোনো অনুতাপই পাওয়া যায়নি। এমনকি তার রাজনীতিক ছোটভাই তার পক্ষে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়ায় সে তার প্রতিও প্রকাশ্যে রুষ্টতা প্রকাশ করেছে। শেষ পর্যন্ত সরকার ‘নিরাপদে’ তাকে সরিয়ে দিয়েছে। দলকেও তার কাছ থেকে সরিয়ে নিয়েছে। কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, ওই ব্যক্তিকে সরকার ও সরকারী দল থেকে সরিয়ে দেওয়ার বড় কারণ ছিল অন্য জায়গায়। সেটা হচ্ছে, ওই বক্তব্যেই ওই মন্ত্রী (এখন সাবেক) প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয় সম্পর্কেও তাচ্ছিল্যপূর্ণ ভঙ্গিতে একটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিল। ধর্ম অবমাননার কারণে নয়- সে কারণেই তার উপর এসব শাস্তি নেমে এসেছে। যারা ওই ব্যক্তিটি সম্পর্কে সরকারি সিদ্ধান্তের এমন ব্যাখ্যা করেন তারা হয়ত ইসলামধর্ম সম্পর্কিত বিভিন্ন ইস্যুতে এ সরকারের নানা আচরণ ও অবস্থানের সূত্র ধরেই এমনটা করে থাকেন। সে বিষয়ে আমরা যেতে চাই না। আমরা বরং এক ব্যক্তির ধৃষ্টতার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের সিদ্ধান্তকে গণমানুষের দাবি ও চেতনারই প্রতিফলনের অংশ মনে করতে চাই। এজন্য সরকারকে ধন্যবাদও জানাতে চাই।

সেজন্য আমরা এটাও চাই যে, ইন্টারপোলের মাধ্যমে এই অমার্জনীয় অপরাধের হোতাকে দেশে ধরে এনে কমপক্ষে বর্তমান আইনের আওতায় হলেও শাস্তি দেওয়া হোক। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। কারণ, পাশের দেশে তাকে পালিয়ে থাকতে দিয়ে কিছু গ্রেফতারি পরোয়ানার তাৎপর্যহীন খবর ওই ব্যক্তির জন্য কোনো শাস্তিই নয়। তবে তার শাস্তি কার্যকরের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি আহবানকারীদের সমালোচনা করে কোনো কোনো মহল পরামর্শ দিয়ে বলেছে যে, সরকার তো সম্ভব সব কিছুই তার বিরুদ্ধে করেছে। ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে গ্রেফতার করার মতো ক্ষমতা ও সুবিধা তো সরকারের নেই। এর উত্তরে আমরা বলব, যারা এমন পরামর্শ দিচ্ছেন, তারা যুক্তি ও আবেগের দিক থেকে মুসলমানদের হৃদয়ের উত্তাপ ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তারা কেবল দায় সারার জন্য শুকনো কিছু কথা উগড়ে দিয়েছেন। কারণ, ইন্টারপোল ছাড়াও ভারতের সঙ্গে বর্তমান সরকারের বন্দিবিনিময় ও অন্য কিছু ‘বিনিময়মূলক’ চুক্তিও রয়েছে। যে কারণে দুটি সরকারই পরষ্পরের স্বার্থ অনুযায়ী অপর দেশে থেকে নিজ দেশের অপরাধী নিতে-আনতে পারে। ইতোমধ্যেই সে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। শুধু যে কোনো সরকারের ইচ্ছা ও প্রাধান্যের বিষয়টিই এখানে মুখ্য। তা ছাড়া যদি তা না-ও পারা যায়, তার মতো ধৃষ্ট ও অমার্জনীয় অপরাধের হোতাকে যদি দেশে না-ও আনা যায়, আইনি প্রক্রিয়ায় দেশে অবস্থিত তার বাড়ি-ঘর, সম্পত্তি সব ক্রোক করে তাকে দেউলিয়া করে তো ছেড়ে দেয়া যায়। এরও নযীর এ সরকারের আমলে স্থাপিত হয়েছে। অবশ্য এসকল দূর্নীতিবাজদের বিদেশে গচ্ছিত অর্থের কথা চিমত্মা না করাই ভাল। এছাড়া সে যে বর্বর বক্তব্য দিয়েছে তার জন্য প্রকাশ্যে না হলে ইসলামবিদ্বেষী দেশি-বিদেশীদের করুণা তো পাবেই।

সুতরাং এ ধৃষ্ট ব্যক্তিটির শাস্তির জন্য মন্ত্রীসভা ও দল থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়াই যথেষ্ট হয়ে গেছে - এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। একইসঙ্গে এটাও প্রশ্নবোধক হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, ইসলাম অবমাননার শাস্তির জন্য প্রচলিত আইনই যথেষ্ট, নতুন আইনের প্রয়োজন নেই বলে যারা বিভিন্ন সময়ে দাবি করেন তারা সঠিক কথা বলেন কি না। তাদের দাবি সঠিক হলে ওই পলাতক ব্যক্তিকে এখন নিশ্চয়ই কারাগারের ভেতরে থাকতে হত। সে পালানোর সুযোগই পেত না। কিংবা পালানোর চেষ্টা করলেও আইন ও প্রয়োগের কঠোরতার কারণেই তাকে আমরা শাস্তির আওতার মধ্যে দেখতে পেতাম। সুতরাং ধর্মপ্রাণ জনগণের পক্ষে এ সিদ্ধান্তে আসাই সঙ্গত যে, প্রচলিত আইন এক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়, রাসূল অবমাননা ও ইসলাম-অবমাননার জন্য ব্লাসফেমী-জাতীয় কঠোর আইন এ দেশে পাশ করাই দরকার। তা না হলে কিছু সংখ্যক ধৃষ্ট ইসলামবিদ্বেষী বস্নগারের মতো তাদের কিছু পক্ককেশী পৃষ্ঠপোষককেও শাস্তির আওতায় আনা যায় না। এখানে আরেকটি বিষয়ও প্রাসঙ্গিক। সেটি হচ্ছে, যে লোক জাতিসংঘের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে নিউইয়র্কে গেল, সে এরপর নিজের সটকে পড়ার পথ নিজেই ঠিক করে নিতে পারল কীভাবে? এসব দুষ্ট-দূর্নীতিবাজদের লালন করার ক্ষতি এখন শুধু সরকারই বহন করবে না। এ গ্লানি বইছে পুরো জাতি। সরকারের আগের ৫ বছর পাটমন্ত্রণালয়ে থেকে দেশের শত শত কোটি টাকা ক্ষতি করার ক্ষেত্রে তার দূর্ণীতি নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন আগেও প্রকাশিত হয়েছে। তবুও নতুন সরকারে সে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় পেয়েছে। সরকার তো তাৎক্ষণিকভাবে তার ভিসা প্রত্যাহার করাতে পারতো। তা হলে ভারতে না গিয়ে ওই পলাতক আসামীটিকে বাংলদেশেই ফিরতে বাধ্য হতে হতো। হয় সরকার তাকে নিরাপদে সটকে পড়ার সুযোগ দিয়েছে, অথবা অতি স্পর্শকাতর বিষয়টির গুরুত্ব তাৎক্ষণিকভাবে উপলব্ধি করতে ব্যার্থ হয়েছে। নতুবা এ বিষয়ের আইনে প্রয়োজনীয় পরিমাণ কঠোরতা নেই। সে ক্ষেত্রে নতুন ব্লাসফেমী আইনের যৌক্তিকতাই প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলত রাসূল অবমাননার মধ্য দিয়ে যারা কোটি কোটি বিশ্বাসী মানুষের হৃদয়ে ছুরি চালিয়ে একটি উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে- তাদের সর্বোচ্চ কিংবা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পৃথিবীবাসীর শান্তি ও স্বস্তির জন্যেই হওয়া দরকার। তাদের অমার্জনীয় পাপের দায় কেউ নিতে পারে না। তাই সে চেষ্টাও কারো করা উচিত নয়। রাষ্ট্র ও সমাজের শৃঙ্খলা ও শান্তি নিশ্চিত করা এবং নাগরিকদের পারস্পরিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য রাসূল ও ধর্ম অবমাননা বিরোধী কঠোর আইন প্রণয়ন ও তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে যত বিলম্ব হবে ততই এসব ক্রিড়নকরা তাদের মতলবী ঔদ্ধত্য দেখাতে থাকবে।

দুই. অন্যান্য মন্ত্রী ও পদস্থ আমলাদের সাথে বর্তমান সরকারের দুজন মন্ত্রী এবার পবিত্র হজ্ব পালন করতে গিয়েছিলেন। সে দুজনই মূল শাসক দলের সঙ্গে যুক্ত দুটি শরিক বামদলের প্রধান। সে কারণে তাদের হজ্ব পালন নিয়ে সংবাদমাধ্যমে নানা ধরনের খবর ও প্রতিক্রিয়া প্রকাশিত হয়েছে। অন্য দেশগুলোর মত এদেশেও বাম রাজনীতি মানে সমাজতন্ত্রের পাশাপাশি ধর্মহীনতা বা ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠারও রাজনীতি। তবে পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতার চেয়ে বাংলাদেশে এই দ্বিতীয় চেষ্টাটাই বামরাজনীতির বড় বৈশিষ্ট্য। তো সেই রাজনীতির দুই সরব ও সোচ্চার কা-ারির হজ্ব-গমন নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন কথা ও মন্তব্য উচ্চারিত হয়েছে। তাদের পক্ষের ও বিপক্ষেরর লোকজন উভয়েই তাতে অংশ নিয়েছে। পক্ষের লোকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আক্ষেপভরা স্বরে লিখেছে -‘লেলিন ও কার্ল-মার্কসের আত্মা এবার কষ্ট পাচ্ছে’ ‘শেষ পর্যন্ত দুই কমরেডও হজ্বে গেল’ এ জাতীয় বহু বাক্য। আবার বিপক্ষের লোকজন বিদ্রম্নপ করে লিখেছে -‘লাখো চুহা মারকে বিল্লি চলে হজ্ব মে’ ‘ঈমানের ঠিক নেই হজ্বের নামে পেরেশান’ - এ জাতীয় কিছু কিছু বাক্য। এমনকি সংবাদ মাধ্যমে ‘কমরেড হাজ্বী’ শিরোনামে খবরও ছাপা হয়েছে। আমরা অবশ্য তাদের এই হজ্ব পালনের বিষয়টিকে উপরোক্ত যে কোনো একটি প্রান্ত থেকে দেখতে আগ্রহী নই।

আমরা মনে করি মুসলমানের সমত্মান জীবদ্দশায় যে কোনো সময় তার দ্বীন-বিরোধী চিন্তা, বোধ কিংবা কর্মকাণ্ড থেকে তওবা করে আল্লাহর ঘরে হাজির হতেই পারেন। এটা অবশ্যই তার দ্বীনী বোধ ও চিন্তার বিষয়। এখানে দ্বার রুদ্ধ হওয়ার বা করার কোনো ব্যাপার নেই। তবে একথা সত্য যে, এ দু’জন মন্ত্রী এদেশের প্রেক্ষাপটে চূড়ান্ত সেক্যুলার রাজনীতি ও জীবনধারার প্রকাশ্য প্রবক্তা রূপেই পরিচিত। সে হিসেবে বিভিন্ন সময় নাসিত্মক্যবাদী ইসলামবিদ্বেষী মহল তাদের-সমর্থন সহানুভূতি পেয়েছে। বিভিন্ন ইস্যুতে তারাও তাদের পক্ষে উচ্চকণ্ঠে দাঁড়িয়েছেন। নারী, জীবন, অর্থ, শাসন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ইসলামী অনুশাসনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বক্তব্য ও অবস্থানে হজ্বে যাওয়ার আগ পর্যন্তও তারা অটল ছিলেন। ষড়যন্ত্রকারী মুরতাদ কাদিয়ানীদের পক্ষে সহযোগিতার জন্য তারা বকশিবাজারের কাদিয়ানীকেন্দ্রে গিয়ে সম্মাননাপ্রাপ্ত হয়েছেন। এসবই সত্য। এর সঙ্গে এটাও সত্য যে, তারা হজ্বে গিয়েছেন। খবরে জানা গেছে, একজন সরকারী খরচে, আরেকজন সস্ত্রীক ব্যক্তিগত খরচে হজ্ব করতে গিয়েছেন। আমরা জানি, মৌলিক বিষয়ে ইসলামের প্রকাশ্য বিরোধিতা আর ইসলামের একটি মহান রুকনের পালন একসঙ্গে গ্রহণযোগ্য হয় না। তাই আমরা এটাই ধরে নিতে চাই যে, একজন মুসলিম যেমন অতীত ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা চেয়ে হজ্বে পবিত্র হওয়ার চেষ্টা করেন- তেমনি তারাও সেই চেষ্টা আন্তরিকভাবে করেছেন। রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক বোধ ও চেতনার ইসলামরৈরী জায়গাগুলো থেকে তওবা করেছেন। তাদের মনের খবর জানার ক্ষমতা আমাদের কেন জগতের কোনো মানুষেরই নেই। সে হিসেবে হজ্ব-উপযোগী যে মনো-মানসিক অবস্থান কাম্য, আমরা তাদের ক্ষেত্রে সেটাই প্রত্যাশা করি। এখানে একটি কথার উল্লেখ আমরা প্রাসঙ্গিক মনে করি। সেটি হচ্ছে, তারা তো হজ্বে অবশ্যই তালবিয়া পড়েছেন। লাববাইক আল্লাহুম্মা লাববাইক... (হাজির হে প্রভু আমি হাজির)। তালবিয়ার একটি বাক্য হচ্ছে - ইন্নাল হামদা ওয়ান নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুলক...’ (নিশ্চয়ই সব প্রশংসা ও অবদান তোমার এবং রাজত্ব তোমারই)। তালবিয়ার এ বাক্যগুলো যদি তারা পূর্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে উচ্চারণ করেই থাকেন তাহলে অবশ্যই রাজত্বের অধিকারী এবং রাজত্ব চালানোর নীতি সম্পর্কেও তারা যথাযথ উপলব্ধী উচ্চারণ করেছেন। বিশ্ব প্রতিপালকের প্রভুত্ব ও নিজ দাসত্বের সুখকর অনুভূতি নিজেদের মধ্যে জাগ্রত করেছেন। স্বীকৃতি দিয়েছেন ও সমর্পিত হয়েছেন। এবার সে হিসেবেই ভবিষ্যত-জীবনের রাজনৈতিক কর্মপ্রয়াস তারা পরিচালনা করতে পারেন। আমরা তাদেরকে দায়িত্বশীল ও প্রতিশ্রম্নতি রক্ষাকারী মনে করতে চাই বলেই এমন প্রত্যাশা তাদের ব্যাপারে পোষণ করতে চাই।

বিপক্ষের লোকেরা তাদের হজ্ব পালন নিয়ে অনেক রকম কথাই বলেন। আমরা শুরুতেই সে পথে হাঁটা সমীচীন মনে করি না। আমরা বরং দেখতে চাই নিন্দুকের মুখে ছাই ছিটিয়ে দিয়েই তারা প্রকৃত হাজ্বীর নীতি, বোধ ও চরিত্র গ্রহণ করবেন। নিছক রাজনীতির জন্য যে তাদের হজ্বযাত্রা নয়, এটা অবশ্যই তারা ইসলামের বিধানাবলী ও মুসলমানদের সম্পর্কে তাদের বক্তব্য ও আচরণে দেখাবেন বলে আমরা আশা রাখি। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা গায়ে পড়ে আমাদের হতাশ না করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত ইতিবাচক অবস্থান ও চিমত্মা নিয়েই আমরা তাদের হজ্ব পালনের বিষয়টি দেখতে চাই। আল্লাহ রাববুল আলামীন তাওফীকদাতা।

তিন. সপ্তাহ খানেক আগে নাটোরে এক মর্মামিত্মক সড়ক দুর্ঘটনার খবর দেশকে নাড়া দিয়ে গেল। বহু মানুষ হতাহত হয়েছে ওই ঘটনায়। মাস দেড়েক আগে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে রেল দুর্ঘটনায় কয়েকটি প্রাণ ঝরে গেল। এরও আগে পদ্মায় মাদারিপুর-মুন্সিগঞ্জের পথে এক লঞ্চ দুর্ঘটনায় বহু মানুষের সলিল সমাধি হয়ে গেল। বহু লাশ নিখোঁজ থাকা অবস্থাতেই উদ্ধার তৎপরতা বন্ধ করে দেওয়া হল। এরকম দুর্ঘটনা বহু। দিনে দিনে, মাসে মাসে এসব দুর্ঘটনা এবং এসবের ফলে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছেই। নাগরিক জীবনের নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে এটা অত্যন্ত গর্হিত এবং বেদনাদায়ক বিষয়। ইসলাম মানুষের জানমালের স্বাভাবিক নিরাপত্তা দিয়েছে। এটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকার বা প্রশাসনের। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে এসব দুর্ঘটনার দায় কোনোভাবেই সরকার বা প্রশাসন এড়িয়ে যেতে পারে না।

সড়কপথ, নৌপথ বা রেলপথ-যাই বলি না কেন, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রথমেই দায়ী করা হয় গণপরিবহনের চালক ও মালিককে। বলা হয় চালকের খামখেয়ালির জন্য দুর্ঘটনা ঘটেছে। মালিকপক্ষ ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী উঠিয়েছিল। এসব দোষারোপ একদিক থেকে ঠিক। কিন্তু দুর্ঘটনা বারবার ঘটতে দিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দোষারোপের ভূমিকা কিছুতেই সঠিক হতে পারে না। কারণ, এসব খামখেয়ালি ও অতিব্যবসা প্রবণতা বন্ধের দায়িত্ব তো প্রশাসনেরই।

ঐ গণপরিবহনগুলো তো পানি বা মাটির নীচ দিয়ে চলাচল করে না। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সম্মুখেই প্রকাশ্যে চলাচল করে আর তাদের ফিটনেস ও চলাচলের লাইসেন্সও দিয়ে থাকে সরকারী কর্তৃপক্ষ। সে হিসেবে মূল গাফলতির দায় তো তাদেরই। বরং বারবার মারাত্মক সব দুর্ঘটনার পরও চালকদের প্রতিযোগিতা ও খামখেয়ালি প্রমাণ করে যে, দুর্ঘটনার শাস্তি বা দায় নিয়ে তারা মোটেও চিমিত্মত নয়। প্রশাসনের পদক্ষেপ নিয়ে তাদের দুশ্চিমত্মার কিছুই নেই। একই সঙ্গে প্রশাসনের চূড়ায় বসে থাকা অদক্ষ ও উন্নাসিক চালক-শ্রমিকদের উস্কানিদাতা মন্ত্রীদের দায়ও এক্ষেত্রে কম হতে পারে না। ‘শ্রমিকের জান’ এবং এ ধরনের বিভিন্ন খেতাব নিয়ে যারা বলেন, লাইসেন্স পাওয়ার জন্য চালকের শিক্ষা-দীক্ষা ও সচেতনতার কোনো প্রয়োজন নেই, গরু-ছাগল চেনাই যথেষ্ট-তারাই প্রকারান্তরে রাস্তায় রাস্তায় চালকদেরকে খুনের লাইসেন্স তুলে দেন। তাদের কারণেই একশ্রেণীর চালক নির্বিকার ভঙ্গিতে পথচারীদের খুন করতে উৎসাহিত বোধ করে। এজন্যই বলতে হয় যে, দায়িত্বশীলদের দায়িত্ব এড়ানোর কোনো উপায় নেই। ইসলাম তো দায়িত্বশীলদের এসুযোগ দেয়-ই না, আইন, নৈতিকতা ও মানবতার কোনো দৃষ্টিতেই এ সুযোগ পাওয়ার পথ নেই।

প্রাসঙ্গিক আরেকটি বিষয় হচ্ছে, প্রতিটি দুর্ঘটনার জন্য উপর-নিচ, প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ কিংবা মূল বা গৌন যে পর্যায়ের ব্যক্তিরাই দায়ী থাকুক, তাদের নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় আইনের প্রয়োগ নয়। বরং আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিটি শ্রেণী ও চরিত্রের মাঝেই নৈতিকতা সৃষ্টি ও দায়িত্ববোধ বাড়ানোর মেহনত করা। এ জন্য প্রয়োজন দ্বীনী শিক্ষা ও চেতনার প্রশিক্ষণ প্রদান। এর কোনো বিকল্প হতে পারে না। জাগতিক সব দায়, সব শাস্তি এবং ভীতির উর্ধ্বে হল পরকালীন জীবনের কঠোর জবাবদিহি কিংবা বিপর্যয়ের আশংকা। কারো হৃদয়ের ভেতর সে জবাবদিহির চেতনা জাগিয়ে তুলতে পারলে ইনশাআল্লাহ এসব খামখেয়ালি ঘটিত দুর্ঘটনার পরিমাণ এমনিতেই কমে যাবে।

বিষয়: বিবিধ

১১৪৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

284216
১৪ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:১৭
হতভাগা লিখেছেন : নাস্তিকদের (ছুপা ইসলাম বিদ্বেষীদের) ইসলাম বিদ্বেষীতা দেখে মনে হয় যে, এদের জন্যই আবার ব্লাসফেমী আইন ফিরিয়ে আনা উচিত ।

কোটি কোটি মানুষের ধর্ম নিয়ে কটাক্ষকারীকে তো এমনি এমনিই ছেড়ে দেওয়া যায় না বাক-স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে । বাক-স্বাধীনতা মানে তো অন্যকে আঘাত দিয়ে কথা বলা নয় । আপনার যেমন কথা দিয়ে আমাকে আঘাত করার অধিকার আছে , আমি তো আর কথায় পারি না - তাই আমার হাত আমার পক্ষে কথা বলবে । কারণ আক্রান্ত হলে প্রতিঘাত করার অধিকার অটোমেটিকভাবে আমার কাছে চলে আসে।

ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো নাস্তিকদের ব্লাসফেমীতেই আনতে হবে । না হলে তার দেখা দেখি আরও অনেকে সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের মনে আঘাত দিতে থাকবে ।

েএদেরকে থামানোর জন্য রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে আইন বানিয়ে ।

না হলে কোন না কোন সময়ে সংখ্যাগরিষ্টরা এদের উপর রোষ ফলিয়ে ফেলবে ।
১৪ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:২২
227417
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন : কোথায় বাক স্বাধিনতা আইন? যদি এগুলোকে বাক স্বাধিনতা বলে চালিয়ে দিতে চায় তাহলে প্রধানমন্ত্রী বা সরকারের নূন্যতম সমালোচনাকারীকে কেন গ্রেফতার করে নির্যাতন করা হয়? মূলত, এসবই ক্ষমতাশীনদের ষড়যন্ত্র। বিশেষ করে ইনুর মতো লোককে তথ্যমন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব দিয়ে গোটা তথ্য জগতটাকেই নাস্তিকদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
284270
১৪ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১১:৫৩
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম শ্রদ্ধেয় সুহৃদ চির বিদ্রোহী ভাইয়া। বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অতি বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে আপনার অসাধারণ বক্তব্য সম্ভারে হৃদয়গ্রাহী উপস্থাপনা সঠিক মুসলমানদের বিবেক ও ঈমানকে নাড়িয়ে দিবে ইনশাল্লাহ।
আল্লাহ্‌ পাক আমাদের সকলকেই দ্বীনের গুরুত্ব বোঝার মানসিকতা দান, নেক হায়াত এবং জীবনকে পুণ্যময় করার তৌফিক দিন। আমীন
প্রতিটি দুর্ঘটনার জন্য উপর-নিচ, প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ কিংবা মূল বা গৌন যে পর্যায়ের ব্যক্তিরাই দায়ী থাকুক, তাদের নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় আইনের প্রয়োগ নয়। বরং আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিটি শ্রেণী ও চরিত্রের মাঝেই নৈতিকতা সৃষ্টি ও দায়িত্ববোধ বাড়ানোর মেহনত করা। এ জন্য প্রয়োজন দ্বীনী শিক্ষা ও চেতনার প্রশিক্ষণ প্রদান। এর কোনো বিকল্প হতে পারে না। জাগতিক সব দায়, সব শাস্তি এবং ভীতির উর্ধ্বে হল পরকালীন জীবনের কঠোর জবাবদিহি কিংবা বিপর্যয়ের আশংকা। কারো হৃদয়ের ভেতর সে জবাবদিহির চেতনা জাগিয়ে তুলতে পারলে ইনশাআল্লাহ এসব খামখেয়ালি ঘটিত দুর্ঘটনার পরিমাণ এমনিতেই কমে যাবে। একশত ভাগ সহমত।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File