কিভাবে বাসা-বাড়ীকে আগুনের ঝুঁকি মুক্ত করবেন
লিখেছেন লিখেছেন মধ্যমপন্থী ২৮ নভেম্বর, ২০১৩, ১০:৫০:২২ রাত
কেন আগুন জ্বলে
আগুন জ্বলতে হলে তিনটি উপাদানের উপস্থিতি থাকা আবশ্যক- দাহ্য বস্তু (Fuel), অক্সিজেন (O2) ও তাপ (Heat)। এই তিনটি উপাদানের একত্র উপস্থিতি ছাড়া আগুন জ্বলতে পারে না। তাই এ তিনটি উপাদানের যে কোন একটি উপাদানকে অপসারণ করে বা বাধাগ্রস্ত করলেই অগ্নি নির্বাপণ হয়। এটাই অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার মূল সূত্র। সাধারণভাবে যেকোন স্থানে যেকোন অবস্থায়ই এই তিনটি উপাদানের পূর্ণ উপস্থিতি সবসময়ই রয়েছে। সর্বত্রই দাহ্যবস্তুর উপস্থিতি রয়েছে। অক্সিজেন, তাও সর্বব্যাপ্ত। আর সর্বাবস্থায় তাপ তো কম-বেশি আছেই। তাহলে আগুন জ্বলছে না কেন ? এই সবকিছু থাকার পরেও আগুন না-জ্বলার একটাই কারণ, তাপাবস্থা দাহ্যবস্তুর জ্বলন বিন্দু বা ইগনিশন পয়েন্ট (Ignition point) ছুঁতে পারছে না। যতক্ষণ না তাপমাত্রা বস্তুর ইগনিশন পয়েন্ট স্পর্শ করবে ততক্ষণ আগুন জ্বলবে না। তাপমাত্রা যখনই বস্তুর ইগনিশন পয়েন্ট ছুঁয়ে ফেলে, তখনই আগুন জ্বলে ওঠে। বিভিন্ন বস্তু বা পদার্থের ইগনিশন পয়েন্ট ভিন্ন ভিন্ন। যেমন, কাঠের ইগনিশন পয়েন্ট ৩০২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, কয়লার ৬০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, আবার ফসফরাসের ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড ইত্যাদি। অর্থাৎ আগুন জ্বলার ক্ষেত্রে দাহ্য পদার্থের ইগনিশন পয়েন্টই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। কোন বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে ৪০০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার সৃষ্টি হয় বলে আশেপাশের দাহ্য বস্তুতে সাথে সাথে আগুন জ্বলে ওঠে। নাগরিক জীবনে তাই বিদ্যুৎ ছাড়া আমাদের এক মুহূর্তও চলে না বলে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট আকস্মিক অগ্নিকাণ্ডের অন্যতম ভয়ঙ্কর উৎস হিসেবেও সার্বক্ষণিক সাথি আমাদের।
সম্ভাব্য অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ বা প্রতিকারে প্রাক-প্রস্তুতি
@ বাসা-বাড়িতে গ্যারেজে এবং গাড়ীতে নিজস্ব উদ্যোগে একটি করে Smart PFE ফায়ার এক্সটিংগুইসার সংরক্ষণ করুন। কারন প্রচলিত co2 Fire Extinguisher গুলি আকারে বড় এবং ভারী হওয়া তা সহজে বা সবার জন্য ব্যাবহার উপযোগী নয়। বিষাক্ত co2 থাকায় তা suffocation তৈরি করতে পারে এবং pressurized সিলিন্ডার হওয়া তা লিকেজ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
@ একটি বৈদ্যুতিক সকেটে একাধিক Home appliance সংযুক্ত করবেন না।
@ যেকোন দাহ্য পদার্থ যেন হিটার, ষ্টোভ বা চুলার কাছাকাছি না থাকে।
@ দিয়াশলাই এবং লাইটার শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।
@ শিশুদের আগুন নিয়ে খেলার ভয়াবহতা সম্পর্কে শিহ্মা দিন।
@ AC বা কোন ধরনের হিটারের সাথে extension cords ব্যাবহার করবেন না।
@ বিদ্যুতের সংযোগ লাইন ও অয়ারিংগুলো মাঝে মাঝে দক্ষ/অনুমোদিত বিদ্যুৎ কৌশলীর মাধ্যমে নিয়মিত চেক করিয়ে নিন। প্রয়োজনে টেম্পার নষ্ট হয়ে যাওয়া পুরনো বৈদ্যুতিক তার/যন্ত্রপাতি পরিবর্তন করিয়ে নিন।
@ গ্যাস পাইপে কোন লিক হচ্ছে কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন। সামর্থ থাকলে গ্যাস ডিটেক্টর ব্যাবহার করুন। অপ্রয়োজনীয়ভাবে গ্যাসের চূলা জ্বালিয়ে রাখা থেকে বিরত থাকুন। গ্যাসের চূলা জ্বালানোর আগে সতর্কতা হিসেবে কিছুক্ষণ জানালা-দরজা উন্মুক্ত করে সম্ভাব্য জমে থাকা গ্যাস ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার সুযোগ করে দিন। কাজ শেষে চূলা নিভিয়ে সন্দেহাতীতভাবে সুইচ অফ রাখুন যাতে কোন গ্যাস লিক না করে।
@ জ্বলন্ত মেচের কাঠি বা সিগারেটের আগুন যেখানে সেখানে ছুঁড়ে ফেলা থেকে বিরত থাকুন। পায়ে মাড়িয়ে আগুন নিভেছে নিশ্চিত হয়ে স্থান ত্যাগ করুন।
@ কর্মক্ষেত্রে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতিগুলোর অবস্থান দেখে রাখুন এবং মাঝে মাঝে চেক করুন। @ বহুতল ভবনের অধিবাসী হলে মাঝেমধ্যে সিঁড়ি ব্যবহার করে নামার চেষ্টা করুন। সিঁড়ির কোথাও প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা সরিয়ে ফেলানোর ব্যবস্থা নিন। সিঁড়িপথ সবসময় উন্মুক্ত থাকা বাঞ্ছনীয়।
@ বাড়িতে, ভবনে বা আশেপাশে অতিসংবেদশীল দাহ্যপদার্থ সংরক্ষণ থেকে বিরত থাকুন, অন্যকেও তা করা থেকে বিরত রাখুন। স্টোররুমকে আজেবাজে জিনিস দিয়ে অযথা ভারাক্রান্ত করবেন না।
@ নতুন ও অপরিচিত কোন অফিস, মার্কেট বা বহুতল ভবনে গেলে ভবনের জরুরি এক্সিট পথ চিনে রাখুন। প্রয়োজন মুহূর্তে যাতে ব্যবহার করা যায়।
@ আগুনের ধর্ম উপরের দিকে উঠা। বহুতল ভবনের নিচের দিকের কোন ফ্লোরে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে সিঁড়ি পথ দিয়েই আগুন উপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এরকম ক্ষেত্রে নিচে নামতে সতর্ক থাকুন। নিচে নামা না গেলে প্রয়োজনে ভবনের খোলা ছাদে উঠে যাওয়া যেতে পারে। এতে ঝুঁকি কম থাকবে এবং উদ্ধার করা সহজ হবে।
@ জরুরি টেলিফোন নম্বর মুখস্ত রাখুন। ঢাকার ফায়ার কন্ট্রোল রুমের নম্বর হচ্ছে ১৯৯।
অগ্নিকাণ্ড সংগঠিত হলে করনীয়ঃ
১. ঘুমানোর সময় বেড রুমের দরজা বন্ধ রাখুন। এতে করে তাপ বা ধোয়া সহজে রুমে প্রবেশ করতে পারবে না। যা আপনাকে অতিরিক্ত সময় দেবে বাসা থেকে বের হবার জন্য।
২. অগ্নি কান্ডের সময় কি করতে হবে তা বাড়ীর সদস্যদের ভাল করে বুঝিয়ে দিন।
৩. একটা বিষয় খুব ভাল করে মনে রাখবেন তা হল, বাসার ভিতরে থেকে অবশ্যই ফায়ার সার্ভিসে কল করবেন না। তাড়াতাড়ি বাড়ীর বাহিরে এসে তারপর কল করুন।
৪. বিশেষ পরিস্হিতিতে বাড়ীর বাইরে সবাই কোথায় জমায়েত হবেন তা আগে থেকে ঠিক করুন এবং বাড়ীর সবাইকে জানিয়ে দিন।
৫.জরুরী ফোন নম্বর যেমন-ফায়ার সার্ভিস, এম্বুলেন্স, ডাক্তার ইত্যাদী নম্বর সব সময় সাথে রাখুন।
পাশের বাড়িতে আগুন লাগলে নিজেকে নিরাপদ ভাবা ভয়ানক নির্বুদ্ধিতা। যাকে অতি ক্ষুদ্র ভেবে অবহেলা করতে নেই তা হলো আগুন। এবং যার ভয়ঙ্কর বিধ্বংসী রূপ দেখেও মনোবল হারাতে নেই তাও হচ্ছে আগুন। উভয়ক্ষেত্রেই সমূহ সর্বনাশ ডেকে আনে। তাই কোথাও আগুন লাগলে মনোবল না হারিয়ে সাহস নিয়ে নেভানোর চেষ্টা করতে হবে, এটা যেমন শুরুর কথা, শেষ কথাও এটাই। আগুন থেকে সবাই নিরাপদ থাকুন, অন্যকেও নিরাপদ রাখুন।
Source: http://topbuybd.com/making-your-home-fire-safe/
বিষয়: বিবিধ
১৮৪৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন