ফরগটেন হিরোস- এ ট্রিবিউট টু দ্যা গ্রেটেস্ট মেন অন আর্থ- Forgotten Heroes- A tribute to the greatest men on earth ( পর্ব-০৩)

লিখেছেন লিখেছেন চিরবিদ্রোহী ৩০ অক্টোবর, ২০১৪, ১০:১৩:৫৯ রাত

[bসাইয়্যেদ মীর নিসার আলী (তীতুমীর) [১৭৮২ - ১৮৩১ খ্রি: [/b]]



(লেখাটি সঙ্গত কারণেই বড়ো। সুতরাং, যারা বিভিন্ন কারণে পড়তে পারেন না, তাঁরা চাইলে পোস্টের শেষে দেওয়া লিঙ্ক থেকে PDF আকৃতিতে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।)

লেখাটির জন্য কলম ধরতেই একটি উর্দূ শের মনে পড়ে গেল

“তা'রিখ তো লিখি, খাতা ও গুস্তাখি ভি কি,

দিওয়ানা থি, তোহমাত ভি কি,

সাচ্চাই কো ছুপায়ি, ঝুট মে গেহরায়ি,

ইয়ে তামাশা হার জামানা মে বাকি রাহি।”

তাই হয়তো! ইতিহাস আসলেই বড় অকৃতজ্ঞ। বুকের তাজা খুনে যারা এর আঁচল সাজায়, সেই আঁচলের ছায়ায় তাদের ছেড়ে সুযোগসন্ধানী কাপুরুষদের টেনে নিয়ে আসে। এভাবেই ইতিহাসের মূল কারিগরেরা থেকে যায় আড়ালে, আর মৌসুমি কিছু ছলবাজ চলে আসে পাদপ্রদিপে। এমনি একজন ইতিহাস রচয়িতা, কৃতঘ্নতার নির্লজ্জতায় যিনি ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছেন স্মৃতির ডালি থেকে, তিনি ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামের অমর মহানায়ক সাইয়্যেদ মীর নিসার আলী (রহ.)।

সত্যের অণুবীক্ষণে যদি মূল ইতিহাসকে পর্যবেক্ষন করা যায়, ভারতবর্ষের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের পুরোভাগেই মুসলমানদের সাহসী ভূমিকা স্পষ্ট হয়ে উঠবে। উপমহাদেশে স্বাধীনতা সংগ্রামের যারা বীজ বপণকারী, পানির বদলে তাজা রক্তে সিঞ্চনকারী, অমূল্য জীবনের বিনিময়ে পরিচর্যাকারী, তারাই আজ হারাতে বসেছেন কালের আঁধারে। আর সেই স্থান ক্রমেই দখল করছে আজীবন ব্রিটিশদের তোষণ, দালালী, চাটুকারী আর মোসাহেবী করে যাওয়া ব্যক্তির দল। অবশ্য এর পিছনে মূল ভূমিকা পালন করছে আমাদের সমাজেরই কিছু অকৃতজ্ঞরা, যারা দালালী আর স্বার্থসিদ্ধির তাড়নায় অন্ধভাবে মূল নায়কদের খলনায়ক আর কাপুরুষ শ্রেণিকে নায়কে পরিণত করার অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এরই একটা নমুনা দিন কয়েক আগে একটি ভার্চুয়াল নিউজ পোটালে কোথাকার কোন স্বকৃত নোমান নামে এক মহামূর্খের লেখা কলাম "বাঁশের কেল্লা’র সুলুক সন্ধান" যেখানে স্বাধীন ভারতের অন্যতম কারিগর বীরকেশরী তীতুমীরকে (রহ.) হিন্দু-মুসলমানের বিভেদসৃষ্টিকারী হিসেবে চিত্রায়িত করার হীন অপচেষ্ঠা করা হয়েছে। ঐ গন্ডমূর্খের লেখার প্রতি পরতে রয়েছে মুসলিম বিদ্বেষ, নাস্তিক তোষণ আর জঘণ্য মিথ্যাচারের দূর্গন্ধ; যদিও এক শ্রেণীর জ্ঞানপাপী দালাল বিশেষ স্বগোত্রীয়ের এই অনুসন্ধাণি ও বিশ্লেষণ মূলক (!) লেখার প্রশংসায় পঞ্চমূখ। দালালী করতে গিয়ে এরা যেভাবে আকাশ-কুসুম মিথ্যাচার করে চলছে, তাতে খোদ শয়তানেরও বোধ হয় লজ্জা লাগবে। কিন্তু শাক দিয়ে কি মাছ ঢাকা যায় রে হতভাগা! এদের এহেন কাজকর্ম দেখে বারংবার কুরআনের সেই আয়াতটা মনে পড়ে যায়-

“তারা (কাফির ও মুনাফিকরা) তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নুর কে নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ অবশ্যই তার নূরের পূর্ণতা বিধান করবেন, যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে। ” (সূরা আত তাওবাহ. আয়াত- ৩২ )

এই ধরণের দালালবাদীদের বিপক্ষে কলম ধরার সময় আমাদের নেই , আর তাদের সেই যোগ্যতাও নেই যে তাদের দিকে দৃষ্টি দেয়া যায় অথবা সমালোচনা করা যায়। কিন্তু এমন এক মহামানবের গায়ে কাদা ছিটানোর ধৃষ্ঠতাকে অংকুরে বিনাশ করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে হাইব্রিড ইতিহাসের পরিবর্তে প্রকৃত ইতিহাস জানানোর গরজ থেকেই কলম ধরতে হলো।

সাইয়্যেদ মীর নিসার আলী তীতুমীর (রহ.)! নামটাই যেন একটা জ্বলন্ত ইতিহাস। ক্ষণজন্মা এই মহান পুরুষের জন্ম ১৭৮২ সালে পশ্চিম বঙ্গেরর ২৪ পরগনা জেলার চাঁদপুর গ্রামে। তিতুমীরের পিতার নাম মীর হাসান আলী এবং মাতার নাম আবেদা রোকেয়া খাতুন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, তাঁর পরিবারের সাথে হযরত আলী (রা)-এর বংশ তালিকার যোগসূত্র রয়েছে। তিতুমীরের পূর্ব পুরুষ সাইয়েদ শাদাত আলী আরব থেকে বাংলায় এসে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। ছোটবেলা থেকেই ডানপিটে ও নির্ভিক ছিলেন। আতা সরকার তার লেখা তীতুমিরের জীবনীতে শৈশবের ডানপিঠে তীতুমীরের একটা ঘটনা দিয়ে শুরু করেছিলেন, ”একবার হঠাৎ তীতুমিরের মাথায় বাঘ পোশার চিন্তা ঢুকলো। ব্যাস, শুরু হয়ে গেল বাঘের সন্ধানে আশপাশের গ্রাম তন্নতন্ন করা। সাথে থাকতো সমবয়সী সহকর্মীরা। একদিন দুপুরে মাত্র বন্ধুদের সাথে বাঘের সন্ধানে বের হয়েছেন, সেখান থেকে মা দুপুরের খাবারের জন্য জোড় করে টেনে নিয়ে আসলেন। খেতে বসে যত তড়িঘড়ি সম্ভব শুরু করলেন। মা বকা দিয়ে বললেন, “এত তাড়ার কি আছে? ধীরে সুস্থ্যে খাও।” কিন্তু তাঁর মাথায় তখন অন্য চিন্তা, সঙ্গীরা অপেক্ষা করছে ওপাড়ার সুপারী বাগানে। এমন সময়ে কে একজন দৌড়ে এসে কানে কানে খবর দিয়ে গেল মন্ডলদের বাড়ীর পিছনে একটা বাঘের বাচ্চা দেখা গেছে। আর কি! খাওয়া দাওয়া ফেলে তখনই দৌড় বাঘ ধরতে.......”

শৈশবে ঘন ঘন জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার কারণে তার নানী চিকিৎসা হিসেবে প্রচন্ড তেতো কালোমেঘা গাছ-গাছড়া খাওয়াতে চাইলে অন্যান্য শিশুর ব্যতিক্রম তিনি অম্লান বদনে খেয়ে নিতেন। তেতো ওষুধ খাওয়ার এই আগ্রহ থেকেই তার নাম পড়ে যায় তেতো মিয়া, কালক্রমে যা তীতুমীরে রূপান্তর হয়।

এ সবের পরও লেখাপড়ায় সমান মনোযোগী ও মেধাবী এবং ধার্মিক ছিলেন। ১৮ বছর বয়সে পবিত্র কুরআনের হিফজ সম্পন্ন করেন। সাথে সাথে আরবী ফারসী ও বাংলা ভাষায় এবং গণিতশাস্ত্রে দক্ষতা অর্জন করেন। পরবর্তীতে হাদীস ও ফিকাহ শাস্ত্রেও পারঙ্গমতা লাভ করেন। একই সাথে নিয়মিত নামাজ, রোজা সহ অন্যান্য নফল ইবাদতে ছিলো সমান আগ্রহ। ছিলেন সময়ের নামকরা কুস্তিগীর, লাঠিবীর ও ব্যায়ামবিদ। ঐতিহাসিকগন বলেন যে, বৃটিশ শাসকের বৈষম্যনীতি এবং বর্ণ হিন্দুদের ঘৃণ্য মনোভাবের বিরুদ্ধে তীতুমীরের মন বিদ্রোহী হয়ে উঠল। তাই এসব অত্যাচারের প্রতিকারের জন্য তিতুমীর প্রতিজ্ঞা করলেন। এ জন্য তিনি নিজেকে শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান করার মনস্ত করলেন। তাই তিনি ওস্তাদ হাফিজ নেয়ামত উল্লাহ্র কাছে শরীরচর্চা শুরু করেন। নিবিড় একাগ্রতা ও একনিষ্ঠার কারণে অল্পদিনেই তিতুমীর কুস্তি, লাঠিখেলা, তলোয়ার ও ঢাল-সড়কির খেলায় পারঙ্গম হয়ে উঠেন।

তীতুমীরের বিপক্ষে প্রথম অপবাদ যৌবনে জমিদারের লাঠিয়াল হিসেবে ভূমি দখল করতে গিয়ে জেলে যাওয়া। কিন্তু এই দাবির পক্ষে প্রচলিত সস্তা কিছু লেখা বাদে নির্ভর যোগ্য কোন সূত্রই আমাদের হাতে নেই। মূলত তার প্রথম যৌবন সম্পর্কে সর্বোচ্চ যা জানা যায় যে, লেখাপড়ার পাশাপাশি ধর্ম কর্মে তার ব্যাপক আগ্রহ ছিলো। কাছাকাছি কোন এক সময় তার পরিচয় হয় উপমহাদেশের আরেক বিপ্লবী প্রবাদ পুরুষ হাজী শরীয়াতউল্লাহর (রহ.) উপযুক্ত সন্তান ও উত্তরসূরী হাজী আলাউদ্দিন দুদু মিয়ার সাথে। পরিচয় বন্ধুত্বের রূপ নেয়। দুদু মিয়াই যুবক তীতুমীরের মধ্যে ভবিষ্যৎ বীরসিংহকে প্রথমে আবিস্কার করেন এবং অত্যাচারী ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বীজ হৃদয়ে বুনে দেন। সদ্য হজ্ব থেকে আগত দুদু মিয়া উপহার হিসেবে একটি তসবিহ তুলে দেন। বছর খানেক পরে তীতুমির হজ্বে যাবার সময় দুদু মিয়ার সাথে সাক্ষাত করতে যান এবং সেখানেও বিপ্লবের বিষয়ে অনেক আলোচনা হয়। অনেক ঐতিহাসিক বলেন যে, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রথম সেনাপতি আমিরুল তীতুর সৈনিকীন সাইয়্যেদ আহমাদ বেরলভী শহীদে বালাকোট (রহ.) সম্পর্কে দুদু মিয়াই তীতুমীরকে অবহিত করেন এবং তার হাতে বাইয়্যাত হওয়ার পরামর্শ দেন। যাই হোক ১৮২২ সালে তীতুমীর হজ্বে গেলেন। সেখানে তার কাঙ্খিত ব্যক্তিত্ব সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদের (রহ.) সাথে সাক্ষাত করেন। প্রথম দর্শনেই হযরতের ব্যক্তিত্ব, গাম্ভির্য, ইলমি গভীরতা ও অনুপ্রেরণামূলক বয়ান তীতুমীরের মনে তাঁর সম্পর্কে আরো গভীর শ্রদ্ধার সৃষ্টি করে। অতঃপর তিনি হযরতের হাতে হাত রেখে বাইয়্যাত লাভ করেন, সেই সাথে আজীবন ব্রিটিশদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। এই সাক্ষাত ও বাইয়্যাত সাধারণ মানুষ তীতুমীরকে ভবিষ্যৎ প্রবাদ পুরুষে পরিণত করতে আদর্শ নিয়ামক হিসেবে কাজ করে, চাপা পরা অগ্নিস্ফুলিঙ্গ পুরোদমে জ্বলে উঠার অনুকুল বাতাস পায়।

১৮২৭ সালে তীতুমীর দেশে ফিরে আসেন এবং স্বীয় শাইখের আদেশানুসারে সহীহ দ্বীনের দাওয়াত ও তাবলিগ করতে শুরু করেন। উপমহাদেশকে ব্রিটিশদের অভিশপ্ত শাসন হতে রক্ষা করার জন্য আদর্শ ও উপযুক্ত সৈনিক তৈরীর একটা উপায় ও ছিলো এটা। বঙ্গের মুসলমানরা তখন শুধু নামেই মুসলমান ছিলো, এমনকি নামেও মুসলমান হিসেবে বোঝার সুযোগ ছিলো না। ইসলামী বিধান থেকে দূরে ছিটকে শিরক-বিদআত ও হিন্দুয়ানা রীতিনীতিই ছিলো তাদের ধর্মকর্মের অংশ। এমতাবস্থায় ধ্বংসের দোরগোড়ায় থাকা মুসলমান সমাজকে প্রকৃত ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসতে তিনি তাবলীগ ও ওয়াজ-নসিহত করতে লাগলেন। তাঁর বাগ্মিতা ছিলো আবেগঘন, হৃদয়গ্রাহী ও জ্বালাময়ী, এর টানে হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে তাঁর সভায় হাজির হতো।

এভাবেই তীতুমীর নিজের জ্ঞান, বাচন ভঙ্গি, ব্যবহার ও সহমর্মীতার ভিত্তিতে সকলের মনে স্থায়ী আসন করে নিলেন। মানুষ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে তার কাছে আসতো, নিজেদের সমস্যা তুলে ধরতো। তিনিও ব্যক্তিভেদে উপযুক্ত সমাধান বাতলে দিতেন। এভাবে ধীরে ধীরে ছোটখাটো সামাজিক সালিশও তীতুমীরের কাছে আসতে থাকে। তাঁর ন্যয়বিচার দেখে মানুষ স্থানীয় ক্ষমতাবান জমিদারদের পরিবর্তে তীতুমীরের দুয়ারেই বেশি আসতে থাকলো। আর্তমানবতার সেবায়ও তীতুমীর ছিলেন অনন্য। মুসলমান হোক, আর হিন্দুই হোক; সাধ্যনুসারে তীতুমীর সকলকেই সমান সহযোগীতা করতেন।

তীতুমীরের এই কর্মকান্ডের ফলে জমিদারদের কপালে ভাঁজ পড়লো। তীতুমীর যে তাদের চেয়েও জনগনের প্রিয় হয়ে উঠছে! এভাবে চললে তো তাদের জমিদারী হুমকির মধ্যে পড়ে যায়! অতঃপর ইংরেজদের বলে বলিয়ান জমিদার রাম নারায়ণ (তারাগুনিয়া) ও কৃষ্ণদেব রায় (পুড়া) তীতুমীরের প্রভাব চিরতরে খতম করতে নিজ এলাকা ও পার্শ্ববর্তী জমিদারদের অনুরোধ করে তাদের এলাকায় ৫টি নোটিশ জারি করে-

(১) যারা তীতুমিরের শিষ্যত্ব গ্রহন করে ওহাবি হবে, দাঁড়ি রাখবে ও গোঁফ ছাটবে তাদের প্রত্যেককে দাঁড়ি প্রতি ২.৫০ টাকা কর দিতে হবে; (২) মসজিদ প্রস্তুত করলে প্রত্যেক কাঁচা মসজিদ বাবদ ৫০০ টাকা ও প্রত্যেক পাকা মসজিদ বাবদ ১০০০ টাকা জমিদারকে নজরানা দিতে হবে; (৩) নিজ পিতৃপ্রদত্ত নাম পরিবর্তন করে (প্রচলিত যে সব হিন্দুয়ানা নাম যথা- সুমন, মোহন, রাজন ইত্যাদি) ওহাবি মতে অর্থাৎ আরবিতে নাম রাখলে ৫০ টাকা জরিমানা দিতে হবে; (৪) গো হত্যা করলে হত্যা কারীর ডান হাত কেটে দেয়া হবে এবং (৫) তীতুমীরকে নিজ বাড়িতে স্থান দিলে তাকেত ভিটা থেকে উচ্ছেদ করা হবে।

আমাদের প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবিদের (!) নেক নজরে ও স্বকিত.....-এর মতো নিরপেক্ষ বিশ্লেষণে (!) এই বিষয়গুলো পড়েনা। এখানে কি কোন জুলুম হলো নাকি! এখানে কি মানবতা লঙ্ঘন হলো নাকি! হিন্দুরা যা মন চায় করুক না, নিজেদের পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে তো কিছূ বলা যায় না। যত দোষ নেড়ে মুসলমানদের।

লক্ষ্যনীয়, এমন মারাত্মক ঘোষণার পরও তীতুমীর জমিদারদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করলেন না। অথচ এই জমিদারদের বিরুদ্ধে মোকাবেলা করার মতো যথেষ্ঠ লোকবল তখনো তীতুমিরের ছিলো। এর কারণ, সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদের (রহ.) মতো তিনিও চাইছিলেন, লড়াই হোক হিন্দু-মুসলমান বনাম ইংরেজ, অথবা মুসলমান বনাম ইংরেজ, হিন্দুরা অন্তত ইংরেজদের সহযোগীতা হতে বিরত থাকুক। তাই এহেন হুকুম জারির প্রেক্ষিতেও কোনরূপ আক্রমন বা তাদের বিরুদ্ধে জনগণকে প্ররোচিত না করে সরাসরি জমিদারগণের বরাবর চিঠি লিখলেন, যার ভাষা নিম্নরূপ-

”মহাশয়; আমি আপনার প্রজা না হলেও আপনার স্বদেশবাসী। আমি লোক পরম্পরায় জানতে পারলাম আপনি আমার উপর অসন্তুষ্ট হয়েছেন, আমাকে ওহাবী বলে আপনি মুসলমানদের নিকট হেয় করবার চেষ্ঠা করছেন। আপনি কেন এরূপ করছেন তা বুঝতে পারা মুশকিল। আমি আপনার কোন ক্ষতি করি নাই। যদি কেহ আমার বিরুদ্ধে আপনার নিকট কোন মিথ্যা কথায় আপনাকে উত্তেজিত করে থাকে তাহলে আপনার উচিত ছিল সত্যের সন্ধান করে হুকুম জারি করা। আমি দ্বীন ইসলাম প্রচার করছি। মুসলমানদিগকেত ইসলাম ধর্ম শিক্ষা দিচ্ছি। এতে আপনার অসন্তোষের কি কারণ থাকতে পারে? যার ধর্ম সেই বুঝে। আপনি ইসলাম ধর্মের উপর হস্তক্ষেপ করবেন না, ওহাবী ধর্ম বলে দুনিয়ায় কোন ধর্ম নাই। আল্লাহর মনঃপূত ধর্মই ইসলাম, ইসলাম অর্থ শান্তি। একমাত্র ইসলাম ধর্ম ব্যতীত আর কোন ধর্মই জগতে শান্তি আনায়ন করতে পারে না। ইসলামী ধরনের নাম রাখা, দাড়ি রাখা, গোঁফ ছোট করা, ঈদুল আযহায় কুরবানী করা ও আকীকা কুরবানী করা মুসলমানদিগের আল্লাহর ও আল্লাহর রাসূলের আদেশ। মসজিদ প্রস্তুত করে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করাও আল্লাহর হুকুম। আপনি ইসলাম ধর্মের আদেশ, বিধি নিষেধের উপর হস্তক্ষেপ করবেন না। আশা করি আপনি আপনার হুকুম প্রত্যাহর করবেন।

ফকত: হাফিজ ও নাচিজ

সাইয়্যেদ নিসার আলী ওরফে তীতুমির


উপরোক্ত ডিগ্রি জারীর বিপরীতে এই হলো তীতুমীরের আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ। এর মাধ্যমেই নাকি তীতুমীর হিন্দু-মুসলমানে বিভেদ সৃষ্টি করেছেন! বিভেদ যে কারা জন্ম দিয়েছে, কারা হিন্দু-মুসলমান লড়াই লাগিয়েছে তা পুরোপুরি বুঝতে আরেকটু সামনে যেতে হবে।

উক্ত চিঠিটি তীতুমীরের ঘনিষ্ঠ সহচর, লাজুক মিষ্টভাষি, দ্বীনদার ও সৎ স্বভাবের জন্য পরিচিত মুহাম্মাদ আমিনুল্লাহ পুড়ার জমিদারের নিকট নিয়ে যান। চিঠি পড়ে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে জমিদার। মুহাম্মাদ আমিনুল্লাহকে প্রথমে বন্দি করা হয়, অতঃপর বন্দি অবস্থাতেই অমানবিক নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয় তাকে। এই সংবাদ শুনে তীতুমির বলেছিলেন, ”আমার স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম শহীদ মুহাম্মাদ আমিনুল্লাহ।”

যাই হোক, এতে করেও জমিদারগণ ক্ষান্ত হলো না। ইংরেজদের চক্রান্তে লাটু বাবুর বাসায় গোপন ষড়যন্ত্রের মিটিংয়ে একত্রিত হয় জমিদার দেবনাথ রায়, দূর্গাচরণ রায়, কৃষ্ণদেব রায়, প্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, রানাঘাট, টাকী ও নূর নগরের জমিদারের প্রধান নায়েব ও ইংরেজভক্ত পুলিশ অফিসার রামরাম চক্রবর্তী। সকলের মিলিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বঙ্গে তাদের জমিদারি টিকিয়ে রাখা, ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের বিনাশ করা ও ইংরেজ পাদ্রিদের কাজের পথ সুগম করার স্বার্থে মুসলমানদের দমিয়ে রাখতে হবে এবং সর্বাগ্রে তীতুমীর ও তার অনুসারীদের ধ্বংস করতে হবে।

ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে জমিদারের লোকজন আরোপিত ৫টি ডিগ্রির ভিত্তিতে জরিমানা আদায়ে প্রবল জুলুম অত্যাচার আরম্ভ করলো। অনেকে দিলে, অনেকে দিতে না পেরে জীবনের ভয়ে ভিটেমাটি ছেড়ে পালালো। কিন্তু অত্যাচারের হার কমলো না। তীতুমীর তখনো সর্বান্তকরণে চাইছিলেন জমিদারের লোকজন এ পথ থেকে সরে আসুক, যাতে স্বদেশবাসীর বিরুদ্ধে তাকে যুদ্ধে নামতে না হয়। বারবার চিঠি লিখেও লাভ হচ্ছিলো না। জমিদারের লাঠিয়াল বাহিনী গ্রামে গ্রামে মসজিদে আগুন লাগালো, ভেঙে দিলো। এমনকি সরফরাজপুরের গ্রাম ও মসজিদে আগুন দিয়ে অসংখ্য মানুষ পুড়িয়ে মারা হলো। একাজে স্বয়ং ইংরেজ বাহীনি প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেয় বলে ঐতিহাসিক অমলেন্দু দে দাবী করেন। এমনকি, তীতুমীরে দ্বীনি তাবলিগের ফলে যে সকল ধর্ম ব্যবসায়ী ভন্ড পীর ও ওলামায়ে ছু’দের ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দিয়েছিলো তারাও সর্বাত্মক সহযোগীতা করতে থাকলো। তীতুমির বারাসাত কোর্টে মামলা করলেন, কিন্তু এমন জঘণ্য নরহত্যার মামলা কোর্ট ভিত্তিহীন বলে বাতিল করলো। কোলকাতার হাইকোর্টে আপিল করেও সুফল পাওয়া গেল না।

বীরের ধৈর্য্যধারণের শেষ সীমা থেকেই কাপুরুষতার সূচনা। তাই অত্যাচারী জমিদার বাহীনিকে প্রতিরোধ করতে বাহীনি প্রস্তুতের উদ্যোগ নেয়া হলো। নারিকেলবাড়িয়ায় যথাসাধ্য বাঁশের কেল্লা গড়ে তোলা হলো। অতঃপর অত্যাচারীত, স্বাধীনতা কামী মানুষদের নিয়ে সামরিক প্রশিক্ষন দেওয়া শুরু করা হলো। ঐতিহাসিক নরহরি কবিরাজের মতে, তীতুমিরের এই বাহীনিতে হিন্দুদের উপস্থিতিও একেবারে নগন্য ছিলো না। অতঃপর এই বাহীনি নিয়েই পুড়ার জমিদারবাড়ি আক্রমণ করা হলো। জমিদারদের বাহীনি, নীলকর সাহেবদের কর্মচারী এবং উপস্থিত পাদ্রি সকলে মিলেও তীতুমিরের বাহিনীর প্রতিরোধ করতে পারলো না। মুহুর্তেই তীতুমির বাহীনি জমিদারবাড়ী দখল করলো। অতঃপর পূর্বে জমিদারদের কাছে মার খাওয়া কয়েকজন সৈন্য প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে সেখানেই গরু জবাই করে আহার করে এবং এর আবর্জনা বাড়ির মন্দিরে নিক্ষেপ করে। যদি এটাকে কেউ খারাপ বলে, বলতেই পারে। কিন্তু যখন মুসলমানদের মসজিদ পোড়ানো হলো, এই ব্যক্তিগুলো তখন চুপ থাকে বা এড়িয়ে যায় কোন স্বার্থে?

এই আক্রমেনর পর একে গোবরডাঙ্গার জমিদার কালিপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, তারাগোনিয়ার জমিদার রাজনারায়ণ, নাগপুরের গোরিপ্রসাদ চৌধুরী, গোবরা-গোবিন্দপুরের জমিদার দেবনাথ রাইরা তিতুমীরের বিদ্রোহে বাধা দেয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু তারা সফলকাম হল না। বসিরহাট থানায় আক্রমন চালিয়ে ইংরেজভক্ত ও অনুগত অফিসার, যে কিনা অত্র এলাকার ইংরেজদের সবচেয়ে বড়ো দালাল ও গুপ্তচর ছিলো, তাকে ধরে হত্যা করা হলো। একে একে ঐ সকল মুসলমানদেরও পাকড়াও করে উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হলো, যারা ইতোপূর্বে জমিদারদের অত্যাচারে সমর্থণ ও সহযোগীতা জুগিয়েছিলো।

অত্যাচারীর উপযুক্ত শাস্তি হলো। কিন্তু সবাইকে শাস্তির আওয়াতায় আনা গেল না। পালিয়ে যাওয়া লোকজন নিজেদের হতক্ষমতা ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠলো। ইংরেজদের সাথে ঘন ঘন যোগাযোগ হলো এবং সাহায্যের আবেদন করা হলো। ইংরেজদের পরমার্শেই তীতুমীরের বাহীনির বিরুদ্ধে সাধারণের মনে ক্ষোভ সৃষ্টির জন্য হিন্দু-মুসলমান লড়াইয়ের গুজব উঠানো হলো। অনেকেই এই গুজবে কান দিলো। কিছুদিনের জন্যে হলেও নারিকেলবাড়িয়ায় অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি হলো। তীতুমীর ও তাঁর লোকজনের অক্লান্ত পরিশ্রমে এই গুজবের অবসান হলো এবং সাধারণের ভূল ভাঙলো।

ঐ সময়ের লোকজনতো ঠিকই বুঝতে পারলো। কিন্তু আজকালের কিছু বিশেষ কৃপাপ্রাপ্ত লোকজনের চিন্তা শক্তি ও ইনসাফের ওপর এমনই পর্দা পড়েছে যে, তারা এখানে শুধু হিন্দু-মুসলিম বিভেদই দেখতে পায়, হিন্দুদের উপর কট্টরপন্থী গোঁড়া মুসলমানদের বাড়াবাড়ি ও অত্যাচার দেখতে পায়। তাদের বিবেকের উপর থেকে এই পর্দা তো উঠবে না, কিন্তু নিরপেক্ষ বিবেকের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট করে তুলতে এমন এক ঐতিহাসিকের বক্তব্য তুলে ধরতে চাই, ইসলামের সাথে যার দূরদুরান্তে কোন সম্পর্কই ছিলো না। সুতরাং, কাট্টা মৌলবাদি মুসলমান তীতুমীরকে মিথ্যা সমর্থন করার প্রশ্নই আসে না। কি বলেছেন সেই ঐতিহাসিক? “তীতু আপন ধর্মমত প্রচার করেছিল। সে ধর্মমত প্রচারে পীড়ন তাড়ন ছিলো না। লোকে তার বাড়বিন্যাসে মুগ্ধ হয়ে তার প্রচারে স্তম্ভিত হয়ে তার মতকে সত্য ভেবে, তাকে পবিত্রাতা মনে করে, তার মতাবলম্বী হয়েছিলো এবং তার মন্ত্র গ্রহন করেছিল। তীতু প্রথমে শোণিতের বিনিময়ে প্রচার সিদ্ধ করতে চায় নি। জমিদার কৃষ্ণদেব জরিমানার ব্যবস্থায় তার শান্ত প্রচার হস্তক্ষেপ করলেন।” এই কথা গুলো বিখ্যাত ঐতিহাসিক ও বিশিষ্ট হিন্দু স্কলার বিহারী লাল সরকারের।

যাই হোক, এবার সৈয়দ নিসার তীতুমির ঘোষণা করলেন, ”আজ থেকে ইংরেজদের সাথে সর্বপ্রকার বিরোধীতা প্রকাশ্যে করতে হবে।” তীতুমীরের হুংকার শুনে ইংরেজদের খয়েরখাঁ জমিদারদের কলজে কেঁপে উঠলো। জমিদারবৃন্দ, থানা, ইংরেজ অফিসার, ইংরেজ নীলকররা সম্মিলিত ভাবে প্রভু ইংরেজদের দরবারে আবেদন করলেন। প্রভুও অধস্তনের আবেদনের গুরুত্ব বিবেচনা করে, সর্বোপরি তীতুমীর তাদের শাসনের পক্ষে বড় একটা হুমকি স্বরূপ প্রকাশ হচ্ছে সে বিবেচনায় মোল্লাহাটির নীলকুঠির ম্যানেজার মি. ডেভিসের নেতৃত্বে একটি সৈন্যদল প্রেরণ করলো। জমিদারগণও নিজ নিজ অধীনস্থ বাহিনী ইংরেজ বাহীনির সাথে প্রেরণ করলেন। এই সম্মিলিত বাহীনি বাঁশের কেল্লা আক্রমন করলো। কিন্তু তীতুমীরের সৈন্যের অসম সাহস, রণোদ্দীপনা ও শৌর্যের সামনে যে খড়-কুটার মতোই ভেসে গেলো। সেনাপতি মি. ডেভিস যুদ্ধের সংবাদ জানিয়ে কোলকাতায় চিঠি লিখলো। সেখানে লিখলো, “তীতুমির নিজেও একজন কৃষক ঘরের ছেলে। তার সৈন্যদলের সবাই কৃষক, জেলে, মাঝি ইত্যকার শ্রেণির লোক। কিন্তু সম্মুখ যুদ্ধে অবতরণ হতেই মনে হলো, স্বয়ং ব্রিটেন বা স্পেনের বাহীনিও এতটা প্রশিক্ষিত. কৌশলি আর উদ্যম না। সে কি আক্রমন! সে কি সাহস! তথাপি তাদের সৈন্যাধক্ষ্য মাসুম যেভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করেন, তাতে ইউরোপের বড় বড় সেনাপতিও লজ্জায় মুখ লুকাবে! কে বিশ্বাস করবে এই লোকটা জীবনে কখনো কোন সেনাবাহিনীর অধিনে কাজ করেনি!”

ইংরেজ বাহাদুর অবস্থার কাঠিন্য হাড়ে হাড়েই টের পেলো। এই বিদ্রোহ এখানেই শেষ না হলে অদুর ভবিষ্যতে তাদের রাজত্বই হুমকির মুখে ফেলে দিবে! তাই এবার আরো অনেক বেশি সংখ্যক নামকরা, উচ্চ প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত সৈন্য আর দূরপাল্লার কামান সে সাথে পর্যাপ্ত গোলাবারুদ নিয়ে বাঁশের কেল্লা আক্রমণ করা হলো।

১৪ নভেম্বর। ১৮৩১ সাল। ঐতিহাসিক বাঁশের কেল্লা আক্রমণ করে তিতুমীর ও তাঁর বাহিনীকে পরাস্ত করার কাজ শুরু হল। একজন কর্নেলের নেতৃত্বে সেনাবাহীনি নারকেলবাড়িয়ার দিকে অগ্রসর হতে লাগল। সাথে যোগ দিল আরো বহু সশস্ত্র কুলি। ইংরেজদের সাথে ছিল দুরপাল্লার কামান। কর্নেল রাতেই নারকেলবাড়িয়ার গ্রাম ঘেরাও করে ফেলল। কেল্লার ভিতর থেকে তীতুর সৈনিকরা ইট-পাথর ছুঁড়ে ইংরেজ বাহিনীকে পিছু হটাল। তবে কর্নেল চূড়ান্ত আক্রমণের জন্য ভোরবেলা পর্যন্ত অপেক্ষা করল। এদিকে তিতুমীর বুঝতে পারলেন কেল্লা এখন এক কঠিন আক্রমণের শিকার। আলামত মোটেও ভাল নয়। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া আর কোন পথ খোলা ছিল না। তাই শেষরাতে তিতুমীর মনভরে আল্লাহর ইবাদাত করলেন, তাঁর সাহায্য চাইলেন। দ্রুত সুবহে সাদিক ঘনিয়ে এল। ফজরের নামাযের জন্য মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসছিল আযানের ধ্বনি। এমন সময় সিপাহসালার তিতুমীর সকলকে নিয়ে কেল্লায় একত্রিত হলেন। তিনি বললেন, ‘আমার ভাইয়েরা! আজ আমরা কঠিন পরীক্ষার সম্মুখে এসে দাঁড়িয়েছি। ইংরেজ সিপাইরা আমাদের কেল্লার ফটক পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। আমাদের জীবনে আজ এক সোনালী দিগন্ত। হয় আমরা গাজী হব, ইংরেজদের এ দেশ থেকে তাড়িয়ে আল্লাহর হুকমত কায়েম করব। না হয় আমরা আল্লাহর পথে শহীদ হব। এতে আমাদের ভয় নেই। আর তোমাদের যারা বেঁচে থাকবে, তারা আল্লাহর হুকুম তালিম করতে ভুলে যেও না। এ জন্য সকল আপদ-বিপদ মাথা পেতে নিও।’ সকলে ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি তুলে নেতার কথার সাথে ঐকমত্য পোষণ করল।

কালো আঁধারের চাদর ফেঁড়ে ভোরের আলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। এমন সময় শুরু হল তুমুল এক যুদ্ধ। ইংরেজ সিপাইরা তীতুর সৈনিকদের প্রতি গুলিবর্ষণ শুরু করল। কিন্তু তীতুর সৈনিকদের কাবু করতে পারল না। বরং তীতুর সৈনিকদের ইট-পাথরের অব্যর্থ আক্রমণে ইংরেজ বাহিনীতে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটল। সেনাপতি কর্নেল এবার কামান দাগাল। প্রথমে কামানের ফাঁকা গোলা ছুঁড়ে তীতুর সৈনিকদের আত্মসমর্পণের চেষ্টা করা হল। তাতেও কোন কাজ হল না। এবার কর্নেল কামান যুদ্ধ শুরু করল। মুহুর্মুহু কামানের গোলার বিকট শব্দে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়ে উঠল। নারকেলবাড়িয়ার বাঁশের কেল্লা প্রচন্ডভাবে কেঁপে উঠল। অবিরত গোলার আঘাতে ক্ষণিকের মধ্যেই কেল্লা গুড়িয়ে গেলে কেল্লার নিচে চাপা পড়ে তীতুর সৈনিকদের অনেকেই হতাহত হলেন। তারপরও তীতুর সৈনিকদের মনোবল এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা স্থিমিত করা গেল না। দেখতে দেখতে হঠাৎ কামানের একটি গোলা তিতুমীরের কাছাকাছি এসে পড়ল। গোলার আঘাতে তিতুমীরের ডান উরু ছিন্নভিন্ন হয়ে উড়ে গেল। এরপরও মর্দে মুজাহিদের মনের ক্ষিপ্রতা দমিত করা গেল না। তাঁর চোখেমুখে লড়াই করার ক্ষীপ্রতা উদ্ভাসিত হচ্ছিল। এ কঠিন সময়ে তিনি তীতুর সৈনিকদের সম্বোধন করে বললেন, ‘বন্ধুরা! বাঁশের কেল্লায় আগুন জ্বলছে। আগুন ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। নারকেলবাড়িয়ার পতন হলেও আমাদের লড়াই কিন্তু শেষ হবে না। তোমরা লড়াই চালিয়ে যাও।’

এর অল্প কিছুক্ষেণর মধ্যেই ইতিহাসের অন্যতম মহানায়ক তিতুমির শাহাদাতের স্বাদ গ্রহণ করলেন। তাঁর সাথীদের অনেকেই শাহাদাতবরণ করলেন। আহত হলেন অনেকে। বন্দী হলেন আটশ। আপাতত নারকেলবাড়িয়ার পতন ঘটল। এর পর বেনিয়া ইংরেজরা বন্দীদের নিয়ে বিচারের নামে প্রহসনের আয়োজন করল এবং তাদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড প্রদান করল। তীতুর সৈনিকদের সেনাপতি মাসুদকে প্রাণদন্ডে দন্ডিত করা হল। বন্দি বিদ্রোহী সৈনিকদের অধিকাংশকেই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে এবং আরো অন্যান্য উপায়ে হত্যা করা হল। মৃতদেহ গুলো কবর দেয়া বা অন্যান্য উপায়ে সৎকারের ব্যবস্থা না করে নদীতে ফেলে দেয়া হলো। এই হলো প্রগতিশীল ঐতিহাসিকদের প্রাণ প্রিয় প্রভুদের মানবতার নমুনা!

বুকের তাজার রক্ত দিয়ে ইতিহাস গড়ে গেলেন মর্দে মুজাহিদ তীতুমির (রহ.), মাসুম (রহ.) সহ আরো অনেকেই। কিন্তু অকৃতজ্ঞ ইতিহাস আজ নীরব। এ নীরবতা ইতিহাসের নয়, এ নীরবতা ঐসব ভাতাখোর দালাল আর মুসলমান বিদ্বেষীদের সৃষ্ট। নিজেদের উৎকোচের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য তারা স্বাধীন ভারতের অন্যতম রূপকার বীরকেশরী তীতুমীরের নামে মনগড়া মিথ্যা কলঙ্ক লেপনেও দ্বিধা বোধ করে না। কিন্তু সত্য কোনদিন চাপা থাকে না। মিথ্যা হয়তো ক্ষণিকের জন্য রাজত্ব করে, কিন্তু সত্যের প্রকাশের সাথে সাথেই মিথ্যার কবর রচিত হয়। তোদের এই মিথ্যাচারও আজকের সচেতন সমাজ ও অনাগত ভবিষ্যতের কাছে প্রকাশিত হয়ে যাবে। তীতুমীরের মতো দেশপ্রেমী বীরেরা চিরকালই মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় আসন করে নিবে। বরং, তোরাই হারিয়ে যাবি কালের স্রোতে। আর যদি পরবর্তী প্রজন্ম তোদের স্মরণ করে, তাও করবে সুবিধাভোগী দালাল হিসেবে। এটাই তোদের মতো লোকের প্রাপ্য।



তীতুমীরের (রহ.) ছবি (অনুমান ভিত্তিক অঙ্কিত)



চব্বিশ পরগনার নারিকেল বাড়িয়ায় নির্মিত তীতুমীরের (রহ.) বাঁশের কেল্লার অনুকরণ স্মৃতি।



তীতুমীরের (রহ.) কীর্তি স্মরণে বাংলাদেশ সরকারের প্রকাশিত ডাক টিকেট

তথ্যসূত্র:

১. আতা সরকার, তীতুর লেঠেল

২. বিহারীলাল সরকার, তীতুমীর ও নারকেলবাড়িয়ার লড়াই

৩. নরহরী কবিরাজ, স্বাধীনতা সংগ্রাম বাংলা

৪. আঃ গফুর সিদ্দীকি, শহীদ তিতুমীর

৫. মাওলানা আকরাম খাঁ; মোছলেম বঙ্গের সামাজিক ইতিহাস

৬. সৌরেন্দ্র গঙ্গোবন্ধপাধ্যায়; বাঙালির রাষ্ট্রচিন্তা

৭. কার্ল মার্কস, ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস; প্রথম ভারতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধ

৮. ফাতেমা তুজ জোহরা, সংগ্রামী তীতুমীর

৯. শ্রী মণি বাগচি; সিপাহী যুদ্ধের ইতিহাস

১০. বৈরি বসতি, শফিউদ্দিন সরদার

১১. অন্তরে প্রান্তরে, শফিউদ্দিন সরদার

১২. দাবানল, শফিউদ্দিন সরদার

১৩. অমলেন্দু দে; বাঙালী বুদ্ধিজীবি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী

১৪. ইতিহাসের ইতিহাস; আল্লামা গোলাম মুর্তজা

১৫. চেপে রাখা ইতিহাস; আল্লামা গোলাম মুর্তজা

১৬. আব্দুল করিম; বাংলার ইতিহাস: মুসলিম শাসন থেকে সিপাহী বিপ্লব

১৭. A. R. Mallick, History of Bengal

18. M.A Khan, Study to the legal proceedures of British Indian Courts

19. J. Wise, Early freedom movement in British rule India.

20. R.C Majumder, History of Independent India

21. Sir William Howard Russell, My Diary in India

22. East India Company: Minutes and Memoranda of General Committees 1700-1858, Home ministry of India

23. W. Hunter, The Indian Muselmans.

24. A. Maudud, Foreign Office Records during British Rulling

25. Mr. Karry, Beyond the fall of Brithish empire in India

26. M. Mallison, History of India Mutinity

27. Mahasweta Devi; Titu Mir, a Bengali rebel leader who made a bamboo fort to fight against the rich landowners of Bengal and British Raj

28. Nigel smith, PAKISTAN History, culture and Government

29. India’s Struggle for Freedom, Department of Information & Cultural Affairs, Government of West Bengal.

30. Wikipedia

31. http://storyofpakistan.com/titu-mir/

32. http://www.freedom-fighter.info/Syed-Mir-Nisar-Ali-58

৩৩. অন্যান্য

লেখাটি PDF আকৃতিতে পেতে এখানে ক্লিক করুন

এই সিরিজের প্রথম ২টি লেখা আমিরুল মুজাহিদীন সাইয়্যেদ আহমাদ বেরলভী শহীদে বালাকোট (রহ.) ও শাহ সুফি নুরউদ্দিন মুজাহিদ বাঙালী (রহ.) টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে আপাতত এই ব্লগে দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু অন্যান্য মাধ্যমে পড়তে পারেন ইনশাআল্লাহ।

১. ফরগটেন হিরোস- এ ট্রিবিউট টু দ্যা গ্রেটেস্ট মেন অন আর্থ প্রথম পর্ব শাহ সৈয়দ আহমাদ বেরলভী শহীদে বালাকোট (রহ.)

২. ফরগটেন হিরোস- এ ট্রিবিউট টু দ্যা গ্রেটেস্ট মেন অন আর্থ দ্বিতীয় পর্ব শাহ সূফী নুর মুহাম্মাদ নিজামপূরী (রহ.)।

ফরগটেন হিরোস- এ ট্রিবিউট টু দ্যা গ্রেটেস্ট মেন অন আর্থ দ্বিতীয় পর্ব শাহ সূফী নুর মুহাম্মাদ নিজামপূরী (রহ.)।

বিষয়: বিবিধ

৪২৭৮ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

279827
৩০ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১০:৫৭
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন : ফরগটেন হিরোস- এ ট্রিবিউট টু দ্যা গ্রেটেস্ট মেন অন আর্থ- Forgotten Heroes- A tribute to the greatest men on earth
এই সিরিজের লেখাগুলো অচিরেই পুস্তকাকৃতিতে বের করার ইচ্ছা আছে ইনশাআল্লাহ। সুতরাং, লেখার মান আরো ভালো ও হৃদয়গ্রাহী করতে আপনাদের পরামর্শ খুবই প্রয়োজন। পাশাপাশি শিরোনাম ও উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কোন ব্যক্তিত্বের নাম যোগের পরামর্শও সাদরে গৃহিত হবে ইনশাআল্লাহ।
৩০ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:৩৩
223518
অনেক পথ বাকি লিখেছেন : দেরি না করে বের করে ফেলুন। তাড়াতাড়ি চাই
৩০ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:৩৮
223520
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন : বের তো করতে চাই ভাই। কিন্তু আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল না হওয়ায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে বের করতে পারি না। আগের দুটো বই এখনো কিছু করতে পারলাম না। প্রকাশকরা তো মুখ তুলেই তাকায় না।
দুই বই প্রকাশ করতে চাই- প্রকাশক খুঁজছি এই ব্লগে কেউ থাকলে একটু দেখুন
৩০ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:৪০
223521
অনেক পথ বাকি লিখেছেন : নতুনদের এই একটি প্রবলেম ভাই। বই বিক্রি থেকে টাকা উঠবে কিনা সে ভেবে তারা নিতে চায় না। তবে চেষ্টা চালাতে থাকুন সফল হবেন একসময় ইনশাআল্লাহ
৩১ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০১:২৩
223529
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ইনশাআল্লাহ সকল সহযোগিতা পাবেন।
http://www.bdmonitor.net/blog/blogdetail/detail/3609/sabuj1981/55153 এটা পড়তে পারেন। যোগাযোগ
৩১ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৪:১৭
223663
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন : @ রিদওয়ান কবির সবুজ ভাই,
ধন্যবাদ। দ্রুতই মেইলে আপনার সাথে যোগাযোগ করবো ইনশাআল্লাহ।
279835
৩০ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:৩২
অনেক পথ বাকি লিখেছেন : মাশাআল্লাহ জাজাকআল্লাহ। আল্লাহ আপনাকে আরো বেশী বেশী লেখার তৌফিক দিন। আমিন। আর্টসের স্টুডেন্ট হিসেবে এগুলো অনেকবার পড়া হয়েছে তবুও ভুলে গিয়েছিলাম আজকে আবার পড়ে তা শানিত হলো।
৩০ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:৩৫
223519
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন : কষ্ট করে, সময় ব্যয় করে পড়ার ও মন্তব্য করার জন্য অস্যখ্য ধন্যবাদ। বারাকাল্লাহু ফিহী
279847
৩১ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০১:২০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ এই সুন্দর যুক্তি পুর্ন লিখাটির জন্য। যারা এখন তিতুমির সম্পর্কে মিথ্যা উক্তি করছে তারা আসলে অস্বিকার করতে চাইছে সত্য কেই। কলকাতার তথাকথিত বেঙ্গলি রেনেসাঁ এই বিপ্লবিদের বিরোধিতা করত। এরা তাদেরই উত্তরাধিকারি। তিতুমির এর ইতিহাস সম্পর্কে যা জানা যায় সাধারন হিন্দু রাও ছিলেন তার পক্ষে। অন্যদিকে পির এবং মহাজন মুসলিমরাও তার বিরোধি ছিলেন। বিহারিলাল সরকার এই বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। এমনকি ভারতিয় বামপন্থি নাট্যকার উৎপল দত্ত তিতুমির কে নিয়ে নাটক রচনা করেছেন যেখানে তিতুমির সকল ভারতবাসির প্রতিনিধি। আসলে এই ব্যাক্তিরা সত্য কে অস্বিকার করা কে মনে করে অনেক বড় কৃতিত্ব।
৩১ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৪:১৩
223657
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন : কোলকাতায় যাওয়ার সুবাদে তীতুমীরের স্মৃতিবিজড়িত চব্বিশ পরগনার নারিকেল বাড়িয়ায় যেতে ভুলিনি। অবাক হতে হয়, ওখানকার মানুষ এই মহান ব্যক্তিটিকে একটুকুও ভোলে নি। স্মৃতির মনিকোঠায় মহামূল্য রত্নের মতোই স্থান দেয়নি শুধু, তীতুমিরকে নিয়ে গবেষণা ও আলোচনার আয়োজনও হয়। সেখানেই কোথাও (ঠিকানাটা মনে করতে পারছি না, বেশ কয়েক বছর আগে গিয়েছিলাম) তীতুমিরের নামে একটা একাডেমিও গড়ে উঠেছে। হিন্দু এমনকি বামপন্থিরাও তীতুমীরের বীরত্বের জন্য গর্ববোধ করে। আফসোস! আমরা মুসলমান হয়েও এমন একজন লেজেন্ডকে সঠিক মূল্যায়ন করতে পারলাম না................
কষ্ট করে, সময় ব্যয় করে পড়ার ও মন্তব্য করার জন্য অস্যখ্য ধন্যবাদ। জাযাকাল্লাহু খইর।
279859
৩১ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৩:১৭
তিমির মুস্তাফা লিখেছেন : বড় ভাল লাগল আপনার এ মহতী উদ্যোগ দেখে। বাংলা কেতাবি দুনিয়ায় বিশেষ করে পুঁথি পুস্তক লেখার ক্ষেত্রে হিন্দুদের রাজত্ব ছিল দীর্ঘদিন। মুসলিম লেখকের সংখ্যাও ছিল কম, প্রকাশক তো আরও কম । দেখুন না, এমনকি কুরআনের প্রথম অনুবাদ বাংলায় করেছেন গিরিশ বাবু ! হিন্দু লেখকদের এর হাতেই মুসলমানদের বীর গাঁথাও লেখা হয়েছে, আর এর মধ্যেও দু’একজন তো স্বল্প হলেও সত্য কথা লিখেছেন তিতুমির সম্বন্ধে!
আপনার রেফারেন্স গুলো একাডেমিক ধাঁচের লেখাগুলোর মত করে লিখলে ভাল হত- কোন কোটেশন কোথা থেকে সংগ্রহ করেছেন, পাতা নম্বর, প্রকাশের সাল।
আপনার লেখাগুলো প্রকাশের জন্য কাদের সাথে যোগাযোগ করেছেন? আমাকে ইমেইল করতে পারেন () এ সম্পর্কে জানিয়ে। চেষ্টা করে দেখব এব্যাপারে আপনাকে কত দূর সহযোগীতা করা যায়।
আবারও – অনেক ধন্যবাদ আপনার এ প্রচেষ্টার জন্য।
৩১ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৪:১৬
223660
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন : আমি সাধারণত ওভাবেই লিখে থাকি। কিন্তু ব্লগে লেখা বড় হলে অনেকেই পড়তে একটু আপত্তি করে। তাই শর্টকাটে সূত্র গুলো উল্লেখ করলাম। তবে আমার কাছে যে খসড়া করা আছে সেগুলোতে সম্পূর্ণ রেফারেন্স আছে।
লেখাগুলো প্রকাশের জন্য বাংলাবাজার ভিত্তিক কয়েকটি প্রকাশনির কাছে ধর্ণা দিয়েছিলাম। ইনশাআল্লাহ, শীঘ্রই আপনাকে মেইল করবো।
কষ্ট করে, সময় ব্যয় করে পড়ার ও মন্তব্য করার জন্য অস্যখ্য ধন্যবাদ। জাযাকাল্লাহু খইর।
279869
৩১ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৪:১৫
সন্ধাতারা লিখেছেন : Chalam vaiya. Jajakallah for letting us know.
৩১ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৪:১৬
223662
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন : Walaikumus Salam Apu. Thank you for reading and commenting. Barakallahu fihi
287283
২৩ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৭
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : ভাই আস্তে আস্তে পড়বো ইনশাআল্লাহ।
আজকে আপনার ব্লগের এদিক ওদিক ঘুড়লাম।
Thumbs Up Thumbs Up ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২৩ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১১:০০
231053
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন : ধন্যবাদ ভাই। শেষে একটা PDF লিঙ্ক দেয়া আছে, সেখান থেকে ডকু টা ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
আপনাকেও তো ইদানিং খুব একটা দেখা যায় না, নতুন পোস্টও দেখি না, সবকিছু ভালো আছে তো?

২৩ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১১:০৫
231057
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ খুব শীঘ্রই দেখা হবে ইনশাআল্লাহ
আপনার ওখানে চলে আসবো।
পোষ্ট আজকে একটা দিয়েছি ভাইয়া Love Struck Love Struck Love Struck Love Struck Love Struck
২৩ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১১:১০
231061
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন : হ্যাঁ, দেখলাম। চলে আসেন একদিন, একসাথে চা খাই।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File