মুসলমানদের মাঝে ঈমান ও ইসলামী ভ্রাতৃত্বের ঐক্য সৃষ্টির চেষ্টা করুন : একই দিনে ঈদের বিষয় দায়িত্বশীলদের উপর ছাড়ুন-৬
লিখেছেন লিখেছেন চিরবিদ্রোহী ২০ জুলাই, ২০১৪, ০৮:০২:৪৪ রাত
পূর্বের পর্বগুলো এখানে-
মুসলমানদের মাঝে ঈমান ও ইসলামী ভ্রাতৃত্বের ঐক্য সৃষ্টির চেষ্টা করুন একই দিনে ঈদের বিষয় দায়িত্বশীলদের উপর ছাড়ুন-১ম পর্ব
মুসলমানদের মাঝে ঈমান ও ইসলামী ভ্রাতৃত্বের ঐক্য সৃষ্টির চেষ্টা করুন একই দিনে ঈদের বিষয় দায়িত্বশীলদের উপর ছাড়ুন-২য় পর্ব
মুসলমানদের মাঝে ঈমান ও ইসলামী ভ্রাতৃত্বের ঐক্য সৃষ্টির চেষ্টা করুন একই দিনে ঈদের বিষয় দায়িত্বশীলদের উপর ছাড়ুন-৩য় পর্ব
মুসলমানদের মাঝে ঈমান ও ইসলামী ভ্রাতৃত্বের ঐক্য সৃষ্টির চেষ্টা করুন একই দিনে ঈদের বিষয় দায়িত্বশীলদের উপর ছাড়ুন-৪র্থ পর্ব
মুসলমানদের মাঝে ঈমান ও ইসলামী ভ্রাতৃত্বের ঐক্য সৃষ্টির চেষ্টা করুন একই দিনে ঈদের বিষয় দায়িত্বশীলদের উপর ছাড়ুন-৫ম পর্ব
হাম্বলী মাযহাব
চার মাযহাবের মধ্যে এক হাম্বলী মাযহাবেরই প্রায় সকল ফকীহ উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য নয় মনে করেন। দু চারজন আছেন, যারা এর বিপরীত মত পোষণ করেন।
স্বয়ং ইমাম আহমদ রাহ. থেকেই এ বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য আছে। ইমাম আহমদ রাহ. (২৪১ হি.)-এর শাগরিদ ইমাম আবু দাউদ সিজিস্তানী (২৭৫ হি.) যিনি ‘‘আসুসনান’’-এর সংকলক, ইমাম আহমদ রাহ.-এর কাছে যেসব ফিকহী মাসাইল সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন বা তাঁর উপস্থিতিতে অন্য কেউ করেছিলেন তা একটি আলাদা কিতাবে সংকলিত হয়েছে। ‘‘মাসাইলু আহমদ’’ নামে তা মুদ্রিত ও প্রকাশিত। আবু মুয়ায তারিক সম্পাদিত এডিশনটি এর উত্তম এডিশন। আমি সেখান থেকে এ মাসআলা নকল করছি।
سمعت أحمد، سئل عن حديث كريب، تذهب إليه؟ يعني حديث محمد بن أبي حرملة عن كريب، قدمت يعني من الشام، فسألني ابن عباس، قال : لا، يعني لا أذهب إليه. قال : إذا استبان لهم أنهم رأوه يعني قبل اليوم الذي صاموا قضى يعني ذلك اليوم، يعني هذا الحديث : حدثنا موسى بن إسماعيل ...
অর্থ, আবু দাউদ বলেন, আমি আহমদ রাহ.কে বলতে শুনেছি, তাঁকে কেউ প্রশ্ন করলেন, আপনার মাযহাব কি কুরাইবের হাদীসের অনুযায়ী? অর্থাৎ, ঐ হাদীস যাতে আছে যে, কুরাইব শাম থেকে মদীনায় এলেন তো আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন (তোমরা কবে চাঁদ দেখেছ? ঐ প্রসিদ্ধ হাদীস যা ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।) আহমদ রাহ. বললেন, না। অর্থাৎ আমার মাযহাব সে অনুযায়ী নয়। আহমদ রাহ. বললেন, যখন (এ এলাকার লোকদের) পরিষ্কার জানা হয়ে যাবে যে, (ঐ এলাকার লোকেরা) এক দিন আগে চাঁদ দেখেছে তখন এদেরকে সেদিনের রোযা কাযা করতে হবে। (এরপর আবু দাউদ রাহ. এ হাদীসের পুরা মতন উল্লেখ করেন।) -মাসাইলু ইমাম আহমদ, আবু দাউদ সিজিস্তানী পৃষ্ঠা : ১২৮, বর্ণনা : ৬১৬
আবু দাউদ সিজিস্তানী রাহ.-এর এ উদ্ধৃতির দ্বারা একদিকে যেমন ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ.-এর মাযহাব জানা গেল যে, দূর-দূরান্তের শহর-নগরের ক্ষেত্রেও তিনি উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য না হওয়ার কথা বলতেন এবং সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও যদি নিজেদের চাঁদের ভিত্তিতে রোযা আরম্ভকারীদের কাছে প্রমাণিত হয় যে, অমুক শহরে চাঁদ দেখার ভিত্তিতেই তাদের এক দিন আগে রোযা শুরু হয়েছে তাহলে তাদের ঐ দিনের রোযা কাযা করতে হবে।
তেমনি এ-ও জানা গেল যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা.-এর ঐ হাদীসের মূল কথা এটাই যে, দূর-দূরান্তের শহর-নগরের ক্ষেত্রে এক জায়গার চাঁদ দেখা অন্য জায়গার জন্য অবশ্যঅনুসরণীয় নয়। আর এ কারণে এক শহরের অধিবাসীদের উপর অন্য শহরের অধিবাসীদের চাঁদ দেখার কারণে রোযার কাযা জরুরি হবে না।
ইমাম আহমদ রাহ.-এর সামনে এ হাদীস উল্লেখ করে যখন বলা হল-
تذهب إليه؟
আপনি কি তা গ্রহণ করেন? (আপনার মাযহাব কি এ অনুযায়ী?) তখন তিনি বললেন, ‘না।’ এরপর নিজের মাযহাব বর্ণনা করলেন। তিনি এ কথা বলেননি যে, আমার মাযহাব এ হাদীসের বিপরীত নয়। আমার মাযহাব তো এই যে, শামের চাঁদ দেখা মদীনাবাসীর জন্যও প্রযোজ্য আর এ হাদীসেও তা বলা হয়েছে বা এর বিপরীত কিছু বলা হয়নি। বরং ইমাম আহমদ রাহ., ইমাম আবু দাউদ ও প্রশ্নকারী সকলেই বুঝছেন যে, এ হাদীস দ্বারা শামের চাঁদ দেখা মদীনাবাসীর জন্য (এবং এভাবে দূর-দূরান্তের শহর-নগরে এক শহরের চাঁদ দেখা অন্য শহরের জন্য) ধর্তব্য না হওয়াই প্রমাণিত, তবে ইমাম আহমদ রাহ.-এর কাছে দলীলের বিচারে এর বিপরীত মাযহাব অগ্রগণ্য। তাই তিনি এ মাসলাক গ্রহণ করেননি।
যারা নির্দ্বিধায় বলে দেন কুরাইবের হাদীস উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য হওয়ার বিষয়ে দলীল হতে পারে না, তাদের জন্য এ ঘটনায় চিন্তার খোরাক রয়েছে।
যাহোক, এখন আলোচ্য বিষয় হচ্ছে ইমাম আহমদ রাহ.-এর মাযহাব, তো এ বিষয়ে-আলহামদুলিল্লাহ-সরাসরি ইমাম আহমদ রাহ.-এর বক্তব্যই পাওয়া গেল। ফিকহে হাম্বলীর কিতাবসমূহে এ মাসআলা এভাবেই লেখা আছে। এখানে এ মাযহাবের সবচেয়ে সুলভ ও প্রসিদ্ধ কিতাবের বরাত নকল করছি।
শায়খ ইবনে কুদামা (আবু মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ ইবনে আহমদ আলমাকদিসী) হাম্বলী রাহ. (৫৪১-৬২০ হি.) ইমাম আহমদ রাহ.-এর শাগরিদদের শাগরিদ আবুল কাসেম উমার ইবনুল হুসাইন আলখিরাকী (৩৩৪ হি.)-এর সংকলিত ‘‘মুখতাসার’’ কিতাবের একটি উৎকৃষ্ট ও বিশদ ভাষ্যগ্রন্থ রচনা করেছেন ‘‘আলমুগনী’’ নামে, যা মাশাআল্লাহ খুবই সমাদৃত। ইবনে কুদামা তাতে লিখেছেন-
وإذا رأى الهلال أهل بلد، لزم جميعَ البلاد الصوم. وهذا قول الليث، وبعض أصحاب الشافعي، وقال بعضهم : إن كان بين البلدين مسافة قريبة لا تختلف المطالع لأجلها كبغداد والبصرة، لزم أهلهما الصوم برؤية الهلال في أحدهما، وإن كان بينهما بعد كالعراق والحجاز والشام، فلكل أهل بلد رؤيتهم ..
অর্থ, কোনো শহরের অধিবাসীরা চাঁদ দেখলে সকল শহরের অধিবাসীদের উপর রোযা অপরিহার্য হয়। এটি (আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ.-এর সাথে) লাইছ রাহ. (১৭৫ হি.)-এরও ‘কওল’। এবং আসহাবুশ শাফেয়ীর কারো কারোর। আর কেউ কেউ বলেছেন, যদি দুই শহরের মাঝে দূরত্ব কম হয়, যার কারণে এদের উদয়স্থল অভিন্ন থাকে, যেমন বসরা ও বাগদাদ তো এদের কোনো শহরে চাঁদ দৃষ্টিগোচর হওয়ার দ্বারা উভয় শহরের অধিবাসীদের রোযা রাখা জরুরি হবে। পক্ষান্তরে দুই শহরের মাঝে দূরত্ব বেশি হলে যেমন, ইরাক, হিজায ও শাম, প্রত্যেক শহরের অধিবাসীদের জন্য নিজেদের চাঁদ দেখা ধর্তব্য হবে। (আলমুগনী, ইবনে কুদামা হাম্বলী রাহ. ৪/৩২৮, দারু আলামিল কুতুব, রিয়ায)
(বসরা থেকে বাগদাদের দূরত্ব ৪৪৮ কি.মি.।)
ইবনে কুদামা হাম্বলী রাহ. ফিকহে হাম্বলীতে একটি ‘মতন’ও লিখেছেন। এর নাম ‘‘আলমুকনি’’। এর উপর হিজরী নবম শতাব্দীর গবেষক হাম্বলী ফকীহ শায়খুল ইসলাম আলাউদ্দীন আলী ইবনে সুলায়মান আলমারদাভী (৮১৭-৮৮৫ হি.) এক অসামান্য ভাষ্যগ্রন্থ প্রস্ত্তত করেছেন, যার খুবই যথার্থ নাম রাখা হয়েছে-
الإنصاف في معرفة الراجح من الخلاف على مذهب الإمام أحمد بن حنبل
এ কিতাবে মারদাভী রাহ. লেখেন-
‘‘যাঁরা চাঁদ দেখেছেন তাদের উপর রোযা ফরয হওয়ার বিষয়ে তো কোনো ইখতিলাফ নেই, তবে যে অঞ্চলের লোকেরা দেখেনি-যদি উভয় অঞ্চলের উদয়স্থল এক হয় তাহলে তাদেরকেও রোযা রাখতে হবে। আর উদয়স্থল আলাদা হলেও (হাম্বলী) মাযহাবের সহীহ কওল এই যে, রোযা জরুরি হবে। ‘আলফুরূ’, ‘আলফাইক’ ও ‘আররিয়ায়াহ’ গ্রন্থে এ কওলই আগে লেখা হয়েছে (এ কওলকেই অগ্রগণ্য করা হয়েছে) (তবে) এ কওল (হাম্বলী মাযহাবের) ‘মুফরাদাত’-এর অন্তর্ভুক্ত ...।’ (আলইনসাফ ৩/২৭৩)
‘মুফরাদাত’ শব্দটি ‘মুফরাদ’-এর বহুবচন। এর অর্থ, হাম্বলী মাযহাবের ঐ সকল মাসআলা, যেগুলোতে এ মাযহাব অন্যান্য মাযহাব থেকে আলাদা হয়েছে। অর্থাৎ অন্যান্য প্রসিদ্ধ মাযহাবের বিপরীত সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। এ-ই এ পরিভাষার প্রসিদ্ধ অর্থ। এ অর্থে আলোচিত মাসআলাকে হাম্বলী মাযহাবের ‘মুফরাদ’ (সঙ্গীহীন) সিদ্ধান্ত বলা আপত্তিমুক্ত নয়। কারণ অন্যান্য মাযহাবেও এ সিদ্ধান্ত দানকারী ফকীহ রয়েছেন।
বিগত শতাব্দীর প্রসিদ্ধ হাম্বলী আলেম শায়েখ আবদুল্লাহ বিন হুমাইদ, যিনি রাবেতাতুল আলামিল ইসলামীর ফিকহী বোর্ডের অন্যতম রোকন, তার কিতাব تبيان الأدلة في إثبات الأهلة (পৃষ্ঠা : ৪০)-এ ‘ইনসাফ’-লেখকের এ বক্তব্যের ব্যাখ্যা এভাবে করেছেন-
أي أن الجمهور على خلافه
অর্থাৎ যেহেতু অন্য সকল মাযহাবের অধিকাংশ ফকীহ এ সিদ্ধান্তের বিরোধী সম্ভবত এজন্যই তিনি একে হাম্বলী মাযহাবের ‘মুফরাদ’ (সঙ্গীহীন) সিদ্ধান্ত বলেছেন।
আল্লামা মারদাভী রাহ. সামনে লেখেন-
وقال في الفروع : وقال شيخنا : يعني به الشيخ تقي الدين، تختلف المطالع باتفاق أهل المعرفة، فإن اتفقت لزم الصوم، وإلا فلا.
وقال في الرعاية الكبرى : يلزم من لم يره حكم من رآه. ثم قال : قلت : بل هذا مع تقارب المطالع واتفاقها، دون مسافة القصر، لا فيما فوقها، مع اختلافها. انتهى
অর্থ, (ইমাম ইবনে মুফলিহ রাহ.) ‘‘আলফুরু’’ তে বলেছেন, আমাদের শায়খ অর্থাৎ শায়খ তকিউদ্দীন (ইবনে তাইমিয়া রাহ. ৭২৮ হি.) বলেছেন, শাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তিগণ একমত যে, উদয়স্থল আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। সুতরাং উদয়স্থল এক হলে এক জায়গায় চাঁদ দেখার কারণে অন্য জায়গায় রোযা জরুরি হবে। পক্ষান্তরে উদয়স্থল আলাদা হলে জরুরি হবে না।
এবং (ইমাম ইবনে হামদান রাহ. ৬৯৫ হি.) ‘‘আররিয়ায়াতুল কুবরা’’য় বলেন, যাঁরা চাঁদ দেখেনি তাদের উপর ঐ লোকদের হুকুম প্রযোজ্য হবে যারা চাঁদ দেখেছে।’ কিছুদূর গিয়ে বলেন, ‘বরং এ বিধান ঐ ক্ষেত্রে যখন দুই অঞ্চলের উদয়স্থল অভিন্ন বা কাছাকাছি হয় এবং পরস্পরের দূরত্ব কসরের দূরত্বের চেয়ে কম হয় (পক্ষান্তরে দুই শহরের দূরত্ব) কসরের দূরত্বের চেয়ে বেশি হলে এবং উদয়স্থল আলাদা হলে একের বিধান অন্যের জন্য প্রযোজ্য হবে না। (আলইনসাফ ৩/২৭৩, তাহকীক : হামিদ ফাক্কী, দারু ইহইয়ায়িত তুরাছিল আরাবী, বৈরুত)
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ.-এর ফিকহী ‘ইখতিয়ারাত’-এর উপর আলাউদ্দীন আবুল হাসান আলবা’লী (৮০৩ হি.) আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন, যা ‘‘আলআখবারুল ইলমিয়্যাহ মিনাল ইখতিয়ারাতিল ফিকহিয়্যাহ লিশাইখিল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ’’ নামে প্রকাশিত। এর পৃষ্ঠা ১৫৮তেও ইবনে মুফলিহের উদ্ধৃত বক্তব্য বিদ্যমান আছে। সেখানে শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ.-এর মন্তব্যও আছে যে, এ মাসলাক, যা তিনি গ্রহণ করেছেন, শাফেয়ী মাযহাবের ‘‘আসাহ’’ (অধিক সহীহ) মাসলাক এবং হাম্বলী মাযহাবের একটি সিদ্ধান্ত।
وهو الأصح للشافعية، وقول في مذهب أحمد.
উপরের উদ্ধৃতিগুলো থেকে জানা গেল, ইমাম আহমদ রাহ. থেকে এ বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য আছে যে, দূর-দূরান্তের শহর-নগরের ক্ষেত্রেও তিনি এক শহরের চাঁদ দেখা অন্য শহরের জন্য অবশ্যঅনুসরণীয় মনে করেন। তবে হাম্বলী মাযহাবের এক সিদ্ধান্ত এ-ও আছে যে, দূর-দূরান্তের শহর-নগরের ক্ষেত্রে এক শহরের চাঁদ দেখা অন্য শহরের জন্য লাযিম নয়। ইমাম ইবনে হামদান হাম্বলী (৬০৩-৬৯৫ হি.) ও শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া হাম্বলী (৬৬১-৭২৮ হি.) এ সিদ্ধান্তই গ্রহণ করেছেন।
সারসংক্ষেপ
সাহাবা ও তাবেয়ীনের আছর এবং চার মাযহাবের উদ্ধৃতিতে এ পর্যন্ত যা কিছু বলা হয়েছে তার সারসংক্ষেপ এই-
এক. সাহাবী-যুগে আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা.-এর মাযহাব এই ছিল যে, দূর-দূরান্তের শহর-নগরের ক্ষেত্রে এক অঞ্চলের চাঁদ দেখা অন্য অঞ্চলে ধর্তব্য হবে না। এর বিপরীত কোনো ফতোয়া কোনো সাহাবী থেকে পাওয়া যায়নি।
দুই. তাবেয়ীন-যুগে ইকরিমা রাহ., সালিম রাহ. ও কাসিম রাহ. থেকেও অনুরূপ ফতোয়া পাওয়া গেছে। এর বিপরীত সিদ্ধান্ত কোনো তাবেয়ী থেকে পাওয়া যায়নি। তবে হাসান বসরী রাহ.-এর একটি ফতোয়া বিপরীত সিদ্ধান্তের ধারক হতে পারে।
তিন. আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক ও ইসহাক ইবনে রাহূয়াহ রাহ.-এরও মাসলাক তাই ছিল, যা উপরের মনীষীদের ছিল।
চার. হানাফী মাযহাবের পূর্বসূরী ফকীহগণের অধিকাংশ আর পরবর্তীদেরও অনেক বড় বড় ফকীহর সিদ্ধান্ত এই ছিল যে, দূর-দূরান্তের শহর-নগরে এক এলাকার চাঁদ দেখা অন্য এলাকার জন্য অবশ্যঅনুসরণীয় নয়। মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা তিন ইমাম বা তাঁদের শাগরিদ বা শাগরিদদের শাগরিদ কারো থেকেই لا عبرة لاختلاف المطالع শীর্ষক কথা পাওয়া যায়নি-না জাহির রিওয়ায়েতে, না নাদির রেওয়ায়েতে। আমাদের জানামতে, এ বাক্য لا عبرة لاختلاف المطالع সবার আগে এসেছে ‘খানিয়া’ ও ‘খুলাসা’য় আর উভয় কিতাবে একে ‘জাহের রেওয়ায়েত’ বলা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যাদির ভিত্তিতে বলা হয়েছে যে, এ দাবি বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কারণ তা জাহির রেওয়ায়েতের কিতাবসমূহে পাওয়া যায়নি। সুতরাং বাস্তবে এখানে ‘তাসামুহ’ হয়েছে। একই সাথে উলামায়ে কেরাম ও তলাবায়ে নেকনেযামের কাছে দরখাস্ত করা হয়েছে যে, তাদের দৃষ্টিতে ‘তাসামুহে’র দাবি ভুল হলে তাঁরা যেন জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুযোগ দান করেন।
পাঁচ. এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, ইবরাহীম হালাবী, ইবনে নুজাইম, তানভীরুল আবসারের লেখক, আলাউদ্দীন হাসকাফী, ও ইবনে আবেদীনসহ পরবর্তী যুগের অনেক ফকীহ لا عبرة لاختلاف المطالع কেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
ছয়. শাফেয়ী মাযহাবের উভয় ‘তরীকা’র (ইরাকীগণের ‘তরীকা’ ও খুরাসানীগণের ‘তরীকা’) অধিকাংশ ফকীহ, যাঁদের মাঝে উভয় তরীকার প্রধানগণও রয়েছেন, এ সিদ্ধান্ত পোষণ করেন যে, দূর-দূরান্তের শহর-নগরে এক অঞ্চলের চাঁদ দেখা অন্য অঞ্চলের জন্য ‘লাযিম’ (অবশ্যঅনুসরণীয়) নয়। তবে আবুল কাসিম সাইমারী ও কাযী আবুত তাইয়েবসহ কতিপয় মনীষী দূরের শহরেও তা অবশ্যঅনুসরণীয় মনে করেন।
সাত. ইমাম মালিক রাহ. থেকে এ সিদ্ধান্ত পাওয়া গেছে যে, বসরার চাঁদ দেখা কুফা, মদীনা ও ইয়ামানে পৌঁছলে সে অনুযায়ী আমল করা জরুরি। কোনো কোনো শাগরিদদের বর্ণনায় কোনো শর্ত ছাড়া আর ইবনুল মাজিশূনের বর্ণনায় একটি শর্ত সহকারে বর্ণিত হয়েছে।
আট. পরবর্তীতে ফিকহে মালেকীর অধিকাংশ লেখক এ বিধানকে দূরের-কাছের সকল শহরের জন্য প্রযোজ্য লিখেছেন এবং ঐ শর্তের পাবন্দীও জরুরি মনে করেননি।
নয়. তবে একাধিক গবেষক মালেকী ফকীহ স্পষ্ট বলেছেন যে, অনেক দূরের হলে, যেমন খোরাসান থেকে আন্দালুস বা আন্দালুস থেকে হিজায, এক জায়গার চাঁদ দেখা অন্য জায়গার জন্য সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী (বিলইজমা) ধর্তব্য নয়।
দশ. ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ. থেকে স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া গেছে যে, দূরের শহরেও যদি অন্য শহরের চাঁদ দেখা প্রমাণিত হয় তাহলে তার ইতিবার করা জরুরি।
হাম্বলী মাযহাবের ফকীহদের মাসলাকও এটিই। তবে মাযহাবের একটি সিদ্ধান্ত এ-ও যে, উদয়স্থল আলাদা হলে দূরের এলাকাগুলোতে নিজেদের চাঁদ দেখাই ধর্তব্য হবে। ইবনে হামদান রাহ. ও ইবনে তাইমিয়া রাহ. এটিই গ্রহণ করেছেন।
(তবে মাজমূউ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়ায় (২৫/১০৩) উল্লেখিত ইবনে তাইমিয়ার ফতোয়া এখানে উদ্ধৃত মাসলাক থেকে কিছুটা আলাদা। সামনে এ বিষয়ে কিছু আলোচনা হতে পারে।)
দৃষ্টি আকর্ষণ
কোনো তালিবে ইলমের যদি এ মাসআলা ‘‘শরহুস সুন্নাহ’’ বগভী থেকে (আবু মুহাম্মাদ আলহুসাইন ইবনে মাসউদ, লেখক : ‘‘মাসাবীহুস সুন্নাহ’’, জন্ম : ৪৩৬ হি., মৃত্যু : ৫১৬ হি.) পড়া থাকে আর তিনি উপরের আলোচনা ও উদ্ধৃতিগুলো মনোযোগের সাথে না পড়ে থাকেন তাহলে তার মনে একটি প্রশ্ন আসতে পারে। এজন্য ‘‘শরহুস সুন্নাহ’’র ইবারত নকল করে তার ব্যাখ্যা করে দেওয়া মুনাসিব মনে হচ্ছে।
শরহুস সুন্নাহয় লেখা আছে-
وإذا رئي الهلال ببلد، ورأى أهل بلد آخر بعده بليلة، فاختلف أهل العلم فيه، فذهب كثير منهم إلى أن لكل أهل بلد رؤيتهم، وإليه ذهب من التابعين القاسم بن محمد، وسالم بن عبد الله بن عمر، وعكرمة، وبه قال إسحاق بن راهوية ...
قال ابن المنذر : قال أكثر الفقهاء : إذا ثبت بخبر الناس أن أهل بلد من البلدان قد رأوه قبلهم، فعليهم قضاء ما أفطروا، وهو قول مالك والشافعي وأحمد وأصحاب الرأي رحمهم الله.
অর্থ, কোনো শহরে চাঁদ দেখা গেল আর অন্য শহরের অধিবাসীরা পরের রাতে চাঁদ দেখল তো অনেক আহলে ইলমের সিদ্ধান্ত এই যে, প্রত্যেক শহরের অধিবাসীদের জন্য নিজেদের চাঁদ দেখা ধর্তব্য। তাবেয়ীদের মধ্যে কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ, সালিম ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর, ও ইকরিমার সিদ্ধান্ত তা-ই। ইসহাক ইবনে রাহূয়াহও একথা বলেছেন।
ইবনুল মুনযির বলেন, অধিকাংশ ফকীহ বলেছেন, যদি মানুষের সংবাদ দ্বারা প্রমাণ হয় যে, কোনো শহরের অধিবাসীরা তাদের আগে চাঁদ দেখেছে তাহলে তাদেরকে ছুটে যাওয়া রোযার কাযা করতে হবে। এটি মালিক, শাফেয়ী, আহমদ ও আসহাবরুর রায়ের সিদ্ধান্ত। রাহিমাহুমুল্লাহ।
(শরহুস সুন্নাহ বাগাভী ৪/১৪৫ باب الشهادة على رؤية الهلال)
এখানে বাগাভী রাহ. ইবনুল মুনযিরের বরাতে যা লিখেছেন তাতে ‘তাসামুহ’ হয়েছে। এখানে ইবনুল মুনযিরের (মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম ইবনুল মুনযির আননাইসাবূরী জন্ম : ২৪১ হি., মৃত্যু : ৩১৮ হি.) কিতাব ‘‘আলইশরাফ আলা মাযাহিবি আহলিল ইলম’’ থেকে আমরা তাঁর বক্তব্য সরাসরি নকল করছি-
باب الهلال يراه أهل بلدة دون سائر البلدان : قال اختلف أهل العلم في الهلال يراه أهل بلدة، ولا يراه غيرهم. فروينا عن عكرمة أنه قال : لكل قوم رؤيتهم. وبه قال إسحاق، وهو مذهب القاسم والسالم.
وقال آخرون : إذا ثبت ذلك عند الناس أن أهل بلد قد رأوه فعليهم قضاء ما أفطروا. هذا قول الليث بن سعد، والشافعي وأحمد، ولا أعلمه إلا قول المدني والكوفي.
অর্থ, পরিচ্ছেদ : কোনো শহরের অধিবাসীরা চাঁদ দেখল, অন্য শহরের অধিবাসীরা দেখল না :
কোনো শহরের অধিবাসীরা চাঁদ দেখল, আর অন্য শহরের অধিবাসীরা দেখল না এক্ষেত্রে আহলে ইলমের ইখতিলাফ আছে : ইকরিমা থেকে আমাদের কাছে বর্ণিত হয়েছে যে, প্রত্যেক কওমের (শহরের) জন্য নিজেদের চাঁদ দেখা ধর্তব্য। ইসহাক রাহ.-এ-ই বলেছেন। আর এটাই কাসিম ও সালিমের মাযহাব।
অন্য কতেক আহলে ইলম বলেছেন, যদি লোকদের কাছে প্রমাণিত হয় কোনো শহরের অধিবাসীরা (তাদের আগে) চাঁদ দেখেছে তাহলে তাদেরকে ছুটে যাওয়া রোযা কাযা করতে হবে। এটা লাইছ ইবনে সাদ, শাফেয়ী ও আহমদ রাহ.-এর সিদ্ধান্ত।
আর আমার ধারণা, এটি মাদানী ও কুফীরও সিদ্ধান্ত। (আলইশরাফ, ইবনুল মুনযির ৩/১১২)
ইবনুল মুনযিরের বক্তব্যে وقال آخرون শব্দ আছে। وقال الآخرون শব্দ নয়। প্রথম শব্দের অর্থ তা-ই যা আমি তরজমায় লিখেছি (অন্য কতেক আহলে ইলম বলেছেন)। এর অর্থ ‘অন্যরা বলেন’ নয়, তেমনি ‘অন্য সবাই বলেন’ও নয়।
মনে হয় বগভী রাহ. ইবনুল মুনযিরের উদ্ধৃতি সরাসরি তাঁর কিতাব থেকে নকল করেননি। খাত্তাবী বা অন্য কারো সূত্রে নিয়েছেন। যাইহোক, মূল পাঠ সামনে না থাকায় وقال آخرون পরিবর্তন হয়ে قال أكثر الفقهاء (অধিকাংশ ফকীহ বলেছেন) এ পরিণত হয়েছে আর বক্তব্য এই দাঁড়িয়েছে, যা বাস্তবসম্মত থাকেনি।
এরপর ইবনুল মুনযির ‘মাদানী’ (ইমাম মালেক রাহ.) ও কুফী (ইমাম আবু হানীফা রাহ.)-এর মাযহাব সম্পর্কে প্রত্যয়ের সাথে কিছু বলেননি। তিনি বলেছেন, ولا أعلمه إلا অর্থাৎ আমার ধারণা, এ দুজনের সিদ্ধান্তও অনুরূপ। এখন ইমাম মালেক রাহ. সম্পর্কে তো এ ধারণা সঠিক পাওয়া গেছে, কিন্তু ইমাম আবু হানীফা রাহ. সম্পর্কে সঠিক পাওয়া যায়নি। কারণ ইমাম আবু হানীফা রাহ. থেকে এ মাসআলা বর্ণিত হয়নি। নাদির রেওয়ায়েতে তাঁর দুই শাগরিদ আবু ইউসুফ রাহ. ও মুহাম্মাদ রাহ. থেকে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এর অর্থ হানাফী মাযহাবের অধিকাংশ ফকীহ এ-ই করেছেন যে, তা কাছাকাছি শহর-নগরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, দূর-দূরান্তের শহর-নগরের ক্ষেত্রে নয়।
যাইহোক, এরপরও ইবনুল মুনযির কথাটি বলেছিলেন প্রত্যয় ছাড়া এবং শুধু আবু হানীফা সম্পর্কে, কিন্তু বগভীর বিবরণে ধারণার পরিবর্তে প্রত্যয়ের সাথে বলা হয়েছে আর শুধু আবু হানীফা সম্পর্কে নয়, সকল ‘আসহাবুর রায়’ (সব হানাফী ফকীহ) সম্পর্কে বলা হয়েছে। আসল বক্তব্য সামনে না থাকায় মূল ও বর্ণনায় এত বড় পার্থক্য হয়ে গেল।
লাইছ ইবনে সাদ সম্পর্কে ইবনে কুদামাও লিখেছেন যে, তাঁর কাছে এক এলাকার চাঁদ দেখা অন্য এলাকার জন্যও অবশ্যঅনুসরণীয়। আমার কাছে তাঁর সম্পর্কে কোনো বিপরীত বর্ণনা নেই। ইমাম আহমদ রাহ.-এর কথা তো ইমাম আবু দাউদ-এর বরাতেই এসেছে। থাকল ইমাম শাফেয়ীর উদ্ধৃতি, তো এ বিষয়ে শাফেয়ী মাযহাবের ফিকহের কিতাবসমূহ ইবনুল মুনযিরের বর্ণনার অনুকূল দেখা যায় না। শাফেয়ী ফকীহগণ এ বিষয়ে শুধু আসহাবে শাফেয়ীর ‘উজূহ’ বর্ণনা করেছেন, ইমাম শাফেয়ীর কোনো ‘কওল’ বর্ণনা করেননি। আর ইলকিয়া তবারীর মতো বিস্তৃত জ্ঞানের অধিকারী শাফেয়ী আলিমও ‘আহকামুল কুরআনে’ পরিষ্কার বলেছেন-
وأصحاب الشافعي لا يرونه
আসহাবে শাফেয়ী ত্রিশ ওয়ালাদের কারণে উনত্রিশ ওয়ালাদের উপর একদিনের রোযা কাযা করতে হবে বলে মনে করেন না। তাহলে এ কীভাবে সম্ভব যে, সকল আসহাবে শাফেয়ী চুপচাপ ইমাম শাফেয়ী রাহ.-এর কওলের বিপরীত ফতোয়া দেয়ার বিষয়ে একমত হয়ে যাবেন।*
এখানে এ কথাও জেনে রাখা ভালো যে, বগভী রাহ. শরহুস সুন্নাহয় যদিও ইবনুল মুনযিরের বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন যাতে ইমাম শাফেয়ী রাহ.কে ইমাম আহমদ রাহ.-এর সঙ্গে রাখা হয়েছে। কিন্তু তিনি তাঁর ফিকহে শাফেয়ীর গ্রন্থ ‘আততাহযীব’ এর মধ্যে এ বিষয়ে ইমাম শাফেয়ীর কোনো বক্তব্যই উল্লেখ করেননি।
না নিজ থেকে, না ইবনুল মুনযিরের বরাতে। বরং শাফেয়ী মাযহাবের অন্যান্য কিতাবের মতো শাফেয়ী ফকীহগণের দুটি ‘ওয়াজহ’ই উল্লেখ করেছেন এবং দূর-দূরান্তের শহর-নগরের ক্ষেত্রে উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য হওয়ার মতটিকেই ‘আছাহ’ (أصح) বা সর্বাধিক সহীহ বলেছেন।
وإن كانتا متباعدتين بأن كان بينهما مسافة القصر، فهل يجب على أهل البلد الذين لم يروا الهلال الاقتداء بالذين رأوا، فيه وجهان ... والثاني وهو الأصح، لا يجب ...
আততাহযীব ফী ফিকহিল ইমামিশ শাফেয়ী, আবু মুহাম্মাদ আলবাগাভী রাহ. (৫১৬ হি.) দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, বৈরুত ১৪১৮, ৩/১৪৭
* টীকা :
قال الراقم : ويحتمل أن يكون مأخذ ابن المنذر في عزوه إلى الإمام الشافعي ما جاء في كتاب الأم للشافعي ج ٢ ص ١٠٣ : وإن غم الشهران معا فصاموا ثلاثين فجاءتهم بينة بأن شعبان رئي قبل صومهم بيوم قضوا يوما، لأنهم تركوا يوما من رمضان ... . انتهى (ولعل لفظ شعبان هنا محرف عن رمضان،)
ولكن القرائن متضافرة في أن هذه المسألة مفروضة في البلاد المتقاربة التي يمكن فيها مجيء البينة في مثل تلك البيئة. والمقام يحتاج إلى بحث أكثر، وتدبر أدق، ونظر في كتب الشافعية أوسع، ومذاكرة مع علمائهم أشمل، انتهى قول الراقم.
যাইহোক, ইবনুল মুনযিরের বক্তব্যে শাফেয়ী রাহ.-এর সাথে যে সিদ্ধান্তের সম্বন্ধ করা হয়েছে তা বিভ্রান্তিকর। এদিকে নববীও ‘‘আলমাজমূ শরহুল মুহাযযাযাবে’’ ইষৎ ইঙ্গিত করেছেন। ‘‘আলআযবুয যুলাল’’ (১/৮৯) লেখক তা ধরতে পেরেছেন।
মোটকথা, দূর দূরান্তের শহর-নগরের ক্ষেত্রে অন্য জায়গার চাঁদ দেখা ধর্তব্য মনে করাকে অধিকাংশ ফকীহর মাসলাক বলে বর্ণনা করা ‘‘শরহুস সুন্নাহ’’র তাসামুহ। না ইবনুল মুনযির এমন বলেছেন, আর না তা বাস্তবসম্মত।
قال الراقم : واحتمال أن مأخذ البغوي كتاب آخر لابن المنذر غير الإشراف، بعيد، وإن كان كذلك فالاعتماد على عبارة الإشراف دون عبارة غيره لمخالفتها الواقع أشد مخالفة.
والشيء بالشيء يذكر، ذكر الوزير أبو المظفر ابن هُبَيْرَة في اختلاف الأئمة العلماء ج ١ ص ٢٣٢: واتفقوا على أنه إذا رئي الهلال في بلدة رؤية فاشية فإنه يجب الصوم على سائر أهل الدنيا ... . انتهى
قد صرح ابن هبيرة في مقدمة كتابه أنه يريد بمثل هذه العبارة اتفاق الأئمة الأربعة، فليس مراده اتفاق علماء الأمة مطلقا، ثم إن دعواه اتفاق الأربعة مبنية على عبارة الإشراف المبهمة والمبنية على التسامح، والإشراف من مصادر ابن هبيرة ينقل كلامه ويعزو إليه، فلا يغتر أحد بكلام ابن هبيرة هنا، فإنه بنى كلامه على كلام من تسامح ولم يدقق الأمر ولم يتقن النقل في هذه المسألة. والله الموفق.
هذا، وقد قال ابن هبيرة نفسُه في الإفصاح عن معاني الصحاح (ج ٣ ص ٢٣٢-٢٣٣، طبع دار الوطن الرياض) تحت حديث ابن عباس رضي الله عنهما المروي من طريق كُرَيب : في هذا الحديث ما يدل على أن لكل إقليم حكمه. انتهى فتأمل. انتهى قول الراقم.
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
বিষয়: বিবিধ
১৩২৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভাইয়ের কাছে একটা অনুরোধ করেছিলাম, মনে আছে কি?
মন্তব্য করতে লগইন করুন