আমার ঈদ ও গাজার এক সমবয়সী ভাইয়ের ঈদ

লিখেছেন লিখেছেন চিরবিদ্রোহী ২৯ জুলাই, ২০১৪, ১১:১৫:৪৩ রাত

আমার কিছু বিশেষ অভ্যাস আছে যা আমি প্রতিবছর ঈদের দিন করি। ঈদের দিন সকালে সলাত শেষ করে পরিচিত মহলের সাথে মুলাকাত ও মুসাহফা করে তাদের সাথে কিছুক্ষন আড্ডা দেই এবং সকালের চা পান করি। এরপর কবরস্থান যিয়ারতে যাই। অত:পর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, বাসায় ফিরে মায়ের হাতের জালি পরটা, গোশত ভূনা আর সেমাই। আহা- মনে হয় যেন আল্লাহ আমার ঈদের প্রথম নিয়ামতটা আমার মায়ের হাতের মাধ্যমেই দেন।

এবারও ঈদ-উল-ফিতর আসলো আমার জীবনে। এবারও বরাবরের সলাত আদায় করে বন্ধুদের সাথে ক্ষনিকের আড্ডা, কবরস্থানে গিয়ে আব্বা, দাদা, দাদীর কবর যিয়ারত, অত:পর বাসায় ফিরে মায়ের হাতের বেহেশতী নাস্তা। কিন্তু কেন যেন এবার আড্ডায় মন বসে না, মায়ের হাতের সেই অমৃতই চোখের সামনে দেখেও এক লোকমা মূখে তুলে নিতে মন চায় না। সবসময়ই মাথার মধ্যে একই চিন্তা ঘোরপাক খায়-

এই যে আমি, বাংলাদেশের মধ্যবিত্তঘরের এক ২৫ বছর বয়সি ছেলে, যখন হাসি মুখে ঈদের সলাত শেষ করে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করছি, মায়ের হাতের সুস্বাদু রান্না আস্বাদন করছি, ঠিক সেই দিনই হয়তো আমার মতো ২৫ বছর বয়সি কোন প্যালেস্টাইন তরুন তার মায়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। সে হয়তো কল্পনাও করতে পারেনি যে মা দিন কয়েক আগেও তাকে সাহরির জন্য ডেকে দিত, ছেলে ইফতারে কি পছন্দ করবে সেই ভাবনায় মগ্ন থাকতো, ঈদের দিনে ছেলে কোন জামাটা পরে ঈদগাহে যাবে, নতুন জামা হবে কিনা, আর না হলে পুরোনো কোনটা ভালো করে ধুয়ে রাখতে হবে, ঈদের দিন ছেলের জন্য কি খাবার রান্না করবে এই ভাবনায় মশগুল থাকতো, আর ছেলে ভাবতো এই ঈদে মায়ের জন্য কি উপহার নেয়া যেতে পারে, হয়তো সে তার বন্ধুদের দাওয়াত করেছিলো তার মায়ের রকমারি রান্না উপভোগ করতে, কস্মিৎকালেও কি সে ভেবেছিলো একটি ঘাতক মিসাইল এসে চূর্ণ বিচুর্ণ করে দেবে এই ছোট ছোট স্বপ্নগুলোকে? আজ হয়তো সে তার মায়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে অশ্রুশিক্ত নয়নে ভাবছে, মা আর কখনো আমার জন্য রান্না করে রাখবে না, মায়ের হাতের বেহেশতি রান্নার স্বাদ আর কখনো এই জিহবা পাবে না!!!!!

আমার মা যখন পথ চেয়ে থাকে কখন তার ছেলে ঈদগাহ থেকে ফিরবে, তারপর আয়েশ করে বসে নিজের প্রিয় খাবারগুলো উপভোগ করবে, আর তিনি ছেলের মুখে তৃপ্তির ছাপ দেখে নিজেও পরিতৃপ্ত হবেন, ঠিক সেই সময়েই হয়তো প্যালেস্টাইন কোন মা তার তরুন ছেলের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে চোখের পানিতে আঁচল ভিজাচ্ছেন, হয়তো তিনিও কল্পনা করতে পারেন নি যে ছেলে দুদিন আগেও তার সাথে বসে সাহরী-ইফতার করেছে, সে আজ কয়েকমন মাটির ওজন শরীরের উপর নিয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত।

আমি ভাবি, ভেবে যাই, কিন্তু কিছুই ভেবে পাই না। এই আমি, আর এই সেই প্যালেস্টাইন তরুন; এই আমার মা, আর এই সেই প্যালেস্টাইন মা। একই ধর্ম, একই উৎসবের দিন- তবু কত যোজন পার্থক্য দুইজনে.......

আমি ভেবে যাই, ভাবনার কোন অন্ত হয় না, কখন দু চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি নেমে আসে টের পাই, নিজের অজান্তেই দু হাত উঠে যায় আল্লাহর দরবারে ভিক্ষা চাইতে-

"হে মাবুদ! যারা এভাবে নিরীহ মানুষগুলোকে নির্মম ভাবে হত্যা করছে, সন্তানের কাছ থেকে মা কে ছিনিয়ে নিচ্ছে, মায়ের কোল থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছে কলিজার টুকরা সন্তানকে, তোমার প্রিয় হাবীব রাসূল্লাহর (সাঃ) উসিলায় তাদের তুমি ধ্বংস করে দাও, নাস্তানাবুদ করে দাও তাদের অন্যায়ের রাজত্ব.....আদ, সামুদদের যেভাবে তুমি দুনিয়ার বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করেছো, তাদেরও তুমি সেভাবেই বিলিন করে দাও। ফিরাউন, নমরুদ, শাদ্দাদের চেয়েও করুন পরিণতি হোক তাদের, এটাই হবে এই রমাদ্বানে প্রতিটি রোজাদারের জন্য সবচেয়ে বড় পুরস্কার। আমীন।"

বিষয়: বিবিধ

১৪৭৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

249391
২৯ জুলাই ২০১৪ রাত ১১:৪৭
বুড়া মিয়া লিখেছেন : আপনার দোয়ায় শরীক করলাম নিজেকে, আমীন।
৩০ জুলাই ২০১৪ রাত ০৯:৩০
193929
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন : সুম্মা আমিন। জাযাকাল্লাহু খইর
249719
৩১ জুলাই ২০১৪ রাত ০৮:০৫
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম ভাইজান।
ঈদের শুভেচ্ছা আপনাকে।
কেমন আছেন আপনি?
আমি নামাজে যাওয়ার আগেই মাকে পটাইয়া খাইয়া ফেলি সব।
ভাইজান lighthouse24.org/blog এ দাওয়াত রইলো।
আশা করি আপনাকে পাবো ওখানে।
জাজাকাল্লাহ।
৩১ জুলাই ২০১৪ রাত ১০:৪৫
194105
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন : ওয়াআলাইকুমুস সালাম। ঈদের মুবারকবাদ আপনাকেও। আলহামদুলিল্লাহ; আপনাদের সকলের দুআয়ে ভালো আছি। আশা করছি আপনার ঈদও ভালোই কেটেছে।
দাওয়াত কবুল করলাম। ইনশাআল্লাহ সেখানেও যোগ দিব।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File