....আর এভাবেই আমরা মুসলমানরা আমাদের গৌরব ও মর্যাদা হারালাম-

লিখেছেন লিখেছেন চিরবিদ্রোহী ২২ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৮:২০:০৬ রাত

ঢামেক যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাস থেকে শাহবাগে নামলাম। ঢাবি কেন্দ্রিয় মসজিদে আসরের নামায পড়ে রিক্সা নেবার উদ্দেশ্যে চারুকলা ভবনের দিকে হাঁটছি। রাস্তার পাশে পসরা সাজিয়ে বসা এক বই বিক্রেতার ভ্যানের উপর চোখ পড়তে সেদিকে এগিয়ে গেলাম। নানা রকমের বইগুলোর ওপর এলোমেলো চোখ ঘুরাতে গিয়ে চোখে পড়লো আল্লামা জালালু্িদ্দন রুমীর (রহ.) ’মসনবী’র একটি বাংলা অনুবাদ। আল্লামা রুমীর (রহ.) লেখা কবিতার প্রতি অনেক আকর্ষন থাকলেও তার বেশির ভাগ লেখা পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়নি। বইটি হাতে নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করতেই দেখলাম বেশ পুরোনো এবং পৃষ্ঠাগুলোর অবস্থা বেশি ভালো না। না কিনার মানসিক সিদ্ধান্ত নিয়েও একটু পাতা উল্টিয়ে দেখতে থাকলাম। হঠাৎ একটা শের-এ চোখ আটকে গেল......

সপ্তম কি অষ্টম শ্রেণীর (ঠিক মনে নেই) বাংলা ১মপত্র বইয়ে একটা কবিতা আমরা সবাই পড়েছি ”ষোল আনাই মিছে” (পরে নাম দেয়া হয়েছে ”জীবনের হিসাব”), লেখক সুকুমার রায়। কবিতাটার বিষয়বস্তু এক জ্ঞানি লোক নৌকায় উঠে মাঝিকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করে। মূর্খ মাঝি উত্তর না দিতে পারায় জ্ঞানি তাকে বলে তোর জীবনো ১২আনাই মিছে। পরে নদীতে ঝড় উঠলে জ্ঞানী যখন জীবন ভয়ে ভীত, কারণ সে সাঁতার জানে না, তখন মাঝি তাকে বলে যে সে নিজেকে বাঁচানোর বিদ্যে টুকুও জানে না তাই তার জীবন ১৬আনাই মিছে (বৃথা)।

সুকুমার রায় কবিতাটি লিখেছিলেন বিংশ শতাব্দির প্রথম দিকে। মজার বিষয় হলো, এই কবিতাটি আসলে মসনবীর একটি শেরের হুবহু নকল। পার্থক্য শুধু মসনবীতে শেরটি ছিলো ফার্সিতে, সুকুমার সেটা বাংলায় লিখেছেন আর মূল কবিতায় আলেমের বদলে বাংলা বিদ্যে বোঝাই বাবু মশাই লিখেছেন। আমরা মুসলমানরা, যারা স্কুল-কলেজে পড়েছি, এমনকি অনেক মাদ্রাসা পড়–য়াও বলতে পারবে না আসলে এই বিখ্যাত কবিতাটি মসনবী থেকেই হুবহু কপি-পেস্ট।

এখানেই শেষ না, শুনতে অবাক লাগলেও সত্য বটে, সুকুমারের মতো উপমহাদেশের এমনকি বিশ্বের অনেক সাহিত্যিক তাদের লেখা কবিতা, ছোট গল্প ইত্যাদির মূল রসদ সংগ্রহ করেছেন মসনবী থেকে ( যেমন- সিংহ ও খরগোশের গল্প, সিংহ ও শৃগালের গল্প এমন চিরচেনা অনেক গল্প)। লেখকরা আমানতের খেয়ানত করেছেন মূল লেখকের নাম না লিখে, তবে আমরা মুসলমানরাও জানলাম না, আসলে এই সব রথি মহারথিরা আমাদের অবজ্ঞায় ছুড়ে ফেলে দেয়া সম্পদ কুড়িয়ে নিয়ে আজ আমাদের মাথার উপর ছড়ি ঘুরাচ্ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখায় একসময় যেখানে ছিলো মুসলমানদের একচ্ছত্র দখল, সেখানে বর্তমানে আমাদের অবস্থা উচ্ছিষ্ট খেকো কুকুরের চেয়ে কিছু ভালো নয়। এক জন্য দায়ী কারা? খ্রিষ্টানরা? ইহুদিরা? হিন্দুরা? নাকি আমরা মুসলমানরা? যদি শুধু বাংলা সাহিত্যের কথাই বলি- কবি নজরুল ইসলাম, ফররুখ আহমেদের পর বাংলা সাহিত্যে একজনও ইসলামিক চেতনার শক্তিশালি লেখক সৃষ্টি হলো না। এ দায় কি ভারতের, নাকি আমেরিকার? এ দায় আমাদের, এ দায় বাংলাদেশের ১২ কোটি মুসলমানের। আর যতদিন পর্যন্ত আমরা আমাদের হারানো মর্যাদার সদর্পে ফিরিয়ে না আনতে পারবো, আমাদের ফেলে দেয়া সম্পদ আবার হাসিল না করতে পারবো, ততদিন পর্যন্ত বিরুদ্ধশক্তি আমাদের উপর শাসন চালাতেই থাকবে।

বিষয়: বিবিধ

১৭০৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

165937
২২ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:০০
বুড়া মিয়া লিখেছেন : আগে এক মুসলমান আরেক মুসলমানকে এগিয়ে নিয়ে যেতো, সবদিক দিয়ে সাহায্যে এগিয়ে আসতো; আর এখন এক মুসলমান আরেক মুসলমানকে পেছনে ফেলার প্রতিযোগীতা করে যায় নির্দ্বিধায়, ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য আরেকজনের সাথে প্রতারণা করতে কুন্ঠাবোধ করে না, সাহয্য পাবার জন্য আরেকজনকে শ্রমিক হিসেবে অত্যাচার করে নির্লিপ্তভাবে – এরকম অনেক কিছু। এ চরিত্র আমাদের মধ্যে যতদিন থাকবে হারানো মর্যাদা আমাদের থেকে আরো দূরেই যেতে থাকবে ...

মুসলমানতো আর এক জাতি নাই এবং তারা চিন্তাও করতে পারে না আর এক হতে ...
165950
২২ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:২৪
সন্ধাতারা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
166138
২৩ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৯:৩২
আলোকিত ভোর লিখেছেন : ধন্যবাদ Rose
166161
২৩ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৯:৫৪
সাইদ লিখেছেন : ভালো লাগলো।আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে চলার তৌফিক দেন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File