শাইখ নাসিরুদ্দিন আলবানি সম্পর্কে একটি পর্যালোচনা
লিখেছেন লিখেছেন চিরবিদ্রোহী ১৭ আগস্ট, ২০১৪, ১০:৫৪:২০ রাত
(প্রথমেই বলতে হয় এ বিষয়ে লেখার আগ্রহ আমার ছিলো না। তবু লিখতে হলো। এর কারন হিসেবে বলবো, প্রথমত: আমার ভার্চুয়াল ও বাস্তব জগতের কিছু বন্ধু ও ভাইয়ের বাড়াবাড়ি পর্যায়ের প্রশংসা। দ্বীনি কোন বিষয়ে, বিশেষ করে হাদীস বিষয়ে তাদের সাথে আলোচনা করতে গেলেই প্রায় ৮৫% ক্ষেত্রে তারা শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী সাহেবের মন্তব্য তুলে আনবেন এবং এটাকেই চুড়ান্ত ও শেষ বক্তব্য বলে খালাস পাওয়ার প্রচেষ্ঠা করবেন। তাদের ভাব এমন "যেখানে শাইখ আলবানী কিছু বলবেন, তারপর আর কারো কোন কথাই গ্রহনযোগ্য হবে না।
দ্বীতিয়ত: কিছুদিন পূর্বে Youtube-এ বিশেষ মতবাদের এক বক্তার বক্তব্য শুনলাম, তার মতে "শাইখ আলবানী বর্তমান জামানার ইমাম বুখারী"। এটাকে আমার কাছে বেশ বাড়াবাড়িই মনে হয়েছে।
এই সব বিষয় থেকেই শাইখ আলবানী সম্পর্কে আমার জানার চেষ্টা ও এই লেখা।
এর আগের লেখা আমার কয়েকটি ব্লগে বন্ধুরা মন্তব্য করেছেন, বেশ বড়ো, পড়তে সমস্যা হয়। সে দিকটা মাথায় রেখেই দুই কিস্তিতে লেখাটি দিলাম।)
শায়েখ আলবানীর সংক্ষিপ্ত জীবনী:
শায়েখ নাসিরুদ্দিন আলবানীর জন্ম ১৯১৪ সালে আলবেনিয়ার শকোদের নামক গ্রামে। তাঁর পিতার নাম শাইখ নুহ নাজ্জাতি আলবানি, যিনি সে সময়ের একজন প্রসিদ্ধ হানাফী আলেম ছিলেন। তারা পারিবারিকভাবে বেশ দরিদ্র ছিলেন। আলবানী মরহুমের বাল্যকাল সম্পর্কে সামান্য কিছু জানা গেলেও তার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে আমরা প্রায় কিছুই জানতে পারিনি। যতদুর জানা যায়, আলবেনিয়ায় আহমেদ জোগু ক্ষমতায় এসে ধর্মনিরপেক্ষতা জারি করলে আলবানীর পরিবার ধর্মীয় কারণে সিরিয়ার চলে আসেন। সেখানে তিনি প্রথমে একটি মাদরাসায় ভর্তি হন। প্রাথমিক শিক্ষার পর তিনি তাঁর পিতা ও তাঁর পিতার ঘনিষ্ঠ বন্ধু শায়েখ সাঈদ আল বুরহানীর নিকট প্রাথমিক আরবী, কুরআন, তাজবীদ, এবং হানাফী ফিকাহ অধ্যয়ন করেন। পাশাপাশি তাকে ছুতোর হিসেবে কাজ করতে হয়েছিলো। পরে তিনি পারিবারিক পেশা হিসেবে ঘড়ির কাজও রপ্ত করেন।
আলবানী সাহেবের ভিন্নদৃষ্টি ভঙ্গি ফুটে ওঠে কৈশরেই। তার বাবা বিখ্যাত আলেম হওয়ায় সাধারণ মানুষ বিভিন্ন প্রশ্ন নিয়ে তাঁর নিকটে আসতো এবং তিনি উত্তর দিতেন। কিন্তু আলবানী সাহেব তাঁর পিতার সাথে একমত হতে পারতেন না। এভাবেই পিতার সাথে মতোবিরোধের কারণে ২০ বছর বয়সে তাঁর পিতা তাঁকে গৃহ থেকে বের করে দেন। ভাগ্য অন্বেষনে তিনি কাঠমিস্ত্রির (ছুতোর) কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি লাইব্রেরিতে গিয়ে হাদীস শাস্ত্র অধ্যয়ন করতে থাকেন।
১৯৫৪ সাল থেকে তিনি নিয়মিত সাপ্তাহিক হাদীসের দরস দেয়া শুরু করেন। ১৯৬০ সাল নাগাদ তিনি নিজস্ব ভিন্ন মতামত ও পূর্ববর্তী আলেম, বিশেষত; হানাফি মুহাদ্দিস ও মুফতিয়ানে কিরামের সম্পর্কে আক্রমনাত্মক মনোভাব ও বক্তব্যের ফলে সিরিয়ার স্বাধীন মানসিকতার মুসলমান শ্রেণির মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হতে থাকেন। এই সময় সিরিয়ার সরকারের সাথে কোন এক বিষয়ে মতবিরোধের সূত্র ধরে তাঁকে সিরিয়া ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। ততদিনে তিনি বেশ প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন এবং তার বেশ কিছু রচনাও প্রকাশিত হয়েছিলো, সেই সূত্র ধরে সৌদি আরবের তৎকালীন প্রধান মুফতি ও মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ আল্লামা ইবনে বায (রহ.) তাকে মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার আমন্ত্রন জানান। শায়েখ আলবানি ১৯৬১ সালে মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। কিছুদিনের মধ্যেই তার মাযহাব পরিপন্থি ভিন্নধারার মতবাদের বিষয়টি আরবের আলেমদের সামনে আসতে থাকে। বিশেষ করে নিকাব বিষয়ে দেয়া তার একটি ফাতওয়া (যেখানে তিনি উল্লেখ করেছিলেন মুসলিম নারীদের জন্য নিকাব প্রয়োজন নেই) কেন্দ্র করে আরবের আলেমদের সাথে তার বিরোধ আরো প্রকট হতে থাকে। ফলশ্র“ত ১৯৬৩ সালে তিনি মদীনা ত্যাগ করে পুনরায় সিরিয়া আগমন করেন এবং আজ-জাহিরিয়্যাহ লাইব্রেরিতে কাজ করতে থাকেন। ১৯৬৭ সালে সিরিয়ান আলেমদের সাথে মতোবিরোধের সূত্র ধরে তাকে কারাগার বরণ করতে হয় এবং ১ মাস পর তিনি মুক্তি পান। এ সময়ে আল্লামা ইবনে বায (রহ.) সৌদি প্রশাসনকে বুঝিয়ে শুনিয়ে শায়েখ আলবানীকে পূনরায় সৌদি আমন্ত্রন করেন এবং মক্কার উচ্চতর ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্রে নিয়োজিত করেন। কিন্তু শায়েখ আলবানীর কট্টরপন্থী মাযহাব বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাকে আবার সৌদি আরব ত্যাগ করতে হয়। পরবর্তীতে তিনি সিরিয়া গমন করলে তাকে পূববর্তী ঘটনার জেরে আবারো জেলে প্রেরণ করা হয়। মুক্তি লাভ করে তিনি জর্ডানে গমন করেন এবং সেখানেই নিজের গবেষনা, অধ্যয়ন ও লেখালেখিতে ব্যস্ত থাকেন, যদিও সেখানে তিনি পুরোপুরি স্বাধীনতা লাভ করতে পারেননি। সরকারী ভাবে তাকে গৃহবন্দি রাখা হয়। অবশেষে ১৯৯৯ সালে ৮৫ বছর বয়সে গৃহবন্দী অবস্থায় শায়েখ আলবানী ইন্তেকাল করেন।
শায়েখ আলবানী ও তাঁর মতাদর্শ সম্পর্কে কিছু আলোচনা:
শায়েখ আলবানী মুলত তাঁর হাদীস চর্চার জন্য খ্যাতি লাভ করেন। যদিও তার শিক্ষা জীবনে তিনি কোন উস্তাদের তত্ত্বাবধায়নে থেকে হাদীস চর্চা করেছেন বলে কোন প্রমাণ আমরা এখনো পাই নি। এমতাবস্থায়ও তিনি মোটামুটি প্রসিদ্ধ বেশ কিছু কিতাবের উপর তার নিজস্ব গবেষনা ফলাফল সম্বলিত কিতাব রচনা করেন, যেখানে তিনি হাদীসগুলো সম্পর্কে নিজস্ব যাচাই বাছাই ও মতামত সংযুক্ত করেছেন। আপাত: দৃষ্টি বিষয়টি খুবই অসাধারণ মনে হলেও হাদীস শাস্ত্রের নীতি অনুযায়ি বিষয়টি কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ প্রথমত হাদীস শাস্ত্রের নিয়মানুযায়ী যখন কোন হাদীসের বর্ণনাকারীদের মধ্যে কোন একজন সম্পর্কে সন্দেহ থাকে অথবা তার পরিচয় অস্বচ্ছ থাকে অথবা তার উস্তাদ সম্পর্কে কোন সন্দেহ থাকে তখন সেই হাদীসটি দূর্বল বা পরিত্যাক্ত বিবেচিত হয়। আবার, তিনি একাই তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসাঈ, রিয়াদুস সালেহিন-এর নিজস্ব তাহক্বিকাত সহ ১৪ খন্ডের সিলসিলা ই হাদিসে যাঈফা (যঈফ হাদীস সংকলন) ও ১১ খন্ডের সিলসিলা ই হাদীসে সাহীহা (সহীহ হাদীসের সংকলন) রচনা করেন, যা মোটামুটি আশ্চর্যজনক। এমনকি ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মাত্র ১৪৮ বছর পরের মানুষ হয়েও, বুখারী (রহ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মাত্র ১৮০ বছর পরের মানুষ হয়েও এত বেশি সংখ্যক হাদীস সম্পর্কে তাহক্বীক করে লিপিবদ্ধ করে যেতে পারেন নি। ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) দীর্ঘ ২৫ বছর কঠোর পরিশ্রমের পরে বুখারী শরীফের তাহক্বীক ও ব্যাখ্যা গ্রন্থ ”ফাতহুল বারী ফি শারহী সাহীহুল বুখারী” নামে ১৮ খন্ডের একটি কিতাব রচনা করতে পেরেছেন। ইমামুল মুহাদ্দিস মাওলানা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরি (রহ.), যার অসাধারণ মেধা শক্তির কথা প্রবাদের মতো পুরো পৃথিবীতে পরিচিত, তার সারাজীবনের পরিশ্রমের ফল বুখারী শরীফের অসাধারণ ব্যাখ্যা গ্রন্থ ”ফাতহুল বারী”র ব্যাখ্যা গ্রন্থ “আনওয়ারুল বারী” নামে ৪ খন্ডে রচনা করেন। সে তুলনায়া, শায়েখ আলবানী তার ৪০ বছরের লেখালেখি জীবনে সিহাহ সিত্তার ৪টি গ্রন্থের তাহকীক্ব, পাশাপাশি সহীহ ও যঈফ হাদীসের উপর অনুন্য ১০ খন্ডের পৃথক পৃথক রচনা করেছেন, এতে আমাদের আশ্চর্য না হয়ে কোন উপায় থাকে না। বর্তমান সময়ে যারা ইলমে হাদীসের দারস নিচ্ছেন, দিচ্ছেন এবং যারা হাদীস শাস্ত্রের খেদমেত নিয়োজিত ও যারা হাদীস বিষয়ে কিছু মাত্র অধ্যয়ন করেছেন তারা অবশ্যই জানেন শুধুমাত্র একটি হাদীস সম্পর্কেই নিজস্ব মতামত প্রদান করা কতটা পরিশ্রম ও কষ্টের কাজ। সংশ্লিষ্ট হাদীস ও কাছাকাছি মতনের সবগুলো হাদীসের প্রচলিত সবগুলো রেওয়ায়েত সম্পর্কে জ্ঞান রাখা, আসমাউল রিজাল নখদর্পনে থাকা, আসরে সাহাবা সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ইলম থাকা, নাসিখ-মানসুখ এর পর্যাপ্ত ধারনা, পূববর্তী আকাবের ও মুহাদ্দীসগনের সংশ্লিষ্ট হাদীস সম্পর্কে মতামতের জ্ঞান থাকা সর্বোপরি আরবী ভাষার উপর ব্যাপক বুৎপত্তি থাকলেই হাদীসের তাহক্বীকাত করা যেতে পারে। এবার একটু ভেবে দেখুন তো ১০০ হাদীস সম্পর্কে প্রকৃত তাহক্বীক করতে কি পরিমান সময় প্রয়োজন!।
যাই হোক, এই বিষয়টি আমাদের আলোচনায় মূখ্য নয় বরং গৌণ একটি বিষয়। আমরা উসূলে হাদীসের দৃষ্টিকোণ থেকেই শায়েখ আলবানী সাহেবের তাহক্বীকাতের পর্যালোচনা করবো।
প্রচলিত নিয়মানুযায়ী কোন হাদীসের উস্তাদের নিকট হাদীস অধ্যয়ন না করার ফলে শায়েখ আলবানীর প্রদত্ত হাদীস বিশ্লেষণে প্রচুর পরিমানে উসূলে হাদীসের লঙ্ঘন, বিখ্যাত মুহাদ্দিসে কিরামগণের স্বীকৃত বিশ্লেষণের প্রতি অবজ্ঞা ও পরস্পর বিপরীত মতামত লক্ষ্য করা গেছে। প্রত্যেক ক্ষেত্রে নিজের মতামতের কাছে তিনি জগৎ প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসে কিরামের সম্মিলিত মতামতকে অবহেলার সাথে এড়িয়ে গিয়ে নিজস্ব মতামত প্রতিষ্ঠায় লিপ্ত হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় তিনি অনেক সহীহ হাদিসকে যঈফ ও যঈফ হাদীসকে সহীহ বলে বর্ণনা করেছেন।
প্রথমে আমরা দেখব নাসিরুদ্দিন আলবানী সাহেব কিভাবে সহীহ হাদিসকে যঈফ সাব্যস্ত করার প্রচেষ্টা করেছেন। উদাহরন স্বরূপ:
আবু হুরাইরা (রাঃ) সূত্রে বর্নিত রাসুল (সাঃ) বলেন-“ যখন তোমাদের কেহ রাত্রিতে নামাযের জন্য দাঁড়ায়, তখন সে যেন সংক্ষিপ্ত ভাবে দুই রাকাতের মাধ্যেমে আপন নামাযকে শুরু করে।”
হাদীসটিকে ইমাম মুসলিম (রহঃ) স্বীয়গ্রন্থ সহীহ মুসলিম (খ: ১, পৃ: ৫৩২) পৃষ্টায় উল্লেখ করেন। এ ছাড়াও আল ইহসান ফি তাকরিবে সহীহ ইবনে হিববান-(খ:৬, পৃ:৩৪০) আল মুসনাদ লিল ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল-(৯/১২৯) শরহুস সুন্নাহ লিল ইমাম বাগবাীতে (খ:৪, পৃ:১৭) উল্লেখ করা হয়েছে।
হাদীসটিকে যুগ শ্রেষ্ট হাদীস গবেষকগন গবেষনার মাধ্যমে বিশুদ্ধ হাদীসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তম্মেধ্যে উল্লেখ যোগ্য-
আল্লামা শুয়াইব আরনাউত (রহঃ) মুসনাদ লিল ইমাম আহমাদ(খ:১৫, পৃ:৯৮), ইমাম বাগাবী (রহঃ) স্বীয় কিতাব শরহুস সুন্নাতে (খ:৪, পৃ:১৭), হামজা আহমাদ যাইন (রহঃ) মুসনাদ লিল ইমাম আহমাদে (খ: ৯, পৃ:১২৯) বিশুদ্ধ হাদীস বলে ঘোষনা করেছেন।
উল্লেখিত হাদীসটিকে আলবানী সাহেব স্বীয় কিতাব ‘‘যইফুজ জামে ও যিয়াদাহ’’ নামক গ্রন্থে (খ: ১, পৃ:২১৩-) উল্লেখ করে বলেন, হাদীসটিকে ইমাম মুসলিম (রহঃ) এবং ইমাম আহমাদ (রহঃ) আবু হুরাইরা (রাঃ) এর সুত্রে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি মর্যাদার দিক দিয়ে দুর্বল (যঈফ)। তথাপি তিনি হাদীসটি যঈফ কেন সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু লেখেন নি। উসূলে হাদীসের নিয়মানুসারে কোন হাদীস সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে তার প্রত্যক্ষ্য, অবশ্যই প্রত্যক্ষ কোন কারণ বর্ণনা করতে হবে; যা তিনি করেন নি।
এবার আমরা দেখব নাসিরুদ্দিন আলবানী সাহেব কিভাবে যঈফ হাদিসকে সহীহ বলেছেন, তার উদাহরন :
হযরত উমায়ের ইবনে সাইদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত হাদীস তিনি বলেন ‘তোমরা মোয়াবিয়া (রাঃ) কে ভাল ভাবেই স্মরণ কর, কেন না আমি রাসুল (সাঃ) থেকে শুনেছি রাসুল (সাঃ) বলেছেন ”হে আল্লাহ তুমি মোয়াবিয়াকে হেদায়েত দাও। (সুনানে তিরমিজি-খ: ৫, পৃ:৬৪৫)
হাদীসটিকে আলবানী সাহেব সহীহ সাব্যস্ত করে স্বীয় কিতাব সহীহ সুনানে তিরমিজি (খ: ৩, পৃ:২৩২) তে উল্লেখ করেছেন। অথচ হাদীসটির সূত্রের উপর গবেষনার দ্বারা দেখা যায় হাদীসটি মানগত ভাবে অত্যন্ত দুর্বল।
সূত্রের একজন রাবী-আমর ইবনে ওকেদ। তার ব্যাপারে উলামাদের বক্তব্য,
১। হাফেজ ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন (মাতরুক) ইনি পরিত্যাজ্য। (তাকরিব আত তাহজীব-৪২৮পৃঃ)
২। ইমাম বুখারি ও তিরমিজি (রহঃ) বলেন ইনি এমন রাবী যাদের হাদীস গ্রহন করা হয় না (মুনকারুল হাদীস) ।
৩। আল্লামা মারওয়ান (রহঃ) বলেন মিথ্যাবাদী (কাজ্জাব) ।
৪। ইমাম নাসায়ী, দারাকুতনী এবং ইমাম বুবকানী (রহঃ) এই রাবীর ব্যাপারে একমত হয়ে বলেন ইনি এমন রাবী যাদের হাদীস পরিত্যাজ্য (মাতরুকুল হাদীস)। (তাহজীবুত তাহজীব (৮/৯৮)
সূত্রের রাবী আমর ইবনে ওকেদ সম্পর্কে উল্লেখিত ইমামদের বক্তব্যের দ্বারা একথা সুস্পষ্ট হল হাদীসটি কোন অর্থেই সহীহ হতে পারে না।
এমন কি আলবানী সাহেব এই রাবীকে দুর্বল সাব্যস্ত করে ওনার কিতাব ‘‘সিলসিলাতুল আহাদীস আয যইফাতু মওযুযা” তে (খ: ২, পৃ: ৩৪১) উল্লেখ করেছেন। স্বয়ং তিরমিজি (রহঃ) উল্লেখিত হাদীসটি দুর্বল (যঈফ) হিসেবে ইংগীত করে স্বীয় কিতাব সুনানে তিরমিজিতে (খ: ৫, পৃ:৬৪৫) বর্ণনার শেষে বলেন, আমর ইবনে ওকেদ দুর্বল রাবীদের অর্ন্তভুক্ত।
আলবানী সাহেব একই রাবীকে কোন এক স্থানে সহীহ, অপর এক স্থানে যঈফ বলেছেন। উদাহরণ স্বরূপ:
আবু উমামা (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণিত রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেন তোমরা মুমিন ব্যক্তির অর্ন্তদৃষ্টি থেকে বেঁচে থাক, কেননা সে আল্লাহ তা’লার নূরের দ্বারা দৃষ্টি করে থাকেন। (মুজামুল আওসাত-৩/৪৪৫)
উল্লেখিত হাদীসটির সূত্রের এক জন রাবী হলেন আবু সালেহ আব্দুল্লহ ইবনে- সালেহ । হাদীসটি আলবানী সাহেবের মতাদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ার কারনে তিনি উক্ত হাদীসের একজন রাবী আবু সালেহ আব্দুল্লাহ ইবনে সালেহকে দুর্বল আখ্যায়িত করে হাদীসটি অগ্রহনযোগ্য হিসাবে স্বীয় কিতাব ‘‘সিলসিলাতুল আহাদীস আয যইফাতু মওযুযা” (খ: ৪, পৃ:২৯৯) তে উল্লেখ করেছেন।
অথচ আবু সালেহ আব্দুল্লাহ ইবনে সালেহ-এই একই রাবীর মাধ্যমে ইমাম তিরমিজি (রহঃ) স্বীয় কিতাব সুনানে তিরমিজিতে ইবনে মুররা (রাঃ) এর সূত্রে হাদীস উল্লেখ করেছেন রাসুল (সাঃ) বলেন ”হুসাইন আমার থেকে আর আমি হুসাইনের থেকে- যে ব্যক্তি হুসাইনকে ভালবাসে সে আল্লাহ তা’লাকে ভালবাসে। হুসাইন আমার পরবর্তী বংশধর। (সূনানে তিরমিজি, খ:৫, পৃ: ৬১৮)
হাদীসটিকে আলবানী সাহেব সহীহ হিসাবে স্বীয় কিতাব সিলসিলাতুল আহাদিস আস সহীহা (খ: ৩, পৃ: ২২৯) তে উল্লেখ করেন। এবং বলেন হাদীসটির সনদ উৎকৃষ্ট মানের আবু আব্দুল্লা ইবনে সালেহ এর ব্যপারে দূর্বলতার যেই কথা রয়েছে তাহা কোন ক্ষতিকারক নয়।
এমনই অনেক পরস্পর বিরোধী মতামত তার রচিত কিতাব সমূহে রয়েছে। যা অনেক উলামায় কিরামের মতে, একটি পক্ষপাত মূলক আচরণ ভিন্ন আর কিছুই নয়।
মাযহাব, বিশেষত হানাফী মাযহাব সম্পর্কে আলবানী সাহেবের মনে এক প্রকারের বিদ্বেষ বিদ্যমান ছিলো, যার তার লেখা ও বক্তব্যের মাধ্যমে প্রকাশ পায় (মূলত এই বিদ্বেষ মূলক মনোভাবে কারণেই তার পিতার সাথে তার দূরত্বের সৃষ্টি হয় এবং পরবর্তীতে তার পিতা তাকে ঘর থেকে বের করে দেন) । আল্লামা মুনযীরি (রহ,) -এর লেখা মুখতাসারু সহিহীল মুসলিম এর এক স্থানে টিকায় তিনি লেখেন তিনি লিখেছেন-
“এ থেকে স্পষ্ট যে, হযরত ঈসা (আঃ) আমাদের শরীয়ত অনুযায়ী ফয়সালা দিবেন এবং কিতাব ও সুন্নাহের মাধ্যমে বিচার করবেন। তিনি ইঞ্জিল, হানাফী ফিকহ কিংবা এজাতীয় অন্য কিছু দ্বারা বিচার করবেন না” (আল্লামা মুনযীরি (রহঃ) কৃত “মুখতাসারু সহিহীল মুসলিম” এর উপর শায়েখ আলবানীর টিকা সংযোজন, পৃষ্ঠা-৫৪৮)
এখানে তিনি সহজেই হানাফী ফিকাহকে ইঞ্জিলের সাথে তুলনা করেছেন। আপাত: দৃষ্টিতে বিচার করলে বোঝা যায়, বর্তমানে ইঞ্জিল একটি রহিতকৃত (মানসূখ) বিধান, সুতরাং পরিত্যাজ্য। অতএব ইঞ্জিলের সাথে তুলনার মাধ্যমে হানাফী ফিকহকেও বাতিলের খাতায় ফেলে দেয়া হলো। অন্যথায়, ঈসা (আঃ) সম্পর্কে আলোচনা কালে হানাফী ফিকহের আলোচনার কি আবশ্যকতা ছিলো এখানে?
পূববর্তী ও সমকালিন প্রসিদ্ধ উলামায়ে কিরামের প্রতিও শায়েখ আলবানীর আক্রমনাত্মক ও শ্রদ্ধাহীন মন্তব্য দেখা যায়। এমনকি ইমাম বুখারী (রহ.) সম্পর্কে শায়েখ আলবানী যে শব্দ উচ্চারণ করেছেন, আমাদের মতে তা কোন সুস্থ্য জ্ঞান সম্পন্ন মুসলমান আলেম উচ্চারণ করতে পারে না।
ইমাম বোখারী (রহঃ) বুখারী শরীফের কিতাবুত তাফসীরে সূরা কাসাসের ৮৮ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন,
كُلُّ شَىْءٍ هَالِكٌ إِلاَّ وَجْهَهُ إلا ملكه, ويقال: إلا ما أُريد به وجه الله
“আল্লাহর সত্তা ব্যতীত সব কিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে”
এখানে তিনি “ওয়াজ্হুন” শব্দের ব্যাখ্যা করেছেন “মুলকুন” তথা আল্লাহর রাজত্ব। তখন অর্থ হবে, সবকিছু ধ্বংস হবে, তাঁর রাজত্ব ব্যতীত। অথবা “ওয়াজহুন” দ্বারা যা উদ্দেশ্য হবে, তা ব্যতীত সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।
ইমাম বোখারী (রহঃ) যে ব্যাখ্যা করেছেন, সে সম্পর্কে নাসীরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) লিখেছেন,
ان هذا التأويل لا يقول به مؤمن مسلم وقال إن هذه التأويل هو عين التعطيل.
“এ ধরণের ব্যাখ্যা কোন মুমিন-মুসলমান দিতে পারে না। তিনি বলেন, এ ধরণের ব্যাখ্যা মূলতঃ কুফরী মতবাদ “তা’তীলের” অন্তর্ভূক্ত”। অর্থাৎ তিনি আপেক্ষিক ভাবে বুঝিয়ে দিলেন, এ ধরনের ব্যাখ্যা দানকারী ইমাম বুখারী ”তা’তীলী” মতবাদানুসারী কাফের। [ফাতাওয়াশ শায়েখ আলবানী, পৃষ্ঠা-৫২৩, মাকতাবাতুত তুরাছিল ইসলামী, প্রথম প্রকাশ ১৯৯৪ইং]
এই হলো হাদীস শাস্ত্রের জগতের মুকুটহীন সম্রাট ইমাম বুখারী (রহ.) সম্পর্কে শায়েখ আলবানীর মন্তব্য। বিষয়টা হয়তো এখানেই থেমে গেলে হতো, আমরা ধরে নিতাম, ইমাম বুখারী (রহ.)-সম্পর্কে শায়েখ আলবানীর ধারনা ভালো নয়, আর দু’এক জনের ব্যাপারে এমনটি হতেই পারে। কিন্তু ক্রমান্বয়ে এই তালিকা যখন বৃদ্ধি পেতে থাকলে, আর তাতে অর্ন্তভূক্ত হতে থাকলো একের পর এক প্রতিথযশা মুহাদ্দিসিনে কিরামগন, আমরা আসলেই বর্ণনার ভাষা হারিয়ে ফেললাম।
(শেষাংশ পরবর্তী কিস্তিতে দ্রষ্টব্য)
বিষয়: বিবিধ
৭৩৬৫ বার পঠিত, ৩৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ এ বিষয় নিয়ে লেখার জন্য।
শায়খ আলবানীও একজন যুগশ্রেষ্ঠ হাদীস বিশারদ ছিলেন যার মতামতকে সকল মতের আলিমরা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করেন।
সেসব ইমামদের ও শায়খদের মাঝে ভিন্নমত হতে পারে বিভিন্ন ইস্যুতে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সেসব উত্থাপন করে ফিতনা সৃষ্টি আদৌ কাঙ্খিত কিনা? কোনো মানুষই ভুলের উর্ধ্বে নন। এক্ষেত্রে ঐ বিষয়টির ব্যাখ্যায় শায়খ আলবানীর উপলব্ধিতে ভুল হতে পারে এবং যদি এ ভুল তিনি করে থাকেন তবে আশা করা যায়, মুসলিম উম্মাহর জন্য অসামান্য অবদানের জন্য তাঁর সে ভুল মহান আল্লাহ ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু এ ভুল কে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে তাঁর মত যুগশ্রেষ্ঠ আলিম এর চরিত্রহনন কাঙ্খিত নয়। সেসব আলিমদের জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও মুসলিম উম্মাহর প্রতি তাঁদের অবদান আমার আপনার চেয়ে সহস্র সহস্র গুণ বেশি।
আপনি হয়তো জেনে থাকবেন, শায়খ আব্দুল কাদের জিলানী(রহ)একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলিম ছিলেন। তিনি হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন এবং মাযহাবঘটিত বিভিন্ন ভিন্ন মতের কারণে তিনি ইমাম আবু হানীফা(রহ) কে সরাসরি 'কাফির' উপাধি দিয়েছিলেন। কিন্তু এজন্য পরবর্তী আলেমদের কাছে শায়খ জিলানীর(রহ)ও ইমাম আবু হানীফা(রহ)- কারো মর্যাদার ঘাটতি হয় নি। এমনকি হানাফী আলেমরাও জিলানী(রহ)কে গভীর শ্রদ্ধা করেন। তাঁরা এটিকে শায়খ আবদুল কাদের জিলানীর(রহ) একটি ভুল উপলব্ধিগত ভুল হিসেবেই দেখে থাকেন এবং বিশ্বাস করেন, এ একটি ভুলের জন্য দ্বীনের প্রতি তাঁর অন্যান্য অবদান অনস্বীকার্য্। কাজ করলে ভুল হবেই। আমাদের উচিত তাঁদের ভুলগুলি বর্জন করে কুরআন হাদীসের আলোকে তাঁদের সঠিক নির্দেশনাগুলি পালন করা।
আমাদের ছিদ্রাণ্বেষণ পরিহার করা জরুরী। আশা করি বুঝতে পারছেন।
তাই লিখাটি আজকে পড়লাম। গতকালকে লিখাটি দেখেছিলাম।
lighthouse24.org/blog
দাওয়াত রইলো।
জাজাকাল্লাহ
আমার ফেসবুকে আমন্ত্রন রইলো,Aryan Khan প্রায়ই বাদ ঈশা হতে অন থাকি।
তবে একটি কথা বলা যেতে পারে যে, কোন মানুষ ভুলের উর্দ্ধে নয়। আল্লাহ শাইখ (রহ.) কে ক্ষমা করে জান্নাত দান করেন। আমিন।
তবে আহলে হাদীস মাযহাবের ভাইরা যেভাবে বাড়াবাড়ি করেন সেটা কাম্য নয়।
বাড়াবাড়ি করতে যেয়ে তারা পূর্ববর্তী মুহাদ্দিসগন, মাযহাবের ইমামগন, সমসাময়িক আলেমদেরকে হেয় এবং তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন। কথায় কথায় উল্টাপাল্টা ফতোয়া মারেন। অথচ এমনও দেখবেন এদের সুরা ফাতিহা তিলাওয়াতও অশুদ্ধ।
অথচ ফতোয়া দেয়াতে এক্সপার্ট। এরকম ফতোয়াবাজদের জন্যই যত সমস্যা। আবার এমন আছে বেতনভুক্ত দায়ী, জিন্দেগিতে এদেরকে আমাদের সাধারন মানুষদের কাছে পাবেননা।
আল্লাহপাক বেআলেম ফতোয়াবাজ হতে আমাদের পানাহ দান করেন। আমিন।
শায়খ আলবানীও একজন যুগশ্রেষ্ঠ হাদীস বিশারদ ছিলেন যার মতামতকে সকল মতের আলিমরা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করেন।
সেসব ইমামদের ও শায়খদের মাঝে ভিন্নমত হতে পারে বিভিন্ন ইস্যুতে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সেসব উত্থাপন করে ফিতনা সৃষ্টি আদৌ কাঙ্খিত কিনা? কোনো মানুষই ভুলের উর্ধ্বে নন। এক্ষেত্রে ঐ বিষয়টির ব্যাখ্যায় শায়খ আলবানীর উপলব্ধিতে ভুল হতে পারে এবং যদি এ ভুল তিনি করে থাকেন তবে আশা করা যায়, মুসলিম উম্মাহর জন্য অসামান্য অবদানের জন্য তাঁর সে ভুল মহান আল্লাহ ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু এ ভুল কে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে তাঁর মত যুগশ্রেষ্ঠ আলিম এর চরিত্রহনন কাঙ্খিত নয়। সেসব আলিমদের জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও মুসলিম উম্মাহর প্রতি তাঁদের অবদান আমার আপনার চেয়ে সহস্র সহস্র গুণ বেশি।
আপনি হয়তো জেনে থাকবেন, শায়খ আব্দুল কাদের জিলানী(রহ)একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলিম ছিলেন। তিনি হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন এবং মাযহাবঘটিত বিভিন্ন ভিন্ন মতের কারণে তিনি ইমাম আবু হানীফা(রহ) কে সরাসরি 'কাফির' উপাধি দিয়েছিলেন। কিন্তু এজন্য পরবর্তী আলেমদের কাছে শায়খ জিলানীর(রহ)ও ইমাম আবু হানীফা(রহ)- কারো মর্যাদার ঘাটতি হয় নি। এমনকি হানাফী আলেমরাও জিলানী(রহ)কে গভীর শ্রদ্ধা করেন। তাঁরা এটিকে শায়খ আবদুল কাদের জিলানীর(রহ) একটি ভুল উপলব্ধিগত ভুল হিসেবেই দেখে থাকেন এবং বিশ্বাস করেন, এ একটি ভুলের জন্য দ্বীনের প্রতি তাঁর অন্যান্য অবদান অনস্বীকার্য্। কাজ করলে ভুল হবেই। আমাদের উচিত তাঁদের ভুলগুলি বর্জন করে কুরআন হাদীসের আলোকে তাঁদের সঠিক নির্দেশনাগুলি পালন করা।
আমাদের ছিদ্রাণ্বেষণ পরিহার করা জরুরী। আশা করি বুঝতে পারছেন।
কিছু জানতে পারলাম
লিখে যান আপনার
মতো
||
এসব কাজের মুল হোতা হচ্ছে আমাদের উপমহাদেশের তারাই যারা নিজের নামের আগে আল্লামা লাগিয়ে ঘুরে বেড়াই আর নিজেকে পরিচয় দেয় দেওবন্দি হিসাবে।
আর কপি পেস্ট!!!! কপি পেস্ট তো অবশ্যই করবো। রেফারেন্স মানেই তো কপি পেস্ট। এতটুকুও যে বোঝেনা তাকে বুঝিয়ে দেবার প্রয়োজনও বোধ করি না।
মানুষ মাত্রই ভূল হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে মানুষের স্থান, মর্যাদা ও জ্ঞানের মাত্রা ভেদে কি ভূলের মাত্রা একই হবে!!!! একজন সাধারণ মানুষ কুরআন তিলাওয়াত করতে গিয়ে যতগুলো স্থানে আটকাবেন বা ভূল করে ফেলবেন একজন হাফিজে কুরআনের ক্ষেত্রেও কি সংখ্যাটা ততটুকুই হবে? যুক্তি দেওয়া ভালো, কিন্তু যুক্তিটাও যুক্তিযুক্ত হতে হয়।
কিছু মানুষ চার মাযহাবের মুজতাহিদ ইমামদের যেমন হাস্যকর ভূল ধরে বসে থাকে, তাদের যোগ্যতার দিকে তাকালে আর তথাকথিত ভূলগুলোর দিকে তাকালে হাসিছাড়া আর কিছুই আসে না।
আলবানী মরহুমের সমালোচনা করা মাত্রই একজন ব্যক্তি মূর্খ, পথভ্রষ্ঠ, বিদআতী হয়ে যায়। আর হাদীসশাস্ত্রে, ইলমে ফিকাহর নক্ষত্রতূল্য ব্যক্তিদের সমালোচনাকারীগন একেকজন মহামানবে ও অতি জ্ঞানীতে পরিণত হয়!
যুক্তি কাকে বলে সেটাই এখন দেখাচ্ছি- (১)উপরে দলীলের ভিত্তিতে দেখানো হয়েছে তিনি একই রাবীকে একস্থানে গ্রহনযোগ্য আবার অপর স্থানে অগ্রহনযোগ্য বলেছেন এবং কোন এক স্থানেও তিনি পূর্বের মত থেকে প্রত্যাগমন করেন নি, একজন মুহাদ্দিসের ক্ষেত্রে এমন ধরনের ভূলকে কি সাধারণ ভূল বলে মেনে নেয়া যাবে? (২) স্বীকৃত সহীহ হাদীসকে তিনি যঈফ বলেছেন এবং স্বীকৃত যঈফ হাদীসকে সহীহ বলেছেন, কিন্তু এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত কোন কারণ তিনি ব্যাখ্যা করেননি। এরূপ ভূমিকা যখন কোন মুহাদ্দিসের মাঝে পাওয়া যায়, উসূলে হাদীসের আলোকে তার সম্পর্কে কি সিদ্ধান্তে আশা যেতে পারে? (৩) যদি কোন মুহাদ্দিস হাদীস বর্ণনাকালে কোন উস্তাদ হতে সরাসরি শ্রবণের হাওয়ালা না দিতে পারে, বা উস্তাদের নাম না বলতে পারে, তার বর্ণিত হাদীস উসূলে হাদীস অনুসারে পর্যায়ে পড়ে?
দেখি, এর উত্তরে উসূলে হাদীসের ভাষায় আপনার কি বক্তব্য থাকে।
মূলত অন্ধকারে তারাই থাকে যারা মানুষকে মুজতাহিদ ইমামদের অনুসরণ হতে বারণ করে কিন্তু নিজেরা অন্ধের মতো অনুসরণ করে তাদের নির্দিষ্ট শায়েখদের।
ফালতু বিতর্ক করার অভ্যাসও নেই, ভালোও লাগে না, যুক্তি যুক্ত উত্তর থাকলে দিবেন অনথ্যায় দয়া করে আমার লেখা এড়িয়ে যাবেন।
শায়খ আলবানীও একজন যুগশ্রেষ্ঠ হাদীস বিশারদ ছিলেন যার মতামতকে সকল মতের আলিমরা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করেন।
সেসব ইমামদের ও শায়খদের মাঝে ভিন্নমত হতে পারে বিভিন্ন ইস্যুতে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সেসব উত্থাপন করে ফিতনা সৃষ্টি আদৌ কাঙ্খিত কিনা? কোনো মানুষই ভুলের উর্ধ্বে নন। এক্ষেত্রে ঐ বিষয়টির ব্যাখ্যায় শায়খ আলবানীর উপলব্ধিতে ভুল হতে পারে এবং যদি এ ভুল তিনি করে থাকেন তবে আশা করা যায়, মুসলিম উম্মাহর জন্য অসামান্য অবদানের জন্য তাঁর সে ভুল মহান আল্লাহ ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু এ ভুল কে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে তাঁর মত যুগশ্রেষ্ঠ আলিম এর চরিত্রহনন কাঙ্খিত নয়। সেসব আলিমদের জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও মুসলিম উম্মাহর প্রতি তাঁদের অবদান আমার আপনার চেয়ে সহস্র সহস্র গুণ বেশি।
আপনি হয়তো জেনে থাকবেন, শায়খ আব্দুল কাদের জিলানী(রহ)একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলিম ছিলেন। তিনি হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন এবং মাযহাবঘটিত বিভিন্ন ভিন্ন মতের কারণে তিনি ইমাম আবু হানীফা(রহ) কে সরাসরি 'কাফির' উপাধি দিয়েছিলেন। কিন্তু এজন্য পরবর্তী আলেমদের কাছে শায়খ জিলানীর(রহ)ও ইমাম আবু হানীফা(রহ)- কারো মর্যাদার ঘাটতি হয় নি। এমনকি হানাফী আলেমরাও জিলানী(রহ)কে গভীর শ্রদ্ধা করেন। তাঁরা এটিকে শায়খ আবদুল কাদের জিলানীর(রহ) একটি ভুল উপলব্ধিগত ভুল হিসেবেই দেখে থাকেন এবং বিশ্বাস করেন, এ একটি ভুলের জন্য দ্বীনের প্রতি তাঁর অন্যান্য অবদান অনস্বীকার্য্। কাজ করলে ভুল হবেই। আমাদের উচিত তাঁদের ভুলগুলি বর্জন করে কুরআন হাদীসের আলোকে তাঁদের সঠিক নির্দেশনাগুলি পালন করা।
আমাদের ছিদ্রাণ্বেষণ পরিহার করা জরুরী। আশা করি বুঝতে পারছেন।
সমপর্যায়ের উলামায়ে কিরাম পরস্পরের সম্পর্কে কেমন ধারনা রাখতেন সে বিষয়ে আমি মাথা ঘামাতে যাই না, আদার ব্যাপারি জাহাজের খবর নিয়ে কাজ নেই। কিন্তু হাদীস শাস্ত্রে হাদীসের আলোচনা ও সমালোচনা একটি উন্মুক্ত রত্নাগার, যার যোগ্যতা থাকবে সেই এসে এখান থেকে মহামূল্যবান মনিমুক্তা সংগ্রহ করবে, যাচাই করবে এবং উপকৃত হবে। আমার আলোচনা শায়েখের হাদীসের তাহক্বীকাত সম্পর্কেই।
ভাই, উসূলে হাদীসের প্রথম দিকের কয়েকটি নীতির দিকে যদি আমরা চোখ বুলাই তাহলেই দেখবো শায়েখ আলবানীর অধিকাংশ মতামত উসূলের সাথে সাংঘর্ষিক। অন্যদিকে তিনি নিজেও কিন্তু নিজস্ব চিন্তা ও বিবেচনা মোতাবেক পৃথক কোন উসূল প্রণয়ন করে যাননি, যেরূপ মুহাদ্দিসীনে কিরামের অনেকে করেছেন।
অন্যদিকে, শায়েখ আলবানীর বেশ সংখ্যক তানাকূয আমরা দেখতে পাই । এমনকি বিখ্যাত ইসলামী স্কলার শায়খ হাসান বিন আলী আস-সাক্কাফ শায়েখ আলবানী সাহেবের তানাকুযাতের উপর "তানাকুযাতুল আলবানিল ওয়াজিহাত" নামে ৩ খন্ডের একটি কিতাব প্রকাশ করেছেন যেখানে তিনি এমন ১৩০০ তানাকূযাত দলীল সহ উল্লেখ করেছেন। একজন মুহাদ্দীসের এত সংখ্যক তানাকূয দেখে উসূলে হাদীসের অনুসারে তার বক্তব্য সম্পর্কে আপনি কি অবস্থান গ্রহন করবেন তা আপনার উপরই ন্যস্ত। প্রত্যেকেই নিজের জন্য জিম্মাদার।
অনুরূপ; এমন কয়েকশত হাদীস রয়েছে যেখানে শায়েখ আলবানী যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসীনের মতের বিপরীত মত প্রকাশ করেছেন; অর্থাৎ সহীহ কে মাতরূক বা যঈফ, যঈফ কে সহীহ; কিন্তু সিংহভাগ ক্ষেত্রেই তিনি কোন কারণ উল্লেখ করেন নি। এমতাবস্থায় উসূলে হাদীসের অনুসারে আপনি কোন পক্ষের বক্তব্য গ্রহন করবেন তাও আপনার সিদ্ধান্ত আপনার হাতে এবং আমার সিদ্ধান্ত আমার হাতে।
সবিশেষ, একজন ফহীহের ভূল মাসআলা বর্ণনার চেয়ে ভয়াবহ একজন মুহাদ্দিসের ভূল তাহক্বীকাতের উপর অটল থাকা, তার চেয়েও ভয়াবহ একজন মুফাসসিরের কুরআনের ভূল ব্যাখ্যার উপর থাকা। সুতরাং সত্যিই যদি কেউ সহীহ হাদীস তালাশ করেন তাহলে শায়েখ আলবানী সাহেবের তাহক্বীকের উপর নিশ্চিন্ত না হয়ে তিনি এর উপরও তাহক্বীক করবেন।
আবারো বলি, আমার লেখা ব্যক্তি শায়েখ আলবানীর বিরুদ্ধে নয়, মুহাদ্দিস শায়েখ আলবানীর কিছু সীমাবদ্ধতা নিয়েই।
"আমাদের ছিদ্রাণ্বেষণ পরিহার করা জরুরী" আপনার এ কথার সাথে আমিও সন্দেহাতীত ভাবে একমত। কিন্তু এই কথাগুলো তাদের বুঝতে হবে যারা বাংলা বুখারীর জোরে মানুষকে বিদআতী উপাধী দিয়ে বেড়ান।
প্রেসিডেন্ট ভাইয়া আমি এটা আপনার কাছ থেকে জীবনের প্রথম শুনছি। আমি আপনার লিখা এ ঘটনাকে প্রমান বা দলীলবিহিন পাওয়াতে সম্পূর্ণ রূপে অস্বিকার করলাম যে এতবড় আলেম এমনটি বলতে পারেন না। ভুল হতেই পারে মানুষের তবে সরাসরি কাফের!!!!! আমি আশ্চর্য্যবোধ করছি আর
আল্লাহর ওয়াস্তে আমি দলীল দাবী করছি যে আমি বিষয়টা তাহক্বিক করবো কোথায় শাইখ জিলানি (রহ.) এটা বলেছেন?
বই?
কোন শাইখ?
কোন রেফারেন্স জানতে চাচ্ছি।
জাজাকাল্লাহ ।
উপর আর কথা হয় না।
@প্রেসিডেন্ট ভাই এর উপর আসলে কোন কথা হয়না।
তবে আশেপাশের কথা না হয় নাই বললাম।
ইউটিউব সার্চ করে আহলে হাদিস মাযহাবের সম্মানিত শাইখ মাওলানা মতিউর রহমান মাদানির দুতিনটা লেকচার শুনুন।
তখন দেখবেন কতটা সম্মান করে কথা বলেন।
জাজাকাল্লাহ।
ভাই বিষয়টার কোন তাহক্বিক আছে আপনার কাছে?
@চিরবিদ্রোহী ভাইয়া।
আমার মনে পেরেশানি কাজ করছে।
দয়া করে তাহক্বিক জানতে চাই।
আর আমি নিজেকে মুসলমান পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আহলে হাদীস ও অতি মাযহাবী সকলের মাঝেই কিছু বাড়াবাড়ি আছে। মতিউর রহমান এর মত কট্টরপন্থীরা প্রকৃত আহলে হাদীসের দর্শন প্রতিফলিত করেন না। এক শ্রেণীর আহলে হাদীস আছেন সহীহ হাদীস করতে করতে কুরআনের নির্দেশনাও ভুলে যান আবার অতি মাযহাবী এক শ্রেণী আছেন যারা মাযহাব করতে করতে সহীহ হাদীস অস্বীকার করে বসেন। জ্ঞানার্জনের বিকল্প নেই।
মূল কথায় আসি, আপনি যে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন, এমন কোন কথা আমি কখনো কোন কিতাবে বা উপরোক্ত শাইখাইনের জীবনীতে পড়ি নাই, কোন উস্তাদের মুখেও শুনি নাই । তবে হ্যাঁ, এটা সঠিক যে মাযহাবী মাসাঈলের কারণে অনেক আলেম অন্যকে গুমরাহ, ফাসিক, কাফির পর্যন্ত বলে বসেছেন। উদাহরণ স্বরূপ- ইমাম বুখারী (রহ.) ইমাম আবু হানিফাকে (রহ.) সরাসরি কাফির বলতেন। ইমামে আ'জমের যে দিন ইন্তেকাল হয়, সেদিন প্রখ্যাত রাবী ও মুজতাহীদ সুফিয়ান সাওরী (রহ.) বলেছিলেন, "আজ উম্মত অনেক বড় ফেতনার হাত থেকে রক্ষা পেয়ে গেল।" এগুলোর বর্ণনা সাধারণত কিতাবাদিতে আমরা পাই নি, কিছুটা পেয়েছি ইমাম বুখারী রচিত তা'রিখ গ্রন্থে আর কিছুটা মুফতী ত্বকী উসমানী দা.বা কৃত তিরমিযী শরীফের শরাহ গ্রন্থের সূচনায়।
অপরদিকে ইমাম বুখারী (রহ.) সম্পর্কে "খলকে কুরআন" ইত্যাদি বিষয়ে কিছু বিতর্ক সৃষ্টি হলে তৎকালীন বিখ্যাত মুহাদ্দীসগণ যেমন, মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াহইয়া ইমাম বুখারীর বিরুদ্ধে ফাতওয়া প্রকাশ করেন, অনেকে তো সরাসরি কাফির/ফাসিক/মু'তাজিলী বলে বসেন এবং বুখারীর রাওয়ায়েতে হাদীস বর্ণনা বর্জন করেন। যদিও ইমাম মুসলিম (রহ.) এ সময়ে সবদিক থেকে ইমাম বুখারী কে সমর্থন করলেও স্বীয় কিতাবে ইমাম বুখারীর সনদে হাদীস বর্ণনা হতে বিরত থেকেছেন। (মুসলিম শরীফের অনুবাদের ভূমিকা দ্রষ্টব্য)।
এখন লক্ষ্যনীয় যে, যারা বলেছেন এবং যাদের বিরুদ্ধে বলেছেন, প্রথমত তারা কি ফিকহী মাসাঈলের কারণে বলেছেন নাকি হাদীসের বর্ণনা বিশ্লেষণগত মত পার্থক্যের কারণে বলেছেন? মুর্খ মাত্রও একমত হবে যে, এর কারণ ছিলো ফিকহী মাসাইলের পার্থক্য। সুতরাং, যে উদ্দেশ্যে যিনি এই কথাগুলো উপরে বলেছেন, তার ভেবে দেখা উচিত এখানে এরূপ উদাহরণ আসলে কতটুকু গ্রহণযোগ্য। দ্বিতীয়ত: যিনি বলেছেন তিনি এবং যাকে বলা হয়েছে তিনি, উভয়েই সর্বোচ্চ পর্যায়ের আলেম, তাদের সূত্রে বর্ণিত কোন হাদীস সামনে আসলে কারো সাধ্য নেই তাদের মুনতাকি বা গরীব রাবি সাব্যস্ত করে। সুতরাং, এই আজাইরা প্যাচালের প্রবক্তাদের কি ভেবে দেখার বুদ্ধিও নেই?
উক্ত বিষয়টি নিয়ে ইনশাআল্লাহ আমি যথাসাধ্য তাহক্বীক করে দেখব এবং অচিরেই আপনাকে জানাবো।
জাযাকাল্লাহু খইর।
বইয়ের লিঙ্কটি এখানেই দিন, যাতে আমরাও পড়ে উপকৃত হতে পারি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন