নারী....নারীবাদ; দায়বদ্ধতা কার?
লিখেছেন লিখেছেন চিরবিদ্রোহী ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১১:১১:০৯ রাত
( অনেক দিন পর ব্লগে ফিরে এলাম। মাঝখানে আব্বার অসুস্থতার কারণে মেডিকেলে দৌড় ঝাঁপ করে সময় চলে যেত, কম্পিউটারে বসার মতো সময় বা মানসিকতা কিছুই ছিলো না। তবু মন সবসময়ই পড়ে থাকতো ব্লগে, সব সময় ভাবতাম কখন আবার ফিরে যেতে পারবো টুডে ব্লগের চিরচেনা প্লাটফর্মে। অবশেষে আব্বা পরম করুনাময় আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে গত ০১-০২-১৪ তারিখে নশ্বর পৃথিবীকে বিদায় জানালেন। প্রথমেই তার বিদেহী আত্মার শান্তি, কবরের আযাব মাফ ও কঠিন শাস্তি হতে মুক্তির জন্য সকলের নিকট দুআর আবেদন করছি।)
টিভি প্রোগ্রামের মধ্যে তিন ধরনের প্রোগ্রাম আমার খুব প্রিয়, আর আমি মুলত দেখিও এই তিন ধরনের প্রোগ্রাম, ১. ইসলামিক প্রোগ্রাম ২. কার্টুন ৩. স্পোর্টস। গতকাল রাতে টিভিতে বসে আমার প্রিয় কার্টুনগুলোর মধ্যে একটা যার নাম "Power Puff Girls" দেখছিলাম। (এই কার্টূনটির মূল থীম হলো- "Townsvill" শহরে বাস করে তিনটি ছোট মেয়ে, যারা কোন প্রাকৃতিক নিয়মে নয়, Professor Utonium-এর একটি পরীক্ষার ফলে। আর এভাবেই তারা অর্জন করেছে বিভিন্ন ক্ষমতা, যা তারা ব্যবহার করে তাদের শহর আ্ক্রমনকারী বিভিন্ন মনস্টার ও ক্রিমিনালের বিরুদ্ধে।) বরং সেখানে একটি পর্বে যা দেখালো তা মোটামুটি এরূপ- একবার পাওয়ারপাফ গার্লসদের কাছে খবর আছে তাদের "Townsvill" শহরের একটি ব্যাংকে ডাকাতি হচ্ছে। তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে, মুখোশধারী এক নারী ব্যাংক ডাকাতী করে পালিয়ে যাচ্ছে। মেয়েরা তাকে ধাওয়া করে পাকড়াও করে। থানায় নিয়ে যাওয়ার পথে ডাকাতটি মেয়েদের বলে, "তোমরা যে এত কষ্ট করে এই শহরের প্রহরা দাও, তোমাদের সুনাম তো সুপারম্যান, স্পাইডারম্যান, ব্যাটম্যানের চেয়েও বেশি হওয়ার কথা, কিন্তু তোমরা তা থেকে বঞ্চিত। এর কারণ কি জানো? এর কারণ তারা পুরুষ আর তোমরা নারী। এই দুনিয়ায় নারীদের কৃতিত্বের কোন স্বীকৃতি নেই, নেই কোন খ্যাতি।.............আর আমি বর্তমারে একমাত্র নারী ভিলেন। আমাকে যদি তোমরা জেলে নাও তাহলে আর একজন নারী ভিলেনও অবশিষ্ট থাকবেন না। .......নারী হয়ে তোমরা নারীর বিরুদ্ধে দাঁড়াবে?.....এই সমাজে কি শুধু পুরুষের রাজত্বই থাকবে?" তার কথায় মেয়েরা চিন্তায় পড়ে যায়- আসলেই তো! আর এ ফাঁকে ডাকাত পালিয়ে যায়।
এদিকে ডাকাতের কথাগুলো মেয়েদের উপর প্রচন্ড প্রভাব বিস্তার করে। তারা এতটাই প্রভাবান্বিত হয় যে তারা তাদের আসে পাশের পুরুষদের এমনকি তাদের স্কুলের ছেলেদের উপর চড়াও হতে থাকে। এমনকি তাদের পিতৃতূল্য Professor Utonium ও তাদের আক্রমনাত্মক ব্যবহার হতে রক্ষা পায় না। অবস্থা বেগতিক দেখে তাদের একদিন শহরের মেয়রের পিএস মিস ভেলম ডাক দেয়। সেখানে তাদের জিজ্ঞেস করে কেন তারা এমনটি করছিলো। তারা বলে যে তারা পুরুষদের উপর বিরক্ত ও তাদের কর্তৃত্ব মেনে নিতে চায় না। এবং তাদের মতের পক্ষে কিছু উদ্ভট যুক্তিও দেখায়। কিন্তু মিস ভেলম, মেয়েদের শিক্ষীকা মিস কিন ও অন্য একজন মহিলা পুলিশ অফিসার মেয়েদের প্রশ্ন করে তাহলে যে তাদের এই দৃষ্টিভঙ্গি শিখিয়েছে সে নিজে কেন এই দৃষ্টিভঙ্গি পোষন করে না? কেন সে নিজেই নারীদের উপর আক্রমন করে তাদের আহত করে? এতে করে মেয়েরা তাদের ভূল বুঝতে পারে এবং তাদের কট্টর চিন্তা হতে বের হয়ে আসে। (পর্ব টি এই লিঙ্কে দেখতে পারেন, http://www.ovguide.com/tv_episode/the-powerpuff-girls-season-3-episode-22-equal-fights-186379# )
হয়তো ভাবছেন, এ আবার কি আজাইরা প্যাচাল শুরু করলাম! মনে মনে হয়তো ভাবছেন, ব্লগে বসে যে কার্টুনের এপিসোডের ধারাবিবরণী দেয় হয় তার মানসিক সমস্যা আছে অথবা অনেক অলস সময় হাতে আছে।
আসলে আমি আপনাদের দৃষ্টিটা একটু অন্য দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছি। ওপরের অংশটুকু আবার পড়ুন। দেখুন, সাদা মনের তিনটি ছোট মেয়েকে কিভাবে কথার জালে আটকে তাদের চিন্তাকে বিকৃত করা হলো। ঠিক এভাবেই কাজ আদায় করে থাকে তথাকথিত নারীবাদিরা। তারা তাদের কথা দ্বারা নারীদেরকে পুরুষদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে তোলে। কিন্তু তাদের এই কথাগুলোর যৌক্তিকতা নিয়ে তাদেরকে প্রশ্ন করা হলে অবন্তার কিছু কথা আর উত্তেজনা মিশ্রিত তিরস্কার ছাড়া আর কোন উত্তরই পাওয়া যায় না। বরং তাদের এই কর্মকান্ড এক সময় তাদের মস্তিস্ককে এতটাই বিকৃত করে তোলে যে তারা একসময় নারীদের জন্যে পৃথক আবাস পরিবেশের দাবি তোলে (Who Stole Feminism? How Women Have Betrayed Women by Christina Hoff Sommers)। তবে এতটুকুতেই নারীবাদিরা সীমাবদ্ধ নয়। তাদের কর্মপদ্ধতি আরো অনেক বিস্তৃত। তারা বিভিন্ন ভাবে বঞ্চিত, নির্যাতিত, দরিদ্র মহিলাদের সহযোগীতাচ্ছলে নিজেদের প্রতি আকর্ষন করে এবং অবশেষে সন্তপর্ণে তাদের মগজে এই বিষ ঢেলে দেয়। যার প্রমান আমাদের চারপাশের সমাজে আজ ব্যাপক ভাবে পরিলক্ষিত।
তবে কি তাদের এই অপচেষ্ঠায় অনেকাংশে সফলতা পাওয়ার জন্যে তারাই একক ভাবে দায়ী? আমার মতে, তাদের চেয়ে বেশি দায়ী আমরা (আমি বিশেষ ভাবে পুরুষ, আরো বিশেষ ভাবে মুসলিম পুরুষদের বলছি)। কেননা, আমরা ব্যর্থ হয়েছি নারীদের তাদের প্রাপ্য অধিকারটি দিতে। যার প্রমান আমরা পদে পদে দেখতে পাই। এমনকি আমাদের পূর্বপুরুষের দিকে তাকালেই দেখবো, অনেক পরিবারে যেদিকে ছেলেদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা হয়েছে, সেখানে মেয়েদের কে নুন্যতম শিক্ষাদানের প্রয়োজনও বোধ করা হয়নি। ফলে ভালো মন্দ বিচারে তারা যুক্তির চেয়ে আবেগকে ব্যবহার করা শিখেছে। অনেক ক্ষেত্রেই মিরাস ইত্যাদিতে নারীদেরকে তাদের প্রাপ্য অধিকার হতে গায়ের জোরে বঞ্চিত করা হয়েছে। আর তাদেরকে অবহেলা করার রীতিমতো প্রথা কায়েম হয়ে গিয়েছিলো। আসলে এভাবেই আমরা তাদেরকে নারীবাদের মতো উদ্ভট তত্ত্বকে গ্রহন করতে বাধ্য করেছি। ...... (চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১২৯৬ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর মেয়েদের প্ররোচিত হবার পেছনে - মুসলিম পুরুষদের যে ভাবে দুষলেন - আমার মনে হয় বিষয়টা অতটা সত্য নয়। কারন যে সময়ে মুসলিম পুরুষ তার কন্যাকে পড়ালিখা হতে বঞ্চিত করেছিল কিংবা উত্তোরাধিকার হতে বঞ্চিত করেছিল - সে সময়টায় ঐ মুসলিম পুরুষসমাজ আজকের ইক্যুভালান্ট জানাশোনা সম্পন্ন ছিল না। স্বভাবতঃই সে যেমন নিজের অনেক হক, নিজের অনকে অধিকার সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল - তেমনি ভাবে তার অধিকারভুক্ত নারীর ব্যাপারেও অজ্ঞ ছিল। তবে এটা সত্য যে ধূর্ত ও প্রতারক শ্রেনীর নারীবাদীরা অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত ঐ সকল মুসলিম পুরুষদের কাজকে দৃষ্টান্ত হিসাবে পেশ করে আজকের নারীদের ব্ল্যাকমেইল করতে পারছে - বিশেষ করে বিশ্লেষন করতে বিমুখ নারীদেরকে।
সবশেষে আপনার আব্বার রূহের মাগফেরাতের জন্য রইল আল্লাহর কাছে বিনীত প্রার্থনা - সে সাথে আল্লাহ যেন আমাদের যাদের বাবা বেচে আছেন - তাদেরকে ঐ পয্যন্ত বাচিয়ে রাখেন - যে পয্যন্ত না তারা পর্যাপ্ত পরিমান সওয়াব ও আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করতে সক্ষম হন।
ধন্যবাদ।
আমার মতে, তাদের চেয়ে বেশি দায়ী আমরা (আমি বিশেষ ভাবে পুরুষ, আরো বিশেষ ভাবে মুসলিম পুরুষদের বলছি)। কেননা, আমরা ব্যর্থ হয়েছি নারীদের তাদের প্রাপ্য অধিকারটি দিতে। -------
তার সাথে কিছুটা দ্বিমত
আসলে এখানে যা লিখেছি, তা একান্তই আমার নিজস্ব উপলব্ধি ও মতামত। এবং আমার মতামত যে পুরোটাই সঠিক হতে হবে, বিষয়টি আদৌ তা নয়। তথাপি, গঠনমূলক সমালোচনা সবসময়ই ভালো কিছু ফল দেয়, তাই সমালোচনার জন্য আবারো ধন্যবাদ।
দ্বিমতের কারণগুলো একটু বিস্তারিত লিখলে উপকৃত হতাম।
মন্তব্য করতে লগইন করুন