ফরগটেন হিরোস- এ ট্রিবিউট টু দ্যা গ্রেটেস্ট মেন অন আর্থ Forgotten Heroes- A tribute to the greatest men on earth দ্বিতীয় পর্ব শাহ সূফী নুর মুহাম্মাদ নিজামপূরী (রহ.)

লিখেছেন লিখেছেন চিরবিদ্রোহী ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০২:৫৮:০৪ দুপুর



(বলে রাখা প্রয়োজন, ফরগটেন হিরোস (বিস্মৃত মহানায়কেরা) সিরিজ লেখার পিছনে আমার মূল্ উদ্দেশ্য- ইতিহাস ভোলা মুসলিম তথা বাংলাদেশী মুসলিমদের একটু মনে করিয়ে দেয়া প্রয়েূাজন তাদের পূর্বজগন কেমন ছিলেন। তাদের বীরত্ব, তাদের ঈমানী চেতনা, তাদের তাকওয়া, তাদের তাসাউফ; এগুলোর মাপকাঠিতে তারা কত উচুতেঁ ছিলেন। আর তাদের উত্তরসূরী হয়ে আমরা আজ রাস্তার নেড়ী কুকুরের মতো পদে পদে লাঞ্ছিত হই আর ভয়ে ভয়ে পালিয়ে বেড়াই। সত্য প্রকাশ করার, মিথ্যার মূলোৎপাটনের কোন ক্ষমতাই যেন আমাদের মধ্যে নেই। চোখের সামনে যত অন্যায়, অনাচার, অরাজকতা দেখে হয়তো মুখ ফিরিয়ে নেই, নাহলে কেটে পড়ি। সবচেয়ে বড় কথা, মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ সুবহানহু ওয়া তা’আলার আদেশ পালনে, রাসুলূল্লাহ (সাHappy-এর প্রদর্শিত পথ অনুসরণে আমাদের না আছে সদিচ্ছা, আর না আগ্রহ। এ লেখাগুলো হয়তো আমাদের ঘুমন্ত বিবেককে নাড়া দিবে, মনে করিয়ে দিবে আমরা সেই জাতির উত্তরসূরি, যাদের আযানে পৃথিবীর ক্ষমতাধর বাদশাহদের প্রাসাদ ভেঙে পড়ত।)


উপমহাদেশের বিট্রিশ বিরোধী স্বাধিনতা আন্দোলনে বাঙালী মুসলিমদের ভূমিকা ছিল অসামান্য। যদিও ভাগ্য দোষেই হোক, কোন চক্রান্তের ফেরেই হোক আর নিজেদের হেয়ালীপনায় হোক, মুসলমানরা কখনোই তাদের উপযুক্ত যশ্ আর সুনাম পায়নি। তবু এমন কিছু নাম রয়েছে যাদের কখনোই ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে দেয়া যাবে না। তেমনি একজন অসামান্য ব্যক্তিত্ব, আমাদের বাংলাদেশের গর্ব, অনুপ্রেরনা, সমকালের শ্রেষ্ঠ বুযুর্গ ও মুজাহিদ তিনি শাহ সূফী নুর মুহাম্মাদ নিজামপূরী (রহ.)।

এই মর্দে মুজাহিদের জন্ম আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের অর্ন্তগত মীরসরাইরের মীঠানালা গ্রামে। তার শৈশব, পরিবার ও শিক্ষা জীবন সম্পর্কে কিছু জানা যায় না। যতগুলো মাধ্যম থেকে তার সম্পর্কে জানা যায় বেশিরভাগই তার বাইয়াত পরবর্তী জীবনের আলোচনা আছে, কিন্তু শৈশব বা শিক্ষা জীবন সম্পর্কে কিছুই জানার কোন মাধ্যম পাওয়া যায় নি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, তার নিজের গ্রামের লোকজনও এই মহান বুজুর্গ সম্পর্কে একপ্রকার অন্ধকারেই রয়ে গেছে। তবে তার নামের শেষাংশ থেকে অনুমান করা হয়, তিনি ভারতের নিজামপুর মাদ্রাসায় শিক্ষা লাভ করেন।

যা হোক, বিট্রিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রবাদ পুরুষ সাইয়্যেদ শাহ আহমাদ বেরলভী শহীদে বালাকোট (রহ.)-এর সাথে শাহ সূফী নুর মুহাম্মাদ নিজামপূরীর (রহ.) প্রথম সাক্ষাত হয় কলকাতায় ১৮২২ সালে। হযরতজী (রহ.) তখন তার ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রাম ও দ্বীনি তাবলীগের উদ্দেশ্যে কলকাতায় তাশরীফ এনেছিলেন। প্রথম সাক্ষাতের শাহ সূফী নুর মুহাম্মাদ নিজামপূরীর (রহ.) হযরতজীর (রহ.) অসামান্য ব্যক্তিত্ব, অগাধ দ্বীনি জ্ঞান ও আধ্যাত্বিক ক্ষমতা দেখে তিনি তখনই হযরতজীর (রহ.) হাতে বাইয়াত গ্রহন করেন। হযরতজীর (রহ.) আধ্যাত্বীক প্রভাবে তিনিও তাসাউফের মাকাম লাভ করতে শুরু করেন। নিজের সমস্ত টাকা পয়সা ও মালসামান এনে শায়েখের পদতলে হাজির করেন এবং অনুরোধ করেন তাবলীগ ও জিহাদের কাজে এর পুরোটাই যেন ব্যায় করা হয়। হযরতজী (রহ.) বলেন, “সব যদি দিয়ে দাও তাহলে তোমার চলবে কিভাবে?” শাহ সূফী নুর মুহাম্মাদ নিজামপূরীর (রহ.) তাৎক্ষনিক উত্তর দেন, “আমার জন্যে আল্লাহ ও তার রাসূলের (সাHappy সাহায্য এবং আমাদের শায়েখের দুআ ও বরকতই যথেষ্ঠ” (ঠিক যেমন তাবুকের যুদ্ধের সময় সাইয়্যেদুল উম্মাত হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাHappy তার সমস্ত কিছু রাসূলে পাক(সাHappy-এর পদতলে হাজির করেন। হুযুরে পাক (সাHappy জিজ্ঞেস করলেন, “আবু বকর, পরিবারের জন্য কি রেখে আসলে?” তিনি উত্তর দিলেন, “তাদের জন্য আল্লাহ ও তার রাসূল(সাHappyকে রেখে এসেছি। কী অসামান্য কুরবানী!)নিজস্ব ইলম, ঈমান, আমল ও তাসাউফের কঠোর প্রচেষ্ঠার মাধ্যমে অল্প দিনেই সাইয়্যেদ শাহ আহমাদ বেরলভী শহীদে বালাকোট (রহ.)-এর নিকট হতে তরীকায় মুহাম্মদীতে খিলাফত ও বাইয়াতের অনুমতি লাভ করেন। তথাপী পরবর্তী জীবনে তিনি সার্বক্ষনিক তার শায়েখের সাথেই থাকতেন।

সাইয়্যেদ শাহ আহমাদ বেরলভী শহীদে বালাকোট (রহ.)কলকাতা থেকে হাজ্বের উদ্দেশ্যে রওনা দিলে সূফী সাহেবও তার সফর সঙ্গী হলেন।হাজ্বের সফরে থাকাকালীন অবস্থায় হযরতজী (রহ.) জীহাদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে থাকেন। সুফী সাহেব (রহ.) ও নিজের শায়খের সাথে জীহাদে শরীক হওয়ার সব প্রস্তুতি সেরে রাখেন। পরবর্তীতে হযরতজী (রহ.) হজ্ব থেকে ফিরে ভারত ও আফগানিস্থানের বিভিন্ন স্থানে জিহাদের তাবলীগ শুরু করেন। সেখানেও সুফী সাহেব (রহ.) ছিলেন তার সার্বক্ষনিক সঙ্গী।তাবলিগ শেষে মুজাহিদ বাহীনির বিন্যাস করা হয় এবং প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা হয়। সুফী সাহেবকে বাঙালা অঞ্চলের দায়িত্বশীল ও সেনাবাহিনীর এক অংশের অধিনায়ক নিযুক্ত করা হয়।

অবশেষে ভারতের ব্রিটিশ শাসক ও তাদের পদসেবীদের সাথে সরাসরি জীহাদ শুরু হয়, ভারত বর্ষের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম। ১৮২৬ সালে প্রথম জিহাদ হয় পাঞ্জাবের শাসনকর্তা রনজিত সিংয়ের সেনাপতি সর্দার বুধ সিংয়ের সাথে। দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ, ঈমানে তেজে দীপ্ত মুসলিম সেনার সামনে কোনক্রমেই তিষ্ঠাতে পারে না, অতি স্বল্প সময়ের মধ্যেই পরাজিত ও বিতাড়িত হয়। এরপর একাধারে পেশোয়ার, মর্দান, পাঞ্জাবে সংঘটিত সংগ্রামে ছিল তার বীরত্বপূর্ণ পদচারনা।১৮৩০ সালে ঘটে মায়ারের যুদ্ধ। এই যুদ্ধ চলাকালে তিনি কামানের গোলার আঘাতে মারাত্বক আহত হন। আহতাবস্তায় তার শরীরে কয়েকটি তীরের আঘাতও লাগে। কিন্তু এই মর্দে মুজাহিদ তাতে সামান্যটুকুও সাহস হারাননি। প্রচন্ড প্রতাপের সাথে তিনি যু্দ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন। এই ক্ষত কখনোই তাকে যুদ্ধের ময়দান থেকে দূরে রাখতে পারেনি।

মুসলমানদের একের পর এক অভিযান, তাদের ভীষম বীরত্ব ও রণকৌশলে বারবার পরাস্থ হতে থাকে শাসক ও তাদের মিত্র-অনুচর বর্গের। ভীত নড়ে ওঠে জুলুমবাজ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের, অনুগতদের এই শোচনীয় পরাজয় তাদের ভাবতে বাধ্য করে এইভাবে যদি এই দেশপ্রেমী মুজাহিদরা এগিয়ে চলতে থাকে, অচিরেই ভারত থেকে তল্পিতল্পা গুটিয়ে পালাতে হবে তাদের। তারা কৌশল খুজতে আরম্ভ করে।

শিঘ্রই তারা জানতে পারে, মুজাহিদ ও দেশপ্রেমি মুসলিমদের এই অভূতপূর্ব সাফল্যে ঈর্ষায় জ্বলে পুড়ে মরছে স্বার্থবাদি পাঠানরা।সুকৌশলে ব্রিটিশরা পাঠানদের সাথে লিয়াজু গড়ে তোলে। পাঠানরা ছদ্মবেশে প্রবেশ করে মুজাহিদ বাহিনীতে। তাদের ভিতরগত খবরাখবর পৌছাতে থাকে ব্রিটিশদের কাছে। এভাবেই মুজাহিদদের গোপন তথ্য পেয়ে সে অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে শিখদের প্রস্তুত করা হয়।

১৮৩১ সাল। পাঞ্জাব-আফগানিস্থান সীমান্তে শিখ বাহীনির মুখোমুখি হয় মুজাহিদ বাহিনী। ঈমানের বলে বলিয়ান দেশ মুক্তি আন্দোলনের সৈনিক মুজাহিদদের সাথে কোন মতেই পেরে উঠছিলো না শিখ রাজার সৈন্যরা। যখন তারা পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে, তখনই মুখোশধারী মুনাফিক পাঠানরা তাদের আসল চেহারা দেখানো শুরু করে। তাদের হঠকারিতায় মুসলমানদের নিশ্চিত জয় পরাজয়ে পরিণত হয়। তথাপি শেষ পর্যন্ত মুসলমানরা সর্বাত্মক লড়াই করে। অন্যদের সাথে সুফী সাহেব (রহ.)ও অসম সাহসে ও বীরত্বে যুদ্ধ করতে থাকেন।যুদ্ধের এক পর্যায়ে তিনি আহত হন। তবু হযরত মুআজ বিন জাবালের (রাHappyমতো আহতাবস্থায় যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন।

যুদ্ধে পরাজিত মুজাহিদরা আফগানিস্থান সীমান্তের বালাকোট নামক স্থানে এসে শিবির নির্মান করে।সাইয়্যেদ শাহ আহমাদ বেরলভী শহীদে বালাকোট (রহ.)দেখলেন সাথীদের অনেকেই শহীদ হয়েছেন, আরো অনেকে কমবেশি আহত। সুতরাং, তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন আপাতত কিছুদিন যুদ্ধে যাবেন না।বরং মুজাহিদদের সুস্থ করে তুলে নতুন উদ্দীপনায় দেশমুক্তি আন্দোলন শুরু করবেন।

৬ই মে ১৮৩১।ফজরের নামাজ সমাপন্তে হযরতজী (রহ.)তার সাথীদের উদ্দেশ্যে ঈমান, আমল ও দেশপ্রেমের বয়ান পেশ করছিলেন। হঠাr কামানের গোলা এসে আছড়ে পড়ে শিবিরের উপর। আকষ্মিক আক্রমনে দ্বীধাগ্রস্থ মুসলিম বাহীনি প্রথমে কিছু বুঝে উঠতে না পারলেও দ্রুতই প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কিন্তু ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গেছে, ইংরেজ-পাঠান-শিখদের সমন্বিত বাহিনীর সামনে আর পেরে ওঠে না মুসলিম বাহিনী। শহীদ হলেন আমিরুল মুজাহিদীন সাইয়্যেদ শাহ আহমাদ বেরলভী শহীদে বালাকোট (রহ.), নায়েবে আমির শাহ ইসমাঈল (রহ.)সহ অনেক মুজাহিদ। সুফী নুর ইসলাম বাঙালী (রহ.) মারাত্মক আহত হন। এভাবেই সমাপ্তি হয় উপমহাদেশের প্রথম স্বাধিনতা সংগ্রামের।

বালাকোট ট্রাজেডির পর কিছুদিন তিনি ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে সাময়িক অবস্থান করেন। ১৮৪০ সালের আগে কোন এক সময় তিনি জন্মভূমি মিঠানালা গ্রামে ফিরে আসেন। তখন সমগ্র দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলের মতো মিঠানালাও ছিলো কুসংস্কার ও বদদ্বীনি কর্মকান্ডে ভরপুর। বিদআত যেন প্রকৃত দ্বীনের স্থান দখল করে নিয়েছিল। সে সময় তিনি প্রকাশ্যে দাওয়াত, এরশাদ ও কুসংস্কারমুক্ত দ্বীনী জীবন প্রতিষ্ঠার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। সঠিক আধ্যাত্মিক ইসলামী জীবনদর্শন চর্চার মধ্য দিয়ে বহু মানুষের রূহানী জগতে বিপ্লব সৃষ্টি করেন। একই সঙ্গে ব্রিটিশ শক্তির শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে তিনি সংগঠিত ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিভিন্ন মহলকে কাজ করে যেতে উদ্বুদ্ধ করেন। ফেনী থেকে নিয়ে চট্টগ্রামের নানা অঞ্চলে তাঁর অনুপ্রেরণায় সঠিক ইসলামী জাগরণ ও ফিরিঙ্গী-বিরোধী বিপ্লবের ব্যাপক আবহ তৈরি হয়। এ কাজে নিজেকে এতটাই নিয়োজিত করেছিলেন যে, বিয়ে করে সংসার গুছানো অবকাশও তিনি পাননি। ছিলেন আজীবন অবিবাহিত।

তিনি উঁচু মাপের আলেম ছিলেন, বড় মুহাদ্দিস ছিলেন। ছিলেন সমকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কামেল বুযুর্গ। তার খলিফাদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত বুযুর্গ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাহ.।ফতেহ সাহেবের খলিফা ছিলেন ফুরফুরার প্রথম পীর আবু বকর সিদ্দিকী রাহ.।। ছারছীনার প্রথম পীর মাওলানা নেছারুদ্দীন রাহ. ছিলেন ফুরফুরার পীরের খলিফা। সে হিসেবে সুফী নিজামপুরী রাহ. ছিলেন ছারছীনা পীরের পরদাদা-পীর। মূলত এভাবেই এ দেশের আধ্যাত্মিক বহু কেন্দ্র ও ধারার তিনি ছিলেন উৎস। গভীর তাকওয়া সম্পন্ন এ মনীষীর বহু কারামতের কথা এখনো লোকমুখে শোনা যায়। শত বছর আগের দুর্লভ কোনো কোনো গ্রন্থেও পাওয়া যায়।

জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত তিনি অত্র এলাকার লোকেদের শয়ী ও আধ্যাত্মিক হেদায়াতের কাজে লিপ্ত থাকেন। বিদআত, কুসংস্কার ও কুপ্রথার এক একটি করে শিকড় উপড়ে সেখানে তাওহিদ, ঈমান, আখলাক ও মুজাহাদার বীজ বপন করতে থাকেন। অবশেষে ১৮৫৮ সালের ১লা নভেম্বর তিনি দুনিয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করে মহান প্রভূর ডাকে সাড়া দিয়ে শেষ বিদায় গ্রহন করেন। তার জন্মস্থান মিঠানালায় তার খানকাহের পাশেই তাকে দাফন করা হয়। এমন এক মর্দে মুজাহিদ, জামানার ইমামকে কোলে ধারন করতে পেরে ধন্য হয়েছে বাংলার জমিন।

একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা:

কয়েকমাস পূর্বে কিছু বন্ধুর সাথে গিয়েছিলাম চট্রগ্রামের সীতাকুন্ডের উদ্দেশ্যে। মীরসড়াই হয়ে যাওয়ার সময় কিছুতেই মনকে মানাতে পারলাম না। নেমে পড়লাম সেখানে, খুজতে শুরু করলাম ইমামে বাঙ্গাল শাহ সূফী নুর মুহাম্মাদ নিজামপূরী (রহ.)-এর কবরের অবস্থান। এলাকা ঘুরতে ঘুরতে একটা বিষয় লক্ষ্ করলাম, ঐ এলাকার রাস্তা, বিদ্যালয়, কলেজ, মাদরাসা সর্বত্রই ‘সুফিয়া’ শব্দের ব্যবহার। খোঁজ নিয়ে জানা গেলে, এই ‘সুফিয়া’ শব্দটি সুফি নিজামপুরি (রহ)এর অনুসরনে ব্যবহার করা হয়।

অবশেষে খুজে পেলাম আকাঙ্খিত কবরটি। যিয়ারত করলাম আর মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে দুআ করলাম যেন আমাদের এই মহান ব্যক্তিত্বের অনুসরনের যোগ্যতা দান করেন।

ঐখানে পরিচয় হলো তার বংশধরের সাথে, নাম মাওলানা আব্দুল গনি। মাজার কমপ্লেক্স নিকটবর্তী সূফিয়া নূরিয়া মাদরাসার তত্ত্বাবধায়ক তিনি। ভদ্রলোক জানালেন, প্রতি বছর ১৩ কার্তিক সেখানে ঈসালে সাওয়াব অনুষ্ঠান হয়। আমাদের তিনি আন্তরিক ভাবে দাওয়াত দিলেন।

পুরো সফরেই একটা কথা বারবার মনে আঘাত হানছিলো, যে মহান মুজাহিদের জীবনের লক্ষ ছিলো মুসলিম জীবনাচার থেকে শিরক দূর করা, বিদআতমুক্ত আধ্যাত্মিকতার প্রচলন দেওয়া এবং আগ্রাসী ফিরিঙ্গী শাসন উৎখাত করে ইসলামী অনুশাসন ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, আজ তার কবরকে ঘিরে দিন তারিখ ধার্য করে ঈসালে সাওয়াব অনুষ্ঠান হয়। সেখানে তার সিলসিলা ও আধ্যাতিকতা নিয়ে খুব আলোচনা করা হয়। কিন্তু তার মূল শিক্ষা, যার জন্য তিনি সারাটি জীবন সাধনা করে গেছেন, তা আজ মানুষের মাঝে বিলুপ্ত প্রায়। তাঁর জীবনের জিহাদ-সংগ্রাম, বিপ্লব ও যুদ্ধের কথা তেমন একটা উঠে না। এখানে আলৌকিকত্বের মহিমা উচ্চারিত হয়, তাঁর হৃদয় উত্তাপ করা উৎসর্গের দাস্তান সেভাবে জানানো হয় না। তিনি দরবেশ ছিলেন বার বার বলা হয়, সে সঙ্গে বৃটিশবিরোধী যোদ্ধা ছিলেন সে কথাটি বলা হয় না। তার পরও মহৎ নিয়তে যারা তাঁকে স্মরণ করছেন, আলোচনায় আনছেন এবং তাঁকে ঘিরে নিজেদেরকে আল্লাহর শুদ্ধ বান্দা হিসেবে গড়ে তুলতে চেষ্টা করছেন- তাদের প্রতি আমাদের অভিনন্দন। শুধু ছোট্ট অনুরোধ, তারা যেন সবার সামনে তাঁর গোটা জীবনের উজ্জ্বল অবয়বটা খুলে-তুলে দেখার ও ধরার চেষ্টা করে যান। এ জাতি ও ভূখন্ডের মুক্তিতে ১৮০ বছর আগে যিনি এত অবদান রেখে গেছেন তাঁর সে অবদান ভুলে যাওয়ার মতো অকৃতজ্ঞতা সবার জন্যই হবে আত্মঘাতী। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। আমীন।

সংকলনে

স্টাডি এ্যান্ড রিসার্চ গ্রুপ

YMAC

তথ্যসূত্র:

১. ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলিমদের ভূমিকা (শাহ শফিউদ্দিন মিয়াজী)

২. ভারতীয় রাজনীতিতে আলেমদের অবদান (বদরে আলম মিরাঠী)

৩. তা’রিখে দাওয়াত, খন্ড-২ (মাওলানা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (রহ.)

৪. তারিখে বালাকোট সিরাতে সাইয়েদ আহমাদ শহীদ (রহ) (নবাব মুহাম্মার ওয়াজীর খান)

৫. সাইয়েদ আহমাদ শহীদ (মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী)

৬. অমর বালাকোট (ইসলামী ফাউন্ডেশন)

৭. উপমহাদেশের স্বাধীনতা ও রাজনীতিতে আলেম সমাজের ভূমিকা (ইসলামী ফাউন্ডেশন)

৮. বালাকোটের ইতিহাস (মাকতাবাতুল হেরা)

৯. কারওয়ায়ে ঈমান ওয়া আজিমাত (মাওলানা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (রহ.)

১০. সাইয়েদ আহমাদ শহীদ, জামাআতে মুজাহিদীন, ৩য় খন্ড (মাওলানা গোলাম রাসুল মেহের)

১১. আল-কাউসার (জুলাই’১৩)

১২. উইকিপিডিয়া

১৩. অন্যান্য

https://www.facebook.com/ymacbd

..............................................................................

প্রথম পর্ব (সাইয়্যেদ আহমাদ বেরলভী শহীদে বালাকোট (রহ.) পড়তে হিট করুন:

টুডে ব্লগ: http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/7137/aryan_k/27624

ফেসবুক: https://www.facebook.com/ymacbd?ref=hl

বিষয়: বিবিধ

২২২৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File