মালালা ইউসুফজাইকে নিয়ে নতুন বিতর্ক, অন্তরালে কিছু লক্ষণিয় বিষয়
লিখেছেন লিখেছেন চিরবিদ্রোহী ১২ অক্টোবর, ২০১৩, ০৯:২০:৩৯ রাত
পাকিস্তানে বিখ্যাত(!) নারী শিক্ষা অধিকার আন্দোলনের নেতা মালালা ইউসুফজাইয়ের নোবেল পুরস্কার না পাওয়া নিয়ে আলোচনা এখন গরম। আগুনে ঘি ঢালতে তার সাথে যোগ হয়েছে পাকিস্তানের বিখ্যাত প্রিন্ট মিডিয়া ডনের অনলাইন ভার্সনে লেখা একটি পোষ্ট যেখানে একজন ডাক্তারের বরাত দিয়ে দাবি করা হয়েছে মালাল আসলে পাকিস্তানী নন, তিনি হাঙ্গেরীয়ান বংশোদ্ভূত খ্রিষ্টান। বিষয়টি নিয়ে গত দুইদিন বিডিটুডেতে পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা বেশ তুঙ্গে।
কিন্তু আমি যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চাই তা ভিন্ন। মালাল হাঙ্গেরিয়ান নাকি পাকিস্তানী, খ্রিস্টান না মুসলিম তা নিয়ে মাথা ঘামনোর সময় আমার নেই। আমি পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু প্রশ্ন রাখতে চাই যার উত্তর পাঠক নিজেই তার চিন্তা থেকে দিবেন।
মালালার জন্মভূমি বা বাসভূমি যাই বলি পাকিস্তানের সোয়াত অঞ্চলের মিঙ্গোরা শহরে। এখানে তালেবানরা প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলো। ১১-১২ বছরের মালালা স্কুলে যেতে খুব ভালোবাসতো কিন্তু তালেবানদের ভয়ে তা সম্ভব হয়ে উঠছিলো না। এমনি অবস্থায় সে তার মনের কথাগুলো তুলে ধরে বিবিসির ব্লগে তার লেখা ডাইরিতে। আঞ্চলিক ভাষায় লেখা তার ব্লগগুলো কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করে এবং এখান থেকে তারা ঐ অঞ্চলে তালেবানদের অত্যাচারের অবস্থা সম্পর্কে সম্যক জানতে পারে। তার এই ব্লগ এতোটাই নাড়া দেয় যে নিউ ইয়র্ক টাইমস অ্যাডাম বি এলিক তার উপর একটি ডক্যুমেন্টরি চিত্রায়িত করে। এভাবেই মালাল বিশ্ব মানুষের দৃষ্টিতে আসে। ঐ ডক্যুমেন্টরির পর মালালা বিভিন্ন পত্রিকা ও মিডিয়ায় (এভিটি খাইবার, আজ ডেইলি, টোরেন্টো স্টার, ক্যাপিটাল টক) সাক্ষাতকার দেয় এবং নারী শিক্ষার প্রসারে কাজ শুরু করে। তার কর্মকান্ডে অভিভূত হয়ে দক্ষিন আফিক্রার আর্চবিশপ ডেসমুন্ড টুটু মালালার নাম ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেন’স পিস প্রাইজ’র জন্য সুপারিশ করে এবং মালালা উক্ত পুরস্কারে ভূষিত হন। তার ক্রমাগত সফলতাতে ক্রুদ্ধ ও হয়ে বিচলিত হয়ে তালেবানরা প্রথমে তাকে বিভিন্ন ভাবে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে এবং পরবর্তীতে ২০১২সালে ৯ই অক্টোবর তাকে গুলিবিদ্ধ করে। মারাত্বক আহত মালালাকে প্রথমে পেশোয়ারের মিলিটারি হাসপাতাল, পরে রাওয়ালপিন্ডির আর্মড ফোর্স ইন্সটিটিউট অব কার্ডিওলজি এবং শেষে ইংল্যান্ডের কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে। অবশেষে মালালা সুস্থ্য হন এবং ধীরে ধীরে আর্ন্তজাতিক মহলে খ্যাতি শিখরে পৌছান।
এখন আমার প্রশ্নগুলো হলো, সোয়াত অঞ্চল, যেখানে শিক্ষার হার মাত্র ২৬-২৮%, প্রযুক্তির ব্যবহারের হারও একেবারে তলানিতে, সেখানে ১১-১২ বছরের একটা মেয়ে নিয়মিত বিবিসিতে ব্লগ লেখে। আবার তার লেখা কর্তৃপক্ষের নজরে দ্রুতই পড়ে এবং এতটাই গুরুত্বের সাথে পড়ে যে তারা তাকে নিয়ে একটা ডক্যুমেন্টরি বানিয়ে ফেলে! অথচ যুদ্ধবিদ্ধস্থ পার্শ্ববর্তী দেশ আফগানিস্থানে শিক্ষা এমনি খাদ্য ও বাসস্থানের অভাবে কত মানুষ নীরিহ অবস্থায় জীবন যাপন করছে, তাদের মধ্য থেকে এমন কাউকে উঠিয়ে আনতে পারলো না বিবিসি বা নিউ ইয়র্ক টাইমস কর্তৃপক্ষ! আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে দূর্ভিক্ষের সাথে লড়াই করতে করতে ধুকেঁ ধুকেঁ মরছে অগণিত মানুষ, ফিলিস্তিনে নির্বিচারে গুলি আর বোমা মেরে মারা হচ্ছে শত শত মানুষ, তাদের মধ্য থেকে এমন কেউ কি নেই যে তার দেশের অবস্থা পৃথিবীর মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারে? সেখানে কেন এই মানবদরদিরা নীরব?
এমন আরো অসংখ্য প্রশ্ন ঘিরে আছে মালালা ও তার খ্যাতিকে। তার এই অদ্ভূত উত্থান যে কোন মানুষের মনেই প্রশ্ন জাগাতে পারে, তাই আমার মনেও জাগলো। যদি কারো কাছে এর উত্তর থাকে দয়া করে আমাকে জানিয়ে উপকৃত করবেন।
বিষয়: বিবিধ
১৪২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন