একটি চাকরির বিজ্ঞাপণ ও আমি ..................

লিখেছেন লিখেছেন মরহুম সাদেক ২২ নভেম্বর, ২০১৪, ০৫:৩৪:৩৯ বিকাল



১।

২০০১ সনের প্রথম দিকের কথা,

বয়স কম, সবে কৈশোর পেরুলাম, শরীরের রক্ত গরম . সবার সাথে দূর্ব্যবহার করতাম,

এই করমু সেই করমু, পরিবারের সবাইকে একটা অশান্তির মধ্যে রাখতাম সবসময়।

একটা ডেম কেয়ার ভাব আরকি, “হাম ছে বাড়া কৌন হ্যায়” এই টাইপ।

একদিন মাথায় চিন্তা আসলো নাহ ,বাড়িতে আর থাকবোনা । কোথাও চলে যাবো,

কিন্তু কিভাবে যাওয়া যায় ?

তাইলে এক কাজ করা যাক, একটা চাকরী যদি যোগাড় করতে পারি তাইলে হয়ত বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে পারবো .

এক সপ্তাহ ধরে পত্রিকায় বিজ্ঞাপণ খোজা শুরু করলাম । একদিন পেয়েও গেলাম লোভনীয় কয়েকটা বিজ্ঞাপণ ।

একটা বিজ্ঞাপণ ছিল এমনঃ

জরুরী ভিত্তিতে শুণ্য পদে কয়েকজন লোক আবশ্যক

পদ ছিল ৫ টা তার মধ্যে সর্বনিম্ন বেতন ছিল ৭৫০০টাকা

সর্বোচ্চ ছিলো ১৫০০০টাকা

অভিজ্ঞতার দরকার নাই ।

বিজ্ঞাপন দেখে আমি তো পূরাই পান্খা । যাই হোক দিনক্ষন দেখে রওয়ানা দিলাম রাজধানী ঢাকার উদ্দ্যেশ্যে।

মনে রঙ্গিন স্বপ্ন, স্বপ্নের ঘোরেই ঢাকা পৌছলাম।

একটা হোটেলে উঠলাম, রাতে তেমন ভালা ঘুম হলোনা।

২।

আহ ....... অফিসের লোকজন আমায় এমন ভাবে অভ্যর্থনা জানালো, আমি তো পূরাই ফিদা ।

যেন সদ্য বিদেশ ফেরত কোন মন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানানো হচ্ছে । আমি কিছুটা ভড়কে গেলাম।

এতটা খাতিরের জন্য আমি ঠিক প্রস্তুত ছিলাম না।

এই টেবিল থেকে ঐ টেবিল, আমি যেন তাদের কত পরিচিত লোাক ।

ওদের কথাবার্তা অচার আচরণ আমার শুধু ভালই লাগছিল।

মনে হচ্চিল এমন সম্মান তো আমাকে কেউ কোনদিন দেয়নি।

অর্থাৎ আমি এত আদর যত্ন পেয়ে একটা মোহের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিলাম।

পূরা দিন ঐখানেই কেটে গেল।

সন্ধার দিকে আসলেন অফিসের বড় বস ।

অমায়িক মানুষ, সব সময় হাসি হাসি মূখ। একান্তে বসলাাম উনার সাথে।

উনি ইন্টারভিউয়ের কাছ দিয়েই গেলেন না।

উনার কথাবার্তায় বুঝছিলাম আমার চাকরি পাক্কা। মনে যে কিছুটা খটকা ছিলনা তানা,

কিন্তু এক বাড়ি থেকে চলে এসেছি, ফিরে যাওয়াটা লজ্জাজনক। দুই চাকরিটারও খুব দরকার ছিল।

তাই মনের সন্দেহ কে পাত্তাই দিলাম না ।

বসের সাথে কথাবার্তা বলার এক পর্যায়ে উনি বল্লেন

দেখেন সাদেক সাহেব,

আপনি যে পদের জন্য দরখাস্ত করেছেন, ঐ পদে এখন পর্যন্ত ১১ জন প্রার্থী সিভি জমা দিয়েছেন।

আমি বললাম বাকি সবাই কোথায় ?

বাকি সবাই একেকদিন একেকজন আসবেন। একসাথে অনেক লোক আসলে অফিসে ঝামেলা হয়,

তাই একেক জন কে একেক দিন আসতে বলেছি।

আমি মনে করলাম হয়ত ঠিক, কারণ আমার আবার ইন্টারভিউ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলনা।

বস বললেন, আপনার কথাবার্তা শুনে আমার খুব পছন্দ হয়েছে, আমি চাই এই পদে আপনিই জয়েন করেন।

মনে মনে আমি আকাশে উড়তেছি। আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।

আচ্ছা টাকাটুকা কিছু এনেছেন ? এতবড় একটা চাকরি পেলেন আপ্যায়ন টাপ্যায়ন না হলে কি চলে ?

আছে স্যার ৩০০০/=

তাইলে আপনি এক কাজ করেন টাকাগুলা আমার কাছে দিয়ে দেন, এখন থেকে তো আপনার দায়িত্ন আমাদেরই।

আমি আর কি করবো এমন এক গ্যাড়াকলে ঢুকলাম যে টাকা বের করতে বাধ্য হলাম।

ব্যাগ বেগেজ এগুলো কোথায় ?

স্যার এগুলো তো হোটেলে।

উফ কি বলেন ! আপনি আমাদের লোক না ? তাড়াতাড়ি নিয়ে আসেন, আপনি আমাদের সাথে থাকবেন।

স্যার হোটেল তো ২ দিনের জন্য বুক দিয়েছিলাম। কাল থেকে না হয় আপনাদের সাথে থাকবো।

আচ্ছা ঠিক আছে আপনি কাল ঠিক ৯ টায় আমাদের অফিসে চলে আসবেন, আমাদের শহিদ মিয়া আপনাকে কোম্পানীতে নিয়ে যাবে।

ঠিক আছে স্যার।

৩।

শহিদ মিয়ার সাথে কোম্পানীতে রওয়ানা দিলাম।

হেটে হেটে গেলাম, শহিদ মিয়াও খুব বাকপটু ছিল। কথাবার্তায় এমন ভূলিয়ে রাখলো যে,

কোনদিক থেকে কোনদিকে নিয়ে গেলো টের পেলাম না। পৌছলাম আমাদের কোম্পানীতে।

ও খোদা এইটা তো একটা গার্মেন্টস !!!

প্রচন্ড ধাক্কা খেলাম। শহিদ মিয়া ডিউটিরত একলোকের সাথে কি কি বলে আমার কাছে এসে বললো আমি আপনাকে ঠিক ২টায় এখান খেকে নিয়ে যাবো।

আমি বল্লাম ঠিক আছে, এছাড়া উপায়ও ছিলনা, এতক্ষনে বুঝছিলাম জালের মধ্যে পূরাই ফেসে গেছি।

২টার আগ পর্যন্ত গার্মেন্টস এ কাজ করলাম।

আশেপাশের কর্মচারীদের কাছ থেকে জানলাম তাদের একেকজনের বেতন ১৫০০ টাকা মাস।

৪।

শহিদ মিয়ার সাথে অফিসে আসলাম, মন খুব খারাপ ছিল। রাস্তায় তেমন আলাপ হলোনা,

ফন্দি রাস্তায়ই আটলাম, কি ভাবে কি করতে হবে।

অফিসে এসে দেখলাম কেউ নাই, শহিদ মিয়া বললো সবাই রেষ্টে গেছে।

আমি সময়ের অপেক্ষা করলাম...............................

শহিদ মিয়া বাথরুমে ঢুকলো, আমি আস্তে করে বাইরে থেকে ছিটকিনি এটে দিলাম।

কাপড়ের ব্যাগটা নিয়ে এক প্রকার ঝড়ের বেগে বের হলাম অফিস থেকে, সোজা সায়দাবাদ বাসষ্টেন্ড।

আমার চাকরির সখ মিঠে গেছে,

পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম মাত্র ১০০টাকা আছে।

কি করা যায় ?

বাস ভাড়া তো ২০০টাকা।

যাই হোক এক হেল্পার কে বলে কয়ে রাজি করালাম ১০০ টাকায় ।

শর্ত হচ্ছে সামনে ইঞ্জিনের উপড় বসতে হবে।

ঢাকা টু সিলেট..............................

বিষয়: বিবিধ

১৭২৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

286879
২২ নভেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৮
ফখরুল লিখেছেন : আমার সিদ্ধান্ত আমার কাছে, কিন্তু নিজের অবস্থান গত দিক থেকে বিবেচনা করতে হবে। অবশ্যই নিজের ভুল বুঝতে পেরে এখন ভাল আছেন।
২২ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১০:২২
230451
মরহুম সাদেক লিখেছেন : সবারই ভুল হয়, মানুষ তো !
286913
২২ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৩
আফরা লিখেছেন : ভাল একটা অজ্ঞিতা হল । কিন্তু একটা প্রশ্ন আপনার নামের আগর মরহুম কেন ? মরহুম মানে কি ?
২২ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১০:২১
230450
মরহুম সাদেক লিখেছেন : মরহুম এর ডিটেইলস জানতে হলে আপনাকে ফেসবুকের মরহুম সাদেকের প্রোফাইল চেক করতে হবে, ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File