হাদীস দেথে সে অনুযায়ী আমল: কাদের জন্য প্রযোজ্য?

লিখেছেন লিখেছেন চিরবিদ্রোহী ০৯ নভেম্বর, ২০১৩, ১০:১৫:৫১ রাত

(লেখাটি মূলত কোন পোস্ট নয়, বরং একটি পোস্টের বিপরীতে করা মন্তব্য। কিন্তু সবার উপকারে আসবে ভেবে তা পোস্ট করলাম। মুল লেখাটি মন্তব্য সহ এই লিঙ্কে পাবেন http://www.bdtomorrow.com/blog/blogdetail/detail/7094/imranh/30147#.Un5XOftywb4 )

(পোস্টের সারমর্ম, হাদীস অনুযায়ী আমল না করে তাকলীদ করলে তা মানুষকে জাহান্নামের পথ দেখাবে। মাযহাবের ইমামগনও বলেছেন"যেখানে কোন সহীহ হাদীস পাবে, ধরে নিবে তাই আমার মাযহাব"। কিন্তু হাদীসের আমলযোগ্যতা যাচাই করে কি সবাই হাদীস দেখে আমল করার যোগ্যতা রাখে? এই বিষয়ে মন্তব্যটি করা)

ভাই, আপনার কথার সাথে ধরে নেন একমত হলাম, যদিও আপনার সবগুলো যুক্তিই আমার ৭টি প্রশ্নের মাত্র প্রথম ২/৩টির উত্তর ধরা যেতে পারে। তারপরও, আপনি বললেন, তাকলীদ বা ইত্তিবা সম্পর্কে, আপনার কথাটি ঠিক বটে। কিন্তু মূল প্রশ্ন থেকে বোধহয় আমরা সরে যাচ্ছি-

সব ইমামই বলেছেন, যেখানে আমার ফাতওয়ার বিরুদ্ধে কোন সহীহ হাদীস পাবে, সেখানে ঐ হাদীসের অনুসরন করাই আমার মাযহাব। এটা শুধু মাত্র চার ইমামই নয়, বরং সর্বকালের সমস্ত্র মুহাক্কিক, মুহাদ্দিস, মুফতিয়ানে কিরামের কথাও। কিন্তু এখন প্রশ্ন আসে, সহীহ হাদীস দেখা মাত্রই কী তা আমল যোগ্য হবে? আপনার নিশ্চয়ই জানা আছে, এমন অনেক সহীহ হাদীস আছে যা কোন মাযহাবেই আমল যোগ্য বিবেচিত হয় নি,(উদাহরন স্বরূপ মুতা বিবাহের বৈধতা সংক্রান্ত হাদীস) কারন (১)হয়তো এই হাদীসের বিপরীতে একাধিক সহীহ হাদীসে ভিন্ন বর্ণনা এসেছে (২) হাদীসটি বিশেষ স্থান, কাল বা ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য (যেমন, শব্দ এবং গন্ধহীন বায়ু ত্যাগে অযু না ভাঙ্গা বিষয়ক হাদীসটি) (৩) হাদীসটি মানসুখ হয়ে গেছে, (৪) কুরআনুল কারীমের কোন আয়াতের সাথে হাদীসটির বৈসাদৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে(যেমন মুসলমান ইচ্ছাকৃত ভাবে বিসমিল্লাহ না পড়ে যবেহ করলে সেই প্রাণীর গোশত হালাল হওয়া না হওয়া সংক্রান্ত আয়াত ও হাদীসের বৈসাদৃশ্য)ইত্যাদি। এখন একবার ভেবে বলুন তো, যারা হাদীসের আমলযোগ্য হওয়ার এইসব জ্ঞানগুলি রাখে না, তারা কীভাবে সরাসরি হাদীস হতে আমল করার যোগ্যতা রাখে? আমরা কয়জন একটি মাত্র হাদীস সম্পর্কেও পূর্নাঙ্গ জ্ঞান (যেমন,হাদীসটি কয়টি রাওয়াতে, কয়জন রাবী হতে বর্ণিত, কয়জন সাহাব হতে বর্ণিত বা স্বীকৃত, কোন কোন রাবীর সমস্যা ছিল কিনা, হাদীসটি মুরসাল না গইরে মুরসাল, মতন জনিত পার্থক্য আছে কিনা ইত্যাদি ব্হুবিধ) আহরন করতে সক্ষম হয়েছি বা হবো? আমরা শুধু মাত্র নামাযের দিকে তাকালেই দেখবো, ৪ রাকাআত নামাযের তাকবিরে উলা হতে শুরু করে সালাম পর্যন্ত চার ইমাম (রহ.)দের মধ্যে কমবেশী ১২শত মাসআলার পার্থক্য, এবং প্রতিটি পার্থক্যই কুরআন, হাদীস, ইজমা ও কিয়াস দ্বারা গভীর ভাবে যাচিত।

এখন আসুন আমাদের হাল অবস্থায়, বাংলাদেশে বর্তমান মুসলমান প্রায় ১৪কোটি, এদের মধ্যে কতজন সহীহ ভাবে কুরআন পড়তে পারে? তাদের মধ্যে কতজন কুরআনের অর্থ বুঝতে পারে? তাদের মধ্যে কতজন হাদীসের মূল সনদ ও মতন সহ হাদীসের ইবারত পড়তে সক্ষম? কতজন হাদীসের ভারসাম্য যাচাই করতে সক্ষম? কতজন হাদীসের আমলযোগ্য হওয়ার শর্তগুলো যাচাই করতে সক্ষম? শেষ পর্যন্ত আপনি কতজন পাবেন যারা হাদীস দেখে আমলের যোগ্যতা রাখে?

আর যাদের মধ্যে এই যোগ্যতা নেই (আর এটা চাট্টিখানি কথা নয়, ইতিহাস সাক্ষী, ইমাম আবু হানিফা, শাফেই, ইবনে হাম্বাল, মালেক বিন আনাস, নববী, ইবনে তাইমিয়া, ইসমাঈল বুখারী, ইবনে মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে মাযাহ, তিরমীযি (আল্লাহ সকলের কবরকে তার রহমত দ্বারা আলোকিত করুন)এনাদের মতো ব্যক্তি হাদীসের খিদমতে নিজেদের সমস্ত জীবন উজাড় করে দিয়েও কুল কিনার করতে পারেন নি। আমরা সাধারন মানুষ কি তা কাছাকাছি ত্যাগ মেনে নিতে সক্ষম?

তাহলে সাধারন মানুষের কী করণিয়? তাদের ভরসা রাখতে হবে বিচক্ষন উলামা ও ফুকাহায়ে কিরামদের উপর। আল্লাহও তেমনটি বলেছেন, "আনুগত্য কর আল্লাহ, রাসূল ও তোমাদের মধ্যে যারা বিজ্ঞ তাদের।" কেননা, হাদীস থেকে সরাসরি আমল মানে, এমন পিচ্ছিল পথে পা দেয়া, যেখানে পিছলে পড়লে সরাসরি জাহান্নামের গর্তে পড়তে হবে, অর্থাৎ নুন্যতম ত্রুটি বিচ্যুতি ডেকে আনবে ভয়াবহ পরিনতি।

ওয়া মা আলাইনা ইল্লাল বালাগ

বিষয়: বিবিধ

১৫৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File