আল্লাহকে দেখা না দেখা --

লিখেছেন লিখেছেন আরাপপুর ২০ অক্টোবর, ২০১৩, ০৮:১৯:৫৫ রাত

পরম দয়ালু ও দাতা আল্লাহর নামে

'এতে তাদের জন্যে নিদর্শণ রয়েছে, যারা চিন্তা করে।; সুরা রা'দ আয়াত ৩।

অর্থাৎ আল্লাহর নিদর্শন বুঝতে চাইলে মাথা খাটানো বা চিন্তা করা জরুরী।

সেদিন এক বন্ধুর পাঠানো লিঙ্কে ইউটিউবের একটি ভিডিও দেখছিলাম। ভিডিওতে দেওয়ানবাগী পীর তার ‘নিজস্ব ইসলামের’ অনেক নতুন দিক ও তার নিজের স্ট্যাটাস নিয়ে বেশ চমকপ্রদ কথা বলছিলেন। এর ভিতর তার ২টা কথা আমার মনে দাগ কাটলোঃ

ক, তিনি নাকি নবী কন্যা ফাতেমা (আ) কে বিবাহ করেছিলেন (নাউযুবিল্লাহ)।

খ, তিনি তার মুরীদ দেরকে আল্লাহর কাছে নিয়ে গেলেন। তার মুরীদ গন দেখলো যে, মুর্শীদ ও খোদা একই রকম দেখতে (নাউযুবিল্লাহ)।

পীরের উপরোক্ত দুইটা কথা এর আগে কেউ বলেছেন কিনা আমার জানা নেই। মুসলমানরা আর কত বিভ্রান্তের মধ্যে পড়বে!!! আমার জন্যে আরো দুঃখের কথা আমার নিজের এক আত্মীয় এই ভন্ড পীরের মুরীদ!!

আজ আমি শুধুমাত্র তার দ্বিতীয় কথাটা নিয়ে কিছু কথা লিখব।

আমরা সারা জীবনে জেনে এসেছি – আল্লাহ অসীম, নিরাকার। তাকে দেখা যাবে/যায় না। যদিও সাহীহ বুখারীতে এ কথা আছে যে পরকালে আল্লাহকে দেখা যাবে – তবে কেউ সেটাকে ‘চোখে দেখা’ যাবে বলে মত দিয়েছেন বলে শোনা যায়নি। তবে আরবে ‘সৌদী রাজতন্ত্র’ চালু হওয়ার পর থেকে যে সব নতুন আকিদা মুসলিম দের ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেস্টা হচ্ছে তার একটা হলো – আল্লাহর আকার আছে – তাকে দেখা যাবে। আর এই আকিদা তথাকথিত আলেমদের মাধ্যমে এমন ভাবে প্রচার করা হচ্ছে যাকে হিটলারের প্রচারযন্ত্র গোয়েবলসীয় প্রোপাগান্ডার সাথেই শুধু তুলনা করা যেতে পারে।

আল্লাহকে দেখা না দেখার ব্যাপারে আল কোরানে বেশ কয়েক জায়গায় উল্লেখ আছেঃ

ক। (তারা)তাঁদের প্রভুর দিকে চেয়ে থাকবে। (সুরা আল কিয়ামা, আয়াত ২৩) (নাযারাকথাটা ব্যবহার হয়েছে)।

খ। কোন দৃস্টি তার পর্যন্ত পৌছাতে পারে না। (সুরা আন’আম আয়াত ১০৩) (আবসারকথাটা ব্যবহার হয়েছে)।

গ। তুমি আমাকে কখনো দেখতে পাবে না (সুরা আরাফ আয়াত ১৪৩), (তারা কথাটা ব্যবহার হয়েছে)।

আবসার বা তারা থাকলে – সেই দেখা হল, চোখ দিয়ে দেখা (ফিযিকালি), আর ‘নাযার’ হলে সেটা চোখের দেখা নাও হতে পারে। যেমন – আমি দেশের বাইরে যাওয়ার সময় আমার ভাই/বন্ধুকে যদি বলি – আমার ছেলেমেয়েদেরকে একটু দেখ (বা তাদের প্রতি নযর রেখো), তা হলে এই দেখা চোখের দেখার চেয়ে বেশী হলো তাঁদের কে প্রয়োজনে সাহায্য করা।

তাছাড়াও উপরোক্ত তিনটা আয়াতের

১ম আয়াতের শুধু দুইটা অর্থ হতে পারে –(যদিও তা সাধারন নয়) – ১, আল্লাহের শরীরের দিকে তাকিয়ে থাকবে বা ২, তার রহমতের দিকে তাকিয়ে থাকবে।

আর বাকি দুইটা আয়াতের একটাই অর্থ – কোন দৃস্টি আল্লাহ পর্যন্ত পৌছাতে পারবে না বা তাকে দেখা যাবে না।

যাহোক – আল কুরানের যে সব আয়াতের একাধিক অর্থ করা যেতে পারে – সেগুলোকে ‘মুশাবিহাত’ বা ‘রূপক’ আয়াত বলা হয় (সুরা আলে ইমরান আয়াত ৭।), যেহেতু এই আয়াত গুলোর আপাত দৃস্টিতে) একাধিক অর্থ হতে পারে – তাই এর সঠিক অর্থ জানতে হলে ‘মুহকামাত’ বা ‘সুস্পস্ট’ আয়াতের সাহায্য নিতে হয়।

তাই উপরের তিনটা আয়াত একসংগে মিলালে একটাই অর্থ দাঁড়ায় – আল্লাহ নিরাকার – তাকে কোন কালেই দেখা যাবে না।

তবে সৌদী প্রোপাগান্ডার ফল স্বরূপ বর্তমান যুগের অনেক আলেমই এই ধারনা করেন যে – আল্লাহকে দেখা যাবে। তারা তাদের বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি হিসাবে (তারা)তাঁদের প্রভুর দিকে চেয়ে থাকবে। (সুরা আল কিয়ামা, আয়াত ২৩) ও বিভিন্ন হাদিসকে কোট করে থাকেন।

আমার এক বন্ধু – যিনি তার জীবন ব্যয় করেছেন ইলম অর্জনে – ভাগ্য চক্রে তিনিও এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী যে ‘আল্লাকে দেখা যাবে’।, কথাবার্তার এক পর্যায়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলামঃ

আল্লাহ তো অসীম – এই অসীম কে কিভাবে দেখা যাবে?

তিনি বললেনঃ তার একটা অংশ দেখা যাবে।


তার এই কথার যা উত্তর – তা আর আমার দেয়া হয়ে উঠেনি।

এটা কত বড় বিভ্রান্ত মুলক কথা যে আল্লাহকে বিভিন্ন অংশে ভাগ করা যাবে।

আল্লাহ এক, অদ্বিতীয়, একক। তিনি এমন একক নন যাকে গুন বা ভাগ করা যায়। এবং সর্বোপরী তিনি কারোর ‘মত’/বা তূলনীয় নন। এটাই সুরা ইখলাসের মুল কথা। আর ইসলামের বিশ্বাসের মূল ভিত্তিই হলো এই সুরা ইখলাস। এজন্যেই হয়তো এই ছোট্ট সুরাকে আল কুরানের এক তৃতীয়াংশ বলে হয়ে থাকে।

আল্লাহকে দেখা যাবে – যদি ধরে নেই, তা হলে প্রশ্ন উঠবে তিনি দেখতে কেমন? যদি দেখা যাবে – তাহলে নিশচয়ই তার রূপ/গঠনকে কোন না কোন কিছুর সাথে তুলনা করা যাবে। সেজন্যই হয়তো দেওয়ানবাগী পীর বলতে সাহস পায় – তার মুরীদগন আল্লাহকে তাদের পীরের চেহারায় দেখতে পাবে।

অথচ - ওয়ালাম ইয়া কুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ। তিনি কারোর মত/সমতুল্য নন। দেয়ার ইজ নাথিং লাইক আন টু হিম।

তিনি কি সাদা হবেন, না কালো না মঙ্গলীয় না এশিয়ান রঙের হবেন?? যদি তাকে দেখা যেত- তাহলে তিনি কোন না কোন কিছুর মত হতেন। কিন্তু তিনি অতুলনীয়/ কারোর মত নন।

-- তিনি দেখেন – কিন্তু চোখ দিয়ে নয়। চোখ দিয়ে দেখলে অসীম কে কিভাবে দেখেন?

-- তিনি শুনেন – তবে কান দিয়ে নয়। কান একটা কথা একবারে শুনতে পায়, কিন্তু আল্লাহ একবারে কোটি কোটি কথা শুনতে পারেন।

-- তিনি জ্ঞানী – তবে আমাদের মত জ্ঞান আহরন করে নয়।

--তিনি এক, এমন এক যাকে দুই (বা অন্য কিছু)দিয়ে ভাগ বা গুন করা যায় না।

মানুষের হ্রদয় ছাড়া অন্য কোন কিছু আল্লাহকে অনুধাবন করতে পারে না।

হে আল্লাহ – তুমি আমাদেরকে তোমাকে চেনা ও জানার শক্তি দাও।

বিষয়: বিবিধ

২১১৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File