মস্তিষ্কের উপনিবেশিকরন এবং মুসলিম সমাজ
লিখেছেন লিখেছেন মধ্যমপন্থী ২৬ অক্টোবর, ২০১৫, ০৯:৫৭:৩৯ রাত
প্রয়াত আলজেরিয়ান স্কলার মালেক বেননাবী, কেন কোন জাতি অন্য আরেকটি জাতির উপনিবেশে পরিণত হয়, তার কারণ খুঁজতে গিয়ে বলেছেন যে, যারা উপনিবেশে পরিণত হয় তাদের চরিত্রে colonizability বলে একটা বিশেষ গুণ থাকে বলেই তারা colonizable বা তাদের উপনিবেশে পরিণত করা যায়। এটা ঠিক যে, (সহজে) colonizable নয়, এমন জাতিগোষ্ঠী খুঁজতে গেলে তাদের বেশীর ভাগই পাওয়া যাবে, “আদর্শগত মুসলিম জাতির” অন্তর্ভুক্ত যে সব ethnic জাতি রয়েছে, সে সবের ভিতর – যাদের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে আফগান, তুর্কী ও চেচেন জাতিগোষ্ঠী, তবু, মুসলিমদের যে সমস্ত দেশগুলো দীর্ঘদিন উপনিবেশ হিসেবে পশ্চিমাদের পদানত ছিল, সেগুলোর গণসাধারণের মনে ‘প্রভু”দের শ্রেষ্ঠত্ব একরকম মুদ্রিত হয়ে রয়ে গেছে।
মুহাম্মাদ আসাদের সুরে সুর মিলিয়ে দু’টো উদাহরণ উল্লেখ করতে চাই: প্রথমটি বেশ ক’বছর আগের কথা। আমার এক বন্ধুর বড় ভাই লিবিয়া গেলেন ইংরেজীর অধ্যাপক হিসেবে। তার এক বন্ধুও একই সময়ে একই যোগ্যতা ও চাকুরী নিয়ে ঐ একই দেশে গেলেন। যাবার সময় আমার বন্ধুর বড় ভাই সরাসরি লিবিয়া গেলেন, আর তার বন্ধু লন্ডন হয়ে গেলেন। লন্ডনে তার ঐ বন্ধু একটা “কেবল attending” course-এ যোগ দেন। ঐ course শেষে তাকে একটা certificate of attendance দেয়া হয়। লিবিয়া পৌঁছে চাকুরীক্ষেত্রে যখন প্রয়োজনীয় সনদ-পত্রাদি জমা দিলেন, তখন কি মনে করে যেন তিনি ঐ certificate of attendanceও জমা দেন। ঐ “রাণীর মাথা” খচিত certificate-এর বদৌলতে তিনি নির্ধারিত বেতনের চেয়ে ১০০ ডলার অধিক বেতনে চাকুরীতে যোগ দেন। এটা লিবিয়ার কোন একান্ত ব্যাপার নয়। যারা সৌদী আরবের চাকুরীর বাজার সম্বন্ধে জানেন, তারা নিশ্চয়ই জেনে থাকবেন যে, একজন পশ্চিমা মানুষ, কেবল তার সাদা-চামড়ার গুণে সেখানে কেমন সমাদৃত হয়ে থাকেন। অথচ, ইসলামের ফরজ/ওয়াজিব পর্যায়ের একটা মূলনীতি হচ্ছে “আল-ওয়ালা ওয়া আল-বারাহ্” – “কে আপনার বন্ধু, সুহৃদ, আপনজন ও নিরাপত্তাদানকারী -আর – কে আপনার শত্রু বা ঘৃণার পাত্র” তার নির্ধারণ! এই নীতিমালার আলোকে এমনিতেই যে কোন মুসলিমের, অপর মুসলিমের কাছে অগ্রাধিকার ও ভালোবাসা পাবার কথা – যা অবিশ্বাসীদের কখনো পাবার কথা নয়। আর একজন মুসলিম ও একজন বিধর্মীর যদি একই যোগ্যতা থাকে, তবে তো কথাই নেই! স্বজাতি সম্বন্ধে হীনমন্যতা ও ঔপনিবেশিক শক্তির অপর সভ্যতাকে উন্নততর মনে করা থেকেই যে এসব বৈষম্যের সূত্রপাত হয় – তা বলাই বাহুল্য। এবার আরেকটি উদাহরণ দেব। আমি একসময় যখন ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করতাম, তখন আমাদের জুনিয়র একটা বাংলাদেশী ছেলেও সেখানে ছিল। ছেলেটি ভালো করে বাংলাও বলতে পারতো না – মুখ খোলার ৩০সেকেন্ডের ভিতই যে কেউ বুঝতে পারতো বাংলাদেশের কোন অঞ্চল থেকে তার আগমণ। ঐ ছেলেটিও যখন দেশে ফিরে এলো, তখন প্রথম দিকে হ্যাট পরতে শুরু করলো । শুধু সে কেন, ৩ মাসের জন্য ইউরোপ আমেরিকা বেড়াতে গিয়েও অনেকে “প্রভু”-দের অনেক অভ্যাস/বদভ্যাস সাথে করে নিয়ে আসেন। বিজিতের বিজয়ীর মত হতে চাওয়া, এক কালের ঔপনিবেশিক “প্রভু”-দের মত হতে চাওয়া বা তাদের মত হতে চাওয়ার স্বপ্ন দেখা ইত্যাদি থেকেই এমনটা ঘটে! অথচ, এদেশে বছরের পর বছর থাকার পরেও ক’জন বৃটিশ বা আমরিকানকে দেখেছেন/শুনেছেন যে, দেশে ফিরে গিয়ে রাতে, ঘরে relax করতে, শোবার আগে লুঙ্গি পরে? অথবা, চিত্ত বিনোদনের জন্য মমতাজের গান শোনে – আমরা যেভাবে ব্রায়ান এডামস বা শাকিরার গান শুনি?! আমি এদেশে কাজ করা এমন বিদেশী সাদা-চামড়া ইউরোপীয়র কথা জানি, যার পানি আসতো ফ্রান্স থেকে – এদেশের পানি সে ছু’তো না!...........।
[muslim55 এর ক্রান্তিলগ্নে ইসলাম প্রবন্ধ থেকে https://muslim55blog.wordpress.com/2015/10/17/ক্রান্তিলগ্নে-ইসলাম/]
বিষয়: বিবিধ
১৪০৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন