শাইখ নাসিরুদ্দিন আলবানি সম্পর্কে একটি পর্যালোচনা- শেষ কিস্তি
লিখেছেন লিখেছেন চিরবিদ্রোহী ১৯ আগস্ট, ২০১৪, ০৮:৩০:১৯ রাত
প্রথম কিস্তি
(প্রথম কিস্তির পর হতে)
শাইখুল ইসলাম ইমাম আহমাদ ইবনে তাইমিয়া (রহ.), যিনি স্বীয় জামানার আমিরুল মু’মীনীন ফিল হাদীস, হাদীস শাস্ত্রে যার গভীর জ্ঞানকে যুগের পর যুগ মানুষ অবনত মস্তকে স্বীকার করে নিয়েছেন, যাকে আমাদের আলবানীপ্রেমি সেই ভাইয়েরাও মাথার ওপর তুলে রাখেন, শায়েখ আলবানী তার সমালোচনায়ও মুখর। হাদীসুল গদীর সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে শায়েখ আলবানী আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) সম্পর্কে লিখেছেন,
“আমি শায়খ ইবনে তাইমিয়াকে দেখেছি, তিনি হাদীসের প্রথম অংশকে দুর্বল বলেছেন এবং হাদীসের শেষ অংশকে তিনি মিথ্যা মনে করেছেন। আমার ধারণামতে “হাদীসকে যয়ীফ বলার ক্ষেত্রে এটি ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) এর বাড়াবাড়ি, যা তাঁকে হাদীসটি যয়ীফ বলতে উদ্বুদ্ধ করেছে; অথচ তিনি হাদীস বর্ণনার বিভিন্ন পরম্পরা খতিয়ে দেখেননি। এবং এ ব্যাপারে গভীর দৃষ্টিপাত করেননি।” [সিলসিলাতুস সহীহা, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৩৪৩-৩৪৪, হাদীস নং ১৭৫০]
এই হলো ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.) সম্পর্কে শায়েখ আলবানীর মন্তব্য। অথচ ইবনে তাইমিয়ার (রহ.) হাদীস শাস্ত্রে এত পরিমানে সিদ্ধ হস্ত ছিলেন যে, তাঁর সমকালীন প্রতিদ্বন্দী ও বিরোধী আলেমগন, যারা তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের নিকট মামলা পর্যন্ত করেছিলেন, তাঁরাও দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন “ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.) যেটিকে হাদীস হিসেবে জানে না, সেটি মূলত হাদীসই নয়।”
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) “কালিমুত তাইয়্যিব” নামক বিখ্যাত একটি কিতাব রচনা করেছেন। শায়খ নাসীরুদ্দিন আলবানী সে কিতাবের হাদীসগুলো বিশ্লেষণ করে একটি কিতাব লিখেছেন, সহীহুল কালিমিত তাইয়্যিব। এ কিতাবে নাসীরুদ্দিন আলবানী লিখেছেন- “যারা আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) এর এ কিতাবটি সম্পর্কে অবগত রয়েছে, তাদেরকে নসীহত করব, এ কিতাবে যে সমস্ত হাদীস রয়েছে, সেগুলোর প্রতি তারা যেন আমল করতে অগ্রসর না হয়, যতক্ষণ না হাদীসগুলো শক্তিশালীভাবে প্রমাণিত হয়। আমি এর উপর যে টিকা সংযোজন করেছি, এর মাধ্যমে প্রত্যেকের জন্য বিষয়টি সহজ করে দিয়েছি। সুতরাং যে সমস্ত হাদীস প্রমাণিত হবে, সেগুলোর উপর আমল করা হবে, নতুবা সেটি পরিত্যাগ করা হবে” [সহীহুল কালিমিত তাইয়্যিব, পৃষ্ঠা-৪]
শায়েখ আলবানীর এ কথা উল্লেখ করে ভারত বর্ষের বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস, দারুল উলুম দেওবন্দের প্রাক্তন শাইখুল হাদীস আল্লামা হাবীবুর রহমান আজমী (রহঃ) লিখেছেন, “অর্থাৎ নাসীরুদ্দিন আলবানীর একথা বলার দ্বারা মূল উদ্দেশ্য হল, মানুষ যেন আবশ্যকভাবে তাঁকে ইমাম বানায় এবং তাঁর অন্ধ অনুকরণ করে। এবং যতক্ষণ পর্যন্ত আলবানীকে জিজ্ঞেস না করবে এবং তার বিশ্লেষণকে গ্রহণ না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লামা ইবনে তাইমিয়াসহ অন্য কোন বিশ্বস্ত ও গভীর পাণ্ডিত্যের অধিকারী মুহাদ্দিসের হাদীসের উপরও নির্ভর করবে না।”
শুধু মাত্র আল্লামা ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.) নয়, উম্মাহর অন্যান্য অনেক প্রসিদ্ধ উলামায়ে কিরামের সম্পর্কে বেশ কটু কথা বলেছেন। জালালুদ্দিন সূয়ূতী (রহঃ) সম্পর্কে শায়খ নাসীরুদ্দিন আলবানী লিখেছেন, “কী আশ্চর্য! জালালুদ্দিন সূয়ূতী তাঁর জামে সগীরে কিভাবে এ হাদীস উল্লেখ করতে একটু লজ্জাবোধ করলেন না!” তিনি জালালুদ্দিন সূয়ূতী (রহঃ) সম্পর্কে আরও লিখেছেন- “জালালু্িদ্দন সূয়ূতী (রহঃ) হাঁক-ডাক ছেড়ে থাকেন।” [সিলসিলাতুজ জয়িফা, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১৮৯]
শায়খ আলবানীর দৃষ্টিতে একটা হাদিস সহীহ নয়, অথচ অন্যান্য মুহাদ্দিস সেটিকে সহীহ বলায় তিনি হাদীসের বিখ্যাত তিন মুহাদ্দিস ইমাম হাকেম, ইমাম যাহাবী, ইমাম মুনযিরি (রহঃ) সম্পর্কে বলেছেন, “হাকেম বলেছেন, হাদীসটির সনদ সহীহ। ইমাম যাহাবী তাঁর সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। ইমাম মুনযিরি (রহঃ) “তারগীব ও তারহীব” নামক কিতাবে তার স্বীকৃতি দিয়েছেন। আর এটি হয়েছে, তত্ত্ব-বিশ্লেষণের প্রতি উদাসীনতা, তাকলীদের প্রতি আত্মসমর্পণ (অন্ধানুকরণ), নতুবা একজন বিশ্লেষণধর্মী আলেম কিভাবে একে সহীহ বলতে পারেন”
হাফেয তাজুদ্দিন সুবকী (রহঃ) সম্পর্কে শায়েখ নাসীরুদ্দিন আলবানী মন্তব্য করেছেন- মাযহাব অনুসরণের গোঁড়ামি তাঁকে প্ররোচিত করেছে। তাঁর কথা উল্লেখ করে এবং তাঁর গোঁড়ামির কথা আলোচনা করে তেমন উল্লেখযোগ্য কোন উপকারিতা নেই। [সিল-সিলাতুজ যয়িফা, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৮৫]
এই বিষয়গুলোর উল্লেখ করে অবশেষে শায়খ হাবীবুর রহমান আজমী (রহঃ) তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন, “শায়েখ নাসীরুদ্দিন আলবানী পৃথিবী বিখ্যাত গভীর পাণ্ডিত্যের অধিকারী আলেমদের ভুল ধরার ব্যাপারে চরম বেপরোয়া। এ পথে তিনি কাউকেই মুক্তি দেননি। আপনি দেখবেন! সে ইমাম বোখারী (রহঃ), ইমাম মুসলিমসহ অপরাপর ইমামদের ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য করে। তিনি যুগশ্রেষ্ঠ আলেম ইবনে আব্দুল বার (রহঃ), ইবনে হাযাম (রহঃ), ইমাম যাহাবী (রহঃ) ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ), ইমাম সানআনী (রহঃ) সহ আরও অনেককে ভুল সাব্যস্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন। অথচ অনেক অজ্ঞ এবং সাধারণ আলেম তাঁকে বর্তমান যুগের বিরল ব্যক্তিত্ব মনে করে থাকেন।”
শায়েখ আলবানীর উসুলে হাদীস সম্পর্কে এরূপ উদাসীনতা, হাদীস গবেষণায় পক্ষপাতমূলক আচরণ, সর্বোপরী পূর্ববর্তী মুহাদ্দীসদের সম্পর্কে অশোভন মন্তব্যের ভিত্তিতে সাউদী আরবের প্রধান মুফতী আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ বিন বায (যিনি নিজস্ব উদ্যোগে শায়েখ আলবানীকে মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও মক্কার উচ্চতর ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্রে আমন্ত্রন করেছিলেন) অবশেষে বলতে বাধ্য হয়েছেন-
”নাছির উদ্দীন আলবানী এমন প্রকাশ্য ভুল করেছেন যাহা আমাদের জানা মতে পূর্বের কোন আলেম এমনটি করেননি।” তিনি আরো বলেন- ”আলবানী সাহেব ছহীহ হাদীস সমূহের বিরোধিতাকারী।” (সালাসু রাসায়েল ফিসসালাত : ইবনে বাজ ১/২৮)
অন্যত্র তিনি বলেছেন, ”কখনো তিনি ছহীহ হাদীসকে জয়ীফ/দূর্বল বলে ভুল করেন, আবার কখনো দূর্বল হাদীসকে তিনি ছহীহ বলে ভুল করেন।” (সূত্র : দরুস ইবনে বাজ : ১১/২৬, ২. মাজমুআয়ে ফতুয়া ইবনে বাজ : ২৫/৭১)
এখানে যদি কেউ মনে করেন, আলবানী সাহেব তো একজন মানুষই ছিলেন, কোন মানুষই ভূলের উর্ধ্বে নয়, তাহলে বিবেচনাটি সঠিক হবে বলে মনে হয় না। কেননা, এটা যেমন ঠিক যে সকল মুহাদ্দিসের কিছু না কিছু ভূল হয়েছে, তেমনি এটাও ঠিক যে-তাঁদের কারোই ভূলের পরিমান সঠিকের চেয়ে অনেক বেশি হয় নি। এবং তাদের ভূল গুলো নিছক ভূল ছাড়া পক্ষপাত মূলক কোন আচরণও লক্ষ্য করা যায় নি। কিন্তু আলবানী সাহেবের বিষয়টি সম্পূর্ণ ব্যাতিক্রম। তাঁর স্ববিরোধী মতামত ও ভূলের পরিমান এত বেশি ছিলো যে, শুধুমাত্র তার ভূল এবং স্ববিরোধী মতামতগুলো তুলে ধরে উলামায়ে কিরামগণ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সতন্ত্র কিতাব রচনা করেছেন। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু বই হলো-
১. উদা বিন হাসান উদা ”হাদিসুন মিম্মা তারজি’ আ’নহা আল-আল্লামাতুল মুহাদ্দিস আলবানী ফি কুতুবিহীÑ নামক হাদীসের একটি সঙ্কলন বের করেছেন। এই কিতাবে যে ৫০০ হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে, এগুলো মুলত: আলবানী সাহেবের তারাজু বা পূর্বের মতামত থেকে ফিরে আসার ব্যাপারে আালোচনা করা হয়েছে। অর্থাৎ আলবানী সাহেব পূর্বে একটা হাদীসকে সহীহ বলেছেন, পরে মত পরিবর্তন করে সেটাকে যয়ীফ বলেছেন।
২. আবুল হাসান মুহাম্মাদ হাসান আশ-শাযখ ”তারাজু আল-আল্লামাতুলবানী ফীমা নাসু আলাইহি তাসহিহান ওয়া তাদঈফান” নামক আলবানী সাহেবের রুজু বা পূর্বের মতামত থেকে প্রত্যাবর্তনের উপর একটি সঙ্কলন বের করেছন। এখানেও ৩০০ এর বেশি হাদীসের উপর আলোচনা করা হয়েছে।
৩. আলবানী সাহেবের তারাজু নিয়ে লেখা আরেকটি কিতাব হলো, ”আত-তাম্বিহাতুল মালিহা আলা মা তারাজায়া আনহুল আল্লামা আল-আলবানী”। এ কিতাবেও আলবানী সাহেব এর সহীহ ও যয়ীফ বলার ক্ষেত্রে পূর্বের মত থেকে প্রত্যাবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং আলবানী সাহেবের রুজু করা হাদীস সঙ্কলন করা হযেছে।
৪. আলবানী সাহেব পূর্বের অবস্থান থেকে ফেরার পাশাপাশি প্রচুর স্ববিরোধীতায় লিপ্ত হযেছেন। একই রাবীকে কোথাও যয়ীফ, কোথাও সহীহ বলা, একই হাদীসকে কোথাও সহীহ এবং কোথাও সহীহ বলাকে তানাকুয বা স্ববিরোধীতা বলে। আলবানী সাহেব এতো বেশি পরিমাণ স্ববিরোধীতা করেছেন যে, এ বিষয়ে তিনি অনেক সমালোচনার মুখে পড়েছেন। একজন সুস্থ ধারার মুহাদ্দিস দু'একটি হাদীসের ক্ষেত্রে এমন করতে পারেন, কিন্তু তিনি শত শত হাদীসের ক্ষেত্রে এধরণের স্ববিরোধতিা করেছেন। শায়খ হাসান বিন আলী আস-সাক্কাফ আলবানী সাহেবের ধরণের স্ববিরোধীতার উপর কিতাব লিখেছেন। কিতাবের নাম, তানাকুযাতুল আলবানিল ওয়াজিহাত। এটি তিন খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে। তিন খন্ডে আলবানী সাহেবের মোট ১৩০০ স্ববিারোধী বক্তব্য উল্লেখ করা হযেছে। লেখক দাবী করেছেন, আমি আলবানী সাহেবের মোট সাত হাজার স্ববিরোধী বক্তব্য পেযেছি। এই তিন খন্ডে আমি ১৩০০ বক্তব্য প্রকাশ করেছি। বাকীগুলো তিনি আস্তে আস্তে প্রকাশ করবেন।
৫. শায়খ সাইদ আল মামদুহ আলবানী সাহেব এর সহীহ ও যয়ীফ এর উপর তুলনামূলক আলোচনা করে ইলমুল হাদীসের আঙ্গিকে আট শ হাদীসের ব্যাপারে আলবানী সাহেবের ভুল ধরেছেন। অথাৎ একটা হাদীস আলবানী সাহেব এর নিকট যয়ীফ, কিন্তু সেটি বাস্তবে সহীহ আবার একটি হাদীসকে তিনি সহীহ বলেছেন, বাস্তবে সেটি যয়ীফ, এজাতীয় আট শ হাদীসের উপর আলোচনা করেছেন। তিনি এর উপর, ”আত-তা'রীফ বিআওহামি মান কাস সামাস সুনান ইলা সহীহ ও যয়ীফ” নামে ছয় খন্ডের কিতাব লিখেছেন। প্রত্যেক খণ্ডই প্রায় ৫০০ পৃ. এর উপরে।
৬. শায়খ হাম্মাদ বিন হাসান আল-মিসরী “তাসহীহুল খতাআ ওয়াল আওহামী আল্লাতী ওয়াক্বত লি মুহাদ্দিসিস শাম নাসীরুদ্দিন আলবানী” নামক কিতাবে ৩০০ শ এর বেশি রাবীর জীবনী আলোচনা করেছেন, যাদের ব্যাপারে আলবানী সাহেব বলেছেন, তাদের কোন জীবনী কোন কিতাবে পাইনি অথবা তারা অপরিচিত, অথচ তাদের জীবনী তিনি যে কিতাব দেখেছেন তাতে বিদ্যমান রয়েছে এবং তারা পরিচিত রাবী। তিনি নাম্বার সহ প্রত্যেক রাবীর নাম ও তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করেছেন।
৭. উপমহাদেশের বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা মাওলানা হাবিবুর রহমান আজমী ”” নামক একটি কিতাব লিখেছেন। এই কিতাবে তিনি আলবানী সাহেবের হাদীস গবেষনা বিষয়ক ভূল-ত্র“টি গুলোর উপর দলিল ভিত্তিক সমালোচনা করেছেন।
”সাবাতু মুয়াল্লাফাতিল আলবানী” এর গ্রন্থকার আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ আশ-শামরানী তার কিতাবে এরূপ প্রায় ৫৭টি কিতাবের নাম উল্লেখ করেছেন। কিতাবের কলেবর বৃদ্ধির শংকায় এখানে সবগুলো উল্লেখ করা হলো না। কিন্তু সত্যসন্ধানী পাঠকের জন্য উল্লেখিত দলীলগুলোই যথেষ্ঠ হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
এছাড়া আরো অনেক খ্যাতনামা উলামায়ে কিরামগন ও ইসলামী গবেষক তাঁদের রচনা ও আলোচনায় আলবানী সাহেবের এহেন অসাবধানতা ও খেয়ানতের সমালোচনা করেছেন। লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো, এই আলেমগণের মধ্যে অনেকই ব্যক্তিগত ভাবে গঈরে মুকাল্লিদ এবং অনেকেই আহলে হাদীস সম্প্রদায়ও অনুসরন করেন। এই সকল উলামায়ে কেরামের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন-
১. শায়েখ আব্দুল্লাহ বিন বায (রহঃ)
২. শায়েখ হাবিবুর রহমান আজমী (রহ.)
৩. শায়েখ হামুদ বিন আব্দুল্লাহ (রহঃ)
৪. ড. মুহাম্মাদ সাঈদ রমাদান আল বুতী (রহ.)
৫. ড. বকর বিন আব্দুল্লাহ আবু যায়েদ
৬. আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনুল সিদ্দীক আল গুমরী
৭. শায়েখ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আদ-দাবীশ (রহঃ)
৮. আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ
৯. সফর বিন আব্দুর রহমান
১০. মুহাম্মাদ আউওয়ামাহ
১১. মুহাদ্দিস আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান সা’আদ
১২. ইসমাঈল ইবনে মুহাম্মাদ আল আনসার
১৩. শায়েখ আব্দুল্লাহ বিন মা’নে আল-উতাইবি
১৪. বদর আল দীন হাসান দিয়াব
১৫. শায়েখ ফাহাদ বিন আব্দুল্লাহ আস-সুনাইদ
১৬. ঈসা ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মাআনী
১৭. আবু আব্দুল্লাহ মুস্তফা আল-আদাবী
১৮. শাইখ মুহাম্মাদ ইবনে আহমাদ আল খাযরাজী
১৯. ফিরাস মুহাম্মাদ ওয়ালিদ ওয়াইস
২০. সামীর ইস্তাম্বুলি
২১. আসআদ সালিম তাইয়্যিম
২২. হাসান আলী আল সাক্বকাফ
তথাপি এই দিকটা যদি এড়িয়েও যাই, তাহলেও উসূলে হাদীসের আলোকে শায়েখের স্ববিরোধীতা পূর্ণ সকল মতামতই অগ্রহযোগ্য হবে। সেক্ষেত্রে তিনি যে পরিমান হাদীস বর্ণনা ও তাহক্বীকাত করে গেছেন সে তুলনায় বাছাইকৃত হাদীসের সংখ্যা নিতান্তই তলানিতে গিয়ে পড়বে।
শায়েখ আলবানীর এই বিষয়গুলো লক্ষ্য করে আরেক সালাফী আলেম, জামেয়াতুল ইমাম মুহাম্মাদ বিন সাউদ এর দাওয়া বিভাগের প্রধান ড.আব্দুল আযীয আল-আসকার শায়েখ নাসীরুদ্দিন আলবানী এবং তাঁর অনুসারীদের সম্পর্কে লিখেছেন, “আলবানী এবং তার অনুসারীরা মূলতঃ সালাফী নয়” অর্থাৎ এরা সালাফী (পূর্ববর্তীদের অনুসারী) হওয়ার দাবী করে কিন্তু বাস্তবে এরা সালাফী নয়।
এখানে উল্লেখ্য যে, সিরিয়ার প্রসিদ্ধ আলেমে দ্বীন ড. আল্লামা সাইয়্যিদ রমাদান আল বুতী (রহ.)-এর সাথে তাকলীদ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শায়েখ আলবানীর একটি বিতর্ক হয়েছিলো। বির্তকে শায়েখ আলবানী তার মতাদর্শের সম্পর্কে উত্থাপিত প্রশ্নের দলীলী জবাব দিতে ব্যর্থ হন এবং পরাজয় বরণ করেন। এ বিষয়ে আল্লামা আল বুতী (রহ.)-এর “আল লা মাযহাবিয়াহ আখতারু বিদআতিন তুহাদ্দিদুশ শারিয়াতাল ইসলামিয়াহ” (দারুল ফারাবি প্রকাশিত) বইটির ভুমিকা দ্রষ্টব্য।
শেষোক্তি:
ব্যক্তি শায়েখ আলবানীকে হেয় প্রতিপন্ন করা বা ছোট করে দেখানো আমার মোটেও লক্ষ্য নয়, যদিও আমাদের এক শ্রেণীর ভাইগন কথায় কথায় মাযহাবীদের বিরুদ্ধে কাফের, বিদআতী হওয়ার ফাতওয়া জারী করেন, যুক্তিহীন গলাবাজির মাধ্যমে নিজেদের যাহের করার চেষ্ঠা করেন এবং আমাদের মাযাহাবের ইমাম ও আকাবীরগনের (রহ.) বিরুদ্ধে বিষোদগার ও অশোভনীয় মন্তব্য করে থাকেন, তথাপি আমরা এই পথকে এড়িয়ে চলতে চাই। আলবানী সাহেবের জ্ঞান অজর্নের সর্বাত্মক তীব্র প্রচেষ্ঠাকে আমরা সম্মান করি। আমাদের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র এতটুকু, যে ব্যক্তিকে আমাদের সেই ভাইয়েরা মাথার উপর তুলে রাখছেন এবং যার কথার উপর ভিত্তি করে জগদ্বিখ্যাত মুহাদ্দিস, মুহাক্কিক ও মুফতিয়ানে কিরাম এবং মুজতাহিদ ইমামগনের মতামতকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন, আসলেই কি তিনি তাদের চেয়েও বেশি যোগ্যতার অধিকারী ছিলেন? হাদীস সম্পর্কে তার তাহকিক সমূহ আসলেই কি বস্তুনিষ্ঠ, সঠিক ও নিরপেক্ষ ছিলো?
বিষয়: বিবিধ
৩৯১১ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আগের পোষ্টে এখনও আলোচনা তেমন জমজমাট হয় নি, দেখছি মাঝে মাঝে, এটাও থাকলো, দেখবো মাঝে মাঝে।
অবশ্য আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে নিয়ত করেছি কিছুদিনের মধ্যে দুটো কাজ হাতে নিবো, প্রথমটিতে সিহাহ সিত্তাহর সবগুলো হাদীস (পুনরুল্লেখ বাদে) ও বিখ্যাত মুহাদ্দীসিনদের ব্যাখ্যা থাকবে। অন্যটি হবে, সেই সমস্ত সহীহ হাদীস নিয়ে যা সিহাহ সিত্তার বাইরে থেকে গেছে।
এই পোস্টটা মূলত আগের পোস্টেরই অংশ, আলাদা করায় রেশটা আর থাকে নি।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ। জাযাকাল্লাহু খইর।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ। জাযাকাল্লাহ খইর।
আর অবশ্যই শাইখ নাসিরুদ্দিন আলবানি ভুলের উর্ধ্বে নন। তবে আপনি যেসব রেফারেন্স উল্লেখ করেছেন তার কতগুলো সন্দেহাতীত? আপনি কি সবগুলো নিজে পড়েছেন নাকি কপি -পেস্ট করেই কাজ সারা ?
আমি যতটুকু জানি শাইখ নাসিরুদ্দিন আলবানিকে মদীনা ইউনিভার্সিটি তে আমন্ত্রণ জানান তখনকার গ্রান্ড মুফতি শাইখ মুহাম্মদ বিন ইবরাহীম। শাইখ বিন বায তখন মদীনা ইউনিভার্সিটির প্রিন্সিপ্যাল ছিলেন।
সেটা না হয় থাক ..। শাইখ বুয়ুতীর যে রেফারেন্স দিলেন সেটা সম্পর্কে কতটুকু কি জানেন? শাইখ বুয়ুতীর সাথে শাইখ আলবানীর যে ডিবেট হয়েছিল আর শাইখ বুয়ুতী ও তাঁর পিতা দুজনে মিলে ও শাইখ আলবানীর সামনে দাঁড়াতে পারেন নি - এটা জানেন? শাইখ আলবানী পরবর্তীতে তাঁদেরকে আরো ডিবেট করতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন কিন্তু তাঁরা সাড়া দেন নি।
শাইখ বিন বায যদি শাইখ আলবানী কে অপছন্দ করতেন তাইলে তিনি কিভাবে শাইখ আলবানীকে এ যুগের মুজাদ্দিদ বলেছেন? আর বেশি কিছু আমার বলার নেই। দয়া করে উম্মতের আলেমগণের সম্পর্কে ফিতনা সৃষ্টি করবেন না। আর এসব আলোচনা আলেমগণের মাঝে হলেই বেশী মানানসই। আল্লাহ আমাকে, আপনাকে এবং এই উম্মাহ কে ক্ষমা করুন ও সঠিক পথ দেখান - আমীন।
পরিশেষে এই
টি দেখার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
এই কপি পেস্ট এর হুজুগ এবারই প্রথম ওঠেনি, এমন হুজুগ আরো আগে অনেক দেখেছি। মূলত এমন চিন্তা তাদের মাথাই আসে যারা নিজেরাই এই পথের পথিক। আমি নিঃসন্দেহে অনেক ক্ষেত্রে, অনেক সময়, অন্যান্য মানুষের লেখা কপি করি, অনুসরন করি, অনুকরণ করি। কিন্তু স্পর্শকাতর বিষয়গুলো একবার হলেও নিজে দেখে নেয়ার গর্জ আছে বলেই অন্যদের লেখা পড়ার সময় এই চিন্তা মাথায় আসে না, বিশ্বাস থাকে, অন্যান্য যারা এমনটি করছেন তারাও হয়তো যাচাই করেই বলছেন।
আমারা কথা না হলে বাদ দেন, যেহেতু আপনার প্রথম মন্তব্য থেকেই আমি বুঝে নিয়েছি আপনি কেমন চিন্তা ও ধারনা নিয়ে মন্তব্যটি লিখেছেন। তো এক কাজ করুন না, বেছে বেছে আমার রেফারেন্সগুলোকে ক্রস চেক করুন, এবং একের পর এক ভূল বের করে পারলে আমার মুখের উপর মারুন।
বিতর্কের কথা বলছেন!!!!! বিতর্ক পারলেই শরীআর বড় আলেম হওয়া যায়, তাই না? তাহলেতো গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীকে আপনার ফিলোসফি অনুযায়ী মস্ত বড় মুজতাহিদ বলতে হয়, কেননা সেও তৎকালিন ভারত বর্ষের অনেক বাঘা বাঘা আলেমকে তর্কে পরাজিত করেছে।
অনুরূপ আমিও যুক্তিটা ঘুরিয়ে নিয়ে আসতে পারি, শাইখ সাঈদ রমাদ্বান আল বুতী শহীদ (রহ.) যখন তার বিখ্যাত “আল লা মাযহাবিয়াহ আখতারু বিদআতিন তুহাদ্দিদুশ শারিয়াতাল ইসলামিয়াহ” এর প্রথম পর্বের উপর শাইখ আলবানীর মন্তব্যের ভিত্তিতে দ্বিতীয় পর্বে তাকে লক্ষ্য করে একের পর এক চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন তখন শায়েখ আলবানী এতবড় মুবাহিস হয়েও চুপ থাকলেন কেন? এমনতো নয় যে তিনি বাহাস পছন্দ করেন না, তাহলে নিরবতার অর্থ কি ছিলো?
মজার বিষয় হলো, যারা সবসময় সহীহ হাদীস সহীহ হাদীস বলে গলা ফাটায় তাদের সিংহভাগের দৌড়ই বুখারি মুসলিমের বাংলা অনুবাদ পর্যন্ত, মূল কিতাবের ইবারত পড়ার মতোই যোগত্যা নেই। আর যারা তাকলিদ হারাম- শ্লোগানে মুখরিত তারাই তাদের তাকলিদের প্রমাণ প্রতি পদক্ষেপে দেয়।
যাই হোক, আমি না হয় পড়ে দেখার যোগ্যতা রাখি না, আপনি পড়ে দেখেন, আর ভূল গুলো চিহ্নিত করে আমার মুখের উপর ছুঁড়ে মারেন। উল্লেখিত বইগুলোর বেশ কিছু স্বয়ং শায়েখ আলবানীর ওয়েবসাইটেই পাওয়া যায়।
১. উদা বিন হাসান উদা ( حديث مما تراجع عنها العلامة المحدث الألباني في كتبه)
http://www.alalbany.net/5282
২. আবুল হাসান মুহাম্মাদ হাসান আশ-শায়খ (التنبيهات المليحة على ما تراجع عنه العلامة المحدث الألباني)
http://www.alalbany.net/5043
৩. আম্মাদ বিন হাসান মিশরী ( تصحيح الأخطاء والأوهام التي وقعت لمحدث الشام ناصر الدين الألباني )
http://www.ahlalhdeeth.com/vb/showthread.php?t=316200
৪. আবদুল বাসিত বিন ইউসুফ গঈব (التنبيهات المليحة على ما تراجع عنه العلامة المحدث الألباني)
http://www.alalbany.net/5043
শায়েখ আলবানীকে মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যিনি আমন্ত্রন জানিয়েছিলেন তিনি স্বয়ং ইবনে বাজ (রহ.)। এ বিষয়ে ড. আসিম আবদুল্লাহ আল কারইউতি লিখিত "A Brief Biography of Ash-Shaikh Al-Muhaddith Abu 'Abdir-Rahmaan Muhammad Naasir-ud-Deen Al-Albaani", আবু নাসির মুহাম্মাদ আবদুর রউফ লিখিত "A biography of great muhaddith sheikh Muhammad Nasiruddin Al-Albani" সহ শায়েখের নিজের বক্তব্যের ভিত্তিতে লিখিত 'হায়াতু আল্লামা আলবানী ফি কালামিহী" দ্রষ্টব্য।
তাহলে কেন শায়েখ ইবনে বাজ (রহ.)-এর দুই রকম মন্তব্য পাওয়া যায়? এটার তর্কে আমি যাবো না, কেননা এটা আমার কাজ নয়, যেহেতু আমি তার সাথে সামনাসামনি কথা বলিনি। তাঁর সংকলনে যা পাওয়া গেছে রেফারেন্স সহ উল্লেখ করা হয়েছে। সন্দীহানগন নির্দ্বিধায় যাচাই করতে পারবেন।
সবিশেষ, এই ব্লগে এই লেখা দেয়ার অন্যতম কারণ আমি প্রথম কিস্তির শুরুতেই উল্লেখ করেছি, যা আর দোহরানোর প্রয়োজন বোধ করছি না। এটা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রকাশতব্য একটি বইয়ের অংশ, যা আমি লিখেছি প্রায় ৭/৮মাস আগে কিন্তু প্রকাশ করতে চাই নি। বাধ্য হয়েই অবশেষে প্রকাশ করেছি।
মুসলমানদের মধ্যে একতা ততদিন আসবে না, যতদিন না প্রতিটি মুসলমানের কথা ও কাজ একই হবে। যতদিন পর্যন্ত কথা ও কাজের ভিন্নতা থাকবে, মুসলমানদের অধপতন হতেই থাকবে।
বাহ!!! রেফারেন্স চেক করার সময় নাই, আবার ভূল ধরলে আরেকজনের উপর আক্রমন করতেও দ্বিধা হয় না!!!!! এর পর আর যুক্তির কিছু বাকী থাকে??
আপনি যদি রেফারেন্স চেক নাই বা করতে পারলেন তাহলে বুঝলেন কিভাবে যে আমি ভূল করেছি, মিথ্যা-বানোয়াট তথ্যাদি উপস্থাপন করেছি!!!!!! এতো পুরো মাত্রায়ই অন্ধ তাকলীদের প্রমান, যা স্বয়ং শাইখ আলবানীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হারাম।
তাহলে এটা দিয়ে কী বুঝাতে চাইলেন!!! এবার ভেবে বলুন তো আমি মিসকোট করলাম নাকি আপনি আন্দাজে ঢিল মারলেন?
এবার মিসকোট করলো কে? আমি একবারও কোথাও উল্লেখ করেছি আমি আলেম? নামের আগে পরে তকমা লাগানোর মতো বিলাসিত অন্তত আমার নেই, তাই আমার পুরো একাউন্ট খুঁজেও কেউ আমার ব্যক্তিগত কোন তথ্যই পাবে না। আবারো বলবো, আন্দাজে ঢিল মারা বাদ দিন।
আলেম আমি নই একথা আগেও বহুবার বলেছি। আমি একজন ছাত্র মাত্র, আর কিছুই না। মন্তব্য দুই ধরনের হয়, একটি গঠন মূলক আরেকটি আক্রমনাত্বক। তদ্রুপ উত্তরও দু্রকম হয়- একটি গঠনমূলক ও অন্যটি আক্রমনাত্বক। আমার হিসাব সহজ- যেমন মন্তব্য তেমনি জবাব।
যুক্তিপূর্ণ আলোচনায় আসুন, যুক্তিপূর্ণ জবাব পাবেন। উপরে তো কেউ এমন আপত্তি করতে পারলো না, এর আগেও করতে পারে নি, দুয়েকজন ব্যতিত। তাও শুধু মাত্র তারাই যারা আক্রমনাত্বক মন্তব্য করেছিলো।
ভালো কিছু পেতে হলে ভালো কিছু দিতেও হবে।
কার যুক্তিযুক্ত প্রশ্ন এড়িয়ে আমি অহেতুক আক্রমন করেছি একটু দেখাবেন কি?
জাযাকাল্লাহু খইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন